আনন্দবাজারকে শেখ হাসিনা
মানুষ আমাদেরই চাইছেন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জিতবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। গত বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা সুধা সদনে কলকাতাভিত্তিক দৈনিক আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশার কথা জানান।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জনগণের ওপর আমার বিপুল আস্থা। তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। জনগণের ভোটেই আমরা আবার নির্বাচিত হব।’
জয়ের বিষয়ে এতটা নিশ্চিত কীভাবে জানতে চাইলে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রায় ৬০০ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি; মুছে যায়নি প্রিসাইডিং অফিসারসহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিল; তারা ভোটও দিয়েছিল। সেই জনগণ আবার আমাদেরই ভোট দেবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর দেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সেসব ভোলেনি। ভোলেনি বলেই ওইসব ঘটনা যে রাজনৈতিক দল ঘটিয়েছিল, তারা জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে। সেই জোরের জায়গা থেকেই ফের সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ।’
নির্বাচনের আগে বিরোধীরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করছে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে তারা ভীষণ পারদর্শী। নির্বাচনে বিরোধীদের হয়ে যারা প্রার্থী হতে চেয়েছেন, তাদেরই ওরা নমিনেশন দিয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রতীক পেয়েছেন একজন। এরপর নিজেদের মধ্যেই সংঘাত শুরু হয়েছে। দলের পুরোনো বা জিতবেনএমন নেতাদের নমিনেশন দেয়নি তারা,যে কারণে বঞ্চিতদের কাছে ওদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে। কয়েকজন নেতাকর্মীকে খুনের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার পর সে বিষয়ে তদন্ত হবে।’
ওই সময় তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খুবই উৎসাহী। বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে, যার কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গেছে।’
নির্বাচন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফরের কথা জানান শেখ হাসিনা। সে সফরগুলোতে মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ার দাবি করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘মানুষের মধ্যে সেই ভালোবাসাটা দেখতে পেলাম। জানেন, তারা অন্তর থেকে চাইছে, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানে, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।’
আওয়ামী লীগ নারী ও তরুণ সমাজের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আগের মতো চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরিতার পরিবেশও নেই; বরং আমাদের পক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়া সবার সমর্থন আমাদের প্রতি, সেটা টেরও পাচ্ছি।’
পাকিস্তান নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু পাকিস্তানপ্রেমী মানুষ আছেন, যাদের মন পড়ে আছে পাকিস্তানে। তবে আমরা সতর্ক। কারো সঙ্গে বৈরিতা করতে না চাইলেও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে নাক গলাতে দেবে না বাংলাদেশ।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা লন্ডনে বসে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাইছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই আসামিরা সব সময় বিদেশে বসে দেশের ভেতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। অস্ত্র পাচার, চোরাকারবার এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ওইসব মানুষ অঢেল টাকার মালিক হয়েছে।’
এবারের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা কীভাবে ধানের শীষ প্রতীক পেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘যাদের নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করল, তাদের কীভাবে নমিনেশন দেওয়া হলো? জামায়াত তো গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। দেশের নারীদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল, ঘরবাড়ি দখল করেছিল। ওদের নমিনেশন দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শঙ্কিত।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামাল হোসেনকে দেশের সংবিধান রচয়িতা বলা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে নিজে দল গঠন করেন। ধানমন্ডি থেকে দাঁড়িয়েছিলেন একবার। ওই নির্বাচনে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। সেই তিনি কিনা গেলেন জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে। তবে অবাক হইনি। কারণ উনার শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে।’
ভোটের ফল কেমন হবে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আওয়ামী লীগই আসছে। কারণ মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জিতবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। গত বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা সুধা সদনে কলকাতাভিত্তিক দৈনিক আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশার কথা জানান।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জনগণের ওপর আমার বিপুল আস্থা। তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। জনগণের ভোটেই আমরা আবার নির্বাচিত হব।’
জয়ের বিষয়ে এতটা নিশ্চিত কীভাবে জানতে চাইলে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রায় ৬০০ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি; মুছে যায়নি প্রিসাইডিং অফিসারসহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিল; তারা ভোটও দিয়েছিল। সেই জনগণ আবার আমাদেরই ভোট দেবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর দেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সেসব ভোলেনি। ভোলেনি বলেই ওইসব ঘটনা যে রাজনৈতিক দল ঘটিয়েছিল, তারা জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে। সেই জোরের জায়গা থেকেই ফের সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ।’
নির্বাচনের আগে বিরোধীরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করছে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে তারা ভীষণ পারদর্শী। নির্বাচনে বিরোধীদের হয়ে যারা প্রার্থী হতে চেয়েছেন, তাদেরই ওরা নমিনেশন দিয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রতীক পেয়েছেন একজন। এরপর নিজেদের মধ্যেই সংঘাত শুরু হয়েছে। দলের পুরোনো বা জিতবেনএমন নেতাদের নমিনেশন দেয়নি তারা,যে কারণে বঞ্চিতদের কাছে ওদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে। কয়েকজন নেতাকর্মীকে খুনের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার পর সে বিষয়ে তদন্ত হবে।’
ওই সময় তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খুবই উৎসাহী। বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে, যার কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গেছে।’
নির্বাচন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফরের কথা জানান শেখ হাসিনা। সে সফরগুলোতে মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ার দাবি করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘মানুষের মধ্যে সেই ভালোবাসাটা দেখতে পেলাম। জানেন, তারা অন্তর থেকে চাইছে, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানে, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।’
আওয়ামী লীগ নারী ও তরুণ সমাজের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আগের মতো চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরিতার পরিবেশও নেই; বরং আমাদের পক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়া সবার সমর্থন আমাদের প্রতি, সেটা টেরও পাচ্ছি।’
পাকিস্তান নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু পাকিস্তানপ্রেমী মানুষ আছেন, যাদের মন পড়ে আছে পাকিস্তানে। তবে আমরা সতর্ক। কারো সঙ্গে বৈরিতা করতে না চাইলেও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে নাক গলাতে দেবে না বাংলাদেশ।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা লন্ডনে বসে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাইছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই আসামিরা সব সময় বিদেশে বসে দেশের ভেতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। অস্ত্র পাচার, চোরাকারবার এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ওইসব মানুষ অঢেল টাকার মালিক হয়েছে।’
এবারের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা কীভাবে ধানের শীষ প্রতীক পেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘যাদের নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করল, তাদের কীভাবে নমিনেশন দেওয়া হলো? জামায়াত তো গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। দেশের নারীদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল, ঘরবাড়ি দখল করেছিল। ওদের নমিনেশন দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শঙ্কিত।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামাল হোসেনকে দেশের সংবিধান রচয়িতা বলা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে নিজে দল গঠন করেন। ধানমন্ডি থেকে দাঁড়িয়েছিলেন একবার। ওই নির্বাচনে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। সেই তিনি কিনা গেলেন জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে। তবে অবাক হইনি। কারণ উনার শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে।’
ভোটের ফল কেমন হবে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আওয়ামী লীগই আসছে। কারণ মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’