শঙ্কার মধ্যেও উৎসবের আশা চট্টগ্রামে
ঋত্বিক নয়ন ও সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বাঙালির কাছে ভোট মানেই ছিল উৎসবের আমেজ। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহ জনমনে জন্ম দিয়েছে নানা শঙ্কার। তবু সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে নানা তৎপরতার কথা জানিয়ে উৎসবের রং ফিকে হবে না বলে মনে করেন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
আজ রবিবারের ভোট সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে ১৮৯৯টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্সসহ সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান দেশ রূপান্তরকে জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নগরসহ চট্টগ্রামের ১৬ আসনে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় মোটিভেশনাল সভা করেছে, যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত হন।
শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে জেলায় প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাঁচ স্তরের মধ্যে প্রথম স্তরে একজন এএসআই, ২ জন কনস্টেবল ও ১০ জন আনসার, গ্রামপুলিশ থাকবে। দ্বিতীয় স্তরে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে মোবাইল টিম থাকবে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভাভিত্তিক। তৃতীয় স্তরে থাকবে পরিদর্শক, সহকারী পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং রিজার্ভ টিম ও তদারকি টিম। চতুর্থ স্তরে বিজিবি ও কোস্টগার্ড এবং পঞ্চম স্তরে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী টহলের দায়িত্বে থাকবে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৯৯টি ভোটকেন্দ্রের ১০ হাজার ৮৮৭টি ভোটকক্ষে (বুথ) ১ হাজার ৯৯৪ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ১১ হাজার ২২৩ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ২২ হাজার ৪৪৫ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। চট্টগ্রামে একমাত্র ইভিএমে ভোট হবে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে। এখানে ১৪৪টি কেন্দ্রের ৯২০টি ভোটকক্ষে থাকবে ৯২০টি ইভিএম। আরো ৯২০টি প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রামের ১৬ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১১৪ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন।
সুষ্ঠু ভোটের লক্ষ্যে সমন্বয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। শুক্রবার জেলার ১৬ আসনে দায়িত্ব পাওয়া ৭৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ব্রিফিংয়ে আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সরকারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক দীপক চক্রবর্ত্তী দেশ রূপান্তরকে জানান, ১৬ আসনে ৭৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে প্রতিটি আসনে ৪-৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।
গতকাল সকালে ভোটে পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। প্রতি ভোটকেন্দ্রে পাঁচজন করে সশস্ত্র পুলিশ সদস্য থাকবে। কেন্দ্রভিত্তিক ফোর্সের পাশাপাশি পাঁচটি কেন্দ্র নিয়ে একটি করে মোবাইল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় স্ট্রাইকিং টিম, ডিবি টিম, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার সদস্যরা কাজ করবেন।
মাহবুবর রহমান জানান, সিএমপির মোট ৭ হাজার সদস্যের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোটে দায়িত্ব পালন করবেন। ২০০১ সাল থেকে সকল নির্বাচন পর্যালোচনা করে যেখানে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে সেসব জায়গায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫৯৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২০০টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) বলে চিহ্নিত করেছে সিএমপি। আর ৩৯৭ কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের মধ্যে নগরীর কোতোয়ালি থানায় ২৬টি, চকবাজার থানায় ৭টি, বাকলিয়া এলাকায় ১১টি, সদরঘাট থানায় ৯টি, চান্দগাঁওয়ে ২৫টি, পাঁচলাইশ থানায় ৯টি, বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ১২টি, খুলশী থানায় ১৩টি, ডবলমুরিং থানায় রয়েছে ১৪টি। এ ছাড়া হালিশহর থানায় ১০টি, পাহাড়তলীতে ১১টি, আকবর শাহ থানায় ৫টি, বন্দর থানায় ১৫টি, ইপিজেড থানায় ১২টি, পতেঙ্গা থানায় ৫টি এবং কর্ণফুলী থানায় ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র আছে।
শেয়ার করুন
ঋত্বিক নয়ন ও সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বাঙালির কাছে ভোট মানেই ছিল উৎসবের আমেজ। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহ জনমনে জন্ম দিয়েছে নানা শঙ্কার। তবু সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে নানা তৎপরতার কথা জানিয়ে উৎসবের রং ফিকে হবে না বলে মনে করেন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
আজ রবিবারের ভোট সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে ১৮৯৯টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্সসহ সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান দেশ রূপান্তরকে জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নগরসহ চট্টগ্রামের ১৬ আসনে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় মোটিভেশনাল সভা করেছে, যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত হন।
শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে জেলায় প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাঁচ স্তরের মধ্যে প্রথম স্তরে একজন এএসআই, ২ জন কনস্টেবল ও ১০ জন আনসার, গ্রামপুলিশ থাকবে। দ্বিতীয় স্তরে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে মোবাইল টিম থাকবে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভাভিত্তিক। তৃতীয় স্তরে থাকবে পরিদর্শক, সহকারী পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং রিজার্ভ টিম ও তদারকি টিম। চতুর্থ স্তরে বিজিবি ও কোস্টগার্ড এবং পঞ্চম স্তরে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী টহলের দায়িত্বে থাকবে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৯৯টি ভোটকেন্দ্রের ১০ হাজার ৮৮৭টি ভোটকক্ষে (বুথ) ১ হাজার ৯৯৪ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ১১ হাজার ২২৩ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ২২ হাজার ৪৪৫ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। চট্টগ্রামে একমাত্র ইভিএমে ভোট হবে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে। এখানে ১৪৪টি কেন্দ্রের ৯২০টি ভোটকক্ষে থাকবে ৯২০টি ইভিএম। আরো ৯২০টি প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রামের ১৬ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১১৪ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন।
সুষ্ঠু ভোটের লক্ষ্যে সমন্বয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। শুক্রবার জেলার ১৬ আসনে দায়িত্ব পাওয়া ৭৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ব্রিফিংয়ে আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সরকারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক দীপক চক্রবর্ত্তী দেশ রূপান্তরকে জানান, ১৬ আসনে ৭৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে প্রতিটি আসনে ৪-৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।
গতকাল সকালে ভোটে পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। প্রতি ভোটকেন্দ্রে পাঁচজন করে সশস্ত্র পুলিশ সদস্য থাকবে। কেন্দ্রভিত্তিক ফোর্সের পাশাপাশি পাঁচটি কেন্দ্র নিয়ে একটি করে মোবাইল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় স্ট্রাইকিং টিম, ডিবি টিম, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার সদস্যরা কাজ করবেন।
মাহবুবর রহমান জানান, সিএমপির মোট ৭ হাজার সদস্যের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোটে দায়িত্ব পালন করবেন। ২০০১ সাল থেকে সকল নির্বাচন পর্যালোচনা করে যেখানে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে সেসব জায়গায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫৯৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২০০টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) বলে চিহ্নিত করেছে সিএমপি। আর ৩৯৭ কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের মধ্যে নগরীর কোতোয়ালি থানায় ২৬টি, চকবাজার থানায় ৭টি, বাকলিয়া এলাকায় ১১টি, সদরঘাট থানায় ৯টি, চান্দগাঁওয়ে ২৫টি, পাঁচলাইশ থানায় ৯টি, বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ১২টি, খুলশী থানায় ১৩টি, ডবলমুরিং থানায় রয়েছে ১৪টি। এ ছাড়া হালিশহর থানায় ১০টি, পাহাড়তলীতে ১১টি, আকবর শাহ থানায় ৫টি, বন্দর থানায় ১৫টি, ইপিজেড থানায় ১২টি, পতেঙ্গা থানায় ৫টি এবং কর্ণফুলী থানায় ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র আছে।