
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম। দারুস সুন্নাহ ওয়াল ফিকর, মিরপুরের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং মিরপুর সাংবাদিক এলাকার মসজিদে ফারুকের খতিব। হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন- রমজানের আমল, ইমামের গুণাবলি ও হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতাসহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জামিল আহমদ
দেশ রূপান্তর : বায়তুল মোকাররমে প্রথম ইমামতির স্মৃতি?
মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমি : ছাত্রজীবনে পল্টন ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ইসলামি অনুষ্ঠানে মাঝে-মধ্যে আসতাম। তখন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ঘুরে ঘুরে দেখতাম। নামাজের সময় নামাজ আদায় করতাম। তখন আকারে ছোট থাকলেও পরিবেশ ছিল খুব সুন্দর। এখন আকার বড় হলেও বিভিন্ন কারণে জাতীয় মসজিদে আগের সেই মনোরম পরিবেশ নেই।
২০০৬ সালের ডিসেম্বরে যখন প্রথমবার ইমামতি করলাম, জায়নামাজে দাঁড়ানোর আগে কিছুটা ভয় কাজ করছিল জাতীয় মসজিদ বলেই, ভয়ে ভয়ে নামাজ পড়ানোর পর অন্তর থেকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছি। যেখানে নামাজ পড়ানোর স্বপ্ন ছিল সেখানের ইমাম হয়েছি। এখন সিনিয়র পেশ ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আর এটা হয়েছে আমার উস্তাদবৃন্দ ও মা-বাবার দোয়ার বরকতে।
দেশ রূপান্তর : ইমামদের কাছে রমজান মাস কি আলাদা কিছু?
মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমি : সব মাসই ইমামদের কাছে সমান। তবে রমজান মাস একটু বেশি গুরুত্ববহ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমামরা হলেন দায়িত্বশীল।’ সেই দায়িত্ব শুধু নামাজের ক্ষেত্রে নয়। তিনি সমাজকে নেতৃত্ব দেবেন। সাধারণ মানুষকে পথ দেখাবেন। সংগত কারণেই রমজান মাসে এ দায়িত্ব বেড়ে যায় বলে মনে করি। রমজান হলো- ইবাদতের বসন্তকাল। তাই নিজে বেশি বেশি ইবাদতে মশগুল হওয়ার পাশাপাশি সমাজের সবাই যেন ইবাদতে বেশি বেশি মশগুল থাকতে পারে সেই চিন্তা থেকে দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করা। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান হলো- একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর মাস। অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও দয়া দেখানোর মাস।’ কাজেই সমাজের বিরাজমান সমস্যাবলি (মানুষে মানুষে দূরত্ব, হিংসা ইত্যাদি খুব বেশি) দূরীকরণে ভূমিকা রাখো। সমাজের হতদরিদ্র, যারা আর্থিক সমস্যার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তশালীদের পেছনে মেহনত করা। মানবিক কাজে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা একজন ইমাম সাহেব সবচেয়ে বেশি করতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : একজন আদর্শ ইমামের কী কী গুণ থাকা উচিত বলে মনে করেন।
মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমি : আদর্শ ইমামের গুণাবলি অনেক। মৌলিকভাবে, ইমাম হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকবে। ব্যক্তিজীবেন তিনি তাকওয়াবান ও পরহেজগার হবেন। অর্জিত জ্ঞানের আমল থাকবে। আকিদাগতভাবে সহিহ আকিদার অনুসারী হবেন। দেশ ও জাতির উদ্ভূত নানাবিধ সংকট নিরসনে এগিয়ে আসা এবং সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতার পাশাপাশি সংকটকালীন দিকনির্দেশনা দেবেন।
দেশ রূপান্তর : সমাজে ইমামদের আশাতীত প্রভাব নেই। কেন নেই?
মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমি : সমাজে ইমামদের আশাতীত প্রভাব না থাকার অনেক কারণ রয়েছে। সবগুলো আলোচনা করার মতো নয়। তবে মোটাদাগে আমার কাছে মনে হয়, যারা ইমাম আছি তাদেরই দুর্বলতা বেশি। হয়তো আমলের কমতি, আখলাকে ঘাটতি কিংবা তাকওয়া কমসহ অনেক দুর্বলতা রয়েছে। তাই আশাতীত প্রভাব পড়ছে না। সমাজে প্রভাব বিস্তারের জন্য ইমামদের উচিত, নিজেকে আগে পরিশুদ্ধ করা, জ্ঞানার্জনে পাকাপোক্ত হওয়া এবং পরিপূর্ণ আখলাকি (চরিত্রবান) মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। এসবের সমন্বয়ে নিজেকে গড়তে পারলেই একজন ইমাম সমাজে প্রভাব বিস্তারে সফল হবেন। ইমাম তখন সত্যিকারের ইমামে (নেতা) পরিণত হবেন।
দেশ রূপান্তর : ইমামদের নিয়ে আপনার কোনো স্বপ্ন আছে?
মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমি : অবশ্যই আছে। আমি মনে করি, দেশের সব ইমামের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ থাকা উচিত। এমন একটা প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ থাকা, যেখানে দুনিয়ার কোনো স্বার্থ থাকবে না, থাকবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকলে দুনিয়াতে লাভবান হবেন, মুক্তি পাবেন পরকালেও। তাদের কাজ হবে, দেশ-জাতি ও ধর্মীয় যেকোনো ইস্যুতে একযোগে ভূমিকা রাখা।
আরেকটা বিষয় হলো- শহর বা শহরতলি এলাকার মসজিদগুলোর ইমামরা মোটামুটি সম্মানী পেলেও মফস্বলের ইমামরা কিন্তু সেভাবে সম্মানী পান না। অনেক জায়গায় দেখা যায়, অনেকদিনের সম্মানী অপরিশোধিত রয়ে গেছে। এ অবস্থা নিরসনে সরকারি-বেসকারিভাবে একটি ফান্ড তৈরি করা, যেখান থেকে ইমামদের বিপদে-আপদে, সংকটে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করা যায়।
আমার কাছে মনে হয়, মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে ইমামের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরি বিষয়। ইমাম এমন হবেন না, কমিটি থেকে নির্দেশ এলো এটা করেন; ইমাম সাহেব তা পালন করবেন। বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ই তিনি যুক্ত থাকবেন, নিজের মতপ্রকাশ করবেন। ইমামদের উদ্দেশ্যে আমার কথা হলো- আল্লাহ যাকে যে জ্ঞান দিয়েছেন তা চর্চার সঙ্গে সঙ্গে ইলম অনুযায়ী আমলি জিন্দেগি গঠনে সচেষ্ট হওয়া। মানসিকভাবে আরও উদার হওয়া, পরিচ্ছন্ন মনোভাব ধারণ করা। চিন্তাভাবনা পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর করা, সর্বোপরি নিজেকে আগে পরিশুদ্ধ করা।
দেশ রূপান্তর : সম্প্রতি হাফেজদের নিয়ে একটি হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন, কেমন অভিজ্ঞতা হলো?
মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমি : ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। এমন কাজের সঙ্গে আমি অনেক আগে থেকেই যুক্ত। বিগত এক যুগ যাবৎ বাংলাদেশে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা বিভিন্নভাবে হয়। জেলা, থানা, বিভাগভিত্তিক হয়। যার অনেকগুলো মিডিয়াতে আসে না। এসব প্রতিযোগিতা আয়োজনে অনেকেই এগিয়ে আসছেন, আগামীতে আরও এগিয়ে আসবেন বলে আশা রাখি।
বেশকিছু টেলিভিশনেও এখন নিয়মিত হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন ও প্রচার হয়। এসব প্রতিযোগিতাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। এর দ্বারা কোরআন হিফজে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত অল্প বয়সেই অনেকে হাফেজে কোরআন হচ্ছে। এখানে যেমন গরিবের সন্তানরা আছেন। আছেন সমাজের বিত্তশালী পরিবারের সন্তানও। আরও ব্যাপকভাবে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা আয়োজনে বড় বড় শিল্প পরিবারের এগিয়ে আসা দরকার।
দেশ রূপান্তর : বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জয়ী হাফেজরা ভালোমানের আলেম হয় না, আপনি কী মনে করেন?
মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমি : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলে অনেক পুরস্কারের পাশাপাশি নাম-যশ হয়। পুরস্কার আর নাম-যশের মোহ যাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে তাদের একটা অংশ নিয়ে আমরা ব্যথিত। তারা মেধাবী কিন্তু তাদের মেধার যথাযথ বিকাশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্য আলেম হওয়া কিংবা কোরআন বুঝার জন্য ব্যয় করতে পারছে না। অনেকের শিক্ষাজীবন পূর্ণতাও পায় না। এদিকে তারা অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হলো- প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে হাতে টাকা আসে, পরিচিত হয় এবং সেটা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বাহ্যত নাম-সুনাম হলেও এর দ্বারা সে কিন্তু দুনিয়ার পেছনে পড়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এখানে আমাদের উস্তাদরা কাজ করবেন, বুঝাবেন, প্রয়োজনে শাসন করবেন। এর পাশাপাশি অভিভাবক ও মা-বাবাসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সচেতন হলে আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
দেশ রূপান্তর : রমজান উপলক্ষে দেশবাসীকে কোনো পরামর্শ দিতে চান কি?
মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমি : পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান হলো- রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, রমজান যখন শুরু হয়, তখন আসমান থেকে দুজন ফেরেশতা নেমে আসেন। একজন ফেরেশতা বলেন, হে কল্যাণকামী! তোমরা যারা কল্যাণের পথে আছো তোমরা আরও এগিয়ে চলো। দেশ ও জাতির কল্যাণে আরও এগিয়ে যাও। আরেকজন ফেরেশতা বলেন, তোমরা যারা অন্যায়ের পথে আছো। অন্যায় করে ফেলেছ। এবার থামো! রমজান শুরু হয়ে গেছে। এখন অন্যায়, পাপ, নাফরমানি বন্ধ করো। দেশ ও জাতির ক্ষতি হয়ে এমন কাজ বন্ধ করো।’ রাসুল (সা.) যে শিক্ষা আমাদের দিয়েছেন, তা সামনে নিয়ে পথ চলা। সব ধরনের অন্যায়-অনাচার পরিত্যাগ করে কল্যাণের পথে ফিরে আসা। অপরকে অন্যায়ের পথ থেকে ফিরে আসতে সহযোগিতা করা।
ইফতারের আর কিছুক্ষণ বাকি। মানুষ ইফতার করতে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন। যার ঘরে কিছুই নেই সেও ব্যস্ত অন্তত পানি পানের গ্লাসটি পরিষ্কার করতে। এমন সময় বস্তিতে ইফতার নিয়ে প্রবেশ করে অভাবীদের মুখে হাসি ফোটালেন কিছু মানুষ। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আহমদ মানিক
খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আপেল, কলা, মুড়ি, এসব নিয়ে একদল মানুষ হাজির বস্তির ঘরে ঘরে। যাদের মধ্যে বিতরণ করা হয় তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দিনমজুর ও বয়স্ক নারী। রোজা থাকলেই ঘরে ঘরে ইফতার পাওয়া যাচ্ছে। এমনটাই জানান উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত বস্তির জুলেখা বেগম। তিনি বলেন, ‘পোলা কাম করে আমি কামে যাইতে পারি না। পোলার টাকা দিয়া সংসার তেমন আর চলেও না। রোজার মাস খোদার হুকুম পালন করি তাই রোজা আছি। ওরা কয়েকজন ঘরে এসে ইফতারের খাবার দিয়ে যায়। পরিবারের সবাইরে লগে নিয়া ইফতার করি।’
বস্তির আরেক বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘মুই দিনমজুরের কাম করি। ঘরের কাছে মসজিদে খোদারে ডাকি, কোনো বেলায় খাবার পাই আবার পাই না। ওরা ইফতারের সময় খাবার দিয়া যায়।’
পবিত্র রমজান মাসে এমন কিছু মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে পারি ফাউন্ডেশন। রমজানের প্রতিদিন ইফতার আয়োজন নিয়ে পারি ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা ছুটে যান বস্তিতে। পারি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ জন মানুষকে ইফতারি দেওয়া হয়। পারি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২০১৭ সালে। তবে সূচনা থেকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী, ছিন্নমূল মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল তাদের কাজ। নিজেদের অর্থায়নে কাজ শুরু হলেও পরে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন টাকা-পয়সা দিয়ে।
