
রাজধানীর বেশির ভাগ কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের বিপুলসংখ্যক এজেন্ট দেখা গেলেও ধানের শীষ বা অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট চোখে পড়েনি। প্রায় সব কটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কিছু পোলিং এজেন্ট দেখা গেছে। শুরুতে কিছু কেন্দ্রে এজেন্ট থাকলেও সকাল ১০টার পর তারা বের হয়ে যান। দুপুরের পর ১৬টি আসনের কোথাও ধানের শীষের এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-৮ আসনে গতকাল সকাল ১০টার পর আর কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি পল্টনের আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টারে। ধানের শীষের এজেন্ট না থাকা প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুশিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সকালেই তাদের জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তাদের কেউ আসেনি।’
দক্ষিণ শাহজাহানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ধীরেশ চন্দ্র দেব বলেন, ‘সকালে বুথে ধানের শীষের এজেন্ট আসে। কিন্তু ১০টার দিকে তারা বেরিয়ে যায়।’
টিঅ্যান্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আজিজুর রহমান, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাদিকুল আলম ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মশিবুল আলম জানান, ধানের শীষের কোনো এজেন্ট আসেনি।
ঢাকা-৭ আসনে অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ও বংশালের এফ কে এস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শীষের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। বংশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ধানের শীষের এজেন্ট আসেননি বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চয়ন চাকমা।
ঢাকা-২ আসনে কামরাঙ্গীরচরে আল-আমিন ইসলামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ১৫টি। কোনো বুথেই ধানের শীষের এজেন্ট ছিল না। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসাইন বলেন, ‘ধানের শীষের কোনো এজেন্ট আসেনি। ঢাকা-২ আসনের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে একটিতেও ধানের শীষের এজেন্ট পাওয়া যায়নি।’
ঢাকা-১৭ আসনে ধানের শীষের কোনো পোলিং এজেন্ট ছিল না কেন্দ্রগুলোতে। কেন্দ্রের সামনে কোনো নেতাকর্মীকেও দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্রে যদি পোলিং এজেন্ট না আসে, তবে আমাদের কী করার আছে। আর তারা কেন আসতে পারছে না বা আসছে না, তা আপনারা সাংবাদিকরাও জানেন।’
ঢাকা-১০ আসনের কেন্দ্রগুলোতে বিএনপির কোনো পোলিং এজেন্টও চোখে পড়েনি। কেন্দ্রের চারপাশ ঘিরে শুধু আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট। ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, আইডিয়াল কলেজ, কাঁঠাল বাগানসহ কোনো কেন্দ্রেই ধানের শীষের এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-১৩ আসনের প্রত্যেক ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে।’
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের তিনটি ভোটকেন্দ্রে, শারীরিক শিক্ষা কলেজের কেন্দ্রে, মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসা, লোটাস ন্যাশনাল স্কুল, হাসেম খান ইউসেপ স্কুল, শংকরে ইউসুফ হাই স্কুল, রায়েরবাজার কমিউনিটি সেন্টারসহ ১২টি ভোটগ্রহণ কক্ষ ঘুরে বিএনপির এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-৫ আসনের অন্তত ১৩টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র তিনটি কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের কয়েকজন এজেন্ট। অপর কেন্দ্রগুলোতে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যাত্রাবাড়ীর সুরুজবাগ এলাকার প্যারাডাইস ইংলিশ স্কুল কেন্দ্রে দেখা যায়, সেখানে চারটি বুথে মাত্র তিনজন ধানের শীষের এজেন্ট রয়েছেন। এ ছাড়া সড়কের ওপাশে যাত্রাবাড়ী বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারটি কেন্দ্রে একজন করে ধানের শীষের এজেন্ট দেখা যায়। ঢাকা-১৮, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১২সহ বিভিন্ন আসনে সরেজমিন ঘুরে কোনো কেন্দ্রেই ধারেন শীষের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। ঢাকা-১৫ আসনে দুপুরের পরই