বড়দিন উদযাপিত
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গতকাল মঙ্গলবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দেশের খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ দিনটি উদযাপন করেন।
বড়দিন উপলক্ষে গির্জায় গির্জায় আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রার্থনার। ছিল বর্ণিল আলোকসজ্জা। দেশের সব গির্জাসহ খ্রিস্টান পরিবারে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, কেক তৈরি ও মোমবাতি জ্বালানো হয়। ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনে গোশালা স্থাপন এবং রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজান তারা। শিশুদের মধ্যে উপহারসামগ্রী বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দ বাড়িয়ে দেন ‘সান্তা ক্লজ’।
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই গির্জায় আসেন যিশুভক্তরা। কয়েকটি পর্বে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলযজ্ঞে যিশুকে আহ্বান করে চলে ভক্তদের প্রার্থনা। দেশের বড় হোটেলগুলোতেও বড়দিন উদযাপনে বিশেষ আয়োজন ছিল।
বড়দিন উপলক্ষে এ দিন সকালে বঙ্গভবনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
খ্রিস্টানদের বিশ্বাসমতে, এই দিনে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন যিশুখ্রিস্ট। তাদের বিশ্বাস, পৃথিবীতে
শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া, মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করা এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার করতে তার আগমন ঘটেছিল।
বিভিন্ন স্থানে বড়দিন উদযাপিত: চট্টগ্রাম ব্যুরো : উৎসবমুখর ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে চট্টগ্রাম নগরীতে উদযাপিত হলো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন। বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল চট্টগ্রাম মহানগর জুড়ে।
গতকাল মঙ্গলবার বড়দিনের মূল অনুষ্ঠান হলেও এর আগের দিন সোমবার সন্ধ্যা থেকেই গির্জায় গির্জায় প্রার্থনায় মিলিত হন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। রাত ৮টায় মহানগরের পাথরঘাটা জপমালা রানি গির্জায় মূল প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিন পালনের উৎসব। এ সময় প্রার্থনায় পৌরোহিত্য করেন জপমালা রানি গির্জার পাল পুরোহিত ফাদার সুব্রত বনিফাস।
রাত ১০টা ১ মিনিটে একই গির্জায় আরো একটি প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এতে পৌরোহিত্য করেন চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিসের আর্চ বিশপ মজেস কস্তা সিএসসি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় একই গির্জায় আরো এক দফা সম্মিলিত প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এতেও পৌরোহিত্য করেন আর্চ বিশপ মজেস কস্তা।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় হিলির ছাতনি চারমাথা মোড়ে অবস্থিত প্রেরিত শিষ্য সাধু যোহনের জামতলি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। প্রার্থনা পরিচালনা করেন পাঁচবিবির পাথরঘাটা ক্যাথলিক মিশনের ফাদার জাকারিয়াস মার্ডি। উৎসবমুখর পরিবেশে চলে প্রার্থনা। এতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। এর আগে মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধি, পাপমুক্তি, মঙ্গল ও করুণা কামনা করা হয়।
বড়দিন উপলক্ষে রঙিন কাগজ ও ফুল দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হয় গির্জা। এ ছাড়াও কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে বড়দিন উপলক্ষে দিনাজপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ শিবলী সাদিকের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি দল জামতলি গির্জায় উপস্থিত হয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
পাবনা প্রতিনিধি : বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় পাবনায় ২২টি গির্জায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন পালিত হয়েছে। বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে পাবনার সব গির্জা আলোকসজ্জা করা হয়। বাড়িতে বাড়িতে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, গোশালা বানানো, পিঠা তৈরিসহ নানা আয়োজনে খ্রিস্টান বাড়িগুলো হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর।
পাবনা শহর, চাটমোহর, ফৈলজানা ও আতাইকুলাসহ বিভিন্ন ব্যাপ্টিস্ট চার্চে সকাল থেকে নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিনটি। গির্জায় প্রার্থনা শেষে বড়দিনের কেক কাটা হয়।
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সদস্য কলিট তালুকদার জানান, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন দেশ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করেন।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাঁওতালপল্লী আদমপুর ও মাদারপুর গির্জায় গতকাল মঙ্গলবার বড়দিন উদযাপন করেছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। এদিন তেমন কোনো বড় আয়োজন ছাড়াই শুধু প্রার্থনার মধ্য দিয়েই তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালন করেছেন। নিরাপত্তার অভাববোধ না করলেও কেন আয়োজনের এমন সীমাবদ্ধতা তা অবশ্য জানা যায়নি।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গতকাল মঙ্গলবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দেশের খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ দিনটি উদযাপন করেন।
