
হৃদয়ের আরবি কলব। কলব অর্থ দিক পরিবর্তন করা, স্থান ত্যাগ করা, উল্টানো, ফেরানো। কলব যেহেতু দ্রুত পরিবর্তনশীল, এক অবস্থায় বেশিক্ষণ স্থির থাকে না, তাই অন্তরকে আরবিতে কলব বলা হয়। নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘কলব তৃণশূন্য মাঠে পড়ে থাকা পালকের মতো, যাকে বাতাসের গতি এদিক-সেদিক ঘুরাতে থাকে।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৮৫
অন্তর যেন আল্লাহর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, তাই নবী করিম (সা.) প্রায়ই দোয়া করতেন- ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলু-ব সাব্বিত কালবি আলা দি-নিক’ বলে। অর্থ ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তুমি তোমার দ্বীনের ওপর সুদৃঢ় রাখো। -জামে তিরমিজি : ৩৫২২
মানব দেহের আসল চালিকাশক্তি কলব। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মনে রেখো, মানব দেহের ভেতরে একটি গোশতপি- আছে, যা ভালো থাকলে গোটা শরীর ভালো থাকে, তা নষ্ট হয়ে গেলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেই গোশতপি-টিই হলো- কলব। -সহিহ বোখারি : ৫২
বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, কলবই দেহের প্রধান বস্তু। আর এ কারণে কলবকে পরিচ্ছন্ন রাখা অপরিহার্য।
পরিচ্ছন্ন হৃদয় কেন প্রয়োজন : কেয়ামতের দিন পরিচ্ছন্ন হৃদয়ই মানুষের উপকারে আসবে। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, সে দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না, কেবল যে ব্যক্তি কলবে সালিম তথা পরিষ্কার হৃদয় নিয়ে হাজির হবে (সেই হবে সফলকাম)। -সুরা শুয়ারা : ৮৮-৮৯
হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা তোমাদের বাহ্যিক আকৃতি ও সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টি দেন।’ -সহিহ মুসলিম : ২৫৬৪
কলব পরিষ্কারের উপায় : মানুষের হৃদয় কীভাবে পরিচ্ছন্ন হবে সে বিষয়ে কোরআন-হাদিসের আলোকে অভিজ্ঞজনরা বলেছেন, অন্তরের দশটি রোগ আছে, যেগুলোর চিকিৎসা করলে আশা করা যায়, আল্লাহ অন্তর বিশুদ্ধ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেবেন। অন্তরের ১০টি রোগ হলো বেশি খাওয়া এবং ভালো খানার প্রতি লোভ, অধিক কথা বলা, অহেতুক রাগ, হিংসা, কৃপণতা ও সম্পদের মোহ, খ্যাতি ও পদের মোহ, দুনিয়াপ্রীতি, অহংকার, আত্মতুষ্টি ও লোক দেখানো মনোভাব। এই অভ্যাসগুলো পরিহার করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসুল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে এবং তাদের পরিশুদ্ধ করে আর তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৬৪
বর্ণিত আয়াতে নবী পাঠানোর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। ক. কোরআন তেলাওয়াত, খ. অন্তর পরিশুদ্ধকরণ ও গ. হিকমত শিক্ষা দেওয়া। অন্তর পবিত্রকরণ বলতে, আকিদা, আমল এবং নৈতিকতার সংশোধনকে বুঝায়।
ঢাকার অন্যতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লালবাগ মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ। খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন লালবাগ শহীদনগর মাক্কী মসজিদে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশে হাদিসচর্চা, গবেষণা, তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধসহ সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- জামিল আহমদ
দেশ রূপান্তর : কওমি মাদ্রাসায় হাদিসের উচ্চতর বিভাগের পড়াশোনা কি সন্তোষজনক?