ধানের শীষের প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের ভোটটি দিতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছে অনেকের কণ্ঠে। গতকাল রবিবার ভোট দিতে গিয়ে বাধাসহ নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন তারা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভোটাররা এমন অভিযোগ জানিয়েছেন। এসব ভোটারের মধ্যে কেন্দ্রে গিয়েও অনেকে ভোট দিতে পারেননি। কারণ, তাদের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আবার কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ভোটার স্লিপ না পেয়েও ভোট দিতে পারেননি অনেকে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ঢাকা-৭ আসনে লালবাগের রহমতুল্লাহ উচ্চ বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুমাইয়া হাসান নামে এক তরুণী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এবারই প্রথম ভোটার। জার্মানি থেকে ভোট দিতে এসেছি। কিন্তু আমাকে ও আমার আম্মুকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
ঢাকা-১২ আসনের ভোটার চাকরিজীবী জেসিকা জাহিন। এবারই প্রথম ভোট দিতে কেন্দ্রে গেলেও পারেননি। প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, তার সিরিয়াল নাম্বারে আরেক নারী ভোট দিয়ে চলে গেছেন।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে ইভিএমে ভোটদানে বহিরাগতদের বাধার অভিযোগ করেন ভোটাররা। এখানে বেশিরভাগ কেন্দ্রে ইভিএম পাহারা দিচ্ছিল বহিরাগতরা। তাদের সামনেই ভোটারদের ব্যালটে সিল দিতে বাধ্য করা হয়। পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসাররা ছিলেন নিতান্ত অসহায়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র চোখে পড়ে। ভোট দিতে গিয়ে এত তিক্ত অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফার। কখনো ভাবতে পারেননি, সন্তানের বয়সী কেউ তাকে বলবে, ‘ভোট দিলে দাও, নইলে বেরিয়ে যাও।’ নগরীর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার তিনি।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনের বীণাপাণি কেন্দ্রের ভোটার মাহবুব আলম অভিযোগ করেছেন, কেউ তার ভোট আগেই দিয়ে ফেলেছে। একই কেন্দ্রের ভোটার অধ্যাপক শাহ আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ভোট দিতে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা তা কেড়ে নিয়ে নৌকায় সিল দিয়েছে।’
সিলেট-১ (মহানগর-সদর) আসনে পাঠানটুলা জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রধান ফটকে দুপুর ২টার দিকে দেখা যায়, একজন ভোটার টোকেন হাতে নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি ভোট দেওয়ার জন্য ভেতরে যেতে চান, তবে দায়িত্বরত পুলিশ তার পথ আগলে বলছেন, ‘আর ভোট দেওয়া লাগবে না, ভোট শেষ।’ একই সঙ্গে ওই পুলিশ সদস্য তার সঙ্গীদের বলেন, কোনো ভোটারকে যেন আর ভেতরে ঢুকতে দেওয়া না হয়।
ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে সকাল সাড়ে ৮টায় কলকাকলী শিক্ষালয় কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিতে পারেননি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রতন মিয়া। তিনি অভিযোগ করেন, ভোটার স্লিপ নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করলে স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা তার হাত থেকে স্লিপ কেড়ে নেয় এবং ‘ভোট হয়ে গেছে’ জানিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সবার সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রতনের।
পৌর এলাকার জামসিং মহল্লার ভোটার জহির উদ্দিন জানান, ভোটকক্ষে কয়েক যুবক তার হাত থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল দেয়। তিনি বলেন, আমি নৌকায় ভোট দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু নিজের ভোট নিজে না দিতে পারায় কষ্ট পেয়েছি। সাভারের মজিদপুর মহল্লার সান ফ্লাওয়ার মডেল স্কুল কেন্দ্রের মূল ফটক লাগিয়ে রাখতে দেখা যায়। আশুলিয়ার ইয়ারপুর, ঘোষবাগ, নরসিংহপুর, জামগড়া এলাকায়ও একই চিত্র লক্ষ করা যায়। ভোটাররা বাধা পাওয়ায় দুপুর ১২টার মধ্যে ওই এলাকার কেন্দ্রগুলো ফাঁকা হয়ে যায়।
মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে শহরের মুন্সীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নিজের ভোট দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান শাহিদা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, সকাল ৯টার দিকে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ব্যালটে সিল দিতে গেলে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট তা ছিনিয়ে নেয় এবং জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে সিল দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্ষুব্ধ শাহিদা এ সময় নৌকা প্রতীকের এজেন্টকে এমন আচরণের কারণ জানতে চান। ১০ মিনিট ধরে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তবে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হালিমা খাতুন এমন কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেন।
ঢাকা-১৩ আসনে জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা ইমরান। এ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ চলছিল। কিন্তু ভোটার স্লিপ না পেয়ে তিনি ভোট দিতে পারেননি। পরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘সূক্ষ্মভাবে ভোট চুরি করতেই ইভিএমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ এ আসনে বিএনপির এজেন্ট ছিলেন সুফিয়া। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে সকালেই কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘একজন নারী হয়েও মারধরের শিকার হওয়ায় আমি লজ্জিত। আমাকে ভোটও দিতে দেওয়া হয়নি।’
ঢাকা-৯ আসনভুক্ত পূর্ব বাসাবোর বাসিন্দা হাফসা শারমিন। দুপুর ১২টার সময় মা রহিমা আক্তারকে নিয়ে কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। তাদের বাসায় কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নামসংবলিত ভোটার স্লিপ পৌঁছানো হয়নি। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে তাদের বলা হয় ভোটার স্লিপ লাগবে। কেন্দ্রের বাইরে নৌকা প্রার্থীর প্রতিনিধিরা তালিকা থেকে ভোটার নম্বর বের করে দিচ্ছিলেন। মা-মেয়ে তাদের কাছে ভোটার নম্বর চাইলে তারা দেওয়ার কথা বলে আধঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে উপায় না পেয়ে মা-মেয়ে ভোট না দিয়েই চলে যান। ভোট দিতে না পেরে আক্ষেপ করে হাফসা বলেন, অনেক আশার ভোটটি দেওয়া হলো না। তাদের বাসার এক ভাড়াটিয়াও একই কারণে ভোট দিতে পারেননি বলে জানান তিনি।
ভোটের আগের রাতেই কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। ৮টায় ভোট শুরু হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরুর কিছু নিয়মকানুন আছে। পোলিং এজেন্ট, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রের দায়িত্বে যারা আছে তারা সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে ভোটগ্রহণ শুরু করেনি।’
বিভিন্ন জেলায় ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সভর্তি করার অভিযোগ তোলেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। তাদের পোলিং এজেন্টদের পুলিশ হয়রানি করেছে বলেও দাবি করেন।
গতকাল ভিকারুননিসা নূন স্কুল ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশপ্রধান। কোনো পোলিং এজেন্টকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, মামলার আসামি ও পরোয়ানা থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এফআইআরে যাদের নাম নেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তদন্তে নাম আসায়।
শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, ‘এখানে কানাডীয়, ভারতীয় ও নেপালি পর্যবেক্ষক ছিল। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে এবং জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারছে।’ বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও গ্রেপ্তার নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার কিসের ভিত্তিতে বলেছেন সেটা আমি জানি না। আমি যেসব কেন্দ্রে গিয়েছি, সেখানে সব দলের পোলিং এজেন্ট পেয়েছি। পুলিশ কোনো পোলিং এজেন্ট বা অন্য কাউকে অ্যারেস্ট করেনি।’ তিনি আরো বলেন, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যারা এসেছে তাদের বসতে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশ নিয়েছে। যারা আসেনি তাদের খুঁজে নিয়ে আসার দায়-দায়িত্ব পুলিশের নয়।
