এখনো ১১০ টাকা পেঁয়াজের কেজি
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০
দেশের পেঁয়াজের বাজারে এখনো লাগাম টানতে পারেনি সরকার। অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার থেকে ৪০-৪২ টাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা প্রতিকেজি ১০০ টাকা। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানিকারকদের অজুহাত, মিয়ানমার থেকে আনা পেঁয়াজ ট্রাকে
থাকতেই অর্ধেক পচে যাচ্ছে। তাই বাজারে সরবরাহ কমেছে, আর লোকসান পোষাতেও দাম বেশি নিতে হচ্ছে। নভেম্বরের আগে দাম কমার সুযোগ দেখছেন না তারা। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি করা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের যেসব পেঁয়াজ পচে গেছে বলছেন, তার পরিমাণ ৫-১০ ভাগ। ইচ্ছে করেই কারসাজি করা হচ্ছে। মাসখানেক আগে মজুদবিরোধী অভিযানে ১২০ টাকার পেঁয়াজ কমতে থাকে তরতর করে। দাম কমার তৃপ্তিতে সরকার অভিযান তুলে নিলে সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ১১ অক্টোবর থেকে ফের তেজ বেড়েছে পেঁয়াজে।
গতকাল রাজধানীর পেঁয়াজের আড়ত শ্যামবাজারে দেখা যায়, পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৮০-৮৫, মিয়ানমারেরটি ৭৫-৮০ ও ভারতীয়টা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এর আগের দুদিনও প্রায় একই দামে বিক্রি হয়েছে। তবে মিয়ানমারের পেঁয়াজের মান খারাপ।
শ্যামবাজারের আড়তদার আবদুর রাজ্জাক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিয়ানমারের পেঁয়াজের স্টক শেষের দিকে। দেশটির ব্যবসায়ীরা এক সপ্তাহ ধরে পচা পেঁয়াজ দিচ্ছে। এজন্য দাম বেড়েছে। আগামী সপ্তাহে তুরস্ক ও মিসর থেকে একটি চালান আসবে। এ ছাড়া নভেম্বরের শুরুতেই ভারতের পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে দেশটির ব্যবসায়ীরা ইঙ্গিত দিয়েছে। আশা করি, নভেম্বর থেকে দাম কমবে।’
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯২ টাকা। মিয়ানমারেরটি ৮৫-৯০ টাকা। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়নি। একাধিক পাইকার জানান, মিয়ানমারের পেঁয়াজের মান খারাপ হওয়ায় পচে যাওয়ার ভয়ে অল্প করে সরবরাহ করছেন। আমদানিতে দাম বাড়ায় তারাও দাম বাড়িয়েছেন।
রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামে মিশ্রভাব। গতকাল দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০৮-১১৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অনেক মহল্লার খুচরা দোকানদার ১২০ টাকা দরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। কাঁঠালবাগান, হাতিরপুল এলাকার বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। দোকানদাররা বলছেন, দুদিন রাখলেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
পেঁয়াজের বাড়তি দামে অতিষ্ঠ খুচরা বাজারের ক্রেতারা। কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজারের ক্রেতা ইজমু আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছরই এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। সরকার অভিযানে ঢিল কেন দিল তা বুঝি না। অভিযান চললে এই দশা হতো না। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছেন ব্যবসায়ীরা।
পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আমদানির বিষয়ে গত বুধবার ছোট ও মাঝারি আকারের আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য সচিব মো. জাফরউদ্দিন। ওই বৈঠকে দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি বলে জানান সভায় অংশ নেওয়া কয়েক ব্যবসায়ী। তবে সেখানে আমদানিকারকদের সঙ্গে আমদানি বাড়ানো ও সহজে খালাসের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে দ্রুত বাংলাদেশের বন্দরে পেঁয়াজ পৌঁছানোর বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক আছে। এক থেকে দেড় মাস পর দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এদিকে পেঁয়াজের জন্য নতুন নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা হচ্ছে। দাম ঠিকই কমে আসবে।’
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০

দেশের পেঁয়াজের বাজারে এখনো লাগাম টানতে পারেনি সরকার। অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার থেকে ৪০-৪২ টাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা প্রতিকেজি ১০০ টাকা। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানিকারকদের অজুহাত, মিয়ানমার থেকে আনা পেঁয়াজ ট্রাকে
থাকতেই অর্ধেক পচে যাচ্ছে। তাই বাজারে সরবরাহ কমেছে, আর লোকসান পোষাতেও দাম বেশি নিতে হচ্ছে। নভেম্বরের আগে দাম কমার সুযোগ দেখছেন না তারা। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি করা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের যেসব পেঁয়াজ পচে গেছে বলছেন, তার পরিমাণ ৫-১০ ভাগ। ইচ্ছে করেই কারসাজি করা হচ্ছে। মাসখানেক আগে মজুদবিরোধী অভিযানে ১২০ টাকার পেঁয়াজ কমতে থাকে তরতর করে। দাম কমার তৃপ্তিতে সরকার অভিযান তুলে নিলে সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ১১ অক্টোবর থেকে ফের তেজ বেড়েছে পেঁয়াজে।
গতকাল রাজধানীর পেঁয়াজের আড়ত শ্যামবাজারে দেখা যায়, পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৮০-৮৫, মিয়ানমারেরটি ৭৫-৮০ ও ভারতীয়টা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এর আগের দুদিনও প্রায় একই দামে বিক্রি হয়েছে। তবে মিয়ানমারের পেঁয়াজের মান খারাপ।
শ্যামবাজারের আড়তদার আবদুর রাজ্জাক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিয়ানমারের পেঁয়াজের স্টক শেষের দিকে। দেশটির ব্যবসায়ীরা এক সপ্তাহ ধরে পচা পেঁয়াজ দিচ্ছে। এজন্য দাম বেড়েছে। আগামী সপ্তাহে তুরস্ক ও মিসর থেকে একটি চালান আসবে। এ ছাড়া নভেম্বরের শুরুতেই ভারতের পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে দেশটির ব্যবসায়ীরা ইঙ্গিত দিয়েছে। আশা করি, নভেম্বর থেকে দাম কমবে।’
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯২ টাকা। মিয়ানমারেরটি ৮৫-৯০ টাকা। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়নি। একাধিক পাইকার জানান, মিয়ানমারের পেঁয়াজের মান খারাপ হওয়ায় পচে যাওয়ার ভয়ে অল্প করে সরবরাহ করছেন। আমদানিতে দাম বাড়ায় তারাও দাম বাড়িয়েছেন।
রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামে মিশ্রভাব। গতকাল দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০৮-১১৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অনেক মহল্লার খুচরা দোকানদার ১২০ টাকা দরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। কাঁঠালবাগান, হাতিরপুল এলাকার বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। দোকানদাররা বলছেন, দুদিন রাখলেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
পেঁয়াজের বাড়তি দামে অতিষ্ঠ খুচরা বাজারের ক্রেতারা। কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজারের ক্রেতা ইজমু আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছরই এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। সরকার অভিযানে ঢিল কেন দিল তা বুঝি না। অভিযান চললে এই দশা হতো না। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছেন ব্যবসায়ীরা।
পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আমদানির বিষয়ে গত বুধবার ছোট ও মাঝারি আকারের আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য সচিব মো. জাফরউদ্দিন। ওই বৈঠকে দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি বলে জানান সভায় অংশ নেওয়া কয়েক ব্যবসায়ী। তবে সেখানে আমদানিকারকদের সঙ্গে আমদানি বাড়ানো ও সহজে খালাসের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে দ্রুত বাংলাদেশের বন্দরে পেঁয়াজ পৌঁছানোর বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক আছে। এক থেকে দেড় মাস পর দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এদিকে পেঁয়াজের জন্য নতুন নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা হচ্ছে। দাম ঠিকই কমে আসবে।’