
দোয়ায়ে কুনুতের বদলে সুরা ইখলাস পড়া
উম্মে তাওশি জ্যোতি, মধ্যহিস্যা, মুক্তাগাছা
প্রশ্ন : বিতরের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার বিধান কী? এ ক্ষেত্রে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা’ ছাড়াও অন্য কোনো দোয়া পড়া যাবে কি? যে দোয়ায়ে কুনুত জানে না, সে দোয়ায়ে কুনুতের বদলে তিনবার সুরা ইখলাস পড়লে নামাজ আদায় হবে কি?
উত্তর : বিতরের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব। দোয়ায়ে কুনুত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এ ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ দোয়া‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা’ ছাড়া একই মর্মার্থের অন্য যেকোনো দোয়া পড়লেও বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। যেমন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া’ বা এই জাতীয় দোয়া পড়া। কেউ যদি এটা না পারে তাহলে তিনবার ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি’ কিংবা তিনবার ‘ইয়া রব’ পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। তবে প্রসিদ্ধ দোয়াটি পড়া সুন্নত এবং সর্বোত্তম। আহসানুল ফতোয়া : ৩/৪৪৯
দোয়ায়ে কুনুতের মর্মার্থ এবং সুরা ইখলাসের মর্মার্থ ভিন্ন ভিন্ন। তাই দোয়ায়ে কুনুতের বদলে সুরা ইখলাস না পড়া। কেননা এই দোয়া পড়া সুন্নত। আর ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নত ত্যাগ করা গোনাহ।
বোবা ব্যক্তির নামাজ
নাসরুল্লাহ যায়েদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়
প্রশ্ন : বোবা ব্যক্তি নামাজে কীভাবে কেরাত পড়বে?
উত্তর : নামাজে কেরাত পড়ার জন্য বোবা ব্যক্তির ঠোঁট নাড়ানো ওয়াজিব নয়। বরং তাকবির, কেরাত, তাসবিহ ও দোয়াসহ সবকিছু মনে মনে বলবে। আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ : ১৯/৯২
নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা নাস পড়লে
আল ফারাবি, উত্তরা, ঢাকা
প্রশ্ন : নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর কোরআন মাজিদের যে স্থান থেকে কেরাত পড়া হয়দ্বিতীয় রাকাতে তার আগের জায়গা থেকে পড়া মাকরুহ। আর সুরা নাস হলোকোরআনের সর্বশেষ সুরা। কেউ যদি নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা নাস পড়ে ফেলে তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর কোথা থেকে পড়বে?
উত্তর : কেউ যদি প্রথম রাকাতে সুরা নাস পড়ে ফেলে তাহলে দ্বিতীয় রাকাতেও সুরা নাস পড়বে। ফতোয়া তাতারখানিয়া : ২/৬৮
প্রথম কাতারে মুক্তাদির অজু ভেঙে গেলে
মুহাম্মদ সৌরভ, বাগেরহাট
প্রশ্ন : মসজিদের প্রথম কাতারে দাঁড়ানো কোনো মুক্তাদির যদি অজু ভেঙে যায় এবং পেছনে পনেরো কাতার পর্যন্ত মুক্তাদি নামাজরত থাকে, তাহলে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো মুক্তাদি কী করবে? অজুর জন্য বের হবে না বসে থাকবে?