মামলা বা চার্জশিটে নাম না থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘প্রিভেন্টিভ অ্যারেস্ট’ বলে একটা বিষয় আছে। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে নাম আসায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ভোটের দিনের অবস্থা জানিয়ে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘দু-একটা জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সমস্ত বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। চট্টগ্রামের দুটি কেন্দ্রে গ-গোল হয়েছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। দুটি অস্ত্র লুট করে নেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহে একটি অস্ত্র লুট করা হয়েছে। ভৈরবে একটি কেন্দ্রে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। নোয়াখালীতে গ-গোল ও ব্যালট লুট করার চেষ্টা করেছিল। আমরা সেটা রোধ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘৩০০ আসনে ৪২ হাজারের বেশি কেন্দ্র রয়েছে। আমি মাত্র কয়েকটির কথা বললাম। এর পার্সেন্টেজ নিলে তা পয়েন্ট জিরোর কাছে হবে। বাকিগুলোতে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, র্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মাধ্যমে গুজব রটনাকারীদের আটক করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। গতকাল রবিবার বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব গণমাধ্যমেই এই নির্বাচন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নি¤েœ শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো।
বিবিসি
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ‘বাংলাদেশ ইলেকশনস : ডেডলি ক্ল্যাসেস মার ভোট’ শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে বলা হয়, দেশে ভোট কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং তা তদন্ত করে দেখা হবে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে এবং এবারের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয় পেতে পারেন বলা হয় প্রতিবেদনে। চট্টগ্রামের একটি ভোটকেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোট শুরুর কয়েক মিনিট আগে একটি কেন্দ্রে বিবিসির প্রতিনিধি ব্যালটভর্তি বাক্স দেখতে পান। যদিও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
সিএনএন
‘ভায়োলেন্স এরাপ্টস ডিউরিং বাংলাদেশ ইলেকশন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন নির্বাচনী সহিংসতায় ১৫ জনের মৃত্যুর সংবাদটি সামনে নিয়ে আসে। স্থানীয় এক পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগে রবিবারের নির্বাচন কেন্দ্র করে নয়জন নিহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও তিনিই তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারেন।
আলজাজিরা
কাতারভিত্তিক মিডিয়া আলজাজিরায় ‘বাংলাদেশ ইলেকশনস মারড বাই ডেডলি ক্ল্যাসেস’ শিরোনামে প্রতিবেদনেও সহিংসতায় মৃত্যুর বিষয়টি জায়গা পায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে রবিবার সহিংসতার খবর পাওয়া গেলেও রাজধানী ঢাকা তুলনামূলক শান্ত ছিল। মিডিয়াটি বাংলাদেশের স্থানীয় মিডিয়া দ্য ডেইলি স্টারের বরাত দিয়ে দেশের কোন কোন স্থানে সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তা প্রকাশ করে।
এনডিটিভি
ভারতীয় মিডিয়া এনডিটিভি ‘ভোটারস এলিজ বিং বারড ফ্রম পোলিং বুথস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্রে সাংবাদিকসহ বিরোধীদলীয় এজেন্টদের প্রবেশ করতে না দেওয়া ও ভোট কারচুপির বিষয়টি জায়গা পায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় সাংবাদিকের বরাত দিয়ে মিডিয়াটি জানায়, ‘তারা জানায় আমাদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের ভোট এরই মধ্যেই দেওয়া হয়ে গেছে।’ আওয়ামী লীগ ভোট কারচুপি করেছে বলে বিরোধী দল বিএনপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন।
রয়টার্স
বার্তা সংস্থা রয়টার্সও নির্বাচনে সহিংসতাকে তুলে ধরে। ‘বাংলাদেশ প্রোবস ভোট রিগিং অ্যালিগেশনস ইন ইলেকশন হিট বাই ভায়োলেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে বলা হয়, নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এ ছাড়া পুলিশের বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিরোধীদের সমর্থকদের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নিহত ও ২০ জন আহতের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। রাজধানী ঢাকায় বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের ওপর হামলার বিষয়টি পরিষ্কার নয় বলে পুলিশের বরাত দিয়ে জানায় রয়টার্স।