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ : কওমি মাদ্রাসাগুলোতে একবাক্যে হাদিসের উচ্চতর বিভাগের পড়াশোনা সন্তোষজনক এটা বলা কষ্টকর। তবে, একেবারেই যে পড়াশোনা হচ্ছে না- সেটাও বলা যাবে না। যে পরিমাণে কাজ হচ্ছে, তা সন্তোষজনক নয়। আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আপনার দৃষ্টিতে কোন বিষয়ে ঘাটতি আছে বলে মনে হয়?
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ : ঘাটতি অনেক বিষয়ে, এর অন্যতম হলো প্রতি বছর মাদ্রাসাগুলো থেকে যে হারে আলেম বের হন, সেভাবে উল্লেখ করার মতো গবেষণা নেই। মুফতি হওয়ার প্রতি যেমন ঝোঁক, এর সিকিভাগও দেখা যায় না হাদিস নিয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে; এর দায় প্রতিষ্ঠানগুলোরও। কারণ, হাদিসের উচ্চতর গবেষণার বিষয়কে সমাজে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। আবার যারা গুরুত্ব দেন কিংবা মূল্যায়ন করেন, তারা সেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পান না। গবেষণা যেহেতু অনেক পরিশ্রমের কাজ ও সময়সাকূল্য বিষয় এ কারণে সক্ষমতা থাকার পরও অনেকে এগিয়ে আসেন না। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
আমি মনে করি, যেকোনো বিষয়ে নিয়ে গবেষণা, পড়াশোনার কোনো সীমা নেই। বাংলাদেশে হাদিসের উচ্চতর বিভাগের পড়াশোনা চূড়ান্ত না। এটাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে দাওরায়ে হাদিসকে যদি দুই বৎসরে করা যায়, তাহলে হাদিস নিয়ে গবেষণার প্রাথমিক কাজ সহজ হয়ে যেত। কেননা হাদিসের কিতাবগুলোর মধ্যে সিহাহ সিত্তাসহ বড় বড় কিতাবগুলো দাওরায়ে হাদিসেই পড়ানো হয়। যদিও আমার কাছে এসব হাদিসের কিতাব পড়ানোর জন্য এক বছর যথেষ্ট সময় নয়।
তরুণ আলেমরা হাদিস নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে প্রথমে দরকার এমন মুরব্বির সঙ্গে পরামর্শ করা, যে মুরব্বি তার সার্বিক অবস্থা জানেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যে পরামর্শ দেন, তা গ্রহণ করে গবেষণায় মনোনিবেশ করা। সেটা এমন হতে পারে, বাংলাদেশের চলমান উচ্চতর হাদিস বিভাগে ভর্তি হয়ে গবেষণার কাজ শুরু করা। কোর্স শেষে এক বা একাধিক হাদিস বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া। আশা করি, কয়েক বছর গবেষণা চালিয়ে গেলে হাদিসে প্রাজ্ঞ, গবেষক হতে পারবে তরুণ আলেমরা।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো মুহাদ্দিস সাহেব হুজুরখ্যাত মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ (রহ.)-এর ছাত্র। শিক্ষক হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন? ছাত্রদের কোন বিষয়ের প্রতি জোর দিতেন?
