কবে সাধুর চরণ ধূলি...
হাসান আলী, কুষ্টিয়া | ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০
কোথাও চলছে গুরুভক্তি, কোথাও সাঁইজির কালাম আলোচনা আর কোথাও বা সাঁইজির গানের আসর। সেখানে জড়ো সাধু-মহাজন-ভক্তরা। সুর-ছন্দের তালে গভীর মনোযোগ। একতারা হাতে ফকির ময়না খাতুন গাইছেন ‘কবে সাধুর চরণ ধূলি মোর লাগবে গায়, আমি বসে আছি আশার সিন্ধু ওই নামের সুধায়’।
গতকাল দুপুর দেড়টায় লালন একাডেমি পক্ষ থেকে দেওয়া হলুদ গেঞ্জি পরা একদল স্বেচ্ছাসেবককে কলাপাতা হাতে ছুটতে দেখে পুণ্যসেবা গ্রহণে সাধুরা শৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন। খাবার হিসেবে দেওয়া হয় সাদা ভাত, সবজি, মাছ ও ডাল। মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘আলেক সাঁই না বলা পর্যন্ত কেউ খাবেন না।’ হাজারো সাধু, মহাজন, ভক্তের কেউ বাদ পড়েনি নিশ্চিত হলে আসেন আলেক সাঁইয়ের ডাক। সে সময় সবাই খাওয়া শুরু করেন। এমন শৃঙ্খলভাবে
সেবা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী থেকে আসা ফকির আজম শাহ বলেন, ‘সবই গুরুর কৃপা’ গুরুভক্তির লেশমাত্র উপলব্ধি যার ভেতর থাকে সে কখনো বিশৃঙ্খল হতে পারে না।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়োজনে ১২৯তম লালন স্মরণোৎসবকে ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবারও সন্ধ্যা ৭টায় যথারীতি লালন দর্শনালোকে আলোচনা সভা শেষে রাতভর চলে লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীতানুষ্ঠান। সেই সঙ্গে লালন মঞ্চের মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। সেখানে নানা জাতের বাহারি স্বাদের খাবার ছাড়াও আসবাবপত্র ও পোশাকের পসরা বসিয়েছেন দোকানিরা। ঘুরতে আসা দর্শকরাও ঘোরাঘুরি শেষে প্রিয়জনদের জন্য পছন্দের কিছু নিয়ে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা।
ছেঁউড়িয়ায় লালনের মাজার অডিটরিয়ামের নিচতলায় আপনমনেই গাইছিলেন ময়না। গান শেষে কথা হলো তার সঙ্গে।
দেশ রূপান্তর : কেন এখানে আসেন?
ময়না : উপায় কি? জগৎ-সংসারে যার ভেতরে ডুইবে আচি, তাতে তো আত্মার শান্তি মেলে না। আমার গুরু রব্বানী শাহের কাছে যেদিন সাঁইজির বাণীতে দীক্ষা লিলাম সেদিন থেকিই আমির আত্মার টান বাইড়ি গেল সাঁজির কালামের ওপর।
সাঁইজির কোন কালামটা মনে বেশি দাগ কাটে?
‘মানুষ ভইজলে সোনার মানুষ হবি’ এই কালামের মধ্যিই সাঁইজি মানুষ ভক্তির কথা বইলেচে। যা কিছুই করি, মানুষের জন্যি যেদি মানুষের মদ্যি প্রেম ভক্তি ভালোবাসা না থাকে তালি তো সবই জলে যায়। তাই মানুষ গুরু সাধুর চরণ ধূলি নিতিই এখানে আসি। অপেক্ষায় আচি কবে তার দেখা পাবো সেই আশায়।
নারীদের এই সাধুতন্ত্রে আসাটা সমাজ ভালো চোখে দেখে কি?
বাইরের মানুষের কথা কী বোলবো, আমার নিজের সংসারের মিছে মায়ার টানই তো আমার বড় বাধা। তারা তো ভালো চোকে দেকে না। হয়তো ওদের মধ্যি গুরু প্রেম নেই বলেই এমন করে। আমি বোলবো, একমাত্র গুরু ভক্তি গুরু প্রেমই ক্যাবল অশান্ত আত্মাকে শান্তির পরশ দিতে পারে।
শেয়ার করুন
হাসান আলী, কুষ্টিয়া | ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০

কোথাও চলছে গুরুভক্তি, কোথাও সাঁইজির কালাম আলোচনা আর কোথাও বা সাঁইজির গানের আসর। সেখানে জড়ো সাধু-মহাজন-ভক্তরা। সুর-ছন্দের তালে গভীর মনোযোগ। একতারা হাতে ফকির ময়না খাতুন গাইছেন ‘কবে সাধুর চরণ ধূলি মোর লাগবে গায়, আমি বসে আছি আশার সিন্ধু ওই নামের সুধায়’।
গতকাল দুপুর দেড়টায় লালন একাডেমি পক্ষ থেকে দেওয়া হলুদ গেঞ্জি পরা একদল স্বেচ্ছাসেবককে কলাপাতা হাতে ছুটতে দেখে পুণ্যসেবা গ্রহণে সাধুরা শৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন। খাবার হিসেবে দেওয়া হয় সাদা ভাত, সবজি, মাছ ও ডাল। মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘আলেক সাঁই না বলা পর্যন্ত কেউ খাবেন না।’ হাজারো সাধু, মহাজন, ভক্তের কেউ বাদ পড়েনি নিশ্চিত হলে আসেন আলেক সাঁইয়ের ডাক। সে সময় সবাই খাওয়া শুরু করেন। এমন শৃঙ্খলভাবে
সেবা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী থেকে আসা ফকির আজম শাহ বলেন, ‘সবই গুরুর কৃপা’ গুরুভক্তির লেশমাত্র উপলব্ধি যার ভেতর থাকে সে কখনো বিশৃঙ্খল হতে পারে না।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়োজনে ১২৯তম লালন স্মরণোৎসবকে ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবারও সন্ধ্যা ৭টায় যথারীতি লালন দর্শনালোকে আলোচনা সভা শেষে রাতভর চলে লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীতানুষ্ঠান। সেই সঙ্গে লালন মঞ্চের মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। সেখানে নানা জাতের বাহারি স্বাদের খাবার ছাড়াও আসবাবপত্র ও পোশাকের পসরা বসিয়েছেন দোকানিরা। ঘুরতে আসা দর্শকরাও ঘোরাঘুরি শেষে প্রিয়জনদের জন্য পছন্দের কিছু নিয়ে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা।
ছেঁউড়িয়ায় লালনের মাজার অডিটরিয়ামের নিচতলায় আপনমনেই গাইছিলেন ময়না। গান শেষে কথা হলো তার সঙ্গে।
দেশ রূপান্তর : কেন এখানে আসেন?
ময়না : উপায় কি? জগৎ-সংসারে যার ভেতরে ডুইবে আচি, তাতে তো আত্মার শান্তি মেলে না। আমার গুরু রব্বানী শাহের কাছে যেদিন সাঁইজির বাণীতে দীক্ষা লিলাম সেদিন থেকিই আমির আত্মার টান বাইড়ি গেল সাঁজির কালামের ওপর।
সাঁইজির কোন কালামটা মনে বেশি দাগ কাটে?
‘মানুষ ভইজলে সোনার মানুষ হবি’ এই কালামের মধ্যিই সাঁইজি মানুষ ভক্তির কথা বইলেচে। যা কিছুই করি, মানুষের জন্যি যেদি মানুষের মদ্যি প্রেম ভক্তি ভালোবাসা না থাকে তালি তো সবই জলে যায়। তাই মানুষ গুরু সাধুর চরণ ধূলি নিতিই এখানে আসি। অপেক্ষায় আচি কবে তার দেখা পাবো সেই আশায়।
নারীদের এই সাধুতন্ত্রে আসাটা সমাজ ভালো চোখে দেখে কি?
বাইরের মানুষের কথা কী বোলবো, আমার নিজের সংসারের মিছে মায়ার টানই তো আমার বড় বাধা। তারা তো ভালো চোকে দেকে না। হয়তো ওদের মধ্যি গুরু প্রেম নেই বলেই এমন করে। আমি বোলবো, একমাত্র গুরু ভক্তি গুরু প্রেমই ক্যাবল অশান্ত আত্মাকে শান্তির পরশ দিতে পারে।