চট্টগ্রামে দুই প্রতিবন্ধী পাইলট
পৃথিবীতে ডিজঅ্যাবল বলে কিছু নেই
ফারুক ইকবাল, চট্টগ্রাম | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে নানা দেশ ঘুরে নিজেরা বিমান চালিয়ে বাংলাদেশে এলেন দুই প্রতিব›দ্ধী পাইলট ও তাদের দুই সহযোগী।
প্রতিবন্ধীরাও সক্ষম মানুষের চেয়ে কম কিছু নয় এবং প্রতিবন্ধীরাও পারেÑ বিশ্বজুড়ে এই বার্তা পৌঁছে দিতে ‘চলন প্রতিবন্ধী’ এই দুই পাইলট হ্যান্ডি ফ্লাইট (হালকা বিমান) চালিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের নাগপুর থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় বিশ্বের ৪০টি দেশে উড়াল (ফ্লাই) দেওয়ার মিশনের অংশ হিসেবে তারা নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। তিনদিন চট্টগ্রাম অবস্থান শেষে আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটায় এই পাইলট যুগল থাইল্যান্ডের চিয়াংমাইয়ের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেবেন। চট্টগ্রাম লায়ন্স ক্লাবের কর্মকর্তারা এখানে তাদের দেখভাল করছেন।
সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা মি. মাইক ও ফ্রান্সের বাসিন্দা মি. গলিয়াম ফেরালÑ দুজনই দক্ষ পাইলট। প্রথম জন ১৮ বছর আগে এবং দ্বিতীয় জন ১৫ বছর আগে পৃথক দুর্ঘটনায় পা হারান। পা হারিয়ে হাঁটা-চলায় অক্ষম হলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাদের বিমান চালনায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। দুজনই লায়ন্স ক্লাবের সদস্য। ৪০টি দেশ সফরের মিশন নিয়ে বাংলাদেশে আসা ষাটোর্ধ্ব চলন প্রতিবন্ধী পাইলট মাইক ও গলিয়াম গতকাল চিটাগাং ক্লাবে দেশ রূপান্তরসহ কয়েকটি দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পৃথিবীতে সক্ষম-অসক্ষম বলে কিছু নেই। প্রতিবন্ধীরাও সক্ষমÑ এই বার্তা সকলের মাঝে পৌঁছে দিতেই আমাদের এই মিশন।
এক প্রশ্নের জবাবে গলিয়াম বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজ থেকে আলাদা করে রাখা যাবে না। সবার শিক্ষা, দক্ষতা সবার সাথে শেয়ার করা জরুরি। সক্ষম অসক্ষম সবাইকে একসঙ্গে মিশে থাকতে হবে। সবাইকে কাজের সুযোগ দিতে হবে। জীবনের নানা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মাইক ও গলিয়াম বলেন, জেনেভা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। আটটি দেশ ঘুরে নবম দেশ হিসেবে চট্টগ্রাম এসেছি। এই যাত্রায় আমরা ৮০ হাজার কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বের ৪০টি দেশ সফরের মিশন নিয়ে এগুচ্ছি। আমাদেরটি একটি হ্যান্ডি ফ্লাইট। এটি ডিজেবলদের (প্রতিবন্ধীদের) জন্য বিশেষভাবে নির্মিত কোনো বিমান নয়। এটি একটি জার্মান কোম্পানির ডিজাইন করা হ্যান্ডি ফ্লাইট। আমাদের গাইড ও সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন মি. ড্যানিয়েল।
এই মিশনে কোনো বিশ্ব রেকর্ড গড়ার ইচ্ছে আছে কি না জানতে চাইলে গলিয়াম ফেরাল বলেন, ‘এটা কোনো ট্রফি প্রাপ্তি বা রেকর্ড গড়ার জন্য মোটেও নয়। আমরা এর মাধ্যমে দেশে দেশে মানুষের সঙ্গে মিশতে চাই। সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আত্মিক ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন (কমিউনিকেট) গড়তে চাই। প্রতিবন্ধীদের মনে সাহস সঞ্চার করতে চাই এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করতে চাইছি এই বলে যে, আমরাও সক্ষম, আমরাও পারি।
দেশে দেশে এমন বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এটিকে একটি বড় সুযোগ আখ্যা দিয়ে প্রতিবন্ধী পাইলটদ্বয় ইন্টারন্যাশনাল লায়ন্স ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, মানবিক কর্মগুলো জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে এটি একটি দুর্দান্ত সফর।
রাজধানী ঢাকার পরিবর্তে চট্টগ্রামে ফ্লাইট নিয়ে অবতরণের কারণ জানতে চাইলে উভয় পাইলট বলেন, ঢাকায় বিমান জট ও জনজট বেশি। সে তুলনায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর অনেক মুক্ত এবং চট্টগ্রামের প্রকৃতি খুবই আকর্ষণীয়।
এর আগে সাহসী এই দুই পাইলটসহ তাদের সমন্বয়কের সঙ্গে লায়ন্স গভর্নর মো. নাসিরউদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় লায়ন্সের সাবেক জেলা গভর্নর দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক ও বর্তমান ফার্স্ট ভাইস গভর্নর কামরুন মালেক উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ার করুন
