
কারি আবদুল খালিক। এক নামে তাকে ঢাকার আলেমরা চেনেন। হাজার হাজার আলেমের ওস্তাদ। কোরআন শিক্ষায় নিবেদিত শ্যামবর্ণের মানুষটির জীবন ত্যাগ ও সাধনার। দুনিয়াবিমুখ এই মনীষীর জীবনের পরতে পরতে মিশে আছে আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস। যে বিশ্বাসের দ্যুতি তার জীবনের কর্মশক্তি। লিখেছেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ
ধর্মপ্রাণ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে দ্বীন দরদি মানুষের অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয়। সাধারণ সম্পদশালীরা তাদের সম্পত্তির কিছু অংশ মসজিদন্ডমাদ্রাসা, খানকা-ঈদগাহ ও গোরস্তানসহ বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে দান করে থাকেন। এর ব্যতিক্রম দৃষ্টান্তও আছে। রয়েছে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঘর-বাড়িসহ ভিটেমাটি দান করার নজির। ইসলামের প্রচার-প্রসার আর কোরআন-হাদিস শিক্ষার জন্য এমন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ আছেন বলেই এখনো দুনিয়ার বুকে ইসলাম টিকে আছে। দুনিয়ার কোনো স্বার্থ নয়, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের নিমিত্তে এমন আত্মত্যাগের ঘটনা সমাজে বিরল। কখনো তা ইতিহাসে পাতায় লেখা হয়, আবার কখনো তা থাকে অনুচ্চারিত।
আজ এমনই এক মহৎপ্রাণ মানুষের কথা আলোচনা করব, যিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিজের ভিটেমাটিসহ একমাত্র ঘরটি ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। আলোকিত এই মানুষের নাম হাফেজ কারি আবদুল খালিক আসআদী।
কারি আবদুল খালিকের জন্ম বর্তমান বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জে ১৯৩৮ সালে। পিতা মৌলভী আরশাদ আলী (রহ.)। ১২ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। মাতৃবিয়োগের শোক তাকে দ্বীনের পথে আসতে অনুপ্রেরণা দেয়। গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মোরেলগঞ্জ রাজৈর সিনিয়র মাদ্রাসায় কিছুদিন পড়ালেখা করেন। পরে ভগ্নিপতি মরহুম মাওলানা ইউসুফের হাত ধরে আলিয়া মাদ্রাসা ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে কিছুদিন পড়াশোনা শেষে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে হেফজ শেষ করেন। হেফজ শেষে হেদায়াতুন্নাহু কিতাব পড়ার পর তিন বছর (১৯৬২-৬৪) পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত তাজবিদুল কোরআন মাদ্রাসায় কারি ইহসান আহমদ থানভী (রহ.) ও কারি শাকের আহমদ (রহ.)-এর কাছে ইলমুল কেরাত পড়েন। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় তার আব্বার ইন্তেকাল হয়।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে খুলনা শিরোমণি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ওই বছরই তিনি বাগেরহাট জেলার রামপাল নিবাসী মরহুম মাওলানা আতহারুল ইসলাম খানের বড় মেয়ে আমিনা খাতুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
এখন থেকে ৬১ বছর আগে বাগেরহাটের মতো একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ইলমে দ্বীন শিক্ষার জন্য ঢাকা-পাকিস্তান গমন সোজা কথা নয়। তখনকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার প্রতিকূলতা জয় করতে সক্ষম হন শুধু কোরআনের ভালোবাসায়। নানা কারণে শিক্ষা জীবনের আনুষ্ঠানিক সফল পরিসমাপ্তি তার হয়ে ওঠেনি। এই না পাওয়াকে তিনি অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতায় তার একনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা তাকে সাফল্য এনে দেয়। তিনি পরিচিতি পেয়েছেন, কিন্তু থেমে যাননি, এই পরিচয়কে দুনিয়ার পদন্ডপদবি লাভ ও সহায়-সম্পত্তি উপার্জনের হাতিয়ার বানাননি। তার স্বপ্ন ও ধ্যান ছিল ইসলামকে বিজয়ীরূপে দেখা। সমাজের আনাচে-কানাচে কোরআনের শিক্ষা প্রসার ঘটানো।
ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে ছিলেন। গেণ্ডারিয়া জামালুল কোরআন মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি, এর নামকরণও তার। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তার ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিহারিরা আরজাবাদ মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দেয়। তখন তিনি সতীশ সরকার রোড, জোরপুল লেন মসজিদে নামাজ পড়াতেন। সেখানে একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সফলতার জন্য দোয়া করলে রাজাকাররা তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করে। পরে মসজিদের মোতোয়ালি রাতের আঁধারে তাকে নিরাপদে সরিয়ে দেন। ওই সময় তিনি কিছুদিন চট্টগ্রামের শোলকবহর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের এক-দেড় বছর পর পুনরায় আরজাবাদ মাদ্রাসায় যোগ দেন।
যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় আরজাবাদ ফিরে আসেন। এখন পর্যন্ত তিনি আরজাবাদেই শিক্ষকতা করছেন। বার্ধক্যজনিত নানাবিধ অসুস্থতার দরুন তিনি বাসা থেকে খুব একটা বের হন না। তার পরও নিয়ম করে মাদ্রাসায় যাওয়ার চেষ্টা করেন।
সাদামাটা জীবনের অধিকারী কারি আবদুল খালিক কখনো সহায়-সম্পদের দিকে আগ্রহী হননি। হাজার হাজার ছাত্রই তার কাছে সাত রাজার ধন। আশির দশক পর্যন্ত তার নিজ গ্রামে কোনো কওমি মাদ্রাসা ছিল না। এমনকি এখনো ওই এলাকার মানুষ কওমি মাদ্রাসাকে ‘খারেজি’ মাদ্রাসা বলে ডাকে। এমন পরিবেশে তিনিই প্রথম মাদ্রাসা হোসাইনিয়া ইসলামিয়া মৌলভীরহাট ও সায়্যিদ আরশাদ মাদানি মাদ্রাসাতুল বানাত নামে দুটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদানি পরিবারের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে সায়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.), সায়্যিদ আরশাদ মাদানি ও সায়্যিদ আসজাদ মাদানিও তাকে ভালোবেসে, দুর্গম এলাকায় অবস্থিত তার প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার সফর করেছেন।
১৯৮০ সালে দক্ষিণ চিংড়াখালী গ্রামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময় তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিজের ভিটেমাটিসহ ঘরটি মাদ্রাসার জন্য ওয়াকফ করে দিয়ে স্ত্রী এবং ছোট ছোট ৬ সন্তানকে নিজের চাচার ঘরে রেখে ঘর খুলে মাদ্রাসার ঘর নির্মাণের জন্য নিয়ে যান। পরবর্তীতে তার শ্বশুর জায়গার দাম পরিশোধ করে নতুন করে ঘর তুলে দেন। সম্পদ বলতে তার এতটুকুই।
কারি আবদুল খালিকের নয় সন্তান। ছয় ছেলে, তিন মেয়ে। বড় ছেলে হাফেজে কোরআন। পরের চারজন মাওলানা। দুই মেয়ের একজন আলেম। দুই জামাতার একজন দারুল উলুম দেওবন্দ পড়–য়া আলেম, অন্যজন মুফতি। তৃতীয় মেয়ে হেফজ শেষ করার পর এবং এক ছেলে ১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করে জান্নাতের মেহমান হয়েছেন। এখন সাত সন্তান নিয়ে তার সংসার। কারি সাহেবের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের মাঝে হাফেজে কোরআন ১০ জন, মাওলানা ৯ জন, (দাওরা শেষ করে) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা লাভকারী ২ জন। বর্তমানে কারি সাহেবের পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের ১৫ জন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। কারি আবদুল খালিক শুধু শিক্ষকতাতেই মনোনিবেশ করেননি। সুলুক-তাসাউফের মেহনতও করেছেন। প্রথমে সায়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.) ও পরে সায়্যিদ আরশাদ মাদানির হাতে বায়াত হন। এদিকে আরজাবাদ মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মুফতি তাজুল ইসলামও তাকে খেলাফত প্রদান করেছেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি বহু বুজুর্গের সান্নিধ্য পেয়েছেন।
ষাটের দশকে পড়াশোনার জন্য পাকিস্তান সফর করেছেন। এ ছাড়া একাধিকবার ভারত সফর করেছেন। পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশে তিনি সৌদি আরবও গমন করেছেন। আজীবন প্রতিবাদী চেতনার কারি আবদুল খালিক ওস্তাদ হিসেবে মোজাহেদে মিল্লাত আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমীর সান্নিধ্য পেয়েছেন। আল্লামা কাসেমীর নেতৃত্বে ইসলামবিরোধী নানাবিধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে তৌহিদি জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি মসজিদের স্থলে খুতবা পাঠের সময় পুলিশের বেয়নেট চার্জে রক্তাক্ত হন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো শিক্ষাচুক্তি না থাকায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য দেওবন্দ কর্র্তৃক মনোনীত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে সত্যায়নপত্র নিতে হয়। বিগত ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সত্যায়নপত্র দাতাদের একজন কারি আবদুল খালিক আসআদী। এ ছাড়া গত চার দশক ধরে বাংলাদেশে সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর পরিবারের সদস্যদের দ্বীনি সফরের ব্যবস্থাপনায় জড়িত।
স্পষ্টবাদী ও আমানতদার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে তার। পরিচিত যে কেউ তাকে একবাক্যে দ্বীনের একজন নিঃস্বার্থ খাদেম হিসেবে অভিহিত করেন। নিজের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের অনেকেই তার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। তার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পেয়ে অসংখ্য পরিবার স্বাবলম্বী হলেও তিনি ছয় দশক ধরে ঢাকায় বাস করলেও এখনো ভাড়া বাসায় থাকেন। ঢাকায় তার কোনো সহায়-সম্পদ নেই এবং গ্রামেও কোনো ফসলি জমিজমা নেই। সারাজীবন মসজিদন্ডমাদ্রাসা, দ্বীনি সংগঠন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের পেছনে নিজের সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করছেন।
কারি আবদুল খালিকের মতো নিঃস্বার্থ মানুষ এ সময়ে বিরল। ছাত্র অন্তঃপ্রাণ এই দরদি শিক্ষকের স্নেহ, মায়া-মমতা আর ভালোবাসার ফসল হিসেবে দেশের আনাচে-কানাছে ছড়িয়ে আছে হাজার হাজার আলেম, হাফেজ ও কারি। আলোকিত এক সমাজের দিকপাল তিনি। দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থতার সঙ্গে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত থাকার তওফিক দান করুন। তার স্বপ্নগুলো আলোর মুখ দেখুক।
‘আত্ম মানবতায় সমাজ গড়ি, দানে নয় নিজের টাকায় ইফতার করি’ সেøাগানে বগুড়ায় একদল তরুণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১ টাকায় ইফতার বিক্রি করছেন। এই ইফতারের ক্রেতা হলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায়, দুস্থ, ছিন্নমূল, ভিখারি, পথচারী ও বৃদ্ধ রিকশাচালকেরা।