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ : উপমহাদেশের ইলমে হাদিসের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ (রহ.)। সবার কাছে তিনি ‘মুহাদ্দিস সাহেব হুজুর’ নামে পরিচিত ছিলেন। হেদায়াতুল্লাহ সাহেব হুজুর (রহ.)-এর সান্নিধ্যে অল্প কিছুদিন থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। হুজুরের কাছে মিশকাত শরিফ ১ম খন্ড সম্পূর্ণ পড়েছি। হুজুরের পড়ানোর ধরন ছিল অত্যন্ত উন্নতমানের। কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতেন। তার মতো করে ওই সময়ে আরও কেউ বিষয়ের গভীরে গিয়ে আলোচনা করতেন না। তিনি প্রত্যেকটি হাদিসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম-সাময়িক মাসয়ালাসহ অনেক খুঁটিনাটি প্রয়োজনীয় বিষয় উপস্থাপন করতেন। ক্লাস শেষে ছাত্রদের কাছে জানতে চাইতেন, পড়া নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন আছে কি না? প্রশ্ন থাকলে, কোনো অংশ বা আলোচনা না বুঝলে তিনি বুঝিয়ে দিতেন। সামান্য বিরক্ত হতেন না। তিনি মনেপ্রাণে কামনা করতেন, ছাত্ররা মেহনত করুক।
তিনি ছাত্রদের যে বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখতেন তা হলো- শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তার আচার-ব্যবহার, আমল-আখলাক, শিষ্টাচার, সামাজিকতা যথাযথভাবে হচ্ছে কি না। যদি কোনো ঘাটতি থাকে তা পূরণে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতেন।
এখনকার ছাত্রদের মধ্যে আগের মতো মেহনতের মেজাজ নেই। আগে যেমন নিজের দক্ষতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করত ছাত্ররা, নোট লিখত, পরস্পরে আলোচনা করে নতুন নতুন বিষয় সামনে আনত, এখন ছাত্রদের মধ্যে সেই প্রবণতা নেই বললেই চলে। এখনকার ছাত্রদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- মোবাইল। শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে মনোযোগী কম। এ অবস্থা নিরসনে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলসহ শিক্ষক ও অভিভাবকদের একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।
দেশ রূপান্তর : আরব বিশ্ব কিংবা অন্যদেশের তুলনায় আমাদের দেশের মুহাদ্দিসরা কম লেখেন, এর কারণ কী?
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ : অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের মুহাদ্দিসরা লেখার ক্ষেত্রে বেশ পেছনে। অনারবের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মুহাদ্দিসরা অনেক লেখালেখি করেন। বাংলাদেশে এর কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো- অর্থনৈতিক সমস্যা। এটা আগেও ছিল। অনারবের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের আলেমরা যেমন সচ্ছল সেভাবে আমাদের দেশের উলামায়ে কেরাম সচ্ছল না। তবে আমাদের উলামায়ে কেরাম সচ্ছল হচ্ছেন ধীরে ধীরে। আরেকটা জিনিস হলো, লেখালেখির মেজাজ সবার হয়ে ওঠে না। আবার যাদের লেখালেখির মেজাজ আছে, তাদের অন্যান্য ব্যস্ততার কারণও উপস্থিত থাকে।
দেশ রূপান্তর : সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে, এর পেছনে কোন কারণ দায়ী বলে মনে করেন?
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ : প্রত্যেক মানুষের একটা লক্ষ্য স্থির থাকা দরকার। যদি লক্ষ্য স্থির না থাকে তাহলে কী করবে কী করবে না- জানে না, হতাশায় ভুগতে থাকে। এক সময় সেটা আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায়। আত্মহত্যা করার অনেক কারণ আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো- তাকদিরের ওপর অবিশ্বাস। তাকদিরের ওপর বিশ্বাস থাকলে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি সামনে এলেও কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না। এ ছাড়া ঋণগ্রস্ত হওয়া, পরিবারিক মনোমালিন্য, কর্ম অথবা শিক্ষাক্ষেত্রে জটিলতা, বন্ধু-বান্ধব দ্বারা ক্ষতিসাধন, শারীরিক অসুস্থতা কিংবা জন্মগত কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ভয় ও কলঙ্ক থেকে বাঁচতে লজ্জায় অনেকে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
দেশ রূপান্তর : আত্মহত্যারোধে ইসলামের নির্দেশনা কী?
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ : আত্মহত্যা তো শরিয়তে জায়েজ নেই। বরং আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি কঠিন শাস্তির কথা হাদিসে বলা হয়েছে। দুনিয়ায় আত্মহত্যাকারীর প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মায়। পারিবারিক ও সামাজিক নানা সংকট থেকে মানুষ আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়। চরম হতাশা, বিপদে অধৈর্য হয়ে আর অনিয়ন্ত্রিত জেদ-অভিমানই আত্মহত্যার মূল কয়েকটি কারণ। মনে রাখতে হবে, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর কোনো সংকটই স্থায়ী হয় না। বিলাসিতা, উচ্চাকাক্সক্ষা ও অতিভোগ মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। অথচ অল্পে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা। অধৈর্য মানুষকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়। মানবজীবনে ধৈর্যের চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু নেই। ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সান্ত¡না হলো যারা ধৈর্যশীল তাদের সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সঙ্গ থাকে। দুঃখ-দুর্দশা যত সংকটই আসুক না কেন, সব কিছুতেই আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
আত্মহত্যা থেকে বাঁচতে বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা। রাসুল (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক জীবন পরিচালনার চেষ্টা করা। এভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ হতাশাগ্রস্ত মানুষ কোরআন-হাদিসের অমীয় বাণীগুলো আত্মোপলব্ধি করতে পারলে, নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
দেশ রূপান্তর : পাঠকদের উদ্দেশ্যে আপনার কিছু বলার আছে কি?
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ : জীবনকে কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালনার চেষ্টা করা। এতে দুনিয়াতে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাবেন। আল্লাহতায়ালাকে ভয় করুন, পরকালের কথা বেশি বেশি স্মরণ করুন। বান্দার হকের প্রতি যত্নবান হোন। কেননা বান্দার হক নষ্ট করলে পরকালে মুক্তি পাবেন না। কোনো বিপদ এলে হতাশ না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করুন। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন।
বিশ্বের পর্যটকদের অন্যতম আগ্রহ দুবাইয়ের শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। আমিরাতের সর্ববৃহৎ এই মসজিদের সুবিশাল প্রাঙ্গণ দেখে মুগ্ধ হয় সবাই। ২০০৭ সালে ৫৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে এর কাজ শেষ হয়। পারস্য, মোগল ও মরিশ স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি নান্দনিক এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। তাতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটে।
অবাক করা ব্যাপার হলো, অবিকল এমনই একটি মসজিদ আছে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের সোলো শহরে। ২০২১ সালের মে মাসে ঐতিহ্যবাহী এই শহরে আমিরাতের প্রায় দুই শ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়নে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২৭ হাজার ৪৯২ বর্গমিটার আয়তনের মধ্যে ৮ হাজার ৪৪১ বর্গমিটার স্থানে মসজিদের মূল ভবনটি নির্মিত হয়। মসজিদের মধ্যখানে একটি বড় গম্বুজের পাশে চারটি মাঝারিসহ মোট ৫৬টি গম্বুজ, চারপাশের চারটি মিনার ও মূল ভবনের ৩২টি স্তম্ভ মুগ্ধ করে দর্শকদের। এর মেঝেতে আছে অরনেট কাপড়, যা ঐক্যের প্রতীক মনে করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে একসঙ্গে ১০ হাজারের বেশি মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।
আমিরাতের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামেই মসজিদটির নাম ‘শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ’ দেওয়া হয়েছে। মসজিদটি আমিরাত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি মানবতা ও সহনশীলতার মূল্যবোধ প্রচারের স্মারক। মসজিদ ঘিরে আঞ্চলিক ঐতিহ্য ও ইসলামি স্থাপত্যের ছাপ। মসজিদটির মধ্যে একটি ইসলামিক সেন্টার রয়েছে। তাতে আমিরাত সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা আছে। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর উপস্থিতিতে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়।
২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সম্মাননায় আমিরাতের কূটনৈতিক এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ। তা ছাড়া দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের স্বীকৃতি হিসেবে আবুধাবির ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারের পাশে আল-মারিদ স্ট্রিটের নাম পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো স্ট্রিট রাখা হয়। ১৯৭৬ সালে ইন্দোনেশিয়া ও আমিরাতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়। এর দুই বছর পর আবুধাবিতে ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস খোলা হয়।
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।