উত্তর : প্রথম কাতার থেকে বের হয়ে আসার সময় ধাক্কা লেগে নামাজরত কোনো মুক্তাদির সিনা যদি কেবলার দিক থেকে সরে যাওয়ার দ্বারা নামাজ ভঙ্গের কারণ না হয় তাহলে বের হয়ে আসবে। অন্যথায় বসে থাকবে। ফতোয়া মাহমুদিয়া: ৭/১৪৩
উত্তর প্রদান : মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
ফতোয়া বিভাগ, জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলুম, ময়মনসিংহ
পরিবার হচ্ছে মানবসভ্যতার আদি সংগঠন। পরিবার থেকেই গড়ে উঠে সমাজ। সুন্দর ও সুস্থ সমাজের জন্য আদর্শিক পরিবার অপরিহার্য। পারিবারিক বন্ধন আমাদের গর্ব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পারিবারিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুশিক্ষার যে শক্ত ভিত দাঁড় করিয়েছিল তার ওপরই আমাদের সমাজব্যবস্থা। পরিবারের কল্যাণের জন্য জীবনের সবটা নিবেদিত করেছিলেন আমাদের মা-বাবা, তাদের মা-বাবা এবং তার পূর্ববর্তী বংশধরও। সময়ের পরিক্রমায় এই বন্ধন আজ হুমকির মুখোমুখি। মাত্রাতিরিক্ত বিশ্বায়ন ও নগরায়ণের ফলে দিন দিন দুর্বল হচ্ছে স্থিতিশীল সমাজ গঠনের নিয়ামক এই পারিবারিক বন্ধন। ভেঙে যাচ্ছে পরিবারের আদর্শ, মূল্যবোধ, আর স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধন। বাংলাদেশে একসময়ে পারিবারিক বন্ধন ও পরিবারের সদস্যদের পরস্পর স্নেহ-মমতার যে দৃঢ়তা ছিল তা যেন আজ ম্রিয়মাণ। যার কারণে পারিবারিক মূল্যবোধ তথা ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সম্পর্কের টানাপড়েন ও দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। পারিবারিক বন্ধনের শীতলতা ব্যক্তিজীবনে অস্থিরতার মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বহু গুণে।
আমরা অনেক সময় বাবা-মায়ের ভালোবাসা আর শাসনের বাইরে গিয়ে যে স্বাধীনতার কথা বলি, তা হচ্ছে সন্তানকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেওয়া। পারিবারিক অনুশাসন বিচ্ছিন্ন সন্তান নেশাগ্রস্ত কিংবা যেকোনো খারাপ অভ্যাসে মত্ত হয়ে বিপথগামী হয়। একজন মানবসন্তান পারিবারিক শিক্ষা ছাড়া কখনো আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে না। মানবজাতির বিকাশ, সভ্যতার সৃষ্টি, সংস্কৃতিবোধের উন্মেষ সবকিছুর মূলে আমাদের পারিবারিক সুশিক্ষা আর দৃঢ়বন্ধন। যে জাতির পারিবারিক বন্ধন যত দৃঢ় সে জাতি তত সুশৃঙ্খল ও উন্নত মানসিকতার। পাশ্চাত্যের দেশে দেশে আজ পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে জঙ্গিবাদের মতো ভয়ানক রাস্তায় ধাবিত হচ্ছে। এর অন্যতম কারণতাদের পারিবারিক বন্ধন নেই, যে যার মতো চলাফেরা ও জীবন অতিবাহিত করা। কেউ কাউকে পরোয়া করে না। যৌথ পরিবারে দেখা যায় দাদা-দাদি, চাচা-চাচি কিংবা মা-বাবার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকার কারণে সন্তানের ভালো-মন্দ তদারকি করতে পারেন এবং সন্তানের মনেও কোনো খারাপ বাসনা সহজে বাসা বাঁধতে পারত না। পারিবারিক বন্ধনের সঙ্গে সঙ্গে একজন ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের বন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামাজিক বন্ধন যত দুর্বল হয় সমাজে ততই বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকে। ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের বন্ধন যত দৃঢ় থাকবে সামাজিক অনাচার তত কম হবে। সামাজিক বন্ধন যুগ যুগ ধরে আমাদের সুন্দরের পথে প্রেরণা জুগিয়েছে এবং অসুন্দরের পথ থেকে নিরুৎসাহিত করেছে।
সামাজিক এই বন্ধনের শিক্ষা কিন্তু পরিবার থেকেই পেয়ে থাকি। সামাজিক বৈষম্য, ব্যভিচার, মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে মুক্তি পেতে হলে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। বন্ধন দৃঢ় হলে জবাবদিহি চলে আসে। যেখানে জবাবদিহি থাকে সেখানে অপরাধপ্রবণতা কমে যায়। সামাজিক সম্পর্কহীন মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ ও বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়। তাই নিজেকে ভালো রাখার তাগিদেই আমাদের উচিত পরিবার তথা সমাজ থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন না করা।
সমকালীন সমাজ প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়পরিবার, পারিবারিক সম্পর্ক অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে। একটা সময় ছিল শিশুরা যৌথ পারিবারিক পরিবেশে দাদা-দাদি, চাচা-চাচি ও চাচাতো ভাই-বোনের মাঝে বড় হতো। এখন কিন্তু তা একেবারেই কমে গেছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও অপব্যবহারের ফলে শিশুরাও এখন খেলছে মোবাইলসহ নানান রকম ডিভাইস দিয়ে। পরিবারের ভেতরে একই ঘরে বসবাস করেও যেন আমরা সবাই পৃথক! যে যার মতো ব্যস্ত মোবাইলে। একেবারে খুব কম বয়সেও বর্তমান প্রজন্ম পরিচিত হয়ে উঠছে নানা ধরনের প্রযুক্তির সঙ্গে এবং একসময় তারা তাতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ নানা ধরনের যন্ত্রের সহজলভ্যতা এবং অপব্যবহারের ফলে নতুন প্রজন্ম পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তেমন মিশতে পছন্দ করে না। একঘেয়েমির এক রোবোটিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। অথচ পারিবারিক বন্ধন আর শিক্ষা থেকেই সামাজিক বন্ধন, সহমর্মিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, আদব-কায়দা, জবাবদিহির শিক্ষা পাওয়া যায়। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে ক্ষুদ্র পরিবার বা একক পরিবারে রূপান্তরিত হচ্ছে। আর ক্ষুদ্র বা একক পরিবারের সন্তানরা ক্ষুদ্র জগতের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। পরিবারবিমুখতা তাদের ঠেলে দিচ্ছে আত্মকেন্দ্রিকতার দিকে এবং ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে চিরায়ত সামাজিক বন্ধন। জীবন-জীবিকার তাগিদে তরুণ-তরুণীরা পরিবার তথা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। জীবনের দীর্ঘসময় বিদেশে থাকার কারণে পরিবারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়ছে, ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হলেও পারিবারিক মূল্যবোধের বিষয়গুলো থেকে যাচ্ছে তাদের অজানা।
অথচ পারিবারিক বন্ধন স্থিতিশীলতার বোধ এবং আত্মিক প্রশান্তি আনে। পারিবারিক সম্পর্ক মানুষকে অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী দুঃখ-কষ্ট থেকে আশ্রয় দেয় এবং নতুন প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে কার্যকর সহায়ক ভূমিকা পালন করে। দৃঢ় পারিবারিক সম্পর্ক ও অনুশাসন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঠিক বিকাশ, সুখ এবং সাফল্যের পথ নির্দেশক। আজকের পৃথিবী সহিংসতা, ক্রোধ আর উদাসীনতায় পরিপূর্ণ, অন্যদিকে উন্মুক্ত সংস্কৃতির বদৌলতে আজ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চ্যানেল ও মিডিয়ায় নাটক বা সিনেমাগুলোতে পারিবারিক বন্ধন বা মূল্যবোধের বিষয়ের চেয়ে পারিবারিক কলহের বিষয়গুলোই দেখানো হয় বেশি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবার ও সমাজ তথা নতুন প্রজন্মের মন-মগজে। তাই সবার উচিত, পারিবারিক শান্তি ও সম্প্রীতির মূল্যবোধকে ফিরিয়ে এনে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিবার ও সমাজের বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করা। একটি সুস্থ, আদর্শিক এবং নৈতিকবোধসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন ও অনুশাসনের বিকল্প নেই।
বড়কাটারা মাদ্রাসার সাবেক সিনিয়র উস্তাদ, লালবাগ বড়ভাট মসজিদের ৫৪ বছরের খতিব, শিলালিপি গবেষক এবং ভাষাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুদ্দিন ফতেহপুরী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় গাজীপুরের কালীগঞ্জে নিজ গ্রামে (পোটান, ফতেহপুর) ইন্তেকাল করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। ইন্তেকালের সময় তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্মীয়স্বজন, অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত রেখে গেছেন।
মাওলানা ফতেহপুরী ছিলেন শিলালিপি গবেষক, আরবি-ফারসি-উর্দু ভাষার পণ্ডিত এবং ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ গ্রণয়ন কমিটির অন্যতম সম্পাদক। মাওলানা নুরুদ্দিন ফতেহপুরী গত শতকের আশির দশকে বিভিন্ন স্থানের অপ্রকাশিত শিলালিপির পাঠ উদ্ধার করতে আরম্ভ করেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির শিলালিপিবিষয়ক প্রকাশিতব্য গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন।
তিনি ১৯৪৮ সালে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মুক্তারপুর ইউনিয়নের পোটন (ফতেহপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার বড় কাটরা মাদ্রাসা, করাচির জামেয়া ইসলামিয়া এবং লাহোরের জামেয়া আশরাফিয়ায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। তার পরিকল্পনা ছিল ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে তা হয়নি। পরে ১৯৬৬ সালে তিনি করাচির জামেয়া ইসলামিয়ায় হাদিস বিষয়ে এবং ১৯৬৭ সালে লাহোরের জামেয়া আশরাফিয়ায় হাদিস বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবনে তিনি ১৯৬০-এর দশকে বড়কাটারা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯০ দশকের প্রথম ভাগে বড়কাটারা ছেড়ে খাজে দেওয়ান লেন মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি লালবাগের অন্যতম মুঘল স্থাপত্য বড়ভাট মসজিদের খতিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন ১৯৬০-এর দশক থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত।
মাওলানা ফতেহপুরী বিভিন্ন ভাষায় একাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘বিন্দুবিহীন বর্ণে মহানবী (সা.)’ ‘বিন্দুবিহীন বর্ণে বাংলাদেশ’, ‘কুন্তু লা আদরি’ (উর্দু ভাষায় লেখা গল্পগ্রন্থ), শেখ সাদির কাব্য ‘কারিমা’ (অনুবাদ), সুফি কবিতার সংকলন ‘জজবায়ে মারেফত’ (অনুবাদ) ইত্যাদি অন্যতম।