রমজানের প্রথম দিন থেকেই শহরের সাতমাথায় ‘লাইফ লাইন’ ব্যানারে ইফতার বিক্রি করছেন এই তরুণরা। রমজানজুড়ে তারা ১ টাকায় ইফতার বিক্রির কর্মসূচি চালাবেন বলে জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার তারা ৫০০ প্যাকেট ইফতার ১ টাকা করে বিক্রি করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথায় কথা হয় ইফতার বিক্রি করা তরুণদের সঙ্গে। তারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষ। রোজার মাসে খেটে খাওয়া এসব মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। কাজের তাগিদে বেশির ভাগ দিনই ইফতারের সময় পথেঘাটে কাটাতে হয় তাদের। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় দোকান থেকে ইফতারসামগ্রী কিনে তৃপ্তি নিয়ে খাওয়ার সুযোগ নেই। সেই কথা বিবেচনা করে, বগুড়ায় নিম্ন আয় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য এক টাকায় ইফতার বিক্রি করছেন তারা।
ইফতার কিনতে আসা বৃদ্ধ রিকশাচালক মহররম আলী বলেন, ‘অন্য জায়গায় যে বিরিয়ানি কিনতে ৫০-৬০ টাকা লাগে, সেই বিরিয়ানি এখানে এক টাকা দিয়ে কিনতে পারছি।’
এক টাকায় ইফতার কিনতে আসা ভিখারি মরিয়ম বলেন, ‘আমরা সারাদিন অন্যের কাছে হাত পেতে চলি। ইফতার কেনার সামর্থ্য নাই। তারা এক টাকায় ইফতার দিচ্ছে অন্তত পেট ভরে খেতে পারছি। রোজার প্রথম দিন থেকে ইফতার কিনে খাচ্ছি।’
কর্মসূচির উদ্যোক্তা ভিডিও ও ফটোগ্রাফি পেশায় যুক্ত আহসান হাবীব সেলিম বলেন, ‘দিন দিন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে। রমজানে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। প্রতিদিন এক টাকায় ইফতার বিক্রি করব এই পরিকল্পনার কথা পরিবারকে জানালে তারা আমার কাজকে সমর্থন করেন। আর্থিক ঘাটতি পূরণে নিজের শখের ক্যামেরা বিক্রি করে ইফতার বিক্রির কাজ শুরু করি।
সেলিম আরও বলেন, রমজান মাসজুড়ে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকবে। অনেকেই এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ইচ্ছা আছে ৫ টাকায় ঈদের একটি প্যাকেজ বিক্রি করব। যেখানে ঈদের খাবারের বিভিন্ন পণ্য থাকবে।
এই উদ্যোগের সঙ্গে ইকবাল, তপু, টুটুল, তুফানখানসহ আরও অনেকেই রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেলিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৫০০ প্যাকেট গরুর গোশতের বিরিয়ানি দিয়েছেন প্রবাসী তুফান খান। এভাবে অনেকেই এই উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছেন।
তরুণদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের সুশীল সমাজের মানুষজন। এ বিষয়ে বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি ইসলাম রফিক বলেন, ‘একদল মানুষকে বিনামূল্যে নয় বরং ১ টাকায় ইফতার করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে যে ব্যক্তি ইফতার কিনছেন, তারা এই সমাজের ছিন্নমূল মানুষ। যারা দিনমজুর, অসহায় ও দুস্থ। বিষয়টি সত্যি অনন্য। এভাবে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।’
সাধারণ মানুষের একটা অভ্যাস আছে, রমজান মাসে রিকশায় চড়লে কথায় কথায় রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করি, মামা! আজ রোজা রেখেছেন?
তো রিকশাওয়ালা যদি সত্যি সত্যি রোজাদার হয়, তাহলে তো বাঁচা গেল। তার একটি নেককাজের সাক্ষী হয়ে গেলাম। কিন্তু রিকশাওয়ালা যদি রোজাদার না হয়, তাহলে জানেন- এই জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য দুটি পাপের দ্বার খুলে যাচ্ছে!
১. সে যদি বলে, ‘হুম মামা! অনেক কষ্টে রেখেছি। রোজা কি আর না রেখে পারা যায় রে বাবা!’
তাহলে রোজা না রেখেও রাখার কথা বলে মিথ্যার গোনাহে জড়িয়ে গেল।
২. আর যদি বলে, ‘না মামা! রাখতে পারিনি। সারা দিন এই কঠিন কাজ করে কি আর উপোস করা যায়?’
তাহলে সে তার কথায় সত্যবাদী হলেও অন্য আরেকটি পাপ করে বসছে। সেটা হলো, নিজের পাপ অন্যের সামনে প্রকাশ করা। এটাও মারাত্মক গোনাহ।
জিজ্ঞাসা না করলে এসব কিছুই হতো না। আসলে এ ধরনের জিজ্ঞাসায় অনেকেরই ভালো উদ্দেশ্যে থাকে। রিকশাওয়ালা রোজা রেখেছে বললে তাকে ৫-১০ টাকা বাড়িয়ে দেবেন। এতে সে খুশি হবে, সওয়াব পাওয়া যাবে। এটা অবশ্যই শুভ উদ্যোগ।
কথা হলো, এই সওয়ার তো জিজ্ঞেস না করেও পাওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ভাড়া দেওয়ার সময় এমনিতেই কিছু টাকা বাড়তি দিয়ে বললেন, এই নাও! আজ ইফতার করে নিয়ো! কোনো ধরনের পূর্ব জিজ্ঞাসা ছাড়া এরকম দান করলে তার মন খুশি হওয়ার পাশাপাশি আরেকটা কাজ হবে। সে যদি রোজাদার না হয়, তাহলে বাড়তি টাকাটুকু তার বিবেকে দংশন করতে থাকবে। ভবিষ্যৎ রোজা পালনের উপদেশ হয়ে যাবে এ দান!
দৈনন্দিন ইসলাম ডেস্ক
মৌলভীবাজারে 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিক বান্ধব চা শিল্প' প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (০৪ জুন) শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন এবং 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দেশে প্রথমবারের মতো চালুকৃত 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান করা হয়। আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন (০১) একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান- ভাড়াউড়া চা বাগান (০২) সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান- মধুপুর চা বাগান (০৩) শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক- আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লি. (০৪) শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী- মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়) (০৫) শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান- জেরিন চা বাগান (০৬) বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লি. (০৭) দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (০৮) শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (চা শ্রমিক)- উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও চা বোর্ডের কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বাগানের মালিক ও চা শ্রমিকরা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে মেয়ে (১৭) ও তার মাকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মেয়ের প্রেমিকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (০৫ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল রবিবার (০৪ জুন) ভোরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আর গত শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর শিবগঞ্জের পৌর এলাকার মাগুরার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ও আটককৃতরা হলেন প্রেমিক শিবগঞ্জ পৌর পিঠালিতলা মহল্লার বাসিন্দা সেলিম রেজা (২৫)। তার বন্ধু ও একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান (২৪) এবং ভ্যানচালক পিঠালিতলা মহল্লার মো. মেহেরুল (৩০)।
পুলিশ জানায়, শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর ওই এলাকার (পৌর মর্দনা গ্রামের পাশে) একটি মাঠের পাশের পাটক্ষেতে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ফেলে যায় অভিযুক্ত মেয়ের প্রেমিক সেলিম এবং তার বন্ধু হাসান। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের তল্লাশিতে রবিবার (৪ জুন) ভোরে ওই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় মা ও মেয়ে। এরপর তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে পুলিশের অভিযানে আটক হয় সেলিম ও হাসান।
