হামলার আশঙ্কায় সতর্ক পুলিশ
আলাউদ্দিন আরিফ | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
কুইক রেসপন্স টিম, ২৪ ঘণ্টা স্ট্রাইকিং টিম ও ব্যাকআপ সাপোর্ট রাখার নির্দেশ
নির্বাচনের সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার আশঙ্কায় বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি টহল দেওয়া, চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন, নির্বাচনী সরঞ্জাম-দলিল দস্তাবেজ আনা-নেওয়া ও অভিযানের সময় বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। হামলার শিকার হলে প্রয়োজনে ‘কুইক রেসপন্স টিম’, ২৪ ঘণ্টার স্ট্রাইকিং টিম, র্যাব, এপিবিএন ও বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাহায্য নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সোমবার পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ঢালাওভাবে হামলার আশঙ্কা করছি না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। নির্বাচনকালীন সময়ে কিছু গোষ্ঠী পুলিশকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে পারেÑ এ আশঙ্কা আগে থেকেই আছে। এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
গত রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের এএসপির গাড়িতে হাতবোমা হামলা চালানো হয়। এরপর থেকে জেলার সব পুলিশ সদস্যকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান। গতকাল দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা ইউনিফর্মধারী ইউনিট। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজে সবসময় হামলা বা নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকবে। নির্বাচনের সময়ও হামলার আশঙ্কা একটু বেশি থাকবে এবং পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে এটাই স্বাভাবিক।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ঘিরে প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মিশনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা বাদে প্রায় সবাই নির্বাচনী মাঠেই কাজ করবেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কাছ থেকে পুলিশের ওপর হামলার আশঙ্কা জানিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব জেলা পুলিশ সুপার ও ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। সন্ত্রাসী হামলার সময় দ্রুত ‘কুইক রেসপন্স টিম’ পাঠানো, ২৪ ঘণ্টার স্ট্রাইকিং টিম প্রস্তুত রাখা, ব্যাকআপ সাপোর্ট (এপিবিএন, র্যাব, বিজিবি) প্রস্তুত রাখতে চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও পুলিশের স্থাপনার ওপর নাশকতামূলক হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে ভিত্তিতে জানা গেছে। সম্ভাব্য নাশকতা রোধে বাংলাদেশ পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে রয়েছেÑ থানাসহ পুলিশ ইউনিটগুলোর মেইন গেট বন্ধ রেখে পকেট গেট খোলা রাখতে হবে। কেউ পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তার নাম-পরিচয় নিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাতে হবে। নম্বরবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুলিশ স্থাপনাগুলোয় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বরাদ্দ অনুযায়ী ইউনিটপ্রধানদের ভেহিক্যাল সার্চিং মিরর, হ্যান্ড হল্ড মেটাল ডিটেক্টর, টর্চ, হ্যালোজেন লাইট ও সিকিউরিটি লাইট নিশ্চিত করতে হবে। সব ইউনিটপ্রধানকে নিরাপত্তার বিষয়ে ফোর্সেস ব্রিফিং ও দায়িত্ব পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অফিসপ্রধানরা সময়ে-অসময়ে আকস্মিকভাবে তার অধীন ইউনিটগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। কোনো ক্ষেত্রে ব্যত্যয় দেখা গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে উপযুক্ত কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, অধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পেশাগত জ্ঞান, অস্ত্র চালানোর সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা সচেতনতা সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হবেন। সব অফিসার ও ফোর্স অস্ত্র খোলা, জোড়া লাগানো, অস্ত্রের নিরাপত্তা, অস্ত্র চালানোর কৌশল রপ্ত ও অনুশীলন করবেন। ইউনিটপ্রধানরা বিষয়টি নিশ্চিত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন। সব বিষয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য ও স্থাপনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ অনুসরণ করবেন।
শেয়ার করুন
আলাউদ্দিন আরিফ | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

কুইক রেসপন্স টিম, ২৪ ঘণ্টা স্ট্রাইকিং টিম ও ব্যাকআপ সাপোর্ট রাখার নির্দেশ নির্বাচনের সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার আশঙ্কায় বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি টহল দেওয়া, চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন, নির্বাচনী সরঞ্জাম-দলিল দস্তাবেজ আনা-নেওয়া ও অভিযানের সময় বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। হামলার শিকার হলে প্রয়োজনে ‘কুইক রেসপন্স টিম’, ২৪ ঘণ্টার স্ট্রাইকিং টিম, র্যাব, এপিবিএন ও বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাহায্য নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সোমবার পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ঢালাওভাবে হামলার আশঙ্কা করছি না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। নির্বাচনকালীন সময়ে কিছু গোষ্ঠী পুলিশকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে পারেÑ এ আশঙ্কা আগে থেকেই আছে। এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
গত রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের এএসপির গাড়িতে হাতবোমা হামলা চালানো হয়। এরপর থেকে জেলার সব পুলিশ সদস্যকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান। গতকাল দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা ইউনিফর্মধারী ইউনিট। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজে সবসময় হামলা বা নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকবে। নির্বাচনের সময়ও হামলার আশঙ্কা একটু বেশি থাকবে এবং পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে এটাই স্বাভাবিক।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ঘিরে প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মিশনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা বাদে প্রায় সবাই নির্বাচনী মাঠেই কাজ করবেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কাছ থেকে পুলিশের ওপর হামলার আশঙ্কা জানিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব জেলা পুলিশ সুপার ও ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। সন্ত্রাসী হামলার সময় দ্রুত ‘কুইক রেসপন্স টিম’ পাঠানো, ২৪ ঘণ্টার স্ট্রাইকিং টিম প্রস্তুত রাখা, ব্যাকআপ সাপোর্ট (এপিবিএন, র্যাব, বিজিবি) প্রস্তুত রাখতে চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও পুলিশের স্থাপনার ওপর নাশকতামূলক হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে ভিত্তিতে জানা গেছে। সম্ভাব্য নাশকতা রোধে বাংলাদেশ পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে রয়েছেÑ থানাসহ পুলিশ ইউনিটগুলোর মেইন গেট বন্ধ রেখে পকেট গেট খোলা রাখতে হবে। কেউ পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তার নাম-পরিচয় নিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাতে হবে। নম্বরবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুলিশ স্থাপনাগুলোয় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বরাদ্দ অনুযায়ী ইউনিটপ্রধানদের ভেহিক্যাল সার্চিং মিরর, হ্যান্ড হল্ড মেটাল ডিটেক্টর, টর্চ, হ্যালোজেন লাইট ও সিকিউরিটি লাইট নিশ্চিত করতে হবে। সব ইউনিটপ্রধানকে নিরাপত্তার বিষয়ে ফোর্সেস ব্রিফিং ও দায়িত্ব পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অফিসপ্রধানরা সময়ে-অসময়ে আকস্মিকভাবে তার অধীন ইউনিটগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। কোনো ক্ষেত্রে ব্যত্যয় দেখা গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে উপযুক্ত কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, অধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পেশাগত জ্ঞান, অস্ত্র চালানোর সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা সচেতনতা সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হবেন। সব অফিসার ও ফোর্স অস্ত্র খোলা, জোড়া লাগানো, অস্ত্রের নিরাপত্তা, অস্ত্র চালানোর কৌশল রপ্ত ও অনুশীলন করবেন। ইউনিটপ্রধানরা বিষয়টি নিশ্চিত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন। সব বিষয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য ও স্থাপনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ অনুসরণ করবেন।