সরেজমিনে প্রাচীন শিলালিপির পাঠ সংগ্রহের ব্রত তাকে অনন্য করে তুলেছে। ১৯৮০-এর দশকে সুলতানি, মুঘল, নবাবি ও কোম্পানি আমলের বেশ কয়েকটি মসজিদ, মাজার, কাটরা, ইমামবাড়া ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের আরবি, ফারসি ও উর্দুতে লেখা শিলালিপির পাঠ সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। শুধু ঢাকা শহর নয়, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীর গ্রামেগঞ্জে ঘুরে ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছেন বেশকিছু প্রাচীন শিলালিপির পাঠ। আরবি-ফারসি ভাষায় তার দখল প্রশংসনীয়।
মাওলানা ফতেহপুরীকে ইসলামি জ্ঞানের জীবন্ত বিশ্বকোষ বলা হতো। ইসলামি উত্তরাধিকার আইন, আরবি সংখ্যার মানসহ ইসলামি জ্ঞানের নানা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে ছিল তার অগাধ পাণ্ডিত্য। সহজ-সরল ও আদর্শ মানুষের প্রতিচ্ছবি মাওলানা ফতেহপুরী ছিলেন চরিত্রগত দিক থেকে অনুসরণীয়, পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল। নিরহংকার এই ব্যক্তি সবার সঙ্গে মিশতে পারতেন খুব সহজে। মাওলানা ফতেহপুরী আলেম সমাজের গর্ব, বাংলাদেশের গর্ব।
আল্লাহর রাসুল (সা.) এমন কিছু পাপের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন, যা করলে জীবনের সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে। এখানে আমল বিনষ্টকারী তিনটি পাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো
কাউকে ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না’ বলা : ভুলে কিংবা রাগের বশবর্তী হয়ে কারও মন্দকাজ দেখে এ কথা বলা যে আল্লাহতায়ালা তোমাকে কোনো দিন ক্ষমা করবে না। কাউকে ক্ষমা করা বা না করার অধিকার একমাত্র পরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালার। তাই এমন কথা বলা অমার্জনীয় অপরাধ। জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ অমুক লোককে মাফ করবেন না। আর আল্লাহতায়ালা বলেন, সে লোক কে! যে শপথ খেয়ে বলে যে আমি অমুককে মাফ করব না? আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার আমল নষ্ট করে দিলাম।’ মুসলিম : ৬৫৭৫
ইচ্ছাকৃত আসরের নামাজ ছেড়ে দেওয়া : মুমিনের কাছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রকৃত মুমিন কোনো নামাজ ছাড়তে পারে না। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে আল্লাহতায়ালা আসরের নামাজের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। হজরত বুরাইদা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।’ সহিহ বোখারি : ৫৫৩
কথা অথবা কাজের মাধ্যমে আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেওয়া : আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদাররা, তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলো তার সঙ্গে সেরূপ উচ্চস্বরে কথা বলো না; এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সব কাজ বিনষ্ট হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না। সুরা হুজরাত : ২
যারা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মজলিশে ওঠাবসা ও যাতায়াত করত, তাদের এ আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল নবীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তার সময় যেন ইমানদাররা তার সম্মান ও মর্যাদার প্রতি একান্তভাবে লক্ষ রাখেন। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো, আর তোমরা তোমাদের আমল বিনষ্ট করো না।’ সুরা মুহাম্মদ : ৩৩
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে ঘুরেফিরে সংলাপের বিষয়টি আসছে। ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হঠাৎ গত মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপে বসা সংক্রান্ত বক্তব্য ঘিরে আবার আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। অবশ্য এ প্রস্তাব বিএনপির প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমুর মাধ্যমে আসা প্রস্তাবটি হাওয়া থেকে আসেনি। এটা যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে তৃতীয়পক্ষকে সামনে এনে দায় এড়ানোর এক ধরনের কৌশল হতে পারে।
১৪ দলের জনসভায় আমু বলেছেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। এ নিয়ে সরকারের তিনজন মন্ত্রী গতকাল কথা বলেছেন। দুজন বলেছেন, এমন কোনো সংকট হয়নি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ করতে হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সংকট সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই।
তবে বিএনপি আমুর এ প্রস্তাবকে আপাতত আমলে নিচ্ছে না। দলটির নেতারা বলেছেন, লিখিত প্রস্তাব দিলে ভেবে দেখবেন তারা।
প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংলাপে অনীহার কারণও উল্লেখ করেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিলেন। ফলে পথ হারিয়েছিল সংলাপ আলোচনা। তারা পরে গত মঙ্গলবার হঠাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু সংলাপ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
