পর্যটনের ভরা মৌসুমে কক্সবাজারে খরা
আবদুল আজিজ, কক্সবাজার | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
শীতকাল কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকেন্দ্রিক পর্যটনের ভরা মৌসুম হলেও এবার পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির শঙ্কা থেকে এবার দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমেছে বলে মনে করছেন পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পর্যটকদের আসা কমেছে। এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও তা স্থায়ী থাকেনি। জানুয়ারি মাস থেকে পর্যটকরা পুরোদমে আসা শুরু করবে বলে তাদের আশা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে আসা শুরু করেন।
কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অবস্থার কারণে পর্যটকশূন্য বললেই চলে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পে আবার চাঙাভাব শুরু হবে।’
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে শামুক-ঝিনুকের মালা বিক্রি করছিল দুই শিশু সালমা ও ফাতেমা। তাদের বাবা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। তারা জানায়, এখন পর্যটক কমে এসেছে। প্রতিদিন তারা সাগরপাড়ে এলেও প্রত্যাশিত মাত্রায় বিক্রি হচ্ছে না।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছর ডিসেম্বরজুড়ে কক্সবাজারে আনুমানিক ২০-২৫ লাখ পর্যটকের আনাগোনা ছিল। এবার এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ পর্যটকের আগমন হয়েছে বলে তার ধারণা।
তিনি বলেন, ‘অনলাইল, টেলিভিশন, ফেইসবুক, টুইটারসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য সৈকতের মতো কক্সবাজারের সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ ‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে সহিংস ঘটনার আশঙ্কা থেকে হোটেলে তেমন বুকিং হচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করলেন সি-গাল হোটেলের সহকারী ম্যানেজার নুর-এ আলম মিথুন। তিনি বলেন, বিজয় দিবসের ছুটিতে যেসব পর্যটক এসেছিল, তাও মুহূর্তে উধাও হয়ে গেছে। তার হোটেলে ২৪ ডিসেম্বর থেকে সামনের দিনের কোনো বুকিং নেই। গতবার ডিসেম্বরের চেয়ে ৩০ শতাংশ পর্যটক কমেছে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের অধিকতর নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেনের দাবি। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নির্বাচনের পরপরই জানুয়ারি থেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হবে কক্সবাজারে। এ জন্য আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়াতে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানালেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণ দ্রুত শেষ করা হবে। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে; রেললাইন প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন বাস্তবায়নের কাজও চলছে।
শেয়ার করুন
আবদুল আজিজ, কক্সবাজার | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

শীতকাল কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকেন্দ্রিক পর্যটনের ভরা মৌসুম হলেও এবার পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির শঙ্কা থেকে এবার দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমেছে বলে মনে করছেন পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পর্যটকদের আসা কমেছে। এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও তা স্থায়ী থাকেনি। জানুয়ারি মাস থেকে পর্যটকরা পুরোদমে আসা শুরু করবে বলে তাদের আশা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে আসা শুরু করেন।
কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অবস্থার কারণে পর্যটকশূন্য বললেই চলে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পে আবার চাঙাভাব শুরু হবে।’
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে শামুক-ঝিনুকের মালা বিক্রি করছিল দুই শিশু সালমা ও ফাতেমা। তাদের বাবা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। তারা জানায়, এখন পর্যটক কমে এসেছে। প্রতিদিন তারা সাগরপাড়ে এলেও প্রত্যাশিত মাত্রায় বিক্রি হচ্ছে না।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছর ডিসেম্বরজুড়ে কক্সবাজারে আনুমানিক ২০-২৫ লাখ পর্যটকের আনাগোনা ছিল। এবার এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ পর্যটকের আগমন হয়েছে বলে তার ধারণা।
তিনি বলেন, ‘অনলাইল, টেলিভিশন, ফেইসবুক, টুইটারসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য সৈকতের মতো কক্সবাজারের সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ ‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে সহিংস ঘটনার আশঙ্কা থেকে হোটেলে তেমন বুকিং হচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করলেন সি-গাল হোটেলের সহকারী ম্যানেজার নুর-এ আলম মিথুন। তিনি বলেন, বিজয় দিবসের ছুটিতে যেসব পর্যটক এসেছিল, তাও মুহূর্তে উধাও হয়ে গেছে। তার হোটেলে ২৪ ডিসেম্বর থেকে সামনের দিনের কোনো বুকিং নেই। গতবার ডিসেম্বরের চেয়ে ৩০ শতাংশ পর্যটক কমেছে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের অধিকতর নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেনের দাবি। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নির্বাচনের পরপরই জানুয়ারি থেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হবে কক্সবাজারে। এ জন্য আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়াতে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানালেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণ দ্রুত শেষ করা হবে। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে; রেললাইন প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন বাস্তবায়নের কাজও চলছে।