বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোট উৎসব
পঞ্চগড় প্রতিনিধি | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
এই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিলেন পঞ্চগড় অঞ্চলের বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা। ৭১ বছর পর ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ায় ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই ছিল। গতকাল রবিবার তারা উৎসবমুখর পরিবেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট প্রদান করেন।
এদিন সকাল ৯টার দিকে বোদা উপজেলার বিলুপ্ত পুঁটিমারীর ছিটমহলে গিয়ে দেখা যায়, ধনীপাড়া বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে দলবেঁধে ছুটছেন নারী-পুরুষরা। বিলুপ্ত পুঁটিমারী ছিটমহলের ভোটার তছলিমউদ্দিন (৬৫) বলেন, ‘খুব ইচ্ছা ছিল, যেন বাংলাদেশি হিসেবে মরতে পারি। আমার ইচ্ছা আগেই পূরণ হয়েছে। এবার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিলাম। এটার যে কী আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখন মরেও শান্তি পাব।’ আরেক ভোটার আনোয়ারা বেগম (৬০) বলেন, ‘প্রথম ভোট দিলাম। খুব খুশি লাগতেছে।’
একই ধরনের অনুভূতি ব্যক্ত করেন চল্লিশোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘এত দিন মানুষ ভোট দিত, আমরা দেখতাম। এবার আমরাও ভোট দিতে পারলাম। আগে আমাদের খোঁজ কেউ নিত না। এখন সব দলের নেতা-কর্মীরা আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।’ অজিফা বালা (৫০) বলেন, ‘জীবনের প্রথম, তাই সকাল সকাল ভোট দিলাম। কোনো অসুবিধা হয়নি।’ ইয়াসিন আলী (৪৫) বলেন, ‘বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী এই প্রথম ভোটার হওয়ায় সবার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছে।’
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, পঞ্চগড়ের ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলে মোট ভোটার ৮ হাজার ৯৩৫ জন। পঞ্চগড়-১ আসনের মধ্যে সদর উপজেলার সাতটি বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটারসংখ্যা ১ হাজার ২৫। নারী ভোটার ৪৯৮ ও পুরুষ ভোটার ৫২৭ জন। পঞ্চগড়-২ আসনের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার ২৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোটারসংখ্যা ৬ হাজার ২২০। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ হাজার ৯৪৫ এবং পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ২৭৫।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ভারতীয় অংশের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে অনেকটা ‘বন্দিদশা’ থেকে মুক্তি পান পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহলের বাসিন্দারাও। ৬৮ বছর পর ফিরে পান নাগরিকত্ব। ভারতবর্ষের বিভক্তির পর থেকেই ছিটমহলবাসীদের কোনো নাগরিক পরিচয় ছিল না। বঞ্চিত ছিলেন নানা অধিকার, সুবিধা থেকে। ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নের পর তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র পান। ফিরে পান নানা সুযোগ-সুবিধাও। ছিটমহল বিলুপ্তির তিন বছরের মধ্যে তারা ভোটাধিকারের সুযোগও পেলেন।
শেয়ার করুন
পঞ্চগড় প্রতিনিধি | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

এই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিলেন পঞ্চগড় অঞ্চলের বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা। ৭১ বছর পর ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ায় ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই ছিল। গতকাল রবিবার তারা উৎসবমুখর পরিবেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট প্রদান করেন।
এদিন সকাল ৯টার দিকে বোদা উপজেলার বিলুপ্ত পুঁটিমারীর ছিটমহলে গিয়ে দেখা যায়, ধনীপাড়া বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে দলবেঁধে ছুটছেন নারী-পুরুষরা। বিলুপ্ত পুঁটিমারী ছিটমহলের ভোটার তছলিমউদ্দিন (৬৫) বলেন, ‘খুব ইচ্ছা ছিল, যেন বাংলাদেশি হিসেবে মরতে পারি। আমার ইচ্ছা আগেই পূরণ হয়েছে। এবার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিলাম। এটার যে কী আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখন মরেও শান্তি পাব।’ আরেক ভোটার আনোয়ারা বেগম (৬০) বলেন, ‘প্রথম ভোট দিলাম। খুব খুশি লাগতেছে।’
একই ধরনের অনুভূতি ব্যক্ত করেন চল্লিশোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘এত দিন মানুষ ভোট দিত, আমরা দেখতাম। এবার আমরাও ভোট দিতে পারলাম। আগে আমাদের খোঁজ কেউ নিত না। এখন সব দলের নেতা-কর্মীরা আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।’ অজিফা বালা (৫০) বলেন, ‘জীবনের প্রথম, তাই সকাল সকাল ভোট দিলাম। কোনো অসুবিধা হয়নি।’ ইয়াসিন আলী (৪৫) বলেন, ‘বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী এই প্রথম ভোটার হওয়ায় সবার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছে।’
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, পঞ্চগড়ের ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলে মোট ভোটার ৮ হাজার ৯৩৫ জন। পঞ্চগড়-১ আসনের মধ্যে সদর উপজেলার সাতটি বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটারসংখ্যা ১ হাজার ২৫। নারী ভোটার ৪৯৮ ও পুরুষ ভোটার ৫২৭ জন। পঞ্চগড়-২ আসনের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার ২৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোটারসংখ্যা ৬ হাজার ২২০। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ হাজার ৯৪৫ এবং পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ২৭৫।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ভারতীয় অংশের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে অনেকটা ‘বন্দিদশা’ থেকে মুক্তি পান পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহলের বাসিন্দারাও। ৬৮ বছর পর ফিরে পান নাগরিকত্ব। ভারতবর্ষের বিভক্তির পর থেকেই ছিটমহলবাসীদের কোনো নাগরিক পরিচয় ছিল না। বঞ্চিত ছিলেন নানা অধিকার, সুবিধা থেকে। ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নের পর তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র পান। ফিরে পান নানা সুযোগ-সুবিধাও। ছিটমহল বিলুপ্তির তিন বছরের মধ্যে তারা ভোটাধিকারের সুযোগও পেলেন।