দ্য গার্ডিয়ান
‘বাংলাদেশ ইলেকশন মারড বাই ডেডলি ভায়োলেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গত এক দশকের মধ্যে এই নির্বাচনকে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলে অভিহিত করে দ্য গার্ডিয়ান। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর একটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে একজন নিহতের সংবাদটি পুলিশপ্রধান মোহাম্মদ কামাল হোসেনের বরাতে জানানো হয়। ভোটকেন্দ্রে হামলা ঠেকাতে পুলিশ গুলি চালালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে জানায় পুলিশ কর্র্তৃপক্ষ।
ভয়েস অব আমেরিকা
ক্ষমতাসীন পার্টি এবং বিরোধীদলীয় সমর্থকদের মধ্যকার সহিংসতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ভোটাররা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে জানায় ভয়েস অব আমেরিকা। ‘ডেডলি ক্ল্যাসেস অ্যাজ বাংলাদেশ ভোটেড ইন জেনারেল ইলেকশন’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় যেতে পারেন এমন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়।
দ্য টেলিগ্রাফ
ব্রিটিশ মিডিয়া দ্য টেলিগ্রাফে ‘টু ডেড ইন বাংলাদেশ ইলেকশন ডে ক্ল্যাসেস ফলোয়িং ভায়োলেন্ট ক্যাম্পেইন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিহতের কারণ তুলে ধরা হয়। বিরোধীদলীয় সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে হানা দিলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়লে এক ব্যক্তি নিহত হয় বলে স্থানীয় পুলিশপ্রধান মোহাম্মদ কামাল হোসেনের বরাত দিয়ে জানায় টেলিগ্রাফ।
ভোটগ্রহণ ঘিরে প্রায় ২৭ ঘণ্টা বন্ধ রেখে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালু করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার তা বন্ধ করতে বলেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। রবিবার ভোট শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নির্দেশনা পেয়ে মোবাইল ফোন অপারেটররা সব ধরনের মোবাইল ইন্টারনেট চালু করে। একটি অপারেটরের এক কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসির নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে ফোর-জি, থ্রি-জি ও টু-জি ইন্টারনেট সেবা পেতে শুরু করেন গ্রাহকরা। এরপর রাত ৯টার পর আবার ফোর-জি ও থ্রি-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার নির্দেশনা আসে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কানাডার পর্যবেক্ষক তানিয়া ফস্টার। গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণের সময় তিনি সাংবাদিকদের এ সন্তুষ্টির কথা জানান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আরো জানান, তিনি ভোটকেন্দ্রে সব দলের প্রতিনিধিদের দেখেছেন। সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের আওতায় তানিয়া ফস্টারসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তানিয়া ফস্টার বলেন, আমি পাঁচটি ভোটকেন্দ্র ঘুরেছি। বাংলাদেশের এ নির্বাচনের সাক্ষী হতে পেরে আমি গর্বিত। প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারদের অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ভোট প্রয়োগ করতে দেখেছি। সত্যিকারে এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। বিদেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা তানিয়া জানান, নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে তিনি মুগ্ধ।
পর্যবেক্ষক দলের আরেক প্রতিনিধি ভারতের নাগরিক ড. গৌতম ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ভারতের নির্বাচনের মতো। দুই দেশের নির্বাচনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই দীর্ঘ লাইন ধরে ভোটের জন্য অপেক্ষা করছেন। খুবই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সবাই ভোট দিচ্ছেন।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’
রাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ডারিও স্পোর্টকে তিনি জানান, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার এবং বার্সাতে না যেতে পারায়, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নাভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই এবং আকাঙ্খা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরো শান্তিপূর্ণভাবে।’
মেসি জানান, ‘বুসকেটস আর জর্ডি আলবার সাথে যোগাযোগ ছিল, কখনো তাদের সাথে একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দু'বছর পর আবার বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ানো লা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে'র অনুমোদনও দিয়েছিল লিগা কর্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগের বার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশন- সৌদি ক্লাব আল-হিলালের দুবছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করা নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকবে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ইন্টার মিয়ার প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতিবছর শেষ মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে সয়ংক্রিয় ভাবে তিনি পরের বছর খেলবেন। বছর প্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
ফুটবল কিংবদন্তী পেলের গোটা জীবন কেটেছে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে যিনি আলো ছড়িয়েছেন, তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময় যাননি ইউরোপের কোনো ক্লাবে।
তবে ১৯৭৪ সালে ৩৪ বছর বয়সে সান্তোসের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন ফুটবল সম্রাট। পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসে যোগ দেন। সেই বছরের ১৫ জুন ক্লাবটিতে নাম লিখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষজন একটা সময় ফুটবল খেলাই দেখতে যেতেন না, পেলে যোগ দেওয়ার পর ৮০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই পেলে নিউইয়র্ক জয় করেছিলেন।
পেলে কসমসে যাওয়ার ১৫ বছর পর ফের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টুর্নামেন্টের অভিষেক আসরের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে শুধুমাত্র ২০১৮ সাল ছাড়া প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলেছে তারা। ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন। কাতার বিশ্বকাপেও শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়ে হয়েছে ১৪তম দল হয়ে।
বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে দারুণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন জুড বেলিংহাম। অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নজর কেড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের। আর তাই তো নতুন মৌসুম শুরু করবেন এই ক্লাবের জার্সি গায়ে। ইংল্যান্ডের এই মিডফিল্ডারকে দলে নিতে ১০৩ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে রাজি হয়েছে ব্ল্যাঙ্কোরা।
এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ডর্টমুন্ড। তারা জানিয়েছে, স্প্যানিশ দলটি ১০৩ মিলিয়ন ইউরো দিতে সম্মত হয়েছে। যেখানে আনুসাঙ্গিক আরও অনেক বিষয় জড়িয়ে। যদি সেটা অর্জন করা সম্ভব হয়, তবে চুক্তিটি ১৩৩.৯ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছতে পারে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে বার্মিংহাম সিটি থেকে ডর্টমুন্ডে যোগ দেন ১৯ বছর বয়সী বেলিংহাম। কাতার বিশ্বকাপেও ইংলিশদের সেরা পারফরমার ছিলেন তিনি। ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল উভয় ক্লাবই তাকে পাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদে পাড়ি দিচ্ছেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে বেলিংহামে বিশ্বের তৃতীয় দামি তরুণ ফুটবলার হতে চলেছেন। ২০১৯ সালে ইডেন হ্যাজার্ড ১১৫ মিলিয়ন ইউরোতে চেলসি থেকে রিয়ালে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
বেলিংহাম এই মৌসুমে তার ক্লাবের হয়ে ৪২ ম্যাচ খেলে ১৪ গোল করেছেন। সাতটি গোল তিনি করিয়েছেন।
ডারিও স্পোর্ট ও মুন্ডো দেপোর্তিভোর সঙ্গে লিওনেল মেসির সাক্ষাৎকারের চুম্বক আংশ
বার্সেলোনায় ফিরবেন না জানার পর, আপনি কি সিদ্ধান্ত নিলেন? সৌদি আরব না, মায়ামি?
