ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় খুন হন কুমিল্লার নাছির
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক চা দোকানির ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার ১০ দিন পর এর রহস্য উদঘাটনের কথা জানিয়েছে পুলিশ। চা দোকানি নাছির উদ্দিন সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, এলাকার প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ করায় হত্যার শিকার হন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। মোয়াজ্জেম হোসেন (২৫) এবং সানাউল্লাহ (২৪) নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে পুলিশের ভাষ্য। চা দোকানি নাছির উদ্দিনকে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করে গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. নূরুল ইসলাম।
গত ১৩ জানুয়ারি সকালে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পড়ে থাকা নাছির উদ্দিনের ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ একে সড়ক দুর্ঘটনা বলে সন্দেহ করলেও নিহত নাছিরের বাবা রবিউল্লাহ দাবি করেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তার এই ধারণার প্রমাণ হিসেবে নাছিরের দোকানে লেগে থাকা রক্তের চিহ্ন দেখান পুলিশকে। পুলিশও নাওতলা মাদ্রাসা এলাকায় মহাসড়ক সংলগ্ন ওই দোকানের কয়েকটি জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখতে পায়। এ ঘটনায় নাছিরের বাবা রবিউল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। কেউ বলেন, পাশের এক দোকানি নাছিরের বাবা রবিউল্লাহর কাছে বড় অংকের টাকা জমা রেখে যান। আর ওই টাকা ছিনিয়ে নিতে রাতে নাছিরকে হত্যা করা হয়। আবার কারও ধারণা ছিল, রাতে দোকানে আসা কোনো ক্রেতার সঙ্গে ঝামেলার জেরে নাছিরকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে মাঠে নামে থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পুলিশ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নাছির হত্যায় জড়িত সন্দেহে গত বুধবার দুপুরে চান্দিনা থেকে মোয়াজ্জেম নামে একজনকে আটক করা হয়। পরে মোয়াজ্জেমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চান্দিনার নাওতলা এলাকা থেকে নাছির হত্যার মূলহোতা অটোরিকশা চালক সানাউল্লাহকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মোয়াজ্জেম জানায়, সানাউল্লাহ ও মোয়াজ্জেম মিলে নাছিরকে হত্যা করেছে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, অটোরিকশাচালক সানাউল্লাহ গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে ৪-৫ জন সহযোগীকে নিয়ে ১৫ বছর বয়সী প্রতিবেশী এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। বিষয়টি দেখে বাধা দেন নাছির। পরে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর ‘ধর্ষক’ সানাউল্লাহ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান। আর প্রতিবন্ধী ওই কিশোরীর বাবা সামাজিক মর্যাদাহানির আশঙ্কায় মামলা না করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহার চেষ্টা করেন। পরে ১২ জানুয়ারি বিকালে নাছিরের দোকানে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে সানাউল্লাহর সঙ্গে নাছিরের সঙ্গে বাগ্বিত-া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সানাউল্লাহ। এর জেরে ওইদিন রাতে সানাউল্লাহ মোয়াজ্জেমকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিশোধ নিতে নাছিরের দোকানে আসে। সুযোগ বুঝে দোকানের লাইট নিভিয়ে দা দিয়ে নাছিরকে কয়েকটি কোপ দেয় সানাউল্লাহ। নাছির জীবন বাঁচাতে দৌড়ে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে সড়কেই পড়ে নিহত হয়। পরে শত শত গাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন হয় তার দেহ। নাছিরের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রক্তমাখা দা ধুয়ে দোকানে রেখে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য তারা এলাকা ছাড়েনি।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক চা দোকানির ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার ১০ দিন পর এর রহস্য উদঘাটনের কথা জানিয়েছে পুলিশ। চা দোকানি নাছির উদ্দিন সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, এলাকার প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ করায় হত্যার শিকার হন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। মোয়াজ্জেম হোসেন (২৫) এবং সানাউল্লাহ (২৪) নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে পুলিশের ভাষ্য। চা দোকানি নাছির উদ্দিনকে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করে গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. নূরুল ইসলাম।
গত ১৩ জানুয়ারি সকালে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পড়ে থাকা নাছির উদ্দিনের ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ একে সড়ক দুর্ঘটনা বলে সন্দেহ করলেও নিহত নাছিরের বাবা রবিউল্লাহ দাবি করেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তার এই ধারণার প্রমাণ হিসেবে নাছিরের দোকানে লেগে থাকা রক্তের চিহ্ন দেখান পুলিশকে। পুলিশও নাওতলা মাদ্রাসা এলাকায় মহাসড়ক সংলগ্ন ওই দোকানের কয়েকটি জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখতে পায়। এ ঘটনায় নাছিরের বাবা রবিউল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। কেউ বলেন, পাশের এক দোকানি নাছিরের বাবা রবিউল্লাহর কাছে বড় অংকের টাকা জমা রেখে যান। আর ওই টাকা ছিনিয়ে নিতে রাতে নাছিরকে হত্যা করা হয়। আবার কারও ধারণা ছিল, রাতে দোকানে আসা কোনো ক্রেতার সঙ্গে ঝামেলার জেরে নাছিরকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে মাঠে নামে থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পুলিশ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নাছির হত্যায় জড়িত সন্দেহে গত বুধবার দুপুরে চান্দিনা থেকে মোয়াজ্জেম নামে একজনকে আটক করা হয়। পরে মোয়াজ্জেমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চান্দিনার নাওতলা এলাকা থেকে নাছির হত্যার মূলহোতা অটোরিকশা চালক সানাউল্লাহকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মোয়াজ্জেম জানায়, সানাউল্লাহ ও মোয়াজ্জেম মিলে নাছিরকে হত্যা করেছে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, অটোরিকশাচালক সানাউল্লাহ গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে ৪-৫ জন সহযোগীকে নিয়ে ১৫ বছর বয়সী প্রতিবেশী এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। বিষয়টি দেখে বাধা দেন নাছির। পরে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর ‘ধর্ষক’ সানাউল্লাহ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান। আর প্রতিবন্ধী ওই কিশোরীর বাবা সামাজিক মর্যাদাহানির আশঙ্কায় মামলা না করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহার চেষ্টা করেন। পরে ১২ জানুয়ারি বিকালে নাছিরের দোকানে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে সানাউল্লাহর সঙ্গে নাছিরের সঙ্গে বাগ্বিত-া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সানাউল্লাহ। এর জেরে ওইদিন রাতে সানাউল্লাহ মোয়াজ্জেমকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিশোধ নিতে নাছিরের দোকানে আসে। সুযোগ বুঝে দোকানের লাইট নিভিয়ে দা দিয়ে নাছিরকে কয়েকটি কোপ দেয় সানাউল্লাহ। নাছির জীবন বাঁচাতে দৌড়ে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে সড়কেই পড়ে নিহত হয়। পরে শত শত গাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন হয় তার দেহ। নাছিরের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রক্তমাখা দা ধুয়ে দোকানে রেখে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য তারা এলাকা ছাড়েনি।