গানে গানে প্রচার
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রচারে বিভিন্ন ধরনের গান ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে প্রার্থী ও দলের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে চাওয়া হচ্ছে ভোট। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার কয়েকটি জায়গায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু গান। আবার জনপ্রিয় অনেক গানের সুরের সঙ্গে কথা পরিবর্তন করেও রচিত হয়েছে গান। সেগুলো বাজানো হচ্ছে মাইকে। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্যারোডি গানও হয়েছে, যা জন্ম দিয়েছে আলোচনার।
ঢাকার নির্বাচনী এলাকাগুলোতে দেখা যায়, প্রার্থীদের নামে চটকদার কথার গান বাজানো হচ্ছে। পাশাপাশি চিরচেনা ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, বাউল কিংবা রকব্যান্ডের অনেক জনপ্রিয় গানের সুরে নতুন কথা বসিয়ে মাইকে বাজানো হচ্ছে।
ঢাকা-১৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী সাদেক খানের নামে রচিত হয়েছে ‘১৩ আসনের জনগণ মন খুলিয়া কন’ শিরোনামের একটি গান। রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, তাজমহল রোডে সাদেক খানের নির্বাচনী প্রচার কার্যালয়গুলোতে এ গানটি শোনা যায়। রিকশায় করেও মাইকে গানগুলো বাজানো হচ্ছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের থিম সং ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানটিও বাজানো হচ্ছে। ঢাকা-১০ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ফজলে নূর তাপস। জনপ্রিয় গান ‘কইলজার ভিতর গাঁতি রাইক্যুম তোঁয়ারে’ গানের সুরে নতুন কথা বসিয়ে তাপসকে নিয়ে বাঁধা হয়েছে গান। এ ছাড়া ‘মেলায় যাইরে’ গানের সুরেও তাপসকে নিয়ে নতুন গান রচিত হয়েছে। তাপসের নির্বাচনী আসনের একাধিক জায়গায় গানগুলো বাজতে শোনা গেছে।
নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় ‘মানিক ভাইয়ের সালাম নিন’ গানটি। র্যাপ ঘরানার গানের শুরুটা ছিল, ‘দিস ইলেকশন ইজ ভেরি ইমপরট্যান্ট ইলেকশন/সো গাইস, বি কেয়ারফুল’। হাসিবুর রহমান মানিক মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় গানটি তৈরি করা হয়। পরে অবশ্য মনোনয়ন পাননি মানিক। সেই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হাজী মো. সেলিম। মানিকের জন্য রচিত গানটিতে এখন তার জায়গায় ‘সেলিম ভাই’ বসিয়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাজী সেলিমকে নিয়ে ‘আমার নেতা হাজী’ নামের আরেকটি গানও হয়েছে। কথাগুলো হলো ‘জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে জীবন দিতে রাজি, আমার নেতা হাজী/পুরান ঢাকা জিতবে এবার, রাখব জীবন বাজি/আমার নেতা হাজী।’ গানে গানে এমন প্রচারে আওয়ামী লীগের মতো সরব নয় বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে গত ১০ ডিসেম্বর ‘ধানের শীষ ডাক দিয়েছে’ শিরোনামে অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ অ্যালবামের গানগুলো দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা।
জিয়া শিশু একাডেমির প্রযোজনায় প্রকাশিত অ্যালবামের গানগুলোর মধ্যে আছে ‘ধানের শীষ ডাক দিয়েছে আয়রে ছুটে আয়’, ‘দে দে সিল মেরে দে/তোরা দেরি করিস না’, ‘গুণে-জ্ঞানে সারা দেশে যার সুনাম/সে যে মোদের মির্জা ফখরুল ইসলাম’, ‘দেখে-শুনে ভোট দিস, মার্কা মোদের ধানের শীষ’ শিরোনামের গান।
সারা দেশেই প্রার্থীদের প্রচারে রচিত হয়েছে গান-ভিডিও। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক নির্মাতা। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, “আমি মূলত টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করি। ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন প্রমোশনাল ভিডিও নির্মাণ করি। আমার স্বপ্নের জায়গা তো সিনেমা। একসময় সিনেমা নির্মাণ করব, এটাই স্বপ্ন। পাশাপাশি এ ধরনের কাজগুলো আমার আয়ের উৎস। এরকম কাজগুলোকে আমরা বলি ‘খ্যাপ’। সেখানে নিজের নাম প্রকাশ করি না। এতে আমার ক্যারিয়ারে বাজে প্রভাব পড়বে। সম্প্রতি একজন প্রার্থীকে নিয়ে একটা ভিডিও তৈরি করে দিয়েছি। তিনি আমাকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন।”
ফেইসবুকে ‘আলফা আই প্রডাকশন হাউজ’ নামের একটি লিংক ঘুরছে। এতে বলা হয়, ‘আমরা কম টাকায় নির্বাচনী প্রচারমূলক গান, ভিডিও তৈরি করে থাকি।’ সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটির ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে শামীম নামের একজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান মূলত মিউজিক ভিডিও তৈরি করে। নির্বাচন উপলক্ষে প্রচারমূলক গান-ভিডিও তৈরি করছি।’
নির্বাচনী গান-ভিডিওতে কত খরচ হয় জানতে চাইলে শামীম বলেন, ‘এটা আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক করা হয়। ১০/২০ হাজার টাকা নেওয়া হয় একটা গানে। ভালো শিল্পী দিয়ে নতুন গান করাতে চাইলে তো লাখ টাকাও নেওয়া হয়।’
নির্বাচনের প্রচারে এসব গান-ভিডিও ভোটারদের কতটা প্রভাবিত করতে পারে, জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান আলী বলেন, ‘গানগুলো বিনোদনের খোরাক হচ্ছে। এখন মানুষ আর এত বোকা নেই। যাকে যোগ্য মনে হয়, তাকেই ভোট দেওয়া হবে। আমার মনে হয় না গান শুনে কেউ ভোট দেবে।’
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রচারে বিভিন্ন ধরনের গান ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে প্রার্থী ও দলের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে চাওয়া হচ্ছে ভোট। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার কয়েকটি জায়গায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু গান। আবার জনপ্রিয় অনেক গানের সুরের সঙ্গে কথা পরিবর্তন করেও রচিত হয়েছে গান। সেগুলো বাজানো হচ্ছে মাইকে। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্যারোডি গানও হয়েছে, যা জন্ম দিয়েছে আলোচনার।
ঢাকার নির্বাচনী এলাকাগুলোতে দেখা যায়, প্রার্থীদের নামে চটকদার কথার গান বাজানো হচ্ছে। পাশাপাশি চিরচেনা ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, বাউল কিংবা রকব্যান্ডের অনেক জনপ্রিয় গানের সুরে নতুন কথা বসিয়ে মাইকে বাজানো হচ্ছে।
ঢাকা-১৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী সাদেক খানের নামে রচিত হয়েছে ‘১৩ আসনের জনগণ মন খুলিয়া কন’ শিরোনামের একটি গান। রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, তাজমহল রোডে সাদেক খানের নির্বাচনী প্রচার কার্যালয়গুলোতে এ গানটি শোনা যায়। রিকশায় করেও মাইকে গানগুলো বাজানো হচ্ছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের থিম সং ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানটিও বাজানো হচ্ছে। ঢাকা-১০ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ফজলে নূর তাপস। জনপ্রিয় গান ‘কইলজার ভিতর গাঁতি রাইক্যুম তোঁয়ারে’ গানের সুরে নতুন কথা বসিয়ে তাপসকে নিয়ে বাঁধা হয়েছে গান। এ ছাড়া ‘মেলায় যাইরে’ গানের সুরেও তাপসকে নিয়ে নতুন গান রচিত হয়েছে। তাপসের নির্বাচনী আসনের একাধিক জায়গায় গানগুলো বাজতে শোনা গেছে।
নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় ‘মানিক ভাইয়ের সালাম নিন’ গানটি। র্যাপ ঘরানার গানের শুরুটা ছিল, ‘দিস ইলেকশন ইজ ভেরি ইমপরট্যান্ট ইলেকশন/সো গাইস, বি কেয়ারফুল’। হাসিবুর রহমান মানিক মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় গানটি তৈরি করা হয়। পরে অবশ্য মনোনয়ন পাননি মানিক। সেই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হাজী মো. সেলিম। মানিকের জন্য রচিত গানটিতে এখন তার জায়গায় ‘সেলিম ভাই’ বসিয়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাজী সেলিমকে নিয়ে ‘আমার নেতা হাজী’ নামের আরেকটি গানও হয়েছে। কথাগুলো হলো ‘জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে জীবন দিতে রাজি, আমার নেতা হাজী/পুরান ঢাকা জিতবে এবার, রাখব জীবন বাজি/আমার নেতা হাজী।’ গানে গানে এমন প্রচারে আওয়ামী লীগের মতো সরব নয় বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে গত ১০ ডিসেম্বর ‘ধানের শীষ ডাক দিয়েছে’ শিরোনামে অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ অ্যালবামের গানগুলো দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা।
জিয়া শিশু একাডেমির প্রযোজনায় প্রকাশিত অ্যালবামের গানগুলোর মধ্যে আছে ‘ধানের শীষ ডাক দিয়েছে আয়রে ছুটে আয়’, ‘দে দে সিল মেরে দে/তোরা দেরি করিস না’, ‘গুণে-জ্ঞানে সারা দেশে যার সুনাম/সে যে মোদের মির্জা ফখরুল ইসলাম’, ‘দেখে-শুনে ভোট দিস, মার্কা মোদের ধানের শীষ’ শিরোনামের গান।
সারা দেশেই প্রার্থীদের প্রচারে রচিত হয়েছে গান-ভিডিও। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক নির্মাতা। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, “আমি মূলত টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করি। ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন প্রমোশনাল ভিডিও নির্মাণ করি। আমার স্বপ্নের জায়গা তো সিনেমা। একসময় সিনেমা নির্মাণ করব, এটাই স্বপ্ন। পাশাপাশি এ ধরনের কাজগুলো আমার আয়ের উৎস। এরকম কাজগুলোকে আমরা বলি ‘খ্যাপ’। সেখানে নিজের নাম প্রকাশ করি না। এতে আমার ক্যারিয়ারে বাজে প্রভাব পড়বে। সম্প্রতি একজন প্রার্থীকে নিয়ে একটা ভিডিও তৈরি করে দিয়েছি। তিনি আমাকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন।”
ফেইসবুকে ‘আলফা আই প্রডাকশন হাউজ’ নামের একটি লিংক ঘুরছে। এতে বলা হয়, ‘আমরা কম টাকায় নির্বাচনী প্রচারমূলক গান, ভিডিও তৈরি করে থাকি।’ সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটির ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে শামীম নামের একজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান মূলত মিউজিক ভিডিও তৈরি করে। নির্বাচন উপলক্ষে প্রচারমূলক গান-ভিডিও তৈরি করছি।’
নির্বাচনী গান-ভিডিওতে কত খরচ হয় জানতে চাইলে শামীম বলেন, ‘এটা আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক করা হয়। ১০/২০ হাজার টাকা নেওয়া হয় একটা গানে। ভালো শিল্পী দিয়ে নতুন গান করাতে চাইলে তো লাখ টাকাও নেওয়া হয়।’
নির্বাচনের প্রচারে এসব গান-ভিডিও ভোটারদের কতটা প্রভাবিত করতে পারে, জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান আলী বলেন, ‘গানগুলো বিনোদনের খোরাক হচ্ছে। এখন মানুষ আর এত বোকা নেই। যাকে যোগ্য মনে হয়, তাকেই ভোট দেওয়া হবে। আমার মনে হয় না গান শুনে কেউ ভোট দেবে।’