বড়দিন উপলক্ষে গির্জায় গির্জায় আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রার্থনার। ছিল বর্ণিল আলোকসজ্জা। দেশের সব গির্জাসহ খ্রিস্টান পরিবারে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, কেক তৈরি ও মোমবাতি জ্বালানো হয়। ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনে গোশালা স্থাপন এবং রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজান তারা। শিশুদের মধ্যে উপহারসামগ্রী বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দ বাড়িয়ে দেন ‘সান্তা ক্লজ’।
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই গির্জায় আসেন যিশুভক্তরা। কয়েকটি পর্বে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলযজ্ঞে যিশুকে আহ্বান করে চলে ভক্তদের প্রার্থনা। দেশের বড় হোটেলগুলোতেও বড়দিন উদযাপনে বিশেষ আয়োজন ছিল।
বড়দিন উপলক্ষে এ দিন সকালে বঙ্গভবনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
খ্রিস্টানদের বিশ্বাসমতে, এই দিনে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন যিশুখ্রিস্ট। তাদের বিশ্বাস, পৃথিবীতে
শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া, মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করা এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার করতে তার আগমন ঘটেছিল।
বিভিন্ন স্থানে বড়দিন উদযাপিত: চট্টগ্রাম ব্যুরো : উৎসবমুখর ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে চট্টগ্রাম নগরীতে উদযাপিত হলো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন। বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল চট্টগ্রাম মহানগর জুড়ে।
গতকাল মঙ্গলবার বড়দিনের মূল অনুষ্ঠান হলেও এর আগের দিন সোমবার সন্ধ্যা থেকেই গির্জায় গির্জায় প্রার্থনায় মিলিত হন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। রাত ৮টায় মহানগরের পাথরঘাটা জপমালা রানি গির্জায় মূল প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিন পালনের উৎসব। এ সময় প্রার্থনায় পৌরোহিত্য করেন জপমালা রানি গির্জার পাল পুরোহিত ফাদার সুব্রত বনিফাস।
রাত ১০টা ১ মিনিটে একই গির্জায় আরো একটি প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এতে পৌরোহিত্য করেন চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিসের আর্চ বিশপ মজেস কস্তা সিএসসি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় একই গির্জায় আরো এক দফা সম্মিলিত প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এতেও পৌরোহিত্য করেন আর্চ বিশপ মজেস কস্তা।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় হিলির ছাতনি চারমাথা মোড়ে অবস্থিত প্রেরিত শিষ্য সাধু যোহনের জামতলি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। প্রার্থনা পরিচালনা করেন পাঁচবিবির পাথরঘাটা ক্যাথলিক মিশনের ফাদার জাকারিয়াস মার্ডি। উৎসবমুখর পরিবেশে চলে প্রার্থনা। এতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। এর আগে মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধি, পাপমুক্তি, মঙ্গল ও করুণা কামনা করা হয়।
বড়দিন উপলক্ষে রঙিন কাগজ ও ফুল দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হয় গির্জা। এ ছাড়াও কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে বড়দিন উপলক্ষে দিনাজপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ শিবলী সাদিকের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি দল জামতলি গির্জায় উপস্থিত হয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
পাবনা প্রতিনিধি : বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় পাবনায় ২২টি গির্জায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন পালিত হয়েছে। বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে পাবনার সব গির্জা আলোকসজ্জা করা হয়। বাড়িতে বাড়িতে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, গোশালা বানানো, পিঠা তৈরিসহ নানা আয়োজনে খ্রিস্টান বাড়িগুলো হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর।
পাবনা শহর, চাটমোহর, ফৈলজানা ও আতাইকুলাসহ বিভিন্ন ব্যাপ্টিস্ট চার্চে সকাল থেকে নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিনটি। গির্জায় প্রার্থনা শেষে বড়দিনের কেক কাটা হয়।
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সদস্য কলিট তালুকদার জানান, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন দেশ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করেন।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাঁওতালপল্লী আদমপুর ও মাদারপুর গির্জায় গতকাল মঙ্গলবার বড়দিন উদযাপন করেছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। এদিন তেমন কোনো বড় আয়োজন ছাড়াই শুধু প্রার্থনার মধ্য দিয়েই তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালন করেছেন। নিরাপত্তার অভাববোধ না করলেও কেন আয়োজনের এমন সীমাবদ্ধতা তা অবশ্য জানা যায়নি।