
ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো পায়খানা বা প্রস্রাব করার সময় কেবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ দেওয়া যাবে না। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কেবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ দিয়ে প্রস্রাব-পায়খানা করলে সে গোনাহগার হবে। একইভাবে কেবলার দিকে ফিরে সহবাস করাও নিষিদ্ধ। ইসলামি শরিয়তের এই বিধানের রহস্য হলো, আল্লাহর ঘর ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ পায়খানা-প্রস্রাব করে, তখন যেন সে কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসে। -সহিহ বোখারি : ৩৯৪
প্রজ্ঞাবান আলেমরা এই শরয়ি বিধানের তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তা হলো ১. কাবাঘর আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। কাবাঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শামিল। আর কাবাঘরের প্রতি অসম্মান মহান স্রষ্টার প্রতিই অসম্মন। এ জন্যই আল্লাহ কাবাঘরের তওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতে বলেছেন। আর তা করতে বলেছেন পূতঃপবিত্র অবস্থায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল, নিশ্চয়ই তা অন্তরে বিদ্যমান আল্লাহভীতির অনুকূল।’ -সুরা হজ : ৩২
২. যে ঘরকে আল্লাহ নিজের বলে ঘোষণা করেছেন এবং যেদিকে ফিরে মানুষকে ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেদিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করা সুনিশ্চিত বেয়াদবি। এতে মহান আল্লাহ ক্ষুব্ধ হন। কেননা পৃথিবীর কোনো রাজা-বাদশাহ ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিও তার ঘরের দিকে ফিরে পায়খান-প্রস্রাব করার অনুমতি দেবে না। এই বেয়াদবির কুফল হলো, এর ফলে ব্যক্তির অন্তর থেকে ধীরে ধীরে আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদা লোপ পাবে এবং সমাজের ওপরও তার কুফল পড়বে। কোনো একজন কবি বলেছেন, ‘বেয়াদব ব্যক্তি শুধু নিজেকেই ধ্বংস করে না; বরং পৃথিবীর কোনায় কোনায় তার আগুন ছড়িয়ে দেয়।’
৩. ইমানের দাবি হলো, মুমিনের অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও মর্যাদা বিরাজ করবে এবং তার আচার-আচরণেও তা প্রকাশ পাবে। যেন তার ভেতর ও বাইরের মধ্যে মিল থাকে। এখন কোনো ব্যক্তি যদি মুখে ইমানের দাবি করে এবং কেবলার দিকে ফিরে মল-মূত্র ত্যাগ করে, তবে সে দাবি মিথ্যা ছাড়া কিছুই না। কেননা তার দাবির সঙ্গে আচরণের কোনো মিল নেই। এটা সুস্পষ্ট মুনাফেকি।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করা হলে কম্পিত হয় এবং তার আয়াতসমূহ তাদের কাছে পাঠ করা হলে তা তাদের ইমান বাড়ে। আর তারা তাদের রবের ওপরই নির্ভর করে।’ -সুরা আল আনফাল : ০২
অন্তরসমূহের উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ বিশেষণ, যাকে কোরআন মাজিদ ‘কম্পিত অন্তর’ নামে আখ্যায়িত ও চিহ্নিত করেছে। ইমান যার গভীর পর্যন্ত পূর্ণ করে দিয়েছে এবং তার অঙ্গগুলো রবের কাছে বিনয়াবনত হয়েছে। ফলে তার মর্যাদা সুউচ্চ হয়েছে ও তার সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মহান রবের প্রশংসাপ্রাপ্ত হয়েছে। মুমিন বান্দা ভীতিকর অবস্থা থেকে মুক্ত নয়, যা সে অনুভব করে ওয়াজ-নসিহত ও কোরআন মাজিদের আয়াতসমূহ শোনার পর। যা শ্রবণে তার অন্তর আলোকিত হয়, শরীর শিহরিত হয় ও তার রুহ ঊর্ধ্ব জগতে বিচরণ করে। এই কম্পিত অন্তরগুলোই ইমানের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করে, আনুগত্যের মধ্যে তৃপ্তি পায়, যাবতীয় ফেতনা ও সংশয়ের পথ বন্ধ করে দেয় এবং অন্তরের রোগ থেকে নিরাপদ থাকে। অন্তরে কম্পন সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম হলো আল্লাহর জিকিরে জিহ্বাকে ব্যস্ত রাখা। জিকিরের মাধ্যমে অন্তর পবিত্র হয়, দেহ ও আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং মোনাজাতে তৃপ্তি পাওয়া যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং সুসংবাদ দিন বিনীতদের। যাদের কাছে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে।’ -সুরা আল হজ : ৩৪-৩৫
