
আত্মহত্যার ভাইরাস সমাজে ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। বিশেষ করে এটা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশি বিদ্যমান। তাদের কাছে জীবনটা যেন খুবই তুচ্ছ, যেন এর কোনো মূল্য নেই। যেন দেহ থেকে প্রাণটা বের হতে আনন্দ পায়! কতই না অদ্ভুত তাদের সিদ্ধান্তগুলো! তারা ভুলে যায়, জীবন হলো সুখ-দুঃখের সংমিশ্রণ। এই জীবনে কখনো পরিপূর্ণ সুখ পাওয়া সম্ভব নয়। সুখ-দুঃখ দুনিয়ারই একটা নিয়ম। কখনো কখনো আপনাকে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আবার কখনো সহজতর প্রশান্তিতে গা ভাসিয়ে চলা যাবে। তাই কঠিন মুহূর্তগুলো উপস্থিত হলে শক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
মানুষ সাধারণত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন না।
পরিস্থিতিগুলো সহজ নয় বটে, কিন্তু তাতে কি সমাধান হয়ে যায়? বস্তুত, আত্মহত্যার আগে মানুষ তাকে যতটা না ঘৃণা করে, তার চেয়ে বহুগুণ ঘৃণা বেড়ে যায় তার আত্মহত্যার পর। মানুষ ধিক্কার দিতে থাকে, এমনকি অভিশাপ দেওয়া থেকে শুরু করে জানাজার নামাজ পর্যন্ত পড়তে চায় না। তাছাড়া মৃত্যুর পরেও দেহটা দেহের অবস্থায় থাকে না। ছিন্নভিন্ন করে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্র্তৃপক্ষ। কতই না লাঞ্ছনা!
আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া মানুষগুলো মনে করে তাদের মৃত্যুতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সব কষ্ট থেকে যেন মুক্তি পেয়ে যাবে। বরং, তাদের কষ্ট তো শুধু শুরু হয় তাদের মৃত্যুর সূচনা দিয়ে। হাদিসে মৃত্যুর সীমাহীন যন্ত্রণার কথা এসেছে, যার সমতুল্য কোনো যন্ত্রণা পৃথিবীর বুকে নেই। অন্যভাবে বলতে গেলে একটি প্রাণীর জীবিত অবস্থায় চামড়া আলাদা করলে যেমনটি হবে, তেমন যন্ত্রণা। তাছাড়া আত্মহত্যাকারী নিশ্চিত জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এখন প্রশ্ন হলো- দুনিয়ার এই সামান্য অপমান, লাঞ্ছনা, কষ্ট ইত্যাদি জাহান্নামের তুলনায় কি একটু বেশি হয়ে গেল? আমার প্রিয় ভাই ও বোন, পথ চলতে হাজারো বাধা-বিপত্তি আসবে এবং সব বাধা-সংগ্রামের সঙ্গে মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আর এটাই দুনিয়ার বাস্তবতা। একমাত্র দুশ্চিন্তামুক্ত প্রশান্তিতে থাকার নাম হলো- জান্নাত। তা এই জীবনে পাওয়া কখনো সম্ভব নয়। তবে আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হওয়া যাবে না। কারণ পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ -সুরা ইউসুফ : ৮৭
অর্থাৎ, কখনো হাল ছাড়া যাবে না, আল্লাহর সাহায্য পাওয়া থেকে নিজেকে কখনো বিমুখ করা যাবে না। কারণ রবকে হারালে সবকিছু হারাবেন। তাই রবের আশ্রয়ে সর্বদা সব সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কারণ সব সমস্যার সমাধান তো শুধু তার কাছেই নিহিত। পাশাপাশি আত্মহত্যার কাছে পৌঁছে দেয়, এমন যাবতীয় কার্যকলাপ থেকেও অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। তাহলে আশা করা যায় যে, এমন ঘৃণিত কাজ আর সংঘটিত হবে না। অতএব, বাঁচতে শিখুন, বেঁচে থাকার মধ্যে অনেক ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা রয়েছে। সর্বদা ভালো কারও সঙ্গ নিন, তাদের পাশে থাকুন। আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে থাকুন।
২০২২ সালের সারা দেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গড় হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৪৪.৩৩ জন। সম্প্রতি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা এক সমীক্ষার এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আত্মহত্যা কী?
