কেমন আছে শিশু বুথাইনা
রূপান্তর ডেস্ক | ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
মনে পড়ে আল বুথাইনা মোহাম্মদ মনসুর আল-রিমির কথা? পাঁচ বছর বয়সী সেই বালিকার কথা, যে ইয়েমেনের দুর্দশা বিশ্ববাসীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল? গত বছর ইয়েমেনের সানায় বিমান হামলায় পরিবার হারানো আহত ছোট্ট মেয়েটির উদ্ধার ও কালশিটে পড়া চোখ খুলে গণমাধ্যমের সঙ্গে তার কথা বলার চেষ্টার সেই দৃশ্যটি সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিল।
মা-বাবা, চার বোন, এক ভাই আর চাচাদের নিয়ে সুখের এক সংসার ছিল তাদের। কিন্তু সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট-সমর্থিত ইয়েমেন সরকারের বিমান হামলায় তার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। যেই বিস্ফোরক যন্ত্রটি তাকে অনাথ করেছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি।
আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পর বুথাইনা রহস্যজনকভাবে সৌদি আরবে পৌঁছে চিকিৎসা নেয়। সম্প্রতি সে ইয়েমেনে ফিরে তার চাচার পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে সাক্ষাৎকারে বিয়োগান্ত সেই ঘটনা তুলে ধরেন বুধাইনা ও তার অভিভাবক চাচা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট কোনো দিনও ভুলবে না ছোট্ট বুথাইনা। সানায় নিজেদের বাড়িতে বসে পরিবারের সবাই মিলে গল্প করছিল সেদিন। হঠাৎ বাড়ির কাছেই বোমা পড়লে সবাই ভয় পেয়ে যায়। তবে পরিবারের কর্তা বুথাইনার বাবা মাথা ঠাণ্ডা রেখে সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর পরই বিমান থেকে ফেলা পরপর তিনটি বোমায় ধসে পড়ে বুথাইনাদের বাড়ি। নিহত হন বুথাইনার মা-বাবা, চার বোন, এক ভাই আর সবচেয়ে প্রিয় চাচা। উদ্ধারের পর আহত বুথাইনার কালশিটে পড়া বন্ধ চোখ ও এক হাত দিয়ে এক চোখ খোলার ছবি নাড়া দেয় বিশ্বমানবতাকে। সব হারানো ছোট্ট মেয়েটির মুখের যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি যেন বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে দেয়। বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ইয়েমেনের বর্তমান অবস্থা।
২০১৫ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন একটি আরব সামরিক জোট ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। তার পর থেকে তারা হুতিদের লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলা চালাতে শুরু করে। এসব হামলায় নিহত বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।
এখন বেশ সুস্থ বুথাইনা; চাচাতো ভাইবোনের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটে তার। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রথমবারের মতো স্কুলে যাবে সে। ভাইয়ের এই সন্তানকে নিজের করেই মানুষ করার সংকল্প নিয়েছেন চাচা আলী। হুতিদের নেতা মাহদি আল মাশত আলীকে একটি চাকরি দিয়েছেন।
বাবা, মা, ভাই, বোনদের স্মৃতি এতটুকু মোছেনি বুথাইনার মন থেকে; প্রায়ই ডুকরে কেঁদে ওঠে। জীবনের ঘাতপ্রতিঘাত ছোট্ট মেয়েটিকে বয়সের চেয়ে বড় করে ফেলেছে। গম্ভীর মুখ নিয়ে সে বলে, ‘আমি চাই, এই যুদ্ধ বন্ধ হোক। আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই। ইয়েমেনের শিশুরা শান্তিতে বাঁচতে চায়।’
ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাজধানী সানা দখল করে নেওয়ার পর এই গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে সৌদি জোট। এর পর থেকে এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২০০ শিশুসহ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধের কারণে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে দরিদ্র এ দেশ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

মনে পড়ে আল বুথাইনা মোহাম্মদ মনসুর আল-রিমির কথা? পাঁচ বছর বয়সী সেই বালিকার কথা, যে ইয়েমেনের দুর্দশা বিশ্ববাসীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল? গত বছর ইয়েমেনের সানায় বিমান হামলায় পরিবার হারানো আহত ছোট্ট মেয়েটির উদ্ধার ও কালশিটে পড়া চোখ খুলে গণমাধ্যমের সঙ্গে তার কথা বলার চেষ্টার সেই দৃশ্যটি সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিল।
মা-বাবা, চার বোন, এক ভাই আর চাচাদের নিয়ে সুখের এক সংসার ছিল তাদের। কিন্তু সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট-সমর্থিত ইয়েমেন সরকারের বিমান হামলায় তার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। যেই বিস্ফোরক যন্ত্রটি তাকে অনাথ করেছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি।
আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পর বুথাইনা রহস্যজনকভাবে সৌদি আরবে পৌঁছে চিকিৎসা নেয়। সম্প্রতি সে ইয়েমেনে ফিরে তার চাচার পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে সাক্ষাৎকারে বিয়োগান্ত সেই ঘটনা তুলে ধরেন বুধাইনা ও তার অভিভাবক চাচা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট কোনো দিনও ভুলবে না ছোট্ট বুথাইনা। সানায় নিজেদের বাড়িতে বসে পরিবারের সবাই মিলে গল্প করছিল সেদিন। হঠাৎ বাড়ির কাছেই বোমা পড়লে সবাই ভয় পেয়ে যায়। তবে পরিবারের কর্তা বুথাইনার বাবা মাথা ঠাণ্ডা রেখে সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর পরই বিমান থেকে ফেলা পরপর তিনটি বোমায় ধসে পড়ে বুথাইনাদের বাড়ি। নিহত হন বুথাইনার মা-বাবা, চার বোন, এক ভাই আর সবচেয়ে প্রিয় চাচা। উদ্ধারের পর আহত বুথাইনার কালশিটে পড়া বন্ধ চোখ ও এক হাত দিয়ে এক চোখ খোলার ছবি নাড়া দেয় বিশ্বমানবতাকে। সব হারানো ছোট্ট মেয়েটির মুখের যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি যেন বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে দেয়। বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ইয়েমেনের বর্তমান অবস্থা।
২০১৫ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন একটি আরব সামরিক জোট ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। তার পর থেকে তারা হুতিদের লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলা চালাতে শুরু করে। এসব হামলায় নিহত বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।
এখন বেশ সুস্থ বুথাইনা; চাচাতো ভাইবোনের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটে তার। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রথমবারের মতো স্কুলে যাবে সে। ভাইয়ের এই সন্তানকে নিজের করেই মানুষ করার সংকল্প নিয়েছেন চাচা আলী। হুতিদের নেতা মাহদি আল মাশত আলীকে একটি চাকরি দিয়েছেন।
বাবা, মা, ভাই, বোনদের স্মৃতি এতটুকু মোছেনি বুথাইনার মন থেকে; প্রায়ই ডুকরে কেঁদে ওঠে। জীবনের ঘাতপ্রতিঘাত ছোট্ট মেয়েটিকে বয়সের চেয়ে বড় করে ফেলেছে। গম্ভীর মুখ নিয়ে সে বলে, ‘আমি চাই, এই যুদ্ধ বন্ধ হোক। আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই। ইয়েমেনের শিশুরা শান্তিতে বাঁচতে চায়।’
ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাজধানী সানা দখল করে নেওয়ার পর এই গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে সৌদি জোট। এর পর থেকে এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২০০ শিশুসহ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধের কারণে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে দরিদ্র এ দেশ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।