১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেট্রল পাম্প ধর্মঘট স্থগিত
রূপান্তর ডেস্ক | ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা পেট্রল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ধর্মঘট আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম। তিনি বলেন, ‘আপাতত বিপিসির আশ্বাসে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। ওইদিন (১৫ ডিসেম্বর) আমাদের ১৫ দফা দাবি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। সেখানে দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে ফের আমরা আন্দোলনে যাব।’
বৈঠকের পর বিপিসির পরিচালক (বাণিজ্য) সৈয়দ মেহেদি হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৫ দফার দুটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়; বাকিগুলো অন্যান্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। তাই দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ১৫ ডিসেম্বর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে।’
জ্বালানি তেল বিক্রির প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে সাত শতাংশ প্রদান, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিষয়টি সুনির্দিষ্টকরণসহ ১৫ দফা দাবিতে গত রবিবার থেকে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সব পেট্রল পাম্প সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ডাক দেয় ঐক্য পরিষদ। মাত্র দেড় দিনের ধর্মঘটে জ্বালানি সংকটে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর গতকাল দুপুর থেকে পেট্রল পাম্পগুলোতে বিক্রি শুরু হয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষের মাঝে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবরের পর জেলার বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত বিপিসির তেল ডিপো থেকে জ্বালানি সরবরাহ শুরু হয়। এতে ৩২ ঘণ্টা অচলের পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে মেঘনা, যমুনা ও পদ্মা তেল কোম্পানির ডিপোতে। এদিকে জ্বালানি তেলের সংকটে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলায় প্রতি লিটার ডিজেল, অকটেন, পেট্রলে ১৫-২০ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুরের হাকিমপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটার পর হিলি স্থলবন্দর এলাকার সব পেট্রল পাম্প থেকে তেল বিক্রি শুরু হয়। জ্বালানির অভাবে বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের চালান আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আপাতত এই সংশয় কেটে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। যশোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জ্বালানি সংকটে পড়ে গতকাল সকাল থেকে যশোর-সাতক্ষীরা, বেনাপোল ও খুলনা রুটে অনেক বাস চলাচল করেনি। তবে দুপুরের পর পাম্প চালু হওয়ায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্মঘট কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে জেলায় সব পেট্রল পাম্প বন্ধ থাকে। এতে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী অনেক যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। ফলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এমপির গাড়িতে তেল না দেওয়ায় পাম্প বন্ধ : ধর্মঘট চলাকালে গত রবিবার ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের গাড়িতে জ্বালানি না দেওয়ায় স্থানীয় চৌধুরী ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছেন আওয়ামীপন্থি মোটর শ্রমিকরা। সোমবার বিকেল থেকে ওই পেট্রল পাম্পের চারপাশে ট্রাক দিয়ে ঘিরে রেখেছেন শ্রমিকরা। চৌধুরী ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার কানন জানান, এমপি স্যারের গাড়ি যখন আসে তখন অনেক গাড়িও দাঁড়িয়ে ছিল। জনরোষের ভয়ে কাউকেই তেল দেওয়া হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘এমপি স্যারের গাড়িতে তেল না দিয়ে তারা ভারি অন্যায় করেছে। তবে পাম্প বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি শুনিনি।’ এ বিষয়ে রমেশ চন্দ্র বলেন, ‘আমার গাড়িতে তেল না দেওয়ায় আমার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হতেই পারে!’
