অবৈধ বিদ্যুৎ বাণিজ্যের ৮ হোতা
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম | ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কলোনি ও বাজার। এখানকার ঝুপড়িঘর ও দোকানের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ অