আ.লীগ নেতাদের শঙ্কা
ভোটের দিন বিষফোঁড়া হতে পারে অনুপ্রবেশকারীরা
পাভেল হায়দার চৌধুরী | ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
গত দশ বছরে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি থেকে দলে ভেড়া লোকদের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট পর্যন্ত কড়া নজরে রাখতে সারা দেশে নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগ সেজে ভোটকেন্দ্রে ঢুকে বিএনপির উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। বিভিন্ন সূত্রে আওয়ামী লীগের কাছে এ খবর আসছে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
ওই নেতারা জানান, দলের জন্য ভোটের দিন তারা বিষফোঁড়া হয়ে উঠতে পারে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও এ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর দুই নেতা বলেন, গত শনিবার সিলেটে জনসভা করতে গেলে সেখানে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অনুপ্রবেশকারীদের ওপর বিশেষ নজর রাখতে নির্দেশ দেন তিনি। অনুপ্রবেশ নিয়ে এর আগে কয়েক দফা শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এরপরও বিভিন্ন জেলায় যোগদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন দলীয় সংসদ সদস্যরা।
দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের ঘটনা সারা দেশে অনেক রয়েছে। এসব লোকজনের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে সারা দেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জানানো হয়েছে। ভোটের দুই দিন আগ থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
অনুপ্রবেশকারীরা সংখ্যায় কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না, তবে এর সংখ্যা কম নয়।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, বিএনপির শীর্ষ নেতারা কৌশল নিয়েছেন নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিতে হলে তাদের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ সেজে ভোটকেন্দ্রে থাকতে হবে। তাহলে প্রয়োজন বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারবেন তারা। তাই যারা বিভিন্ন সময়ে মামলা-হামলার ভয়ভীতিতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, তাদের টার্গেট করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, সারা দেশে গত দশ বছরে লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কোনো কোনো জেলায় তারা নিরাপদেও আছেন। ভোটের দিন তাদের কাজে লাগিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করবে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে সারা দেশে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তারা নির্বাচনী সহিংসতায় জড়াতে পারেÑ এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে।’
আবদুর রহমান আরো বলেন, ‘এর ওপর ভিত্তি করে আমরা সারা দেশের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে জানিয়েছি। কারণ তারা আওয়ামী লীগ সেজে বিএনপির পক্ষে কাজ করবে। এ সুযোগ দেওয়া যাবে না বিএনপিকে।’
সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীকে ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থান নিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারা সারা দেশে ফোন করে সতর্ক থাকার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। কেন্দ্রের আশপাশে ভোটের আগে থেকে কোনো বাসাবাড়িতে নতুন কারো অবস্থান দেখলে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে অবহিত করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও কড়া নজরদারিতে রাখতে নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, একটা বিশেষ গ্রুপ গড়ে উঠেছে, তারা কেন্দ্রে যাবে আওয়ামী লীগ সেজে, ভোট দেবে বিএনপি প্রার্থীদের। এ বিষয়টিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। ভোটের লাইনে অপরিচিত কোনো লোক থাকলে তাই কেন্দ্র কমিটিকে সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে বলে কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘটনা বেশি। ফলে এই বিভাগগুলোয় দলীয় নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনাও তাদের সহযোগিতায় ঘটতে পারে। তাই অনুপ্রবেশকারীদের ওপর বেশি বেশি নজর রাখতে হবে।
শেয়ার করুন
পাভেল হায়দার চৌধুরী | ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

গত দশ বছরে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি থেকে দলে ভেড়া লোকদের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট পর্যন্ত কড়া নজরে রাখতে সারা দেশে নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগ সেজে ভোটকেন্দ্রে ঢুকে বিএনপির উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। বিভিন্ন সূত্রে আওয়ামী লীগের কাছে এ খবর আসছে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
ওই নেতারা জানান, দলের জন্য ভোটের দিন তারা বিষফোঁড়া হয়ে উঠতে পারে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও এ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর দুই নেতা বলেন, গত শনিবার সিলেটে জনসভা করতে গেলে সেখানে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অনুপ্রবেশকারীদের ওপর বিশেষ নজর রাখতে নির্দেশ দেন তিনি। অনুপ্রবেশ নিয়ে এর আগে কয়েক দফা শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এরপরও বিভিন্ন জেলায় যোগদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন দলীয় সংসদ সদস্যরা।
দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের ঘটনা সারা দেশে অনেক রয়েছে। এসব লোকজনের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে সারা দেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জানানো হয়েছে। ভোটের দুই দিন আগ থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
অনুপ্রবেশকারীরা সংখ্যায় কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না, তবে এর সংখ্যা কম নয়।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, বিএনপির শীর্ষ নেতারা কৌশল নিয়েছেন নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিতে হলে তাদের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ সেজে ভোটকেন্দ্রে থাকতে হবে। তাহলে প্রয়োজন বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারবেন তারা। তাই যারা বিভিন্ন সময়ে মামলা-হামলার ভয়ভীতিতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, তাদের টার্গেট করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, সারা দেশে গত দশ বছরে লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কোনো কোনো জেলায় তারা নিরাপদেও আছেন। ভোটের দিন তাদের কাজে লাগিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করবে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে সারা দেশে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তারা নির্বাচনী সহিংসতায় জড়াতে পারেÑ এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে।’
আবদুর রহমান আরো বলেন, ‘এর ওপর ভিত্তি করে আমরা সারা দেশের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে জানিয়েছি। কারণ তারা আওয়ামী লীগ সেজে বিএনপির পক্ষে কাজ করবে। এ সুযোগ দেওয়া যাবে না বিএনপিকে।’
সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীকে ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থান নিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারা সারা দেশে ফোন করে সতর্ক থাকার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। কেন্দ্রের আশপাশে ভোটের আগে থেকে কোনো বাসাবাড়িতে নতুন কারো অবস্থান দেখলে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে অবহিত করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও কড়া নজরদারিতে রাখতে নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, একটা বিশেষ গ্রুপ গড়ে উঠেছে, তারা কেন্দ্রে যাবে আওয়ামী লীগ সেজে, ভোট দেবে বিএনপি প্রার্থীদের। এ বিষয়টিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। ভোটের লাইনে অপরিচিত কোনো লোক থাকলে তাই কেন্দ্র কমিটিকে সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে বলে কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘটনা বেশি। ফলে এই বিভাগগুলোয় দলীয় নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনাও তাদের সহযোগিতায় ঘটতে পারে। তাই অনুপ্রবেশকারীদের ওপর বেশি বেশি নজর রাখতে হবে।