আত্মহত্যা মহাপাপ। শিরকের পর সবচেয়ে বড় গোনাহ। সব ফিকাহবিদ এবং চার মাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম। এগুলো আত্মহননকারী ব্যক্তিরও অজানা নয়। তবু হতাশা, অধৈর্য ও পারিবারিক নানা কলহে মানুষ এ পাপের দায় নিয়েও জঘন্য পথটি বেছে নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের জন্য এটি একটি দুঃখজনক বিষয়।
আত্মহত্যা মানে নিজকে নিজে ধ্বংস করা। নিজ আত্মাকে চরম কষ্ট ও যন্ত্রণা দেওয়া। নিজ হাতে নিজের জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। তুচ্ছ পারিবারিক কলহ, বিদ্যালয়ের গমনাগন পথে বখাটেদের উৎপাত, ভালোবাসায় ব্যর্থতা ও প্রতারণা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে তরুণীরা এবং স্বামীর নির্যাতন-অত্যাচার, যৌতুক সমস্যা, স্বামীর অর্থনৈতিক অক্ষমতা, পারিবারিক অশান্তি থেকে বাঁচার পথ হিসেবে অনেক নারী আত্মহত্যাকে বেছে নিচ্ছে। এ সবই ভুল, এসব সমস্যা সব দেশে, সব জাতিতে আছে। আত্মহত্যা এসবের কোনো সুষ্ঠু সমাধান কিংবা সঠিক প্রতিকার নয়।
আত্মহত্যার নিষেধাজ্ঞা কোরআনেও
আল্লাহতায়ালা মানুষকে মরণশীল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। ধনী-গরিব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সবাইকে মরতে হবে। আর এ মৃত্যু দান করেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান আর তার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।’ -সুরা ইউনুস : ৫৬
বর্ণিত আয়াতের স্পষ্ট কথা, মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহর। অতএব কেউ যদি কাজটি নিজের হাতে তুলে নেন, নিজের মৃত্যু ঘটান নিজের হাতে তবে তিনি অনধিকার চর্চাই করবেন। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কেউ অনধিকার চর্চা প্রত্যাশা করে না। ইসলামে তাই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিণামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে মহা পবিত্র কোরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করব, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ -সুরা আন নিসা : ২৯-৩০
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ কোরো না।’ -সুরা বাকারা : ১৯৫
হাদিসের বার্তা
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্যা হাদিসে আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকার জন্য নানাভাবে বারণ করেছেন। এ থেকে মানুষকে সতর্ক করেছেন। যেমন- হজরত সাবিত বিন যাহহাক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে আত্মহত্যা করল- আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নামে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি দেবেন।’ -সহিহ বোখারি : ১৩৬৩, ৬০৪৭, ৬১০৫, ৬৬৫২
অন্য হাদিসে রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪৪২
হজরত জুনদাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জনৈক ব্যক্তি গুরুতর আহত হলে সে তার ক্ষতগুলোর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করল। অতঃপর আল্লাহতায়ালা বললেন, আমার বান্দা স্বীয় জান কবজের ব্যাপারে তড়িঘড়ি করেছে; অতএব আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ -সহিহ বোখারি : ১৩৬৪
মৃত্যু কামনা বৈধ নয়
আত্মহত্যা তো দূরের কথা ইসলাম কোনো বিপদে পড়ে বা জীবন যন্ত্রণায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পর্যন্ত বারণ করেছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’ -সহিহ বোখারি : ৫৬৭১
আত্মহত্যা রোধে করণীয়
মানুষের জীবনের প্রতিটি দিন এক রকম কাটে না। ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন সর্বত্রই পরিবর্তন হতে থাকে। কখনো দিন কাটে সুখে, কখনো কাটে দুঃখে। কখনো আসে সচ্ছলতা। আবার কখনো দেখা দেয় দরিদ্রতা। কখনো থাকে প্রাচুর্য কখনো আবার অভাব-অনটন। কখনো ভোগ করে সুস্থতা কখনো আক্রান্ত হয়ে পড়ে রোগ-শোকে। কখনো দেখা দেয় সুদিন, আবার কখনো আসে দুর্ভিক্ষ। কখনো আসে বিজয়, আবার কখনো আসে পরাজয়। কখনো আসে সম্মান আবার কখনো দেখা দেয় লাঞ্ছনা। এ অবস্থা শুধু বর্তমান আমাদের সময়েই হয়ে থাকে, তা নয়। এটা যুগ যুগ ধরে এভাবেই আবর্তিত হয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারপর আমি মন্দ অবস্থাকে ভালো অবস্থা দ্বারা বদলে দিয়েছি। অবশেষে তারা প্রাচুর্য লাভ করেছে এবং বলেছে, আমাদের বাপ-দাদাদেরও দুর্দশা ও আনন্দ স্পর্শ করেছে।’ -সুরা আল আরাফ : ৯৫
