‘জোর কইর্যা একটা কিছু করলে কি তারে ভোট কওন যায়’
আশরাফুল ইসলাম রানা | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
রাজধানীর ধানমন্ডি ৯/এ সড়কের দক্ষিণ পাশের ফুটপাতে পরপর কয়েকটি চা-দোকান। সর্বপশ্চিমের দোকান ঘেঁষে জুতা মেরামতের সরঞ্জাম নিয়ে বসেন শ্যামল চন্দ্র। নিজেকে মুচির পরিবর্তে চর্মশিল্পী বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বয়সে ৩৫ পার হওয়া শ্যামল। নিজ থেকেই এ উপাধি নেননি। দিয়েছেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত পর্যন্ত পাওয়া যায় শ্যামলকে। গত চার বছরে এর ব্যত্যয় চোখে পড়েনি।
তবে এবার হঠাৎ উধাও শ্যামল। গত ১০ দিন ধরে টানা অনুপস্থিত তিনি। ভোটের আগের দিন গতকাল শনিবার সকালে ফের পাওয়া গেল তাকে। এত দিন না আসার কারণ জানতে চাইলে হেসে উত্তর দিলেন, ‘কামরুলের (খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম) প্রচার চালাইলাম। কাইল শ্যাষ হইছে আইজ আইছি’। নির্বাচনী প্রচারে শ্যামলের কাজ কী। জানা গেল, ঢোল বাজানোয় পারদর্শী শ্যামল গত ১০ দিন ঢাকা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী কামরুল ইসলামের মিছিলে ঢোল বাজিয়েছেন। বিনিময়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করে দৈনিক উপার্জন করেছেন। সঙ্গে খাওয়াদাওয়া ফ্রি। আয় তো ভালোই হয়েছেÑ বলতেই শ্যামলের হাসি উধাও। বললেন, ‘যা কামাইছি সব গেছে শাউড়ির (শাশুড়ি) টিটমেন্টে (ট্রিটমেন্ট)। হ্যার চউক্ষের সমস্যা আছিলো। কানা হইতে বইছিলো, যা কামাইছি পুরাটাই গ্যাছে হ্যার পাছে। গরিবের পকেটে টাকা থাউক, খোদাও মনে হয় হেইটা চায় না! তয় যাউক কষ্ট নাই, মুরুব্বি মানুষ দোয়া দিব।’
প্রচার কেমন হলো? এবার চওড়া হাসি শ্যামলের মুখে। ‘হেব্বি মজা পাইছি ভাই। অনেক দিন আনন্দ করা হয় নাই। ভোট আইস্যা হেই মজা পাইলাম। মিছিলে নাচছি অনেক, ভরপুর খাওয়াইছে, হেই ব্যাটার তো টাকার অভাব নাই। মন্ত্রী থাকি বহুত কামাইছে। অহন খরচ করতাছে।’ ধানের শীষের প্রার্থীর কী অবস্থা? (ইরফান আমান) ‘হেই ব্যাটারে তো ফিল্ডে দেখি নাই। হ্যার বাপ আছিল মন্ত্রী। হ্যার বয়স তো কম, তয় আমানউল্লাহর ভোট আছে বহুত। ভোট হইতে পারলে মনে হয় হেই জিতব।’
শ্যামলের বাড়ি সাভারের হেমায়েতপুরে। নিজেও ঢাকা-২ আসনের ভোটার। কাকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর দিলেন না শ্যামল। উল্টো জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি তো সাংবাদিক, বলেন দেখি ভোট হইব কি না?’ কেন হবে নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তর বলেন, ‘হ্যার উত্তর আপনিই জানেন। জোর কইর্যা একটা কিছু করলে কি তারে ভোট কওন যায়! এরমই যদি হইব তাহলে এইট্যা দেওনের কী দরকার আছিলো?’ ভোট যদি না দেবেন তাহলে প্রচার চালালেন কেন? ‘প্যাটে ভাই, প্যাটে আমগোরে ঠ্যালে। বাড়িতে বউ বাচ্চা, বুড়া বাপ-মা লইয়া সাতজনের সংসার। কামাই করি একলা। সারা দিনে কামাই হয় বড়জোর ৭০০ টাকা। চাউল ডাউল কিনতেই শ্যাষ। খামু কী, পোলা-মাইয়ারে পড়ামু কী, কন আমারে? সরকার তো কয় উন্নয়নে আমগোরে ভাসায়া দিছে! আগে কম খাইলেও শান্তিতে আছিলাম। অহন শান্তি বনবাসে গেছে। প্যাট ভইরা এহন খাই ঠিকই, তয় সবটা সময় ভয়ে থাকি। বাড়ি থাকি বাইর হইলে বউ চিন্তা করে, বাপ-মায়ে চিন্তা করে। কন শান্তি কি খালি প্যাট ভরি খাওয়া?’
ভোটারদের সাড়া কেমন দেখেছেন, এর উত্তরে বলেন, ‘ভোটাররা কী কইব? যার কাছেই যাই, হ্যায় তো ভোট দিবার চায়। কিন্তু ক্যাঠায় দিব না দিব তারাই জানে। আওয়ামী লীগ একদিকে ভোটও চায় অন্যদিকে সাধারণ মানুষরে কেন্দ্রে যাইতে বাধা দেয়, তাইলে ক্যামনে হয় কন! ভোট দিতে দিলে তো হ্যারাও ভোট ভালো পাইবো। না পাইলে কী হইব। বিএনপি আইবো তো! আসুক! পাঁচ বছর পর তো আবার তোরা আবি। আরে দুইটা দল তোরা মিল্যা মিশ্যা দ্যাশটা চালাবি। মানুষও ভালো থাকব। দ্যাশটাও আগাইয়া যাইব বহুত দূর।’
শেয়ার করুন
আশরাফুল ইসলাম রানা | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

রাজধানীর ধানমন্ডি ৯/এ সড়কের দক্ষিণ পাশের ফুটপাতে পরপর কয়েকটি চা-দোকান। সর্বপশ্চিমের দোকান ঘেঁষে জুতা মেরামতের সরঞ্জাম নিয়ে বসেন শ্যামল চন্দ্র। নিজেকে মুচির পরিবর্তে চর্মশিল্পী বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বয়সে ৩৫ পার হওয়া শ্যামল। নিজ থেকেই এ উপাধি নেননি। দিয়েছেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত পর্যন্ত পাওয়া যায় শ্যামলকে। গত চার বছরে এর ব্যত্যয় চোখে পড়েনি।
তবে এবার হঠাৎ উধাও শ্যামল। গত ১০ দিন ধরে টানা অনুপস্থিত তিনি। ভোটের আগের দিন গতকাল শনিবার সকালে ফের পাওয়া গেল তাকে। এত দিন না আসার কারণ জানতে চাইলে হেসে উত্তর দিলেন, ‘কামরুলের (খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম) প্রচার চালাইলাম। কাইল শ্যাষ হইছে আইজ আইছি’। নির্বাচনী প্রচারে শ্যামলের কাজ কী। জানা গেল, ঢোল বাজানোয় পারদর্শী শ্যামল গত ১০ দিন ঢাকা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী কামরুল ইসলামের মিছিলে ঢোল বাজিয়েছেন। বিনিময়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করে দৈনিক উপার্জন করেছেন। সঙ্গে খাওয়াদাওয়া ফ্রি। আয় তো ভালোই হয়েছেÑ বলতেই শ্যামলের হাসি উধাও। বললেন, ‘যা কামাইছি সব গেছে শাউড়ির (শাশুড়ি) টিটমেন্টে (ট্রিটমেন্ট)। হ্যার চউক্ষের সমস্যা আছিলো। কানা হইতে বইছিলো, যা কামাইছি পুরাটাই গ্যাছে হ্যার পাছে। গরিবের পকেটে টাকা থাউক, খোদাও মনে হয় হেইটা চায় না! তয় যাউক কষ্ট নাই, মুরুব্বি মানুষ দোয়া দিব।’
প্রচার কেমন হলো? এবার চওড়া হাসি শ্যামলের মুখে। ‘হেব্বি মজা পাইছি ভাই। অনেক দিন আনন্দ করা হয় নাই। ভোট আইস্যা হেই মজা পাইলাম। মিছিলে নাচছি অনেক, ভরপুর খাওয়াইছে, হেই ব্যাটার তো টাকার অভাব নাই। মন্ত্রী থাকি বহুত কামাইছে। অহন খরচ করতাছে।’ ধানের শীষের প্রার্থীর কী অবস্থা? (ইরফান আমান) ‘হেই ব্যাটারে তো ফিল্ডে দেখি নাই। হ্যার বাপ আছিল মন্ত্রী। হ্যার বয়স তো কম, তয় আমানউল্লাহর ভোট আছে বহুত। ভোট হইতে পারলে মনে হয় হেই জিতব।’
শ্যামলের বাড়ি সাভারের হেমায়েতপুরে। নিজেও ঢাকা-২ আসনের ভোটার। কাকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর দিলেন না শ্যামল। উল্টো জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি তো সাংবাদিক, বলেন দেখি ভোট হইব কি না?’ কেন হবে নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তর বলেন, ‘হ্যার উত্তর আপনিই জানেন। জোর কইর্যা একটা কিছু করলে কি তারে ভোট কওন যায়! এরমই যদি হইব তাহলে এইট্যা দেওনের কী দরকার আছিলো?’ ভোট যদি না দেবেন তাহলে প্রচার চালালেন কেন? ‘প্যাটে ভাই, প্যাটে আমগোরে ঠ্যালে। বাড়িতে বউ বাচ্চা, বুড়া বাপ-মা লইয়া সাতজনের সংসার। কামাই করি একলা। সারা দিনে কামাই হয় বড়জোর ৭০০ টাকা। চাউল ডাউল কিনতেই শ্যাষ। খামু কী, পোলা-মাইয়ারে পড়ামু কী, কন আমারে? সরকার তো কয় উন্নয়নে আমগোরে ভাসায়া দিছে! আগে কম খাইলেও শান্তিতে আছিলাম। অহন শান্তি বনবাসে গেছে। প্যাট ভইরা এহন খাই ঠিকই, তয় সবটা সময় ভয়ে থাকি। বাড়ি থাকি বাইর হইলে বউ চিন্তা করে, বাপ-মায়ে চিন্তা করে। কন শান্তি কি খালি প্যাট ভরি খাওয়া?’
ভোটারদের সাড়া কেমন দেখেছেন, এর উত্তরে বলেন, ‘ভোটাররা কী কইব? যার কাছেই যাই, হ্যায় তো ভোট দিবার চায়। কিন্তু ক্যাঠায় দিব না দিব তারাই জানে। আওয়ামী লীগ একদিকে ভোটও চায় অন্যদিকে সাধারণ মানুষরে কেন্দ্রে যাইতে বাধা দেয়, তাইলে ক্যামনে হয় কন! ভোট দিতে দিলে তো হ্যারাও ভোট ভালো পাইবো। না পাইলে কী হইব। বিএনপি আইবো তো! আসুক! পাঁচ বছর পর তো আবার তোরা আবি। আরে দুইটা দল তোরা মিল্যা মিশ্যা দ্যাশটা চালাবি। মানুষও ভালো থাকব। দ্যাশটাও আগাইয়া যাইব বহুত দূর।’