মিরপুরে নিরুত্তাপ ভোট
আলতাফ মাসুদ ও মামুন আব্দুল্লাহ | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের তেমন অংশগ্রহণ না থাকায় গতকাল রবিবার রাজধানীর মিরপুরের আসনগুলোর ভোট ছিল নিরুত্তাপ। ভোটারদের মধ্যেও তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়নি। রাজধানীর বৃহত্তর মিরপুরের ঢাকা ১৪, ১৫ ও ১৬ নির্বাচনী আসনে সরেজমিন ভোটগ্রহণ পর্যালোচনায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
তিনটি আসনের কেন্দ্রগুলোতে ছোটখাটো দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া সহিংসতার তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সব কেন্দ্রেই নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। দেখা যায়নি ধানের শীষের কোনো ব্যাজ লাগানো কর্মীকে। কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ভোটদান সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। কোথাও ভোটারের উপস্থিতি থাকলেও ধীরগতির কারণে শেষ সময়ে অনেকেই ভোট দিতে পারেননি।
ঢাকা-১৪ আসনের মিরপুর উপশহর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে লাইনে কোনো ভোটার পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, শীতকাল হওয়ায় মানুষজন একটু দেরি করে ভোট দিতে আসছেন। এখানে ধানের শীষের কোনো পোলিং এজেন্ট নেই বলেও জানান তিনি।
ভোটারের উপস্থিতি কম দেখা গেছে মিরপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ন্যাশনাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সাংবাদিক আবাসিক এরিয়া স্কুল, কালসী ইসলামিয়া আদর্শ স্কুল, মিরপুর কলেজসহ বেশকিছু কেন্দ্রে। আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি পর্যাপ্ত ছিল। সকাল ১১টায় মাজার রোডে অবস্থিত জুভেনাইল কেয়ার স্কুলে ভোট দেন আসলাম। ভোট প্রদান শেষে এই সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। ভোটের ফলেই সেটা বোঝা যাবে, মানুষ উন্নয়নের পক্ষে কতটা রায় দিয়েছেন।’
সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তবে এ আসনের অধিকাংশ কেন্দ্রেই বিএনপির পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। কর্মীও দেখা যায়নি, ছিল না কোনো ক্যাম্পও। সকাল ১১টায় দারুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে প্রচুরসংখ্যক ভোটার অপেক্ষা করছেন। স্কুলের ভেতরে প্রবেশের পর সেখানে দেখা যায়, পাঁচ থেকে সাতজন ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে স্থান সংকুলানের কারণে তারা একসঙ্গে বেশি ভোটারকে সুযোগ দিতে পারছেন না।
একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে ঢাকা ১৫ ও ১৬ আসনের কয়েকটি কেন্দ্রে। অন্যান্য আসনের তুলনায় কিছুটা চাপের মধ্যে ছিলেন ঢাকা-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইলিয়াসউদ্দিন মোল্লাহ। মিরপুর ১২ নম্বরের বেশকিছু কেন্দ্র বিহারি অধ্যুষিত এবং এদের ভোট নৌকার বিরুদ্ধে পড়বে এমন আশঙ্কা ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের। বিহারি অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে ভোটদানে বিশৃঙ্খলাও লক্ষ করা গেছে।
দুপুর দেড়টায় বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে প্রচুর ভোটার অপেক্ষায় থাকলেও তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে ১৫ মিনিট ভোটদান প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে বলে উপস্থিত ভোটাররা জানান। ২টার পর ফের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও ধীরগতির কারণে কেন্দ্রের বাইরে প্রচুর ভোটার জড়ো হন। কেন্দ্রে ঢুকে দেখা যায়, পুরো মাঠ ফাঁকা। এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নিয়াজ মোর্শেদ উজ্জ্বল বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা ভোটারদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ভোট নেওয়া হচ্ছে।’
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন কেন্দ্রে বাইরে থেকে বোমাসদৃশ বস্তু নিক্ষেপের কারণে প্রায় আধঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। এ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা মুর্শেদা বেগম (৬০) বলেন, ‘ওইখানে গেইট লাগায়া রাখছে। ভিতরে যেতে দেয় না।’ এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন বিএনপি নেতা আহসানুল্লাহ হাসান। কোনো কর্মীকে দেখা না গেলেও কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট ছিল। কোনো কোনো কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট শুরুতে থাকলেও পরে চলে যান বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসাররা।
ঢাকা-১৫ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদারের বিপক্ষে লড়েন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জামায়াত নেতা ডা. শফিকুর রহমান। এ আসনের অনেক কেন্দ্রেই জামায়াতের পোলিং এজেন্ট ছিল। ৬০ ফুট ও শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১টায় এখানে প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে শেষ সময়ে আসায় শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলে অন্তত ২০ জন ভোট দিতে পারেননি। ভোটারদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট আগেই কেন্দ্রের ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ আসনের হাজী আশ্রাফ আলী হাই স্কুল কেন্দ্রে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার।