পারি ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু তালেব জানান, ‘আমরা পারি ফাউন্ডেশন থেকে সবসময় অসহায় মানুষের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব- ইনশাআল্লাহ। আমাদের অন্যতম উদ্যোগ হলো, রমজানে মাসব্যাপী অসহায় মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণ। গত ৫ বছর ধরে পারি ফাউন্ডেশন ইফতার বিতরণ করছে। ডোনারদের ওপর ভিত্তি করে ইফতারের প্যাকেট কমবেশি হয়। ২০০ থেকে শুরু করে ৮০০ প্যাকেট ভালো মানের ইফতার বিতরণের চেষ্টা করি। প্রতি প্যাকেটে ৯ থেকে ১০ আইটেমের ইফতার সামগ্রী থাকে। এগুলো আমরা সাধারণত পরিবারের মধ্যে বিতরণের চেষ্টা করি।
পারি ফাউন্ডেশন অসহায় মানুষের মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে বিতরণ করে। তাদের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২ টাকায় ওষুধসহ প্রান্তিক মানুষদের চিকিৎসাসেবা, প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার প্রদান, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ভ্রাম্যমাণ স্কুলের মাধ্যমে অক্ষরজ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান, স্বেচ্ছায় রক্তদান, অসহায় মানুষের পুনর্বাসন, জরুরি মানবিক সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণ, জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সহায়তা, রমজানে অসহায় দরিদ্র মানুষদের মধ্যে ইফতার প্রদানসহ নানা সেবামূলক কাজ।
সিটি অব দ্য ওয়ার্ল্ডখ্যাত নিউ ইয়র্কের টাইম স্কয়ার। প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাজারো মানুষের বিনোদনের সাক্ষী হয় টাইমস স্কয়ার। রাত যত বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে কোলাহল! প্রতি বছর ফিফটি মিলিয়ন মানুষ টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয় অথবা ঘুরে দেখে। তবে গতকালের সন্ধ্যাটা ভিন্ন ছিল। কোরআনের তেলাওয়াত এবং তাকবিরের ধ্বনিতে বারবার মুখরিত হয় ঐতিহাসিক টাইমস স্কয়ার। ঝিরঝির বৃষ্টিতে স্নাত হয় হাজারো নারী-পুরুষ। নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (ঘণচউ)-এর সহযোগিতায় চমৎকার পরিবেশে হাজার হাজার মুসলমান জামাতের সঙ্গে আদায় করেন তারাবির নামাজ।
টাইমস স্কয়ারে গতকালের আয়োজন ছিল ইফতার থেকে। কয়েকশ মানুষ একসঙ্গে বসে ইফতার করেন টাইমস স্কয়ারে। আদায় করা হয় মাগরিবের নামাজ। যদিও সন্ধ্যা থেকে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল, সেই সঙ্গে ছিল কনকনে ঠাণ্ডা। আবহাওয়াজনিত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে মানুষ। তারাবির নামাজের আগেই নির্ধারিত স্থান ভরে যায় কানায় কানায়। দেরিতে আসা মানুষ রাস্তার পাশে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে অংশ নেয়। সাউন্ড সিস্টেমে উচ্চারিত হতে থাকে আল্লাহর কালাম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার মানুষ চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে বিস্মিত হয়ে দেখে মুসলমানদের এই অনুষ্ঠান!
তারাবির নামাজে চার রাকাত পরপর কয়েক মিনিট করে চলে বক্তৃতা। বিশ্ব মুসলিমের অবস্থা, অধিকার ও করণীয় নিয়ে জোরালো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় সাহসী কথাবার্তা। প্যালেস্টাইন, সিরিয়াসহ নির্যাতিত অথবা নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষে স্লোগান ওঠে থেমে থেমে। এভাবেই অত্যন্ত শান্ত ও সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয় তারাবির নামাজ। ইসলাম শান্তির ধর্ম, মুসলমানরা শান্তিপ্রিয় জাতি- টাইমস স্কয়ারও তা সাক্ষী হয় আবার।
এই অনুষ্ঠান ছাড়াও রমজানের দুইদিন আগে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট পুলিশ প্লাজায় আয়োজন করেছিল ওয়েলকাম রজমান অনুষ্ঠান। মুসলমানদের সম্মানে প্রতি বছরই তারা এমন আয়োজন করে থাকেন। এবারের আয়োজনের ব্যানারে শিরোনাম ছিল- Welcome to the Annual Pre-Ramadan Conference.
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।