এদিকে মা ও মেয়েকে রিকশাভ্যানে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে আটক হয় মেহেরুল। এ ঘটনায় মেয়ের মা গত রবিবার সকালে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের গত রবিবার আদালতে হাজির করা হলে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক সেলিম ও তার সহযোগী হাসান দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে একই দিন সন্ধ্যায় আদালত সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরিদর্শক সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, রং নাম্বার থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয় ভুক্তভোগী তরুণী ও সেলিম রেজার। পরে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। একপর্যায়ে গত শনিবার রাতে মেয়েকে দেখা ও বিয়ের কথা বলে মা-মেয়েকে শিবগঞ্জে ডেকে নিয়ে আসে সে। পরে ভ্যানচালকের মাধ্যমে মা ও মেয়েকে ওই মাঠের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায় সেলিম। সেখানে মা ও মেয়েকে সেলিম ও হাসান ধর্ষণের পর ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরও জানান, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেয়ের বাবা একই দিন রাতেই ঘটনাটি শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ রাতেই উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পরে ভুক্তভোগী মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রবিবার ভোরে ওই মাঠ থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। পরে একই দিন ভোরেই অভিযান চালিয়ে সেলিম, হাসান ও মেহেরুলকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ আসামিদের আদালতে পাঠায়। মা ও মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।
চোরের মন পুলিশ পুলিশ কিন্তু পুলিশের মন ক্রিমিনাল ক্রিমিনাল কি না সেটা অন্তত আপ্তবাক্য হিসেবে প্রচলিত না। তা না থাক, বহুদিন ধরেই ‘পুলিশকে আরও মানবিক আচরণ করতে হবে’ বলে কথাটি চালু আছে। তার মানে পরিষ্কার– পুলিশের আচরণে নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। আরেকটি কথাও প্রচুর শোনা যায়– বাঘে ছুঁলে আঠার ঘা, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। তো বেশ পশুত্ব, হিংস্রতা, অমানবিকতার এই বাক্যে পুলিশ সদস্যরা শ্লাঘা বোধ করেন কি না তা জানি না। কিন্তু এটা জানি যে পুলিশের কাছে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় অনেক মানুষকে।
পুলিশের আচরণ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। বাহিনীটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার সদস্যদের পরিশীলিত হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, বলছেন, অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রয়োগ হলে শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি হচ্ছেও মাঝেমধ্যে, তবু অভিযোগের শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে কলোনিয়াল মাইন্ডসেটের কথা। এর সত্যতা থাকলেও পুরোটাই কি সেই ঔপনিবেশিকতার জের, নাকি আরও কিছু ফাঁকফোকরকে ইতিহাসের কাঁধে চেপে আড়াল করে যাওয়া? পুলিশের এই বিকলাঙ্গ আচরণ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের পঙ্গুত্বকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
পুলিশের অবদান নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাদের কর্মকাণ্ড যেমন আলোচিত, পাশাপাশি সমালোচিত। সাধারণ মানুষকে পুলিশ বিষয়ে প্রশ্ন করলে নেগেটিভ মন্তব্যই বেশি পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হলো, কেন সাধারণ মানুষ পুলিশের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়? কেন সাধারণ মানুষের অভিযোগ বা মন্তব্যে কেউ কর্ণপাত করছে না? এই বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে।সম্পªতি ১ জুন অর্থমন্ত্রী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল আকারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কোনো ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়নি। প্রতিবন্ধী ভাতা পাঁচ হাজার টাকা করাসহ ১১ দফা দাবিতে রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে পুলিশের বাধায় পড়ে ‘সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ’।
আন্দোলনকারীদের ভাষ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি না মানলে সড়ক থেকে উঠবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে তাদের রুখতে সজাগ দৃষ্টিতে অবস্থান করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রবিবার সকাল থেকে শুরু হয় আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখান থেকে কর্মসূচি শেষে যাত্রা শুরু করলে তাদের শাহবাগেই আটকে দেয় পুলিশ। পরে একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়ক আটকে দিলে তারা সড়কে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ। ধরে নিলাম, পুলিশের বক্তব্যই সঠিক। এই বক্তব্যকে এক পাশে রেখে চিন্তা করি যে একটি আদর্শ সমাজে কী হয়। প্রতিবাদ করা একটি অধিকার এবং প্রতিবাদের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হওয়ার কথা না।
