
থাইল্যান্ডভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার জোট এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনের (আনফ্রেল) পক্ষপাতমূলক জল্পনা থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল রবিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছে।
‘সময়মতো ভিসা দেওয়া হয়নি’ এ অভিযোগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেনি থাইল্যান্ডভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক আনফ্রেল প্রতিনিধিরা। গত ২৯ ডিসেম্বর আনফ্রেল থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৯ ডিসেম্বর আনফ্রেলের অধিভুক্ত সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া যৌথ বিবৃতি দেওয়াটা একটি অপরিপক্ব আচরণ। সেখানে ‘নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে’ ভোটের যে কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, সেটা ভুল তথ্য ও পূর্বপরিকল্পিত ধারণা থেকেই করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৭৪ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ও ৬৫ জন বিদেশি সাংবাদিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ছাড়া ৮১টি সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন দেশীয় পর্যবেক্ষক রয়েছেন। সাত-আট হাজার সাংবাদিকও এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
২১ ডিসেম্বরের মধ্যে আনফ্রেলের ৩২ পর্যবেক্ষকের মধ্যে ১৩ জনকে অ্যাক্রিডিটেশন দেওয়া হয় বলে জানায় সংস্থাটি। সেটি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আনফ্রেলের অবশিষ্ট আবেদনকারীদের আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যেই ছিল। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আনফ্রেল তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের ভোটটি দিতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছে অনেকের কণ্ঠে। গতকাল রবিবার ভোট দিতে গিয়ে বাধাসহ নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন তারা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভোটাররা এমন অভিযোগ জানিয়েছেন। এসব ভোটারের মধ্যে কেন্দ্রে গিয়েও অনেকে ভোট দিতে পারেননি। কারণ, তাদের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আবার কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ভোটার স্লিপ না পেয়েও ভোট দিতে পারেননি অনেকে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ঢাকা-৭ আসনে লালবাগের রহমতুল্লাহ উচ্চ বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুমাইয়া হাসান নামে এক তরুণী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এবারই প্রথম ভোটার। জার্মানি থেকে ভোট দিতে এসেছি। কিন্তু আমাকে ও আমার আম্মুকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
ঢাকা-১২ আসনের ভোটার চাকরিজীবী জেসিকা জাহিন। এবারই প্রথম ভোট দিতে কেন্দ্রে গেলেও পারেননি। প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, তার সিরিয়াল নাম্বারে আরেক নারী ভোট দিয়ে চলে গেছেন।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে ইভিএমে ভোটদানে বহিরাগতদের বাধার অভিযোগ করেন ভোটাররা। এখানে বেশিরভাগ কেন্দ্রে ইভিএম পাহারা দিচ্ছিল বহিরাগতরা। তাদের সামনেই ভোটারদের ব্যালটে সিল দিতে বাধ্য করা হয়। পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসাররা ছিলেন নিতান্ত অসহায়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র চোখে পড়ে। ভোট দিতে গিয়ে এত তিক্ত অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফার। কখনো ভাবতে পারেননি, সন্তানের বয়সী কেউ তাকে বলবে, ‘ভোট দিলে দাও, নইলে বেরিয়ে যাও।’ নগরীর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার তিনি।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনের বীণাপাণি কেন্দ্রের ভোটার মাহবুব আলম অভিযোগ করেছেন, কেউ তার ভোট আগেই দিয়ে ফেলেছে। একই কেন্দ্রের ভোটার অধ্যাপক শাহ আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ভোট দিতে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা তা কেড়ে নিয়ে নৌকায় সিল দিয়েছে।’
সিলেট-১ (মহানগর-সদর) আসনে পাঠানটুলা জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রধান ফটকে দুপুর ২টার দিকে দেখা যায়, একজন ভোটার টোকেন হাতে নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি ভোট দেওয়ার জন্য ভেতরে যেতে চান, তবে দায়িত্বরত পুলিশ তার পথ আগলে বলছেন, ‘আর ভোট দেওয়া লাগবে না, ভোট শেষ।’ একই সঙ্গে ওই পুলিশ সদস্য তার সঙ্গীদের বলেন, কোনো ভোটারকে যেন আর ভেতরে ঢুকতে দেওয়া না হয়।
ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে সকাল সাড়ে ৮টায় কলকাকলী শিক্ষালয় কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিতে পারেননি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রতন মিয়া। তিনি অভিযোগ করেন, ভোটার স্লিপ নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করলে স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা তার হাত থেকে স্লিপ কেড়ে নেয় এবং ‘ভোট হয়ে গেছে’ জানিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সবার সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রতনের।
পৌর এলাকার জামসিং মহল্লার ভোটার জহির উদ্দিন জানান, ভোটকক্ষে কয়েক যুবক তার হাত থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল দেয়। তিনি বলেন, আমি নৌকায় ভোট দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু নিজের ভোট নিজে না দিতে পারায় কষ্ট পেয়েছি। সাভারের মজিদপুর মহল্লার সান ফ্লাওয়ার মডেল স্কুল কেন্দ্রের মূল ফটক লাগিয়ে রাখতে দেখা যায়। আশুলিয়ার ইয়ারপুর, ঘোষবাগ, নরসিংহপুর, জামগড়া এলাকায়ও একই চিত্র লক্ষ করা যায়। ভোটাররা বাধা পাওয়ায় দুপুর ১২টার মধ্যে ওই এলাকার কেন্দ্রগুলো ফাঁকা হয়ে যায়।
মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে শহরের মুন্সীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নিজের ভোট দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান শাহিদা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, সকাল ৯টার দিকে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ব্যালটে সিল দিতে গেলে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট তা ছিনিয়ে নেয় এবং জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে সিল দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্ষুব্ধ শাহিদা এ সময় নৌকা প্রতীকের এজেন্টকে এমন আচরণের কারণ জানতে চান। ১০ মিনিট ধরে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তবে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হালিমা খাতুন এমন কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেন।
ঢাকা-১৩ আসনে জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা ইমরান। এ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ চলছিল। কিন্তু ভোটার স্লিপ না পেয়ে তিনি ভোট দিতে পারেননি। পরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘সূক্ষ্মভাবে ভোট চুরি করতেই ইভিএমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ এ আসনে বিএনপির এজেন্ট ছিলেন সুফিয়া। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে সকালেই কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘একজন নারী হয়েও মারধরের শিকার হওয়ায় আমি লজ্জিত। আমাকে ভোটও দিতে দেওয়া হয়নি।’
ঢাকা-৯ আসনভুক্ত পূর্ব বাসাবোর বাসিন্দা হাফসা শারমিন। দুপুর ১২টার সময় মা রহিমা আক্তারকে নিয়ে কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। তাদের বাসায় কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নামসংবলিত ভোটার স্লিপ পৌঁছানো হয়নি। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে তাদের বলা হয় ভোটার স্লিপ লাগবে। কেন্দ্রের বাইরে নৌকা প্রার্থীর প্রতিনিধিরা তালিকা থেকে ভোটার নম্বর বের করে দিচ্ছিলেন। মা-মেয়ে তাদের কাছে ভোটার নম্বর চাইলে তারা দেওয়ার কথা বলে আধঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে উপায় না পেয়ে মা-মেয়ে ভোট না দিয়েই চলে যান। ভোট দিতে না পেরে আক্ষেপ করে হাফসা বলেন, অনেক আশার ভোটটি দেওয়া হলো না। তাদের বাসার এক ভাড়াটিয়াও একই কারণে ভোট দিতে পারেননি বলে জানান তিনি।
ভোটের আগের রাতেই কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। ৮টায় ভোট শুরু হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরুর কিছু নিয়মকানুন আছে। পোলিং এজেন্ট, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রের দায়িত্বে যারা আছে তারা সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে ভোটগ্রহণ শুরু করেনি।’
বিভিন্ন জেলায় ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সভর্তি করার অভিযোগ তোলেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। তাদের পোলিং এজেন্টদের পুলিশ হয়রানি করেছে বলেও দাবি করেন।
গতকাল ভিকারুননিসা নূন স্কুল ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশপ্রধান। কোনো পোলিং এজেন্টকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, মামলার আসামি ও পরোয়ানা থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এফআইআরে যাদের নাম নেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তদন্তে নাম আসায়।
শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, ‘এখানে কানাডীয়, ভারতীয় ও নেপালি পর্যবেক্ষক ছিল। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে এবং জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারছে।’ বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও গ্রেপ্তার নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার কিসের ভিত্তিতে বলেছেন সেটা আমি জানি না। আমি যেসব কেন্দ্রে গিয়েছি, সেখানে সব দলের পোলিং এজেন্ট পেয়েছি। পুলিশ কোনো পোলিং এজেন্ট বা অন্য কাউকে অ্যারেস্ট করেনি।’ তিনি আরো বলেন, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যারা এসেছে তাদের বসতে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশ নিয়েছে। যারা আসেনি তাদের খুঁজে নিয়ে আসার দায়-দায়িত্ব পুলিশের নয়।
মামলা বা চার্জশিটে নাম না থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘প্রিভেন্টিভ অ্যারেস্ট’ বলে একটা বিষয় আছে। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে নাম আসায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ভোটের দিনের অবস্থা জানিয়ে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘দু-একটা জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সমস্ত বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। চট্টগ্রামের দুটি কেন্দ্রে গ-গোল হয়েছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। দুটি অস্ত্র লুট করে নেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহে একটি অস্ত্র লুট করা হয়েছে। ভৈরবে একটি কেন্দ্রে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। নোয়াখালীতে গ-গোল ও ব্যালট লুট করার চেষ্টা করেছিল। আমরা সেটা রোধ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘৩০০ আসনে ৪২ হাজারের বেশি কেন্দ্র রয়েছে। আমি মাত্র কয়েকটির কথা বললাম। এর পার্সেন্টেজ নিলে তা পয়েন্ট জিরোর কাছে হবে। বাকিগুলোতে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, র্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মাধ্যমে গুজব রটনাকারীদের আটক করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। গতকাল রবিবার বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব গণমাধ্যমেই এই নির্বাচন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নি¤েœ শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো।
বিবিসি
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ‘বাংলাদেশ ইলেকশনস : ডেডলি ক্ল্যাসেস মার ভোট’ শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে বলা হয়, দেশে ভোট কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং তা তদন্ত করে দেখা হবে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে এবং এবারের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয় পেতে পারেন বলা হয় প্রতিবেদনে। চট্টগ্রামের একটি ভোটকেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোট শুরুর কয়েক মিনিট আগে একটি কেন্দ্রে বিবিসির প্রতিনিধি ব্যালটভর্তি বাক্স দেখতে পান। যদিও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
সিএনএন
‘ভায়োলেন্স এরাপ্টস ডিউরিং বাংলাদেশ ইলেকশন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন নির্বাচনী সহিংসতায় ১৫ জনের মৃত্যুর সংবাদটি সামনে নিয়ে আসে। স্থানীয় এক পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগে রবিবারের নির্বাচন কেন্দ্র করে নয়জন নিহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও তিনিই তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারেন।
আলজাজিরা
কাতারভিত্তিক মিডিয়া আলজাজিরায় ‘বাংলাদেশ ইলেকশনস মারড বাই ডেডলি ক্ল্যাসেস’ শিরোনামে প্রতিবেদনেও সহিংসতায় মৃত্যুর বিষয়টি জায়গা পায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে রবিবার সহিংসতার খবর পাওয়া গেলেও রাজধানী ঢাকা তুলনামূলক শান্ত ছিল। মিডিয়াটি বাংলাদেশের স্থানীয় মিডিয়া দ্য ডেইলি স্টারের বরাত দিয়ে দেশের কোন কোন স্থানে সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তা প্রকাশ করে।
এনডিটিভি
ভারতীয় মিডিয়া এনডিটিভি ‘ভোটারস এলিজ বিং বারড ফ্রম পোলিং বুথস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্রে সাংবাদিকসহ বিরোধীদলীয় এজেন্টদের প্রবেশ করতে না দেওয়া ও ভোট কারচুপির বিষয়টি জায়গা পায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় সাংবাদিকের বরাত দিয়ে মিডিয়াটি জানায়, ‘তারা জানায় আমাদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের ভোট এরই মধ্যেই দেওয়া হয়ে গেছে।’ আওয়ামী লীগ ভোট কারচুপি করেছে বলে বিরোধী দল বিএনপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন।
রয়টার্স
বার্তা সংস্থা রয়টার্সও নির্বাচনে সহিংসতাকে তুলে ধরে। ‘বাংলাদেশ প্রোবস ভোট রিগিং অ্যালিগেশনস ইন ইলেকশন হিট বাই ভায়োলেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে বলা হয়, নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এ ছাড়া পুলিশের বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিরোধীদের সমর্থকদের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নিহত ও ২০ জন আহতের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। রাজধানী ঢাকায় বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের ওপর হামলার বিষয়টি পরিষ্কার নয় বলে পুলিশের বরাত দিয়ে জানায় রয়টার্স।
দ্য গার্ডিয়ান
‘বাংলাদেশ ইলেকশন মারড বাই ডেডলি ভায়োলেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গত এক দশকের মধ্যে এই নির্বাচনকে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলে অভিহিত করে দ্য গার্ডিয়ান। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর একটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে একজন নিহতের সংবাদটি পুলিশপ্রধান মোহাম্মদ কামাল হোসেনের বরাতে জানানো হয়। ভোটকেন্দ্রে হামলা ঠেকাতে পুলিশ গুলি চালালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে জানায় পুলিশ কর্র্তৃপক্ষ।
ভয়েস অব আমেরিকা
ক্ষমতাসীন পার্টি এবং বিরোধীদলীয় সমর্থকদের মধ্যকার সহিংসতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ভোটাররা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে জানায় ভয়েস অব আমেরিকা। ‘ডেডলি ক্ল্যাসেস অ্যাজ বাংলাদেশ ভোটেড ইন জেনারেল ইলেকশন’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় যেতে পারেন এমন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়।
দ্য টেলিগ্রাফ
ব্রিটিশ মিডিয়া দ্য টেলিগ্রাফে ‘টু ডেড ইন বাংলাদেশ ইলেকশন ডে ক্ল্যাসেস ফলোয়িং ভায়োলেন্ট ক্যাম্পেইন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিহতের কারণ তুলে ধরা হয়। বিরোধীদলীয় সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে হানা দিলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়লে এক ব্যক্তি নিহত হয় বলে স্থানীয় পুলিশপ্রধান মোহাম্মদ কামাল হোসেনের বরাত দিয়ে জানায় টেলিগ্রাফ।
ভোটগ্রহণ ঘিরে প্রায় ২৭ ঘণ্টা বন্ধ রেখে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালু করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার তা বন্ধ করতে বলেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। রবিবার ভোট শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নির্দেশনা পেয়ে মোবাইল ফোন অপারেটররা সব ধরনের মোবাইল ইন্টারনেট চালু করে। একটি অপারেটরের এক কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসির নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে ফোর-জি, থ্রি-জি ও টু-জি ইন্টারনেট সেবা পেতে শুরু করেন গ্রাহকরা। এরপর রাত ৯টার পর আবার ফোর-জি ও থ্রি-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার নির্দেশনা আসে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কানাডার পর্যবেক্ষক তানিয়া ফস্টার। গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণের সময় তিনি সাংবাদিকদের এ সন্তুষ্টির কথা জানান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আরো জানান, তিনি ভোটকেন্দ্রে সব দলের প্রতিনিধিদের দেখেছেন। সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের আওতায় তানিয়া ফস্টারসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তানিয়া ফস্টার বলেন, আমি পাঁচটি ভোটকেন্দ্র ঘুরেছি। বাংলাদেশের এ নির্বাচনের সাক্ষী হতে পেরে আমি গর্বিত। প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারদের অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ভোট প্রয়োগ করতে দেখেছি। সত্যিকারে এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। বিদেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা তানিয়া জানান, নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে তিনি মুগ্ধ।
পর্যবেক্ষক দলের আরেক প্রতিনিধি ভারতের নাগরিক ড. গৌতম ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ভারতের নির্বাচনের মতো। দুই দেশের নির্বাচনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই দীর্ঘ লাইন ধরে ভোটের জন্য অপেক্ষা করছেন। খুবই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সবাই ভোট দিচ্ছেন।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।