ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ডেঙ্গু মশা ‘অ্যারিসটোক্র্যাট’
বিশেষ প্রতিনিধি | ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের জঘন্য কার্যকলাপ কখনো মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের আইন আরও কঠোর করা দরকার। আরও কঠোরভাবে তাদের (এসব অপরাধীকে) শাস্তি দেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে তার সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বেড়ে
গেছে। শিশুদের ওপর পাশবিক অত্যাচার অথবা মানুষ খুন, ছোট শিশুদের খুন করার ঘটনা যখন ঘটে এবং এরপর পত্রিকায় সংবাদ হয়, তারপর যেন এর হারটা বেড়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা চ্যানেলগুলোর উদ্দেশে ধর্ষকদের চেহারাটা বারবার তুলে ধরার আহবান জানান, যাতে তাদের লজ্জা হয়। এসব সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে পুরুষদেরও নারীদের পাশাপাশি প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুধু মেয়েরাই এর প্রতিবাদ করব কেন? এখানে পুরুষ সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জার বিষয় যে, তারা এই অপরাধটি করে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের পুরুষ সম্প্রদায়কেও আরও সোচ্চার হতে হবে বলে আমি মনে করি।
ডেঙ্গু মশা ‘অ্যারিসটোক্র্যাট’ : প্রধানমন্ত্রী দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার পাশাপাশি বাসগৃহের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান। তিনি ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাকে ‘অ্যারিস্টোক্র্যাট’ মশা আখ্যায়িত করে বলেন, এরা বস্তিতে থাকে না, ময়লা জায়গায় থাকে না, তারা ভদ্র জায়গা খোঁজে, এখানেই সমস্যা, ওষুধ দিলেও যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মশারি টানিয়ে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে বাড়িঘর এবং এর আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পাশাপাশি যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে, ফুলের টব, এয়ার কন্ডিশনের পানি যেন জমতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এই মশা পরিষ্কার জায়গায় ডিম দেয় ও বংশবৃদ্ধি করে।
দেশে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ছে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
প্রকৃত অবস্থা না ভেবেই গ্যাসের দাম নিয়ে আন্দোলন : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। গ্যাসের আমদানি খরচের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। যারা আন্দোলন করছেন তারা প্রকৃত অবস্থা চিন্তা করছেন না, এটা দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যে গ্যাস আছে তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিলাম এলএনজি আমদানি করব। এর জন্য অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। পুরো টাকাই ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা এলএনজি আমদানি করছি গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য। শিল্পায়ন হচ্ছে, শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সেই পরিমাণ গ্যাস আমাদের দেশে নেই। আমরা কূপ খনন করছি। গ্যাসের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যেটুকু গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে সেটুকু উত্তোলন করা হচ্ছে। সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলএনজি আমদানি খুব ব্যয়সাপেক্ষ। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন মূল্যায়ন দেখেছে বর্ধিত ব্যয় নির্বাহের জন্য কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। সেখানে আমরা কতটুকু দাম বাড়িয়েছি। গ্রাহকদের আর্থিক চাপ বিবেচনা করে কমিশন মাত্র ৩২.৮ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে। অর্থাৎ, ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৮০ পয়সা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাহকদের জন্য কোনো দাম বাড়ানো হয়নি। গণপরিবহনের বিষয়টি বিবেচনায় করে সিএনজি খাতে শুধু প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এখন থেকে মিনিমাম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সব শিল্প গ্রাহককে ইবিসি মিটার দেওয়া হবে। যাতে গ্যাস কে কত ব্যবহার করে সেটা নির্দিষ্ট থাকে। যাতে বিল পরিশোধ সহজ হয়। গ্রাহকদের আর্থিক চাপ যেন বেশি না পড়ে সেজন্য সরকার থেকে প্রতিবছর ৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা বা ভর্ভুকি দেওয়া হবে। তা ছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আমদানিতে যে মূল্য পড়ছে তাতে আমরা সেখানে পাইপলাইন তৈরি করছি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করছি। এরও একটা খরচ আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি খরচটা ধরি তাতে এলএনজি আমদানির খরচ পড়ে ৬১ টাকা ১২ পয়সা। আমরা নিচ্ছি মাত্র ৯.৮০ টাকা। অর্থাৎ ৫১. ৩২ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমরা যদি গ্যাস দিতে না পারি, তাহলে উৎপাদন বন্ধ হবে, রপ্তানি বন্ধ হবে, কর্মসংস্থান বন্ধ হবে। এজন্য গ্যাস আমদানির খরচ যেটা, সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। জানি না যারা আন্দোলন করছেন তারা কী চান। ভারতে গ্যাসের দাম কমের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সব খাতেই ভারতে গ্যাসের দাম বাংলাদেশ থেকে বেশি। বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে আমরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ঢাকায় এসে গ্যাস বিক্রির কথা বলেছিলেন। ভারতও গ্যাস নেবে বলেছিল। কিন্তু আমি রাজি হইনি। পরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কাটার এসে আমাকে আর জিল্লুর রহমানকে এবং খালেদা জিয়া ও মান্নান ভূঁইয়াকে ডেকে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি মুচলেকা দিইনি। বলেছিলাম আগে আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখার পর চিন্তা করব। কিন্তু খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়ে এসেছিলেন। নির্বাচনে আমরা বেশি ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
কেউ যেন মুসলমানদের নিয়ে খেলতে না পারে : ইসলামি পর্যটনকে বিশ্ব বাণিজ্যের ‘ব্র্যান্ড’ করতে হলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পাশাপাশি একটি রোডম্যাপ তৈরি করলে পর্যটকদের আকর্ষণ করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন খেলতে না পারে, এজন্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ঢাকা দ্য ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান।
গত বছর আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর পর্যটনমন্ত্রীদের দশম সম্মেলনে ২০১৯ সালের জন্য ঢাকাকে ‘ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই সম্মেলনে মুসলিম ফ্রেন্ডলি ট্যুরিজমকে গ্লোবাল ব্র্যান্ডিং হিসেবে সারা বিশ্বে তুলে ধরতে পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে সব দেশ সম্মত হয়।
গতকালের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ওআইসিভুক্ত দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য, ট্যুরিজম সব ক্ষেত্রেই কাজ করতে পারিÑ সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে। আমরা সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন খেলতে না পারে, এজন্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে জাতীয় আয়ে পর্যটন শিল্প ভূমিকা রাখছে। তাই দেশে পর্যটক আকর্ষণে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আলাদা জোন করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা আন্তঃওআইসি পর্যটক প্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগ, ভিসা সহজীকরণ ও ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর জোর দেন।
ওআইসির ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়ন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ মিলিয়ন। একই বছর সারা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে মুসলিম।
থমসন-রয়টার্সের আরেকটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে ইসলামি পর্যটনের বাজার ছিল ১৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যার মধ্যে ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের বাজার ছিল প্রায় ১০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ইসলামি পর্যটনের বাজার বার্ষিক ৮.৩ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২১ সাল নাগাদ ২৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, ওআইসির সহকারী মহাসচিব মুসা কুলাকলিকাইয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী প্রমুখ।
শেয়ার করুন
ডেঙ্গু মশা ‘অ্যারিসটোক্র্যাট’
বিশেষ প্রতিনিধি | ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের জঘন্য কার্যকলাপ কখনো মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের আইন আরও কঠোর করা দরকার। আরও কঠোরভাবে তাদের (এসব অপরাধীকে) শাস্তি দেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে তার সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বেড়ে
গেছে। শিশুদের ওপর পাশবিক অত্যাচার অথবা মানুষ খুন, ছোট শিশুদের খুন করার ঘটনা যখন ঘটে এবং এরপর পত্রিকায় সংবাদ হয়, তারপর যেন এর হারটা বেড়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা চ্যানেলগুলোর উদ্দেশে ধর্ষকদের চেহারাটা বারবার তুলে ধরার আহবান জানান, যাতে তাদের লজ্জা হয়। এসব সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে পুরুষদেরও নারীদের পাশাপাশি প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুধু মেয়েরাই এর প্রতিবাদ করব কেন? এখানে পুরুষ সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জার বিষয় যে, তারা এই অপরাধটি করে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের পুরুষ সম্প্রদায়কেও আরও সোচ্চার হতে হবে বলে আমি মনে করি।
ডেঙ্গু মশা ‘অ্যারিসটোক্র্যাট’ : প্রধানমন্ত্রী দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার পাশাপাশি বাসগৃহের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান। তিনি ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাকে ‘অ্যারিস্টোক্র্যাট’ মশা আখ্যায়িত করে বলেন, এরা বস্তিতে থাকে না, ময়লা জায়গায় থাকে না, তারা ভদ্র জায়গা খোঁজে, এখানেই সমস্যা, ওষুধ দিলেও যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মশারি টানিয়ে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে বাড়িঘর এবং এর আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পাশাপাশি যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে, ফুলের টব, এয়ার কন্ডিশনের পানি যেন জমতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এই মশা পরিষ্কার জায়গায় ডিম দেয় ও বংশবৃদ্ধি করে।
দেশে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ছে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
প্রকৃত অবস্থা না ভেবেই গ্যাসের দাম নিয়ে আন্দোলন : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। গ্যাসের আমদানি খরচের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। যারা আন্দোলন করছেন তারা প্রকৃত অবস্থা চিন্তা করছেন না, এটা দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যে গ্যাস আছে তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিলাম এলএনজি আমদানি করব। এর জন্য অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। পুরো টাকাই ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা এলএনজি আমদানি করছি গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য। শিল্পায়ন হচ্ছে, শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সেই পরিমাণ গ্যাস আমাদের দেশে নেই। আমরা কূপ খনন করছি। গ্যাসের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যেটুকু গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে সেটুকু উত্তোলন করা হচ্ছে। সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলএনজি আমদানি খুব ব্যয়সাপেক্ষ। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন মূল্যায়ন দেখেছে বর্ধিত ব্যয় নির্বাহের জন্য কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। সেখানে আমরা কতটুকু দাম বাড়িয়েছি। গ্রাহকদের আর্থিক চাপ বিবেচনা করে কমিশন মাত্র ৩২.৮ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে। অর্থাৎ, ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৮০ পয়সা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাহকদের জন্য কোনো দাম বাড়ানো হয়নি। গণপরিবহনের বিষয়টি বিবেচনায় করে সিএনজি খাতে শুধু প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এখন থেকে মিনিমাম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সব শিল্প গ্রাহককে ইবিসি মিটার দেওয়া হবে। যাতে গ্যাস কে কত ব্যবহার করে সেটা নির্দিষ্ট থাকে। যাতে বিল পরিশোধ সহজ হয়। গ্রাহকদের আর্থিক চাপ যেন বেশি না পড়ে সেজন্য সরকার থেকে প্রতিবছর ৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা বা ভর্ভুকি দেওয়া হবে। তা ছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আমদানিতে যে মূল্য পড়ছে তাতে আমরা সেখানে পাইপলাইন তৈরি করছি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করছি। এরও একটা খরচ আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি খরচটা ধরি তাতে এলএনজি আমদানির খরচ পড়ে ৬১ টাকা ১২ পয়সা। আমরা নিচ্ছি মাত্র ৯.৮০ টাকা। অর্থাৎ ৫১. ৩২ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমরা যদি গ্যাস দিতে না পারি, তাহলে উৎপাদন বন্ধ হবে, রপ্তানি বন্ধ হবে, কর্মসংস্থান বন্ধ হবে। এজন্য গ্যাস আমদানির খরচ যেটা, সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। জানি না যারা আন্দোলন করছেন তারা কী চান। ভারতে গ্যাসের দাম কমের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সব খাতেই ভারতে গ্যাসের দাম বাংলাদেশ থেকে বেশি। বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে আমরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ঢাকায় এসে গ্যাস বিক্রির কথা বলেছিলেন। ভারতও গ্যাস নেবে বলেছিল। কিন্তু আমি রাজি হইনি। পরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কাটার এসে আমাকে আর জিল্লুর রহমানকে এবং খালেদা জিয়া ও মান্নান ভূঁইয়াকে ডেকে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি মুচলেকা দিইনি। বলেছিলাম আগে আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখার পর চিন্তা করব। কিন্তু খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়ে এসেছিলেন। নির্বাচনে আমরা বেশি ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
কেউ যেন মুসলমানদের নিয়ে খেলতে না পারে : ইসলামি পর্যটনকে বিশ্ব বাণিজ্যের ‘ব্র্যান্ড’ করতে হলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পাশাপাশি একটি রোডম্যাপ তৈরি করলে পর্যটকদের আকর্ষণ করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন খেলতে না পারে, এজন্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ঢাকা দ্য ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান।
গত বছর আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর পর্যটনমন্ত্রীদের দশম সম্মেলনে ২০১৯ সালের জন্য ঢাকাকে ‘ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই সম্মেলনে মুসলিম ফ্রেন্ডলি ট্যুরিজমকে গ্লোবাল ব্র্যান্ডিং হিসেবে সারা বিশ্বে তুলে ধরতে পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে সব দেশ সম্মত হয়।
গতকালের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ওআইসিভুক্ত দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য, ট্যুরিজম সব ক্ষেত্রেই কাজ করতে পারিÑ সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে। আমরা সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন খেলতে না পারে, এজন্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে জাতীয় আয়ে পর্যটন শিল্প ভূমিকা রাখছে। তাই দেশে পর্যটক আকর্ষণে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আলাদা জোন করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা আন্তঃওআইসি পর্যটক প্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগ, ভিসা সহজীকরণ ও ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর জোর দেন।
ওআইসির ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়ন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ মিলিয়ন। একই বছর সারা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে মুসলিম।
থমসন-রয়টার্সের আরেকটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে ইসলামি পর্যটনের বাজার ছিল ১৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যার মধ্যে ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের বাজার ছিল প্রায় ১০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ইসলামি পর্যটনের বাজার বার্ষিক ৮.৩ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২১ সাল নাগাদ ২৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, ওআইসির সহকারী মহাসচিব মুসা কুলাকলিকাইয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী প্রমুখ।