বিলুপ্ত ছিটমহলে উচ্ছ্বাস এবার আমরাও ভোট দেব
শহীদুল ইসলাম, পঞ্চগড় | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ৩৬টি ছিটমহলের প্রায় ৯ হাজার নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন আজ। ৭২ বছর পর তারা ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে যাচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। জীবনের প্রথম কোনো সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এসব এলাকার ভোটাররা। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হোক এটাই তাদের প্রত্যাশা। বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখ-ের অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চগড়ের ভেতরে থাকা ৩৬টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের ৬৮ বছরের বন্দিজীবনের অবসান হয়। তারা ফিরে পান দেশের ঠিকানা। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশে ভোটের সময় তারা কেবল দর্শক ছিলেন। ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ার পর বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকদের বাংলাদেশের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভোটার তালিকায় বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবার জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তারা।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে জানা গেছে পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহলে আট হাজার ৯৩৫ নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। পঞ্চগড়-১ আসনের মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতটি বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটার এক হাজার ২৫ জন। পঞ্চগড়-২ আসনের (বোদা ও দেবীগঞ্জ) ২৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোটার ছয় হাজার ২২০ জন। ৩৬টি ছিটমহলের মোট জনসংখ্যা ১৯ হাজার ৮৫২।
সদর উপজেলার বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলের সত্তরোর্ধ্ব ফয়জুল হক বলেন, ‘জীবনে খুব ইচ্ছে ছিল যেন বাংলাদেশি হিসেবে মরতে পারি। আমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশের পরিচয় পেয়েছি। এবার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারব। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখন মরেও শান্তি পাব।’
একই ছিটমহলের মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এতদিন মানুষ ভোট দিত, আমরা দেখতাম, এবার আমরাও ভোট দিতে পারব। আগে আমাদের কেউ খোঁজ নিত না। এখন সব দলের নেতাকর্মীরা আমাদের খোঁজখবর নেয়।’
মাদ্রাসাশিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা ভোটার হয়েছি, স্মার্টকার্ড পেয়েছি। এখন জাতীয় সংসদে ভোট দেওয়ার পালা। এ জন্য আমরা অধীর আগ্রহে ভোটের দিনটির অপেক্ষায় আছি।’
বোদা উপজেলার বিলুপ্ত পুটিমারী ছিটমহলের তছলিম উদ্দিন (৭০) বলেন, ‘জীবনের শেষ বয়সে এসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারব, এটা কল্পনাও করিনি। আমরা এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেওয়ার অপেক্ষা করছি।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘মোট ৮ হাজার ৯৪৫ জন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী ভোটার হয়েছেন। আশা করি উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’
শেয়ার করুন
শহীদুল ইসলাম, পঞ্চগড় | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ৩৬টি ছিটমহলের প্রায় ৯ হাজার নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন আজ। ৭২ বছর পর তারা ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে যাচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। জীবনের প্রথম কোনো সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এসব এলাকার ভোটাররা। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হোক এটাই তাদের প্রত্যাশা। বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখ-ের অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চগড়ের ভেতরে থাকা ৩৬টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের ৬৮ বছরের বন্দিজীবনের অবসান হয়। তারা ফিরে পান দেশের ঠিকানা। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশে ভোটের সময় তারা কেবল দর্শক ছিলেন। ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ার পর বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকদের বাংলাদেশের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভোটার তালিকায় বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবার জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তারা।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে জানা গেছে পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহলে আট হাজার ৯৩৫ নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। পঞ্চগড়-১ আসনের মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতটি বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটার এক হাজার ২৫ জন। পঞ্চগড়-২ আসনের (বোদা ও দেবীগঞ্জ) ২৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোটার ছয় হাজার ২২০ জন। ৩৬টি ছিটমহলের মোট জনসংখ্যা ১৯ হাজার ৮৫২।
সদর উপজেলার বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলের সত্তরোর্ধ্ব ফয়জুল হক বলেন, ‘জীবনে খুব ইচ্ছে ছিল যেন বাংলাদেশি হিসেবে মরতে পারি। আমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশের পরিচয় পেয়েছি। এবার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারব। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখন মরেও শান্তি পাব।’
একই ছিটমহলের মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এতদিন মানুষ ভোট দিত, আমরা দেখতাম, এবার আমরাও ভোট দিতে পারব। আগে আমাদের কেউ খোঁজ নিত না। এখন সব দলের নেতাকর্মীরা আমাদের খোঁজখবর নেয়।’
মাদ্রাসাশিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা ভোটার হয়েছি, স্মার্টকার্ড পেয়েছি। এখন জাতীয় সংসদে ভোট দেওয়ার পালা। এ জন্য আমরা অধীর আগ্রহে ভোটের দিনটির অপেক্ষায় আছি।’
বোদা উপজেলার বিলুপ্ত পুটিমারী ছিটমহলের তছলিম উদ্দিন (৭০) বলেন, ‘জীবনের শেষ বয়সে এসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারব, এটা কল্পনাও করিনি। আমরা এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেওয়ার অপেক্ষা করছি।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘মোট ৮ হাজার ৯৪৫ জন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী ভোটার হয়েছেন। আশা করি উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’