কূটনীতিতে দক্ষ কয়েকজন রাজনীতিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ কোনো সংস্থা নয় যে, কারও প্রস্তাবে মধ্যস্থতায় আসতে রাজি হয়ে যাবে। মধ্যস্থতা চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা চাইলেই কেবল আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি সাড়া দিতে পারে। সুতরাং সরকারেরও সায় রয়েছে এ প্রস্তাবে। তার আগে প্রতিক্রিয়া যাচাই করা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সুফল পাবে মনে করলে সরকার সে পথে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংলাপের ব্যাপারে একেবার অনীহা থাকলে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার মতো নেতা আমির হোসেন আমু নয়। সংলাপের ব্যাপারে সরকারের ভেতর-বাইরে অবস্থান যাই থাকুক, আমুর প্রস্তাবে সরকারের ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া হয়নি।
এ প্রস্তাবের এক দিন পর গতকাল দলীয় একটি আলোচনা সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াব। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।’ বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বলা যায়। কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।’ এর আগে মঙ্গলবার ১৪ দল আয়োজিত জনসভায় তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। কিছুটা কৌশলী বক্তব্য রেখেছেন গতকাল।
এ পর্যায়ে সংলাপের প্রস্তাব উদ্দেশ্যবিহীন মনে করে না ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাও। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ পর্যায়ে বিএনপিও কী প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাও দেখার আছে। প্রস্তাব গ্রহণ করলে এক ধরনের কৌশলে যাবে, প্রস্তাব নাকচ করলে দেশি ও বিদেশি মহলে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে এক ধরনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সেই আশায়ও নতুন করে এ প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা।
সূত্র জানায়, আলোচনায় উঠে এসেছে সরকার বা আওয়ামী লীগ এক ধরনের চাপে পড়েছে। আর সেই চাপ সামলে নির্বাচন তুলে নিতে সংলাপের রাজনীতিকে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘ব্যাকফুটে’ খেলে চার বা ছক্কা হাঁকাতে চায় বলে সংলাপের আওয়াজ দিয়েছে মাঠে। আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে মধ্যস্থতায় রেখে সংলাপের আলোচনা নতুন কোনো শক্তিকে আলোচনায় আনার কৌশলও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতা ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের একাধিক নেতাও দেশ রূপান্তরকে বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া আমু এমন প্রস্তাব কোনোভাবেই দেননি। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের পথ দেখিয়ে মূলত তৃতীয়পক্ষকে আনতে পারে, রাজনীতিতে সে আলোচনা তুলতে চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির নেতাদের একটি অংশ যদিও দাবি করেন, তাদের দলের প্রভাবশালী এ নেতার বক্তব্য সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো ধারণা নেই। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের যে প্রস্তাব দিয়েছেন সে সম্পর্কে তাদের পর্যায়ের নেতাদের কোনো ধারণা থাকার কথা নয়।’ দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ বলেন, ‘এ বক্তব্য সম্পর্কে তারও কোনো ধারণা নেই।’
অবশ্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারেই হাওয়া থেকে এমন প্রস্তাব আসেনি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যমের প্রত্যাশা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংলাপ হতে পারে। হয়তো হবেও। কিন্তু সেই সময় এখনো আসেনি।’
আওয়ামী লীগ সিনিয়র নেতারা মনে করেন, সংলাপ ও আলোচনায় সমস্যা সমাধানে কখনই আগ্রহী নয় বিএনপি। ফলে সংলাপের ডাক দিয়ে দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে আওয়ামী লীগ। সেই কৌশলে সংলাপ আয়োজনে গেলে ক্ষতি কি? সেই পরিকল্পনা থেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আমু সেই পথ দেখিয়েছেন। তাছাড়া হঠাৎ যে চাপে পড়েছে সরকার সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায় কি না, সেটাও দেখা যাবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের প্রস্তাবে।
তবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দলীয় একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব। বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান করেছিলেন। যেখানে বিএনপি দুবার সংলাপে অংশ নিয়েছিল। আলোচনার জন্য জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? আমাদের দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়নি যে জাতিসংঘের এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
