বিএনপির ক্ষুব্ধ নেতাদের ক্ষোভ কমেনি
প্রভাব পড়তে পারে অন্তত ৫০ আসনে
রেজাউল করিম লাবলু | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ নেতাদের এলাকামুখী করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না। ভোটের মাত্র পাঁচ দিন বাকি থাকলেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত অন্তত ৫০ জন প্রার্থী নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাননি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে এসব আসনে তাদের প্রার্থীদের জয় কঠিন হয়ে পড়বে।
মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাতদের এলাকায় না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে ক্ষুব্ধ সবাই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। সে চেষ্টা তারা করে যাচ্ছেন।
শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মহিদুর রহমান মোহন ময়মনসিংহ জেলার ভোটার। গতকাল রোববার দেশ রূপান্তরকে তিনি জানান, ময়মনসিংহ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আফজাল এইচ খান। এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও আলী আজগর। নির্বাচনের মাত্র পাঁচ দিন বাকি থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত এসব নেতা এখনো নির্বাচনী এলাকায় যাননি। দলের প্রার্থীর পক্ষে কোনো কাজ করছেন না। এভাবে দলের মধ্যে বিভক্তি থাকলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত তায়েবুর রহমান হীরণ ও ময়মনসিংহ-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত সংস্কারপন্থী নেতা দেলোয়ার হোসেন খান দুলুও নির্বাচনী এলাকায় যাননি বলে জানান মহিদুর রহমান।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, পঞ্চগড়-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় দলের প্রার্থীর পক্ষে খুব একটা সক্রিয় হচ্ছেন না। ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তার এলাকায় গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেছিলেন শহীদুজ্জামান বেল্টু। এর আগে একাধিকবার এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এবার আদালতের নির্দেশে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী ফিরোজ। দেশ রূপান্তরকে তিনি জানান, দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেখা হয়েছিল শহীদুজ্জামান বেল্টুর সঙ্গে। তার কাছ থেকে দোয়া নিয়েছিলেন। তখন বেল্টু তাকে কথা দিয়েছিলেন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র পাঁচ দিন বাকি থাকলেও এলাকায় যাননি বেল্টু। তাই বেল্টুকে ছাড়া কাজ করতে হচ্ছে। বেল্টু গেলে তার জন্য ভালো হতো।
ঝিনাইদহ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি সমর্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান জি-৯-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান। এই আসনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি কণ্ঠশিল্পী মনির খান। ক্ষুব্ধ মনির খান দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু বিএনপি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। তাকে বোঝানো হয়েছে এলাকায় যাওয়ার জন্য। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি এলাকায় যাননি।
একই অবস্থা নাটোর-১ আসনে। এই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম বিমলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে। এই আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও ছাত্রদলের সহসভাপতি তারিকুল ইসলাম টিটু। টিটু নির্বাচনী এলাকায় গেলেও যাননি টিপু।
নীলফামারী-৪ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আমজাদ হোসেন সরকার। মনোনয়ন চেয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনও। মনোনয়ন না পাওয়ার পর আর নির্বাচনী এলাকায় যাননি বেবী নাজনীন। তার সঙ্গে আমজাদ হোসেন সরকার যোগাযোগ করেও সাড়া পাননি। পটুয়াখালী-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সালমা আলম। আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন। তিনি এখন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে যাননি।
নির্বাচনী এলাকায় না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাইফুল ইসলাম টিপু ও মুনির হোসেন দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা দপ্তরে নির্বাচনী কাজ করায় এলাকায় যেতে পারছেন না। খুলনা-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। একই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শাহ শরীফ কামাল তাজ। মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকায় ফিরে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগ দিয়েছেন তিনি।
মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাতদের এলাকায় না যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কেউ না গেলে জোর করে তো কিছু করা যায় না।
শেয়ার করুন
রেজাউল করিম লাবলু | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ নেতাদের এলাকামুখী করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না। ভোটের মাত্র পাঁচ দিন বাকি থাকলেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত অন্তত ৫০ জন প্রার্থী নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাননি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে এসব আসনে তাদের প্রার্থীদের জয় কঠিন হয়ে পড়বে।
মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাতদের এলাকায় না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে ক্ষুব্ধ সবাই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। সে চেষ্টা তারা করে যাচ্ছেন।
শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মহিদুর রহমান মোহন ময়মনসিংহ জেলার ভোটার। গতকাল রোববার দেশ রূপান্তরকে তিনি জানান, ময়মনসিংহ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আফজাল এইচ খান। এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও আলী আজগর। নির্বাচনের মাত্র পাঁচ দিন বাকি থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত এসব নেতা এখনো নির্বাচনী এলাকায় যাননি। দলের প্রার্থীর পক্ষে কোনো কাজ করছেন না। এভাবে দলের মধ্যে বিভক্তি থাকলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত তায়েবুর রহমান হীরণ ও ময়মনসিংহ-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত সংস্কারপন্থী নেতা দেলোয়ার হোসেন খান দুলুও নির্বাচনী এলাকায় যাননি বলে জানান মহিদুর রহমান।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, পঞ্চগড়-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় দলের প্রার্থীর পক্ষে খুব একটা সক্রিয় হচ্ছেন না। ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তার এলাকায় গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেছিলেন শহীদুজ্জামান বেল্টু। এর আগে একাধিকবার এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এবার আদালতের নির্দেশে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী ফিরোজ। দেশ রূপান্তরকে তিনি জানান, দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেখা হয়েছিল শহীদুজ্জামান বেল্টুর সঙ্গে। তার কাছ থেকে দোয়া নিয়েছিলেন। তখন বেল্টু তাকে কথা দিয়েছিলেন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র পাঁচ দিন বাকি থাকলেও এলাকায় যাননি বেল্টু। তাই বেল্টুকে ছাড়া কাজ করতে হচ্ছে। বেল্টু গেলে তার জন্য ভালো হতো।
ঝিনাইদহ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি সমর্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান জি-৯-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান। এই আসনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি কণ্ঠশিল্পী মনির খান। ক্ষুব্ধ মনির খান দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু বিএনপি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। তাকে বোঝানো হয়েছে এলাকায় যাওয়ার জন্য। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি এলাকায় যাননি।
একই অবস্থা নাটোর-১ আসনে। এই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম বিমলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে। এই আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও ছাত্রদলের সহসভাপতি তারিকুল ইসলাম টিটু। টিটু নির্বাচনী এলাকায় গেলেও যাননি টিপু।
নীলফামারী-৪ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আমজাদ হোসেন সরকার। মনোনয়ন চেয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনও। মনোনয়ন না পাওয়ার পর আর নির্বাচনী এলাকায় যাননি বেবী নাজনীন। তার সঙ্গে আমজাদ হোসেন সরকার যোগাযোগ করেও সাড়া পাননি। পটুয়াখালী-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সালমা আলম। আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন। তিনি এখন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে যাননি।
নির্বাচনী এলাকায় না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাইফুল ইসলাম টিপু ও মুনির হোসেন দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা দপ্তরে নির্বাচনী কাজ করায় এলাকায় যেতে পারছেন না। খুলনা-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। একই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শাহ শরীফ কামাল তাজ। মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকায় ফিরে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগ দিয়েছেন তিনি।
মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাতদের এলাকায় না যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কেউ না গেলে জোর করে তো কিছু করা যায় না।