শেয়ার করুন
আলতাফ মাসুদ ও মামুন আব্দুল্লাহ | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের তেমন অংশগ্রহণ না থাকায় গতকাল রবিবার রাজধানীর মিরপুরের আসনগুলোর ভোট ছিল নিরুত্তাপ। ভোটারদের মধ্যেও তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়নি। রাজধানীর বৃহত্তর মিরপুরের ঢাকা ১৪, ১৫ ও ১৬ নির্বাচনী আসনে সরেজমিন ভোটগ্রহণ পর্যালোচনায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
তিনটি আসনের কেন্দ্রগুলোতে ছোটখাটো দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া সহিংসতার তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সব কেন্দ্রেই নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। দেখা যায়নি ধানের শীষের কোনো ব্যাজ লাগানো কর্মীকে। কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ভোটদান সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। কোথাও ভোটারের উপস্থিতি থাকলেও ধীরগতির কারণে শেষ সময়ে অনেকেই ভোট দিতে পারেননি।
ঢাকা-১৪ আসনের মিরপুর উপশহর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে লাইনে কোনো ভোটার পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, শীতকাল হওয়ায় মানুষজন একটু দেরি করে ভোট দিতে আসছেন। এখানে ধানের শীষের কোনো পোলিং এজেন্ট নেই বলেও জানান তিনি।
ভোটারের উপস্থিতি কম দেখা গেছে মিরপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ন্যাশনাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সাংবাদিক আবাসিক এরিয়া স্কুল, কালসী ইসলামিয়া আদর্শ স্কুল, মিরপুর কলেজসহ বেশকিছু কেন্দ্রে। আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি পর্যাপ্ত ছিল। সকাল ১১টায় মাজার রোডে অবস্থিত জুভেনাইল কেয়ার স্কুলে ভোট দেন আসলাম। ভোট প্রদান শেষে এই সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। ভোটের ফলেই সেটা বোঝা যাবে, মানুষ উন্নয়নের পক্ষে কতটা রায় দিয়েছেন।’
সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তবে এ আসনের অধিকাংশ কেন্দ্রেই বিএনপির পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। কর্মীও দেখা যায়নি, ছিল না কোনো ক্যাম্পও। সকাল ১১টায় দারুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে প্রচুরসংখ্যক ভোটার অপেক্ষা করছেন। স্কুলের ভেতরে প্রবেশের পর সেখানে দেখা যায়, পাঁচ থেকে সাতজন ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে স্থান সংকুলানের কারণে তারা একসঙ্গে বেশি ভোটারকে সুযোগ দিতে পারছেন না।
একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে ঢাকা ১৫ ও ১৬ আসনের কয়েকটি কেন্দ্রে। অন্যান্য আসনের তুলনায় কিছুটা চাপের মধ্যে ছিলেন ঢাকা-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইলিয়াসউদ্দিন মোল্লাহ। মিরপুর ১২ নম্বরের বেশকিছু কেন্দ্র বিহারি অধ্যুষিত এবং এদের ভোট নৌকার বিরুদ্ধে পড়বে এমন আশঙ্কা ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের। বিহারি অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে ভোটদানে বিশৃঙ্খলাও লক্ষ করা গেছে।
দুপুর দেড়টায় বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে প্রচুর ভোটার অপেক্ষায় থাকলেও তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে ১৫ মিনিট ভোটদান প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে বলে উপস্থিত ভোটাররা জানান। ২টার পর ফের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও ধীরগতির কারণে কেন্দ্রের বাইরে প্রচুর ভোটার জড়ো হন। কেন্দ্রে ঢুকে দেখা যায়, পুরো মাঠ ফাঁকা। এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নিয়াজ মোর্শেদ উজ্জ্বল বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা ভোটারদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ভোট নেওয়া হচ্ছে।’
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন কেন্দ্রে বাইরে থেকে বোমাসদৃশ বস্তু নিক্ষেপের কারণে প্রায় আধঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। এ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা মুর্শেদা বেগম (৬০) বলেন, ‘ওইখানে গেইট লাগায়া রাখছে। ভিতরে যেতে দেয় না।’ এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন বিএনপি নেতা আহসানুল্লাহ হাসান। কোনো কর্মীকে দেখা না গেলেও কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট ছিল। কোনো কোনো কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট শুরুতে থাকলেও পরে চলে যান বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসাররা।
ঢাকা-১৫ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদারের বিপক্ষে লড়েন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জামায়াত নেতা ডা. শফিকুর রহমান। এ আসনের অনেক কেন্দ্রেই জামায়াতের পোলিং এজেন্ট ছিল। ৬০ ফুট ও শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১টায় এখানে প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে শেষ সময়ে আসায় শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলে অন্তত ২০ জন ভোট দিতে পারেননি। ভোটারদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট আগেই কেন্দ্রের ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ আসনের হাজী আশ্রাফ আলী হাই স্কুল কেন্দ্রে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার।