ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থীদের ভাবনা
মাদকের বিস্তার রোধের আশ্বাস ফারুক-পার্থের
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাষানটেক থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনে যেমন অভিজাত এলাকা রয়েছে, তেমন আছে বস্তিও। কড়াইল, ভাষানটেক, সাততালা বস্তি ও কালাচাঁদপুর এলাকার প্রধান সমস্যা মাদক। এখানে গড়ে উঠেছে মাদককেন্দ্রিক একাধিক সিন্ডিকেট। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারেও উঠে আসছে এই বিষয়টি। প্রধান দুই জোটের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক) ও ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থও দিচ্ছেন ক্ষমতায় এলে মাদকের বিস্তার রোধের প্রতিশ্রুতি।
মাদকের বিস্তার রোধে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা-১৭ আসনে মহাজোট মনোনীত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক। তিনি গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বস্তিবাসীর বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, মাদকের বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেব। মাদকের সমস্যা নিরসনে লাঠি বা বন্দুক নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ভালোবাসা দিয়ে মাদকাসক্তদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনব। এরপরও কেউ ভালো পথে না এলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘নৌকা যদি ক্ষমতায় আসতে পারে, তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে অনুযায়ী বস্তির স্থানে বিল্ডিং হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চেয়ে নেব আমার বস্তিবাসীর জন্য।’ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দেওয়ার বিকল্প নেই দাবি করে ফারুক বলেন, ‘আমি চাই ভোটাররা দেশকে ভালোবাসুন, মাটিকে ভালোবাসুন। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নিরলস কাজ করে চলছেন। যে ৩৯টি উন্নয়নমূলক বড় বড় কাজ চলছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।’ এই আসনে নির্বাচনী সহিংসতা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই।’
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী বিজেপি সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বুধবার এক ভিডিও বার্তা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরের আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারিনি। আমি যখনই অন্যায় দেখেছি, অবিচার দেখেছি, তখনই সোচ্চার হয়েছি। আপনারা যদি আমার পাশে থাকেন, তবে আগামীতে জাতীয় সংসদে মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার একটা সুযোগ আমি পাব। আমার ঢাকা-১৭ আসনের একটা বৈশিষ্ট্যÑ এখানে সমাজের বিত্তশালীও যেমন আছেন, তেমন মধ্যবিত্তও আছেন। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও জমি দখল। আপনারা যদি পাশে থাকেন, তবে এই সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি চেষ্টা আমি করব। এখানকার সমস্যার কথা সংসদের মাধ্যমে জাতির কাছে পৌঁছে দেব। একটি ভোট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে, তরুণ সমাজের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে।’
রাজধানীর এই আসনটির আলোচিত আরেক প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি দেশে না থাকলেও তার সমর্থকরা ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থাকলেও এরশাদ লাঙ্গল প্রতীকে এই আসনে প্রার্থী হন। গতবার তিনি শেষ মুহূর্তে এই আসন থেকে সরে দাঁড়ালেও এবার এরশাদের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী। তিনি বলেন, ‘ফারুক চলচ্চিত্রের নায়ক, আর এরশাদ রাজনীতির মহানায়ক। সাধারণ মানুষের জন্য এরশাদ যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তার জন্যই জনগণ তাকে ভোট দেবে।’
আসনটিতে মোট ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রচার চালাচ্ছেন সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি মহাজোটের শরিক হতে পারেননি। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য বিএনএফ-এর প্রধান এস এম আবুল কালাম আজাদ লড়ছেন টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে। গতবার খালি মাঠে গোল দেওয়া এই রাজনীতিকদের এবার জয়ের তেমন সম্ভাবনা নেই বলে জানান ভোটাররা। এ ছাড়া প্রচারের মাঠে রয়েছেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল থেকে বাঘ প্রতীক নিয়ে আলী হায়দার, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ থেকে মই প্রতীকে এস এম আহসান হাবিব, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ প্রতীকে কাজী মো. রাশিদুল হাসান, দালান প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীকে আমিনুল হক তালুকদার, কুলা প্রতীকে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের লে. কর্নেল (অব.) ডা. এ কে এম সাইফুর রহমান।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাষানটেক থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনে যেমন অভিজাত এলাকা রয়েছে, তেমন আছে বস্তিও। কড়াইল, ভাষানটেক, সাততালা বস্তি ও কালাচাঁদপুর এলাকার প্রধান সমস্যা মাদক। এখানে গড়ে উঠেছে মাদককেন্দ্রিক একাধিক সিন্ডিকেট। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারেও উঠে আসছে এই বিষয়টি। প্রধান দুই জোটের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক) ও ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থও দিচ্ছেন ক্ষমতায় এলে মাদকের বিস্তার রোধের প্রতিশ্রুতি।
মাদকের বিস্তার রোধে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা-১৭ আসনে মহাজোট মনোনীত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক। তিনি গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বস্তিবাসীর বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, মাদকের বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেব। মাদকের সমস্যা নিরসনে লাঠি বা বন্দুক নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ভালোবাসা দিয়ে মাদকাসক্তদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনব। এরপরও কেউ ভালো পথে না এলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘নৌকা যদি ক্ষমতায় আসতে পারে, তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে অনুযায়ী বস্তির স্থানে বিল্ডিং হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চেয়ে নেব আমার বস্তিবাসীর জন্য।’ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দেওয়ার বিকল্প নেই দাবি করে ফারুক বলেন, ‘আমি চাই ভোটাররা দেশকে ভালোবাসুন, মাটিকে ভালোবাসুন। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নিরলস কাজ করে চলছেন। যে ৩৯টি উন্নয়নমূলক বড় বড় কাজ চলছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।’ এই আসনে নির্বাচনী সহিংসতা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই।’
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী বিজেপি সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বুধবার এক ভিডিও বার্তা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরের আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারিনি। আমি যখনই অন্যায় দেখেছি, অবিচার দেখেছি, তখনই সোচ্চার হয়েছি। আপনারা যদি আমার পাশে থাকেন, তবে আগামীতে জাতীয় সংসদে মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার একটা সুযোগ আমি পাব। আমার ঢাকা-১৭ আসনের একটা বৈশিষ্ট্যÑ এখানে সমাজের বিত্তশালীও যেমন আছেন, তেমন মধ্যবিত্তও আছেন। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও জমি দখল। আপনারা যদি পাশে থাকেন, তবে এই সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি চেষ্টা আমি করব। এখানকার সমস্যার কথা সংসদের মাধ্যমে জাতির কাছে পৌঁছে দেব। একটি ভোট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে, তরুণ সমাজের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে।’
রাজধানীর এই আসনটির আলোচিত আরেক প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি দেশে না থাকলেও তার সমর্থকরা ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থাকলেও এরশাদ লাঙ্গল প্রতীকে এই আসনে প্রার্থী হন। গতবার তিনি শেষ মুহূর্তে এই আসন থেকে সরে দাঁড়ালেও এবার এরশাদের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী। তিনি বলেন, ‘ফারুক চলচ্চিত্রের নায়ক, আর এরশাদ রাজনীতির মহানায়ক। সাধারণ মানুষের জন্য এরশাদ যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তার জন্যই জনগণ তাকে ভোট দেবে।’
আসনটিতে মোট ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রচার চালাচ্ছেন সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি মহাজোটের শরিক হতে পারেননি। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য বিএনএফ-এর প্রধান এস এম আবুল কালাম আজাদ লড়ছেন টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে। গতবার খালি মাঠে গোল দেওয়া এই রাজনীতিকদের এবার জয়ের তেমন সম্ভাবনা নেই বলে জানান ভোটাররা। এ ছাড়া প্রচারের মাঠে রয়েছেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল থেকে বাঘ প্রতীক নিয়ে আলী হায়দার, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ থেকে মই প্রতীকে এস এম আহসান হাবিব, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ প্রতীকে কাজী মো. রাশিদুল হাসান, দালান প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীকে আমিনুল হক তালুকদার, কুলা প্রতীকে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের লে. কর্নেল (অব.) ডা. এ কে এম সাইফুর রহমান।