১৫ দফার অন্যগুলো হলোÑ প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা প্রদান, ট্যাংকলরির ভাড়াবৃদ্ধি, পেট্রল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট এবং জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্র্তৃক পেট্রল পাম্পের প্রবেশদ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক লাইসেন্স গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল, বিএসটিআই কর্র্তৃক আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলক ক্যালিব্রেশনের সিদ্ধান্ত বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া সরকারি অন্য দাপ্তরিক প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক ডিলার বা এজেন্টদের হয়রানি বন্ধ, নতুন কোনো পেট্রল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানি তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু, পেট্রল পাম্পের পাশে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা পেট্রল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ধর্মঘট আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম। তিনি বলেন, ‘আপাতত বিপিসির আশ্বাসে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। ওইদিন (১৫ ডিসেম্বর) আমাদের ১৫ দফা দাবি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। সেখানে দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে ফের আমরা আন্দোলনে যাব।’
বৈঠকের পর বিপিসির পরিচালক (বাণিজ্য) সৈয়দ মেহেদি হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৫ দফার দুটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়; বাকিগুলো অন্যান্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। তাই দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ১৫ ডিসেম্বর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে।’
জ্বালানি তেল বিক্রির প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে সাত শতাংশ প্রদান, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিষয়টি সুনির্দিষ্টকরণসহ ১৫ দফা দাবিতে গত রবিবার থেকে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সব পেট্রল পাম্প সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ডাক দেয় ঐক্য পরিষদ। মাত্র দেড় দিনের ধর্মঘটে জ্বালানি সংকটে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর গতকাল দুপুর থেকে পেট্রল পাম্পগুলোতে বিক্রি শুরু হয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষের মাঝে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবরের পর জেলার বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত বিপিসির তেল ডিপো থেকে জ্বালানি সরবরাহ শুরু হয়। এতে ৩২ ঘণ্টা অচলের পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে মেঘনা, যমুনা ও পদ্মা তেল কোম্পানির ডিপোতে। এদিকে জ্বালানি তেলের সংকটে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলায় প্রতি লিটার ডিজেল, অকটেন, পেট্রলে ১৫-২০ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুরের হাকিমপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটার পর হিলি স্থলবন্দর এলাকার সব পেট্রল পাম্প থেকে তেল বিক্রি শুরু হয়। জ্বালানির অভাবে বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের চালান আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আপাতত এই সংশয় কেটে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। যশোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জ্বালানি সংকটে পড়ে গতকাল সকাল থেকে যশোর-সাতক্ষীরা, বেনাপোল ও খুলনা রুটে অনেক বাস চলাচল করেনি। তবে দুপুরের পর পাম্প চালু হওয়ায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্মঘট কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে জেলায় সব পেট্রল পাম্প বন্ধ থাকে। এতে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী অনেক যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। ফলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এমপির গাড়িতে তেল না দেওয়ায় পাম্প বন্ধ : ধর্মঘট চলাকালে গত রবিবার ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের গাড়িতে জ্বালানি না দেওয়ায় স্থানীয় চৌধুরী ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছেন আওয়ামীপন্থি মোটর শ্রমিকরা। সোমবার বিকেল থেকে ওই পেট্রল পাম্পের চারপাশে ট্রাক দিয়ে ঘিরে রেখেছেন শ্রমিকরা। চৌধুরী ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার কানন জানান, এমপি স্যারের গাড়ি যখন আসে তখন অনেক গাড়িও দাঁড়িয়ে ছিল। জনরোষের ভয়ে কাউকেই তেল দেওয়া হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘এমপি স্যারের গাড়িতে তেল না দিয়ে তারা ভারি অন্যায় করেছে। তবে পাম্প বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি শুনিনি।’ এ বিষয়ে রমেশ চন্দ্র বলেন, ‘আমার গাড়িতে তেল না দেওয়ায় আমার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হতেই পারে!’
১৫ দফার অন্যগুলো হলোÑ প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা প্রদান, ট্যাংকলরির ভাড়াবৃদ্ধি, পেট্রল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট এবং জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্র্তৃক পেট্রল পাম্পের প্রবেশদ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক লাইসেন্স গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল, বিএসটিআই কর্র্তৃক আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলক ক্যালিব্রেশনের সিদ্ধান্ত বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া সরকারি অন্য দাপ্তরিক প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃক ডিলার বা এজেন্টদের হয়রানি বন্ধ, নতুন কোনো পেট্রল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানি তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু, পেট্রল পাম্পের পাশে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।