মেসি: আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমি মিয়ামিতে যাব। আমি এখনও এ ব্যাপারে শতভাগ জানিনা, কিছু ব্যাপার বাকি আছে, তবে আমি সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আপনি কি বুসকেটস, আলবার সাথে কথা বলেছিলে? মেসি: কথা উঠেছিল যে আমি নাকি বুসি, জর্দির সাথে সৌদিতে যাচ্ছিলাম। বলবো সবাই যার যার ভবিষ্যত বেছে নিচ্ছে। আমি তাদের ব্যাপারটা জানাতাম কিন্তু কখনোই কোনো মুহূর্তে আমরা একসঙ্গে কোথাও যেতে রাজি হইনি। আমি নিজের জন্য আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি জানি না তারা কী করতে যাচ্ছে। আমি কারও সাথে কিছু সেটআপ করিনি।
কি বলবেন, ফোকাস ছেড়ে যাচ্ছেন?মেসি: হ্যাঁ. ইউরোপ ছেড়ে। সত্যি বলতে আমার কাছে অন্য ইউরোপীয় দল থেকে অফার ছিল, কিন্তু আমি তা মূল্যায়নও করিনি কারণ ইউরোপে আমার একমাত্র চিন্তা ছিল বার্সেলোনায় যাওয়া। বিশ্বকাপ জেতার পরে এবং বার্সায় যেতে না পারায় এখন সময় ফুটবলকে অন্যভাবে উপভোগ করতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লিগে যাওয়া। অবশ্যই দায়িত্ব একই এবং আকাঙ্খা, জয়।
আপনি কি বার্সাকে মিস করেছেন?মেসি: হ্যাঁ, স্পষ্টতই হ্যাঁ, আমি তাকে মিস করেছি। এবং শুরুতে প্রথম বছরটি আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। বার্সা আমার মনের মধ্যে ছিল, খেলা দেখেছি সবসময়। স্মৃতিগুলো অনুরোণিত হতো।
বার্সা যে লিগ জিতলো নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছিলনমেসি: অবশ্যই। সারা বছর ক্লাবকে অনুসরণ করেছি এবং আমি বার্সেলোনা সমর্থকদের মতোই বার্সার শিরোপা দেখতে চেয়েছিলাম। এমনকি প্রথম বছরেও, আমি কয়েকটি খেলার পর জাভির সাথে অনেক কথা বলেছিলাম।
বার্সায় ফিরে আসা সম্ভাবনা সম্পর্কে, আপনি কি কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?মেসি: হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি খুব খুব উত্তেজিত ছিলাম। কিন্তু, অন্যদিকে, আগে যা ঘটেছিল একই ব্যাপারটা ঘটুক চাচ্ছিলাম না। একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে চাইনি। আমি আমার ভবিষ্যৎ অন্যের হাতে ছেড়ে দিতে চাইনি। কোনোভাবে, আমি নিজের সম্পর্কে, আমার পরিবারের কথা ভেবে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। যদিও আমি শুনেছি যে বলা হয়েছিল যে লা লিগা সবকিছু মেনে নিয়েছে এবং আমার ফিরে আসার জন্য সবকিছু ঠিক আছে... এখনও অনেক কিছুর ঘাটতি ছিল। শুনেছি যে ক্লাবে খেলোয়াড়দের বিক্রি করতে হয়েছে বা খেলোয়াড়দের বেতন কমানো হয়েছে এবং সত্য হল যে আমি এর মধ্য দিয়ে যেতে চাইনি, দায়িত্ব নিতে চাইনি বা এই সমস্ত কিছুর সাথে কিছু করতে চাইনি।...?বার্সেলোনায় আমি যখন ছিলাম তখনকার অনেক কিছুর জন্য আমাকে দায়ী করা হয়েছিল। এসব শুনে কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম। আমি চাইনি এসবের মধ্যে আর যেতে। আমি যখন ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলাম বলা হয়েছিল যে লা লিগা সবকিছু মেনে নিয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করা যায়নি। এবার ভয়ে ছিলাম যে একই জিনিস আবার ঘটবে এবং আমাকে তখন দৌড়াতে হবে যেমনটি ঘটেছিল। এখানে প্যারিসে আসা, আমার পরিবারের সাথে একটি হোটেলে দীর্ঘ সময় থাকা, আমার বাচ্চাদের সাথে স্কুলে যাওয়া এবং এখনও সেখানেই থাকা। আমি আমার নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। আর সে কারণেই বার্সায় ফেরাটা হলো না।
মন কি বলে?মেসি: ফিরে যেতে পারলো ভালো হতো। আমিও এমন একটি মুহুর্তে আছি যেখানে আমি একটু ফোকাস থেকে বেরিয়ে আসতে চাই, আমার পরিবার সম্পর্কে আরও ভাবতে চাই। আমি যেমন বলছিলাম, মাত্র দুই বছর সময়.. পারিবারিক পর্যায়ে এতটাই খারাপ ছিলাম যে আমি এটা উপভোগ করিনি। সেই মাসটা ছিল অসাধারণ যে সময় বিশ্বকাপ জিতলাম। কিন্তু এরপর খুবই কঠিন সময় কেটেছে। পরিবারের সঙ্গে, বাচ্চাদের সঙ্গে ভালো সময় খুজে বেড়াতাম। আর একারণেই বার্সেলোনার ঘটনা ঘটল না।
এ সব কারণই কি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করলো? মেসি: আমি নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আবার অপেক্ষা করতে বাধ্য হইনি। ঝুকি নিতে চাইনি যা দুবছর আগে ঘটেছিল। যেমনটা বলছিলাম, আমার আরাধ্য বিশ্বকাপ অর্জনের পর ভিন্ন কিছু এবং কিছুটা মানসিক শান্তি চাচ্ছিলাম
ক্লাবের বিভিন্ন স্তর থেকে বলা হচ্ছিল আপনার ফিরে আসা আপনার উপর নির্ভর করে। জাভি এমনকি আপনার হাতেই ৯৯% বলেছিলেন। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক যে কিছু মিসিং ছিল। এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা দেবেন?মেসি: ঠিক আছে, আমি যা কিছু বলা হয়েছিল, যা বেরিয়ে আসছে, জাভি যা বলেছে তার কিছুটা শুনেছি, তবে তা ছিল সাম্প্রতিক। লা লিগাও ওকে করেছে। কিন্তু এটা ঠিক নয় সিদ্ধান্তটা আমার, কারণ এখনও অনেক কিছুই মিসিং ছিল। একটি লম্বা প্রত্যাশিত ছিল যে আমি ইতিমধ্যে যা অতিক্রম করেছি তার জন্য আমি আর যেতে চাই না। আমি এটা শেষ করতে চেয়েছি, শান্ত মনে ভবিষ্যত সম্পর্কে ভেবেছি। পরিকল্পনা নিয়েছি যা হওয়া সম্ভব তাই।
প্যারিসে এই দুই বছর আপনি বলেছেন যে আপনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না- এটা কি আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে?মেসি: একটু, হ্যাঁ, একটু হ্যাঁ, কারণ আমি সম্প্রতি বলেছিলাম, সত্য হল যে দুটি বছর ছিল যেখানে আমি সুখী ছিলাম না, যেখানে আমি নিজেকে উপভোগ করিনি এবং এটি আমার পারিবারিক জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। বাচ্চারা অনেক কিছু মিস করছিল। আমার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সেসব কারণেও। পরিবারের সাথে মিলিত হওয়া, বাচ্চাদের সঙ্গে থাকা এবং প্রতিটা দিন উপভোগ করা। আমি আগে যেমন বলেছিলাম যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে তিনি আমাকে ফুটবলের সবকিছু অর্জন করতে দেননি। এজন্যই আজ আমি খেলার বাইরে থাকাতে পারি, যা আমার আগ্রহকে জাগিয়ে তোলে, পরিবারকে নিয়ে আগ্রহী করে তোলে, তাদের মঙ্গল ভাবতে পারি।
প্রেসিডেন্ট লাপোর্তার কথা, জাভির কথা বলি। তারা কি আপনার সাথে যোগাযোগ করেছে, এই প্রক্রিয়া জুড়ে কি তাদের সাথে কোনো সংলাপ হয়েছে?মেসি: বাস্তবে, আমি প্রেসিডেন্ট লাপোর্তার সাথে খুব কম কথা বলেছি। এই দুই বছরে আমরা একবার বা দুবার কথা বলেছি। জাভির সাথে আমার অনেক যোগাযোগ আছে, ক্লাবে আসার পর থেকে বেশি। আমার ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে কথা হতো। এবং আমরা খুব উত্তেজিত ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি সত্যিই আমাকে ফেরা দেখতে চাও, আমার ফেরাটা কি দলের জন্য ভালো হবে। এসব কথা হতো।
এই পুরো প্রক্রিয়ায়, আপনার সিদ্ধান্ত নিতে অর্থনৈতিক বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এমনও তো বলা হচ্ছিল ফ্রিতেও খেলতে পারেন? মেসি: অর্থ আমার জন্য কোন সমস্যা ছিল না, বা কোন বাধা ছিল না। আমরা চুক্তির কথাও বলিনি। একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছিল, কিন্তু এটি একটি আনুষ্ঠানিক, লিখিত, স্বাক্ষরিত প্রস্তাব ছিল না কারণ আদৌ আমার ফেরাটা সম্ভব ছিল না জানা ছিল না। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থের কথাও বলি না। যদি টাকার প্রশ্ন থাকত, আমি আরব বা অন্য কোথাও চলে যেতাম, সেখানে তারা আমাকে প্রচুর অর্থের প্রস্তাব দেয়। আমার সিদ্ধান্ত গেছে অন্য কারণে টাকার জন্য নয়।
এই যে ক্ষতটা তৈরি হলো..এর মধ্যে কোনোদিন কি বার্সেলোনায় টেকনিক্যাল সেক্রেটারি বা অ্যাম্বাসেডর হয়ে আসতে চান?মেসি: অবশ্যই। আমি সবসময় ক্লাবের কাছাকাছি থাকতে চাই। আরও কী, আমি বার্সেলোনায় বাস থাকতে যাচ্ছি। এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা আমার স্ত্রী এবং আমার সন্তানদের সম্পর্কে খুব স্পষ্ট। আশাকরি। আমি জানি না কোন সময়ে, কি, বা কখন, তবে আমি আশা করি আমি একদিন কিছু অবদান রাখতে এবং সাহায্য করতে ফিরে আসতে পারব কারণ এটি এমন একটি ক্লাব যা আমি ভালোবাসি। আমার ক্যারিয়ার জুড়ে আমি মানুষের স্নেহ পেয়েছি এবং আমি আবার সেখানে থাকতে চাই।
পুরো প্রক্রিয়াটি উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে মনে করি। এমন কিছু কি আছে যা আপনাকে বিশেষভাবে আঘাত করেছে, নাকি আপনি এসব পাত্তাই দিচ্ছে না?মেসি: না, না, আমি আগেই বলেছি, অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে, অনেক কিছু ফাঁস হয়েছে, অনেক মিথ্যা... কোনটাই অস্বীকার করতে পারি না। অনেক সাংবাদিক আছেন যারা অনেক মিথ্যা বলেন এবং ছবি তোলেন এবং কিছুই হয় না। পরের দিন সে আবার আরেকটি মিথ্যা বলে এবং কিছুই হয় না। এবং আমি তাই মনে করি, এমন অনেক বিষয় ছিল যা আমাকে বিরক্ত করেছিল।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।