যেহেতু বিপদ-আপদ, কষ্ট-শোক মানুষের নিত্যসঙ্গী তাই সমাজ থেকে আত্মহত্যা নির্মূলে প্রথমত দরকার পুরো সমাজব্যবস্থায় ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের বাস্তব অনুশীলন। কারণ, মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় হতাশার চরম মুহূর্তে। আর অনুশীলনরত মুসলিম জীবনে হতাশার কোনো স্থান নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা! যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সুরা আয যুমার : ৫২
যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যাবতীয় ভালো-মন্দ সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ যা-ই করেন বান্দার তাতে কোনো না কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, সে কখনো নিজের জীবন প্রদীপ নিজেই নিভাবার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে তো হাজার বিপদেও অবিচল থাকবে এ বিশ্বাসে যে আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অবশ্যই তিনি আমাকে পুরস্কৃত করবেন। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রথম দরকার ইসলামি শিক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবন ইসলামের বাস্তবানুশীলন।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে আত্মহত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আত্মহত্যাকারীকে জাহান্নামি বলা হয়েছে। কাজটি এতই গর্হিত যে এর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে অন্যদের এ থেকে সতর্ক করতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মহত্যাকারীর জানাজা ত্যাগ করেছেন। যেমন হজরত জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.)-এর সামনে এক ব্যক্তিকে আনা হলো যে নিজেকে তরবারির ফলা দিয়ে মেরে ফেলেছে। ফলে তিনি তার জানাজা পড়লেন না।’ -সহিহ মুসলিম : ২৩০৯
প্রশ্ন হলো, আত্মহত্যাকারীর কি জানাজা পড়া যাবে না? অনেকে মনে করেন, কেউ আত্মহত্যা করলে তার জানাজা পড়া যাবে না। বর্ণিত হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়।
বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মূলত অন্যদের এমন মন্দ কাজ থেকে সতর্ক করার জন্য আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়ানো থেকে বিরত থেকেছেন। তবে সাহাবিরা এমন ব্যক্তির জানাজা পড়েছেন। তাই গণ্যমান্য আলেম ও বিশেষ ব্যক্তিত্বদের জন্য করণীয় হলো- আত্মহত্যাকারীর জানাজা না পড়ানো। বরং সাধারণ কাউকে দিয়ে তাদের জানাজা পড়িয়ে দেওয়া।
আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামি
কেউ যখন নিজেকে হত্যা করে তখন সে নিজেকে মূলত আল্লাহর গজব ও ক্রোধের শিকারে পরিণত করে। সে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কারণ, তা কোনো শিরকি কাজ নয়। একমাত্র শিরকই এমন গোনাহ আল্লাহ যা ক্ষমা না করার ঘোষণা দিয়েছেন। শিরক ছাড়া যা আছে, তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আর আত্মহত্যা শিরক নয়। তেমনি ব্যভিচার, চুরি, মদপান সবকিছুই গোনাহ বটে। তবে তা শিরক নয়। এসবে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে। কেউ যখন এসব গোনাহে লিপ্ত হয়ে মারা যাবে, আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন। আর তিনি চাইলে তাকে তার অপরাধ অনুপাতে তাকে শাস্তি দেবেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশ্বাসমতে, সে চির জাহান্নামি হবে না। কোনো গোনাহগারই অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে না। খুনি, মদ্যপ কিংবা অন্য কোনো অপরাধীও নয়। কিন্তু ওপরে যেমন বলা হলো, আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, তার অপরাধ অনুযায়ী তাকে আজাব দেবেন তারপর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। একমাত্র আল্লাহকে অবিশ্বাসী মুশরিক-কাফেররাই শুধু জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। যারা আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে; রাসুলুল্লাহর আনীত দ্বীনকে যারা অস্বীকার করেছে।
আত্মহত্যাকারীর জন্য দোয়া
তবে এসবের অর্থ এই নয় যে, কেউ আত্মহত্যা করলে তার জন্য ক্ষমা ও রহমতের দোয়া করা যাবে না। বরং অধিক পাপী হওয়ার দরুন ওই ব্যক্তির জন্য আরও বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। আত্মহত্যা কোনো কুফুরি কাজ নয়, যার মাধ্যমে মানুষ ইমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। দোয়া করা যাবে না কেবল ওই ব্যক্তির জন্য, যে ইমানহীন অবস্থায় মারা যায়। তাদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো অথবা না করো, উভয়টি তাদের ক্ষেত্রে সমান। আল্লাহ তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না। অবশ্যই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে হেদায়েত দেন না।’ -সুরা আল মুনাফিকুন : ০৬
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।