একইদিন রাজধানীতে আরেকটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সব দলকে নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে বিশ্বাসী।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলছেন, লিখিত কোনো প্রস্তাব আসে সেটার জবাব কী দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ওই প্রস্তাবে অবশ্যই ‘নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক’ যে নামেই ডাকা হোক, তা এজেন্ডায় থাকতে হবে।
ওই নেতা বলেন, গত মে মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। যদিও ৯ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকে দুই দলের আলোচনায় বসা না বসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে এ প্রসঙ্গে এক নেতা জানান, হয়তোবা তাদের (ক্ষমতাসীনদের) কাছ থেকে প্রস্তাব (সংলাপ) আসতে পারে। কেননা সম্প্রতি তারা নরম সুরে কথা বলছে। তবে স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই এজেন্ডা ছাড়া সেই আলোচনায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মত দেন।
সিনিয়র এক নেতা তার মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বৈঠকে বলেন, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যেসব কথা তিনি দিয়েছিলেন, সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি। আর ২০১৪ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় ৫ জানুয়ারি নিয়মরক্ষার নির্বাচন বলা হলেও ক্ষমতা এসে আর নির্বাচন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তাই এবার বসতে হলে এজেন্ডা নিয়ে বসতে হবে। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক নেতা বলেন, হঠাৎই আওয়ামী লীগ সংলাপের বিষয়ে কথা বলছে না। তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের করণীয় ঠিক রেখেই তাদের সঙ্গে বসতে হবে। ওই এজেন্ডায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। উনি (আমির হোসেন আমু) আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল স্পোকস ম্যান কি না এটা আমি জানি না। আমরা উনার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেব কেন? আমি এর বেশি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সোহরাব হাসান ও তার স্ত্রী হজে যাওয়ার জন্য চার দিন আগে ঢাকায় আসেন। আশকোনার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। গত সোমবার তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা না হওয়ায় তারা এখনো যেতে পারেননি। তাদের এজেন্ট বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে এবং বিমানের একটি ফ্লাইটে জেদ্দায় যাবেন তারা।
সোহরাব হাসানদের মতো অন্তত ১৬ হাজার হজযাত্রীর ভিসা এখনো হয়নি। কবে হবে তা-ও কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব বলছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই সবার ভিসা সম্পন্ন করা হবে।
মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবারের মধ্যেই সবার ভিসার বিষয়টি শেষ করতে বলেছিল। তা না হলে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। অন্যদিকে সৌদি সরকার বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্কবার্তা পাঠায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ৮ হাজার হজযাত্রীর ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আরও তিন দিন সময় চেয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে সরেজমিনে কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালিপনায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে। যাদের ভিসা হচ্ছে না তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয় আশার বাণী শোনাচ্ছে। ভিসাসহ আরও কিছু অভিযোগে ৯০টি হজ এজেন্টকে শোকজ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের আইনের আওতায় আনারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়।
অপরদিকে, হজযাত্রী সংকট থাকায় বিমানের শিডিউল কিছুটা এলোমেলো হওয়ার পাশাপাশি ফ্লাইট বাতিলও হয়েছে। এসব ফ্লাইট নতুন করে চূড়ান্ত করছে বিমান। তা ছাড়া ফ্লাইটের সøট পেতে সৌদি আরবে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে নিয়ে গেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্য যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সবাইকে ২২ জুনের মধ্যে সৌদি আরব পাঠানো হবে। এখনো যাদের ভিসা হয়নি, তাদের আমরা সব ধরনের সহায়তা করছি। আমরাও অভিযোগ পাচ্ছি। আবার তা সমাধানও করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, যেসব এজেন্সি ঘাপলা করছে, তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করেনি ১৬৯টি হজ এজেন্সি। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত বাড়ি ভাড়া করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, চলতি বছর ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ বাংলাদেশি হজ পালন করার অনুমতি পেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯০ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৬ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। মক্কা-মদিনা বাড়িভাড়া, মোয়াল্লেমসহ সৌদি আরবের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে না পারায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। তা ছাড়া ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিগুলোকে সৌদি আরব আরও কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে ফ্লাইটের টিকিট, প্রবেশ ও বের হওয়ার রুট এবং আসা-যাওয়ার তারিখ নিশ্চিত করা অন্যতম। কিন্তু এজেন্সিগুলো শর্ত পূরণ না করায় হজযাত্রীদের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় হজ ফ্লাইট নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিমানের প্রায় প্রতিটি হজ ফ্লাইটইকে খালি আসন নিয়ে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে যাত্রীর সংকট দেখা দেওয়ায় বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। সমস্যা সমাধানে সপ্তাহখানেক আগে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তওফিক আল-রাবিয়াহ চিঠি পাঠিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে। এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েক দিন আগে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া অন্যতম।
সূত্র জানায়, গতকাল বুধবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশকে কড়া সতর্কবার্তা দেয় সৌদি আরব। অন্যথায় বাংলাদেশকে সৌদি আরবের বিধিনিষেধে পড়তে হতে পারে। এমনকি সৌদি সরকারের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা না মানলে বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্তও করা হতে পারে। সৌদি সরকারের এই নির্দেশনার বিষয়টি জানিয়ে সেখানকার বাংলাদেশ হজ অফিস ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠায়। এর পরই মন্ত্রণালয় হজ এজেন্সিগুলোকে জরুরিভিত্তিতে ভিসা কার্যক্রম শেষ করার তাগিদ দেয়।
বিমানের মার্কেটিং শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে মূলত হজ এজেন্সিগুলোর কম পয়সায় প্যাকেজ ঠিক রেখে অতিরিক্ত মুনাফা লোটার মানসিকতায়; বিশেষ করে মদিনায় এ বছর মসজিদের আশপাশের বাংলাদেশি-অধ্যুষিত এলাকার সস্তার হোটেলগুলো সব ভেঙে দেওয়ায় এখন হজযাত্রীদের জন্য দামি বাড়ি ভাড়া নিতে হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয় এড়াতে এজেন্সিগুলো লম্বা সময়ের প্যাকেজের পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। ঢাকায় হজযাত্রীদের ভিসা আবেদনের সময় সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার রসিদ প্রদর্শন না করলে ভিসা দেওয়া হয় না। এতে বেকায়দায় পড়ে হজ এজেন্সিগুলো। তারা হজ ঘনিয়ে আসার আগের সাত দিন ও শেষ হওয়ার প্রথম সাত দিনের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার হিসাব মাথায় রেখে বাড়িভাড়া নেয়। এই একটা কারণেই ঢাকার হজ এজেন্সিগুলো এখন শেষ মুহূর্তে হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া নিয়ে ভিসার আবেদন করার কৌশল নিয়েছে। এতে হজযাত্রী সংকটে বিমান ও সাউদিয়ার বেশ কটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এজেন্সিগুলো চাইছে স্বল্প মেয়াদি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ করতে চায়। তাদের এই মুনাফাকেন্দ্রিক কৌশলের দরুন এত দিন প্রায় অর্ধেক ভিসা সম্পন্ন করা হয়নি।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, তারা ভিসার বিষয়ে ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তবে কড়াকড়ি থাকায় অনেকে ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না। ফরিদপুরের আবদুর রহমান বলেন, এলাকার একটি এজেন্সিকে প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। তারা সঠিক সময়ে ভিসা করতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা জোর দিয়ে বলেছে যে তিন দিনের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা করবে। ওই এজেন্সির লোকজনকে হজক্যাম্পে তলবও করা হয়েছে। তাদের সামনেই বলেছেন, ভিসার ব্যবস্থা করতে না পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন তারা। এখন অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন রহমান।
এ বিষয়ে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সৌদি আরব এমন কৌশল সব সময় নিয়ে থাকে। এ নিয়ে নানা ধরনের আতঙ্ক ছড়ায়। অথচ ৮০ ভাগ ভিসা বুধবার পর্যন্ত হয়ে গেছে। এই হিসাবে আর মাত্র সর্বোচ্চ ১৬ হাজার হজযাত্রী বাকি রয়েছে। এ নিয়ে অযথা কোনো দুশ্চিন্তা বা আশঙ্কা করার কিছু নেই; বরং এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় হজ ব্যবস্থাপনা আরও সুন্দর ও সফলতার সঙ্গেই শেষ করতে পারবেন তারা। তিনি বলেন, শেষ সময়ে এসে ভিসা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ভিসার জন্য সৌদি আরবের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে প্রতিটিই পূরণ করতে হয় এজেন্সির মালিকদের। একটিও পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তারা ভিসা দেয় না।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আমরা তথ্য পাচ্ছি অনেক এজেন্সি এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে তাদের ভিসা দিচ্ছে না। হাবের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’
বিমানের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনো অনেক হজযাত্রীর ভিসা হয়নি তা সত্য। তবে এজেন্সিগুলো আগাম টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছে।’ তিনি জানান, ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে জেদ্দা ও মদিনায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার পাঠানো হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনকে। ২২ জুন শেষ ফ্লাইট।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসা আনাসহ নানা কারণে ৯০টি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। ওই নোটিসে বলা হয়, হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব এজেন্সিকে তাদের নিজেদের সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু করেনি; যা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় অসহযোগিতার শামিল। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘœ সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে, যা ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’-এর পরিপন্থী। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ বিদ্যমান বলেও নোটিসে জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো সঠিকভাবে দিতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সব হজযাত্রীকে পরিবহনে নতুন করে আরও পাঁচটি ফ্লাইটের সøট দিতে সৌদি সিভিল এভিয়েশনকে অনুরোধ জানাতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে কিছুদিন আগে। হজ এজেন্সিগুলোর কারণে এ পর্যন্ত বিমানের কটি ফ্লাইট ধারণক্ষমতার কম যাত্রী নিয়ে পরিচালিত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে, তা জানাতে সংস্থাটির এমডিকে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ফ্লাইটের সøটের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু ফ্লাইট না যাওয়ায় ক্যাপাসিটি লস হয়েছে। ওই ফ্লাইটগুলোতে যতসংখ্যক যাত্রী যাওয়ার কথা ছিল তা কমে গেছে। এ জন্য কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’
রাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ডারিও স্পোর্টকে তিনি জানান, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার এবং বার্সাতে না যেতে পারায়, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নাভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই এবং আকাঙ্খা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরো শান্তিপূর্ণভাবে।’
মেসি জানান, ‘বুসকেটস আর জর্ডি আলবার সাথে যোগাযোগ ছিল, কখনো তাদের সাথে একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দু'বছর পর আবার বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ানো লা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে'র অনুমোদনও দিয়েছিল লিগা কর্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগের বার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশন- সৌদি ক্লাব আল-হিলালের দুবছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করা নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকবে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ইন্টার মিয়ার প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতিবছর শেষ মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে সয়ংক্রিয় ভাবে তিনি পরের বছর খেলবেন। বছর প্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
ফুটবল কিংবদন্তী পেলের গোটা জীবন কেটেছে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে যিনি আলো ছড়িয়েছেন, তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময় যাননি ইউরোপের কোনো ক্লাবে।
তবে ১৯৭৪ সালে ৩৪ বছর বয়সে সান্তোসের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন ফুটবল সম্রাট। পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসে যোগ দেন। সেই বছরের ১৫ জুন ক্লাবটিতে নাম লিখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষজন একটা সময় ফুটবল খেলাই দেখতে যেতেন না, পেলে যোগ দেওয়ার পর ৮০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই পেলে নিউইয়র্ক জয় করেছিলেন।
পেলে কসমসে যাওয়ার ১৫ বছর পর ফের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টুর্নামেন্টের অভিষেক আসরের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে শুধুমাত্র ২০১৮ সাল ছাড়া প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলেছে তারা। ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন। কাতার বিশ্বকাপেও শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়ে হয়েছে ১৪তম দল হয়ে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।