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টে আন্দোলনকারীরা পুলিশের যে আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। তারা জানান, পুলিশ সামনে হুইল চেয়ারে বসা আন্দোলনকারীদের সামনে এগোতে বাধা দিলে তারা সেখানেই অবস্থান নেন। কিন্তু পুলিশ তাদের ধাক্কা দিয়ে, বলপ্রয়োগ করেই ক্ষান্ত হয়নি, হুইল চেয়ারসহ আন্দোলনকারীদের কাউকে কাউকে তুলে পেছনের দিকে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। একজন নারীকে হুইল চেয়ার থেকে টেনে ফেলে দিয়েছে পুলিশ। হুইল চেয়ারের চাকা ভেঙে দিয়েছে। শ্রবণপ্রতিবন্ধী হুইল চেয়ারে বসা আন্দোলনকারীদের বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। পুলিশকে বাধা দিতে গেলে তারা আরও মারমুখী হয়ে ওঠে এবং আন্দোলনকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এক আন্দোলনকারী বলেন, পরিস্থিতি নাজুক বুঝতে পেরে আন্দোলনকারীরাই নিজেদের শান্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা যদি পরিস্থিতি শান্ত না করতাম তাহলে আরও বড় কিছু হয়ে যেত। এই পর্যায়ে আসলেই প্রশ্ন জাগে যে সেখানকার পুলিশ সদস্যরাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কি না। যেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের এই বিক্ষোভ-আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের চেয়ে তাদের দাবি-দাওয়া প্রকাশে নিরাপত্তা দেওয়াই স্বাভাবিক পুলিশি তৎপরতা হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তারা যে আচরণ করেছে কেবল এজন্যই ওই পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি রাখে। এখানেই শেষ নয়। অপর একজন প্রতিবন্ধী আন্দোলনকারী জানাচ্ছেন, পুলিশ তাদের তুই-তোকারি করে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। পাবলিককে, জনগণকে এই তুই-তোকারি করার পুলিশি খাসলতের কারণেও অনেকে পারতপক্ষে পুলিশের কাছে যান না।
রাজনৈতিক আন্দোলন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, সহিংসতা দমনের ধরন আর প্রতিবন্ধীভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, হাঁটাচলায় অক্ষম ব্যক্তিদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে যে পুলিশ পার্থক্য করতে পারে না, সেই পুলিশ দিয়ে আমরা কী আশা করতে পারি! এখানে ‘অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে’ বলে কি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ বাহিনী দায় এড়াতে পারে? গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ জানানোর, দাবি জানানোর অধিকার সবার আছে। কিন্তু তা মোকাবিলায় পুলিশের যে আচরণ সেটা ন্যক্কারজনক। আমরা পুলিশকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই না।
বিদ্যমান পুলিশি আইনে পুলিশকে মানবিক করা যাবে না। কারণ পুলিশ চলছে ১৮৬১ সালের আইনে। যে আইনটি ব্রিটিশরা করেছিল এ অঞ্চলের মানুষকে শোষণ করার জন্য। যতদিন এ আইন পরিবর্তন করার যাবে না ততদিন পুলিশ এমন অমানবিক আচরণ করবে। এ আইন পরিবর্তন করে পুলিশকে বাহিনীর বদলে সেবাদাতায় পরিণত করতে হবে। তবে অন্যায্য বা অন্যায় আচরণ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না, এমনটা নয়। গত ছয় বছরে ৭৬ হাজার পুলিশকে নানা ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে দেশের প্রতি দুজনের একজনই বাহিনীর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কোনো না কোনোভাবে সাজাপ্রাপ্ত।
প্রতিবন্ধীদের আন্দোলন দমনে সর্বশেষ পুলিশ সদস্যরা যে আচরণ করেছে, তাতে করে গণতন্ত্র রক্ষা না, অমানবিকতার দায়েই বাংলাদেশের পুলিশের ওপর উন্নত দেশগুলো বিশেষ ভিসানীতি দিতে পারে। পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চিকিৎসা জরুরি। এটা দীর্ঘদিনের আলোচনার বিষয়। কারণ যে মানুষটি সারা দিন অপরাধ বা অপরাধী নিয়ে থাকেন বা থাকছেন, তার মানসিক অবস্থার উন্নতি না হলে তিনি কখনো ইয়াসমিনদের তুলে নিয়ে যাবেন, কখনো লতা সমাদ্দারদের টিপ-কাপড় নিয়ে কথা বলবেন, আবার কখনো বা নারীর ব্রা-এর ফিতা কোন দিক দিয়ে বের হয়ে আছে, তা খুঁজে বেড়াবেন। দেখা যাচ্ছে যেখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন সেখানে পুলিশ খড়গহস্ত– কেন?
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।