অন্তর কেঁপে ওঠে কারণ, তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তারা স্মরণ করে, উপদেশ দিলে উপদেশ গ্রহণ করে এবং ভীতি প্রদর্শন করা হলে ভীত হয়। সবচেয়ে বড় জিকির হলো কোরআন তেলাওয়াত করা ও তার আয়াতসমূহ মধুর সুরে পাঠ করা। সুতরাং যে ব্যক্তি কোরআনের দিকে ধাবিত হবে ও হৃদয়কে কোরআনের জন্য প্রশস্ত করবে এবং তার ছায়াতলে জীবন ধারণ করবে; তার অন্তর হবে নরম, হৃদয় হবে কম্পিত, তার মধ্যে আল্লাহর ব্যাপারে ভয় ও লজ্জার সৃষ্টি হবে এবং তার ইমান বৃদ্ধি পাবে। আমরা কীভাবে অন্তরের প্রাঞ্জলতা, শিহরণ ও ভয়ের আশা করব যদি আমরা অন্তরকে পরিপূর্ণ করে রাখি এমন বিষয় দ্বারা, যা রবের উপদেশ গ্রহণে প্রতিবন্ধক।
আপনি যদি আপনার অন্তরকে কোরআনের কাছে না পান, তাহলে কোথায় পাবেন? আপনি যদি অন্তরে উপদেশ ও কোরআনের প্রভাব অনুভব না করেন, তাহলে তার কারণ অনুসন্ধান করুন এবং এই রোগের চিকিৎসা করুন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর এসব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্য পেশ করি, আর জ্ঞানী লোকেরা ছাড়া কেউ তা বুঝে না।’ -সুরা আল আনকাবুত : ৪৩
অন্তরে কম্পন সৃষ্টির আরেকটি মাধ্যম হলো আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করা। আর এগুলোকে সম্মান করা আল্লাহর আদেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নামান্তর। সুতরাং আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) যেগুলোকে সম্মানিত করেছেন তা-ই সম্মানিত। আর এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অন্তরের বিশুদ্ধতার পরিচায়ক। অন্তরে কম্পন সৃষ্টির আরেকটি মাধ্যম হলো, এটাকে জ্ঞানের পাত্রে পরিণত করা যা আল্লাহর কাছে পৌঁছায় এবং তার সুন্দর নাম ও উন্নত গুণাবলির মাধ্যমে আল্লাহকে জানার দাবি রাখে।
অন্তরে কম্পন সৃষ্টির আরেকটি মাধ্যম হলো তওবা, বারবার ইস্তিগফার করা ও দ্রুত পাপ থেকে তওবা করতে গাফিলতি না করা। যেহেতু অন্তরকে পরিশুদ্ধকারী এসব বিষয় ছাড়া অন্তরের কম্পন অর্জিত হয় না। সুতরাং রুগ্ণ অন্তর কীভাবেই বা কম্পিত হবে? উদাসীন হৃদয় কীভাবে ভীত হবে? মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা উভয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করো (তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর), কারণ তোমাদের উভয়ের অন্তর তো বাঁকা হয়ে পড়েছে।’ -সুরা আত তাহরিম : ০৪
সৎকাজ সম্পাদন করা, দানে অভ্যস্ত হওয়া এবং নানাবিধ সৎকর্ম পালন করায় হৃদয়ে কোমলতা, ভয়, কম্পন ও নম্রতা তৈরি হয়। সেই সঙ্গে বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ, মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকা পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, দুনিয়াবিমুখ করে এবং ব্যর্থতা ও উদাসীনতা থেকে হৃদয়কে উজ্জীবিত ও জাগ্রত করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যার আছে অন্তঃকরণ অথবা যে শ্রবণ করে মনোযোগের সঙ্গে।’ -সুরা কাফ : ৩৭
কাজেই যে ব্যক্তি নিজের অন্তরের পরিচর্যা করে ও আল্লাহর সঙ্গে সততা বজায় রাখে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথ দেখাবেন ও সরল পথের ওপর অবিচল রাখবেন। বিজ্ঞ লোকেরা তাদের অন্তরের পরিচর্যা করে। আর অন্তর আল্লাহর দুই আঙুলের মধ্যে অবস্থিত, তিনি যেভাবে চান তা পরিবর্তন করেন। আল্লাহ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত নবী করিম (সা.)-ও অন্তর পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা পোষণ করতেন। তাই অন্তরের অবিচলতার জন্য তার নিয়মিত দোয়া ছিল ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিক। অর্থ : হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অটল রাখুন।’ তাহলে অন্যদের অবস্থা কী রকম?
যখন আল্লাহ বান্দাকে তাকওয়া ও অন্তরের ভয় অর্জনের যোগ্য হওয়ার তওফিক দেবেন, তখন সে অচিরেই এর সুফল লাভ করবে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা উপভোগ করবে। অন্তরে আল্লাহভীতির অন্যতম ফল হলো উভয় জগতের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন লাভ। কেননা তারাই কেয়ামতের দিন বলবে, ‘নিশ্চয় আগে আমরা পরিবার-পরিজনের মধ্যে শঙ্কিত অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন।’ -সুরা আত তুর : ২৬-২৭
আল্লাহর সঙ্গে নিভৃতে মোনাজাত ও তার বন্ধুত্বের স্বাদ ছাড়া যদি হৃদয়ের ভীতির কোনো ফলাফল না থাকত, তবুও সেটিই হতো শ্রেষ্ঠ অর্জন ও আনন্দের উপলক্ষ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন প্রহরে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখেরাতকে ভয় করে এবং তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, (সে কি তার সমান, যে তা করে না?) বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে।’ -সুরা যুমার : ০৯
হৃদয়ের মধ্যে আল্লাহর ভীতির অন্যতম ফলাফল হলো এটি ব্যক্তিকে সৎকাজে প্রতিযোগিতা করতে অনুপ্রাণিত করে এবং তার দোয়া কবুল হয়। আল্লাহর ব্যাপারে কোনো ব্যক্তির হৃদয়ে ভয়ভীতি এবং শঙ্কার পরিমাণ অনুপাতে সে ফেতনা ও কুপ্রবৃত্তি থেকে নিরাপদে থাকবে এবং আল্লাহ তার কাছে ইমানকে প্রিয় করে দেবেন ও সেটাকে তার হৃদয়গ্রাহী করবেন। অনুরূপভাবে সে ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য নয় যে, সে ফাসাদপ্রিয়দের পথে চলবে; বরং সে নিজে তা থেকে মুক্ত এবং সমাজে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। কেননা প্রকৃত মুসলিম তো সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলিমরা নিরাপদ।
হৃদয়ের কম্পন সৃষ্টজীবের প্রতি দয়া, পারস্পরিক আচরণে নম্রতা এবং অন্যদের রূঢ় আচরণের বিপরীতে সদয় আচরণের ফল দেয়। ভীত হৃদয়ের ব্যক্তি আল্লাহর রহমত লাভ করে। যে ব্যক্তি হৃদয়ের ভীতি, শঙ্কা এবং অন্তরের ব্যাধি থেকে হৃদয়ের নিষ্কলুষতার মতো অন্তরের গুণাবলির মধ্য থেকে এই মহান গুণটি অর্জনের ইচ্ছা করবে; তার কর্তব্য হলো আল্লাহর ভালোবাসা বাস্তবায়িত করা, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা প্রাপ্তির প্রত্যাশা করা এবং তার আমল হয়তো তিনি কবুল করবেন না এই ভয়ে থাকা।
৩ ফেব্রুয়ারি মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
১. তোমাদের মধ্যে সর্বসেরা সে, যে কোরআন শিখে এবং শেখায়। -সহিহ বোখারি : ৫০২৭
২. নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে, যে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম আচরণের অধিকারী। -সহিহ বোখারি : ৬০৩৫
৩. তোমাদের মধ্যে সর্বসেরা ব্যক্তি সে, যে ঋণ পরিশোধের বেলায় ভালো। -সহিহ বোখারি : ২৩০৫
৪. তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যার কাছ থেকে সবাই কল্যাণ আশা করে, অনিষ্টের আশঙ্কা করে না। -জামে তিরমিজি : ২২৬৩/২৪৩২
৫. তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে, যে তার পরিবারের কাছে ভালো। -ইবনে হিব্বান : ৪১৭৭
৬. তোমাদের মধ্যে সে সর্বোত্তম, যে খাদ্য দান করে এবং সালামের জবাব দেয়। -সহিহুল জামে : ৩৩১৮
৭. তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে ব্যক্তি, যে নামাজে কোমল-স্কন্ধ। অর্থাৎ কেউ নামাজের কাতারে প্রবেশ করতে চাইলে কাঁধ কোমল করে তাকে সুযোগ দেয়। -সুনানে আবু দাউদ : ৬৭২
৮. সেরা মানুষ সে, যার বয়স দীর্ঘ এবং কর্ম ভালো হয়। -জামিউল আহাদিস : ১২১০১
৯. সেরা মানুষ সে, যে মানবতার জন্য অধিক কল্যাণকর-উপকারী। -সহিহুল জামে : ৩২৮৯
১০. শ্রেষ্ঠ মানুষ হলো সে, যার অন্তর পরিচ্ছন্ন এবং মুখ সত্যবাদী। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, সত্যবাদী মুখ বুঝা গেল, কিন্তু পরিচ্ছন্ন অন্তরবিশিষ্ট কে? নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, যে অন্তর স্বচ্ছ-নির্মল, মুত্তাকি, যাতে কোনো পাপ নেই, বাড়াবাড়ি বা জুলুম নেই, নেই খেয়ানত ও বিদ্বেষ। -সহিহুল জামে : ৩২৯১
১১. মহান আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আর আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে যে তার প্রতিবেশীর কাছে উত্তম। -জামে তিরমিজি : ১৯৪৪
ময়মনসিংহ জেলা সদরে প্রায় ১২৫০ একর জায়গাজুড়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। সবুজ শ্যামলে ভরপুর ক্যাম্পাসে ঢুকলেই কৃষি অনুষদের পাশে চোখে পড়ে বৃহৎ মিনারের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য স্থাপত্যের মধ্যে এটি অন্যতম। মসজিদটির অসাধারণ নির্মাণশৈলী ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে এক নতুন রূপ দিয়েছে। দেশের বৃহত্তর এক গম্বুজের মসজিদ এটি।
চতুর্ভুজ আকৃতির এই মসজিদের তিনটি অংশ রয়েছে। মূল ভবনটি মসজিদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে অবস্থিত। মূল ভবনে ২৬ কাতারে নামাজ পড়া যায়। মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি বারান্দা। বারান্দায় নামাজ পড়ার জন্য ১৩টি কাতার রয়েছে। মূল অংশ এবং বারান্দা মিলে ৩৯টি কাতারে প্রায় ৪ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মূল মসজিদের ঠিক মধ্যখানে ১২টি পিলারের ওপর স্থাপিত একটি সুবিশাল গম্বুজ, যেটিকে দেশের এক গম্বুজের মসজিদগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ গম্বুজ বলে জানা যায়। এটিই মূলত এই মসজিদের স্থাপত্যশৈলীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। গম্বুজের ওপর রয়েছে একটি অর্ধ চাঁদ।
মসজিদের আঙিনাকে মূল ক্যাম্পাস থেকে পৃথক করার জন্য চারধারে রয়েছে দৃষ্টি আকর্ষণীয় দেয়ালে ঘেরা তিনটি করিডর, যা মসজিদের বারান্দার একপাশ থেকে শুরু হয়ে অন্যপাশে গিয়ে শেষ হয়েছে। এসব করিডরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাগানবিলাস ফুলের সমারোহ, যা মসজিদটিতে এনে দিয়েছে এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য। মসজিদের বারান্দায় প্রবেশ করার জন্য পূর্ব পাশে দুটি, উত্তর এবং দক্ষিণে দুটিসহ চারটি দরজা রয়েছে। এরপর বারান্দা থেকে মসজিদটির মূল ভবনে প্রবেশ করতে আটটি দরজা রয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের পশ্চিম পাশে মুসল্লিদের অজু করার জন্য রয়েছে একটি অজুখানা। পূর্ব পাশে রয়েছে একটি বিস্তৃত খোলা মাঠ।
মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে। সে বছরের ৩০ এপ্রিল মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. আবুল কালাম মুহাম্মদ আমীনুল হক। দুই বছর পর ১৯৯৫ সালে ২ জুন মসজিদটির উদ্বোধন করে উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক।
মসজিদটিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও শুক্রবার জুমার নামাজ পড়া হয়। শুক্রবার মসজিদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীতে মসজিদটি ভরে ওঠে কানায় কানায়। জুমা ছাড়াও বৃহৎ পরিসরে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।