ফারুক ইকবাল, চট্টগ্রাম | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে নানা দেশ ঘুরে নিজেরা বিমান চালিয়ে বাংলাদেশে এলেন দুই প্রতিব›দ্ধী পাইলট ও তাদের দুই সহযোগী।
প্রতিবন্ধীরাও সক্ষম মানুষের চেয়ে কম কিছু নয় এবং প্রতিবন্ধীরাও পারেÑ বিশ্বজুড়ে এই বার্তা পৌঁছে দিতে ‘চলন প্রতিবন্ধী’ এই দুই পাইলট হ্যান্ডি ফ্লাইট (হালকা বিমান) চালিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের নাগপুর থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় বিশ্বের ৪০টি দেশে উড়াল (ফ্লাই) দেওয়ার মিশনের অংশ হিসেবে তারা নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। তিনদিন চট্টগ্রাম অবস্থান শেষে আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটায় এই পাইলট যুগল থাইল্যান্ডের চিয়াংমাইয়ের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেবেন। চট্টগ্রাম লায়ন্স ক্লাবের কর্মকর্তারা এখানে তাদের দেখভাল করছেন।
সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা মি. মাইক ও ফ্রান্সের বাসিন্দা মি. গলিয়াম ফেরালÑ দুজনই দক্ষ পাইলট। প্রথম জন ১৮ বছর আগে এবং দ্বিতীয় জন ১৫ বছর আগে পৃথক দুর্ঘটনায় পা হারান। পা হারিয়ে হাঁটা-চলায় অক্ষম হলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাদের বিমান চালনায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। দুজনই লায়ন্স ক্লাবের সদস্য। ৪০টি দেশ সফরের মিশন নিয়ে বাংলাদেশে আসা ষাটোর্ধ্ব চলন প্রতিবন্ধী পাইলট মাইক ও গলিয়াম গতকাল চিটাগাং ক্লাবে দেশ রূপান্তরসহ কয়েকটি দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পৃথিবীতে সক্ষম-অসক্ষম বলে কিছু নেই। প্রতিবন্ধীরাও সক্ষমÑ এই বার্তা সকলের মাঝে পৌঁছে দিতেই আমাদের এই মিশন।
এক প্রশ্নের জবাবে গলিয়াম বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজ থেকে আলাদা করে রাখা যাবে না। সবার শিক্ষা, দক্ষতা সবার সাথে শেয়ার করা জরুরি। সক্ষম অসক্ষম সবাইকে একসঙ্গে মিশে থাকতে হবে। সবাইকে কাজের সুযোগ দিতে হবে। জীবনের নানা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মাইক ও গলিয়াম বলেন, জেনেভা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। আটটি দেশ ঘুরে নবম দেশ হিসেবে চট্টগ্রাম এসেছি। এই যাত্রায় আমরা ৮০ হাজার কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বের ৪০টি দেশ সফরের মিশন নিয়ে এগুচ্ছি। আমাদেরটি একটি হ্যান্ডি ফ্লাইট। এটি ডিজেবলদের (প্রতিবন্ধীদের) জন্য বিশেষভাবে নির্মিত কোনো বিমান নয়। এটি একটি জার্মান কোম্পানির ডিজাইন করা হ্যান্ডি ফ্লাইট। আমাদের গাইড ও সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন মি. ড্যানিয়েল।
এই মিশনে কোনো বিশ্ব রেকর্ড গড়ার ইচ্ছে আছে কি না জানতে চাইলে গলিয়াম ফেরাল বলেন, ‘এটা কোনো ট্রফি প্রাপ্তি বা রেকর্ড গড়ার জন্য মোটেও নয়। আমরা এর মাধ্যমে দেশে দেশে মানুষের সঙ্গে মিশতে চাই। সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আত্মিক ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন (কমিউনিকেট) গড়তে চাই। প্রতিবন্ধীদের মনে সাহস সঞ্চার করতে চাই এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করতে চাইছি এই বলে যে, আমরাও সক্ষম, আমরাও পারি।
দেশে দেশে এমন বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এটিকে একটি বড় সুযোগ আখ্যা দিয়ে প্রতিবন্ধী পাইলটদ্বয় ইন্টারন্যাশনাল লায়ন্স ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, মানবিক কর্মগুলো জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে এটি একটি দুর্দান্ত সফর।
রাজধানী ঢাকার পরিবর্তে চট্টগ্রামে ফ্লাইট নিয়ে অবতরণের কারণ জানতে চাইলে উভয় পাইলট বলেন, ঢাকায় বিমান জট ও জনজট বেশি। সে তুলনায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর অনেক মুক্ত এবং চট্টগ্রামের প্রকৃতি খুবই আকর্ষণীয়।
এর আগে সাহসী এই দুই পাইলটসহ তাদের সমন্বয়কের সঙ্গে লায়ন্স গভর্নর মো. নাসিরউদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় লায়ন্সের সাবেক জেলা গভর্নর দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক ও বর্তমান ফার্স্ট ভাইস গভর্নর কামরুন মালেক উপস্থিত ছিলেন।