ডা. সারওয়ার হত্যাচেষ্টা
দুর্ব্যবহারের শিক্ষা দিতে ডাকাতির পরিকল্পনা গ্রেপ্তার আরও ৪
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলীকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি শেখ নাজমুল ইসলামসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব
ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ নিয়ে মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গত ১৩ জানুয়ারি ফরহাদ নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পিবিআইর ধানমণ্ডি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গত বুধবার বাগেরহাট, গাজীপুর, রাজধানীর উত্তরা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে শেখ নাজমুল, শেখ রনি, মো. মনির হোসেন ও মো. ফয়সাল কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার বাকি দুই আসামি আলামিন মল্লিক ওরফে সুমন ও নুর মো. মোল্লাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
গত ৫ জানুয়ারি রাতে উত্তরার নিজ বাসায় ঢুকে ডা. সারওয়ার আলীকে দুর্বৃত্তরা হত্যার চেষ্টা করে অভিযোগ এনে পরের দিন তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পিবিআই প্রধান জানান, ডা. সারওয়ারের স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিসের দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হন তাদের ব্যক্তিগত গাড়িচালক শেখ নাজমুল। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য তিনি তিন মাস ধরে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। চাচাতো ভাই রনি, ভগ্নিপতি আল-আমিনসহ বাকিদের যুক্ত করেন। হিন্দি সিনেমার ভক্ত হওয়ায় নাজমুল ফিল্মি স্টাইলে কাজটি করার চেষ্টা করলেও দারোয়ানের ওপর ঘুমের ওষুধ কাজ না করায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
পরিকল্পনা সফলে নাজমুল সহযোগীদের কাছে বিষয়টি কাল্পনিকভাবে উপস্থাপন করেন। ভয় ও জড়তা দূরে তাদের সহযোগিতায় পুলিশ, সাংবাদিক, উকিল ও চিকিৎসক থাকার কথা জানান। আশকোনা হাজি ক্যাম্প এলাকার হোটেল রোজ ভ্যালিতে দুদফা বৈঠক করে বাড়ির পরিবেশ, কক্ষ, পার্কিং, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার বিষয়ে অবহিত করা হয়। কিন্তু পরিবারটির প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ গোপন রাখেন নাজমুল।
বনজ কুমার জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হোটেল থেকে সবাই বাড়ি এলাকায় এসে ৭টি চাপাতি ও ৫টি সুইচ গিয়ারের ছুরি ভাগাভাগি করে নেন। রাত ৯টার দিকে নাজমুল চার প্যাকেট বিরিয়ানি ও ঘুমের বড়ি নিয়ে বাড়িতে ঢুকে দারোয়ান হাসানকে খাওয়ান। রাত ১০টা পর্যন্ত দারোয়ান না ঘুমালে তাকে অন্য কাজে ব্যস্ত রেখে ফয়সালকে নিয়ে তৃতীয় তলায় যান নাজমুল। নক পেয়ে ডা. সারওয়ার আলীর মেয়ে সায়মা আলী দরজা খুললে স্বামী হুমায়ুন কবির, মেয়ে অহনা কবিরসহ তাকে জিম্মি করা হয়।
ফয়সালকে সেখানে রেখে নাজমুল চতুর্থ তলায় আসেন। নক করলে ডা. সারওয়ার দরজা খুলে দিতেই তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে গলায় ছুরি ধরেন নাজমুল। এ সময় স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিস চিৎকার শুরু করলে সহযোগীদের ফোন করে ভেতরে আসতে বলেন তিনি। কিন্তু দারোয়ান জেগে থাকায় তারা ঢুকতে পারেননি। এ দম্পতির চিৎকারে দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মেজর (অব.) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার ছেলে মোবাশ্বেরকে নিয়ে চতুর্থ তলায় যান। ফ্ল্যাটে ঢুকে মোবাশ্বের টি-টেবিল ছুড়ে মারলে ফ্লোরে পড়ে বিকট শব্দ হয়। এতে ভয় পেয়ে নাজমুল দ্রুত নিচে নামেন। বিপদ বুঝতে পেরে ফয়সালও নিচে নামেন। পরে সব আসামি সটকে পড়েন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলীকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি শেখ নাজমুল ইসলামসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব
ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ নিয়ে মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গত ১৩ জানুয়ারি ফরহাদ নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পিবিআইর ধানমণ্ডি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গত বুধবার বাগেরহাট, গাজীপুর, রাজধানীর উত্তরা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে শেখ নাজমুল, শেখ রনি, মো. মনির হোসেন ও মো. ফয়সাল কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার বাকি দুই আসামি আলামিন মল্লিক ওরফে সুমন ও নুর মো. মোল্লাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
গত ৫ জানুয়ারি রাতে উত্তরার নিজ বাসায় ঢুকে ডা. সারওয়ার আলীকে দুর্বৃত্তরা হত্যার চেষ্টা করে অভিযোগ এনে পরের দিন তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পিবিআই প্রধান জানান, ডা. সারওয়ারের স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিসের দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হন তাদের ব্যক্তিগত গাড়িচালক শেখ নাজমুল। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য তিনি তিন মাস ধরে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। চাচাতো ভাই রনি, ভগ্নিপতি আল-আমিনসহ বাকিদের যুক্ত করেন। হিন্দি সিনেমার ভক্ত হওয়ায় নাজমুল ফিল্মি স্টাইলে কাজটি করার চেষ্টা করলেও দারোয়ানের ওপর ঘুমের ওষুধ কাজ না করায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
পরিকল্পনা সফলে নাজমুল সহযোগীদের কাছে বিষয়টি কাল্পনিকভাবে উপস্থাপন করেন। ভয় ও জড়তা দূরে তাদের সহযোগিতায় পুলিশ, সাংবাদিক, উকিল ও চিকিৎসক থাকার কথা জানান। আশকোনা হাজি ক্যাম্প এলাকার হোটেল রোজ ভ্যালিতে দুদফা বৈঠক করে বাড়ির পরিবেশ, কক্ষ, পার্কিং, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার বিষয়ে অবহিত করা হয়। কিন্তু পরিবারটির প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ গোপন রাখেন নাজমুল।
বনজ কুমার জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হোটেল থেকে সবাই বাড়ি এলাকায় এসে ৭টি চাপাতি ও ৫টি সুইচ গিয়ারের ছুরি ভাগাভাগি করে নেন। রাত ৯টার দিকে নাজমুল চার প্যাকেট বিরিয়ানি ও ঘুমের বড়ি নিয়ে বাড়িতে ঢুকে দারোয়ান হাসানকে খাওয়ান। রাত ১০টা পর্যন্ত দারোয়ান না ঘুমালে তাকে অন্য কাজে ব্যস্ত রেখে ফয়সালকে নিয়ে তৃতীয় তলায় যান নাজমুল। নক পেয়ে ডা. সারওয়ার আলীর মেয়ে সায়মা আলী দরজা খুললে স্বামী হুমায়ুন কবির, মেয়ে অহনা কবিরসহ তাকে জিম্মি করা হয়।
ফয়সালকে সেখানে রেখে নাজমুল চতুর্থ তলায় আসেন। নক করলে ডা. সারওয়ার দরজা খুলে দিতেই তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে গলায় ছুরি ধরেন নাজমুল। এ সময় স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিস চিৎকার শুরু করলে সহযোগীদের ফোন করে ভেতরে আসতে বলেন তিনি। কিন্তু দারোয়ান জেগে থাকায় তারা ঢুকতে পারেননি। এ দম্পতির চিৎকারে দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মেজর (অব.) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার ছেলে মোবাশ্বেরকে নিয়ে চতুর্থ তলায় যান। ফ্ল্যাটে ঢুকে মোবাশ্বের টি-টেবিল ছুড়ে মারলে ফ্লোরে পড়ে বিকট শব্দ হয়। এতে ভয় পেয়ে নাজমুল দ্রুত নিচে নামেন। বিপদ বুঝতে পেরে ফয়সালও নিচে নামেন। পরে সব আসামি সটকে পড়েন বলে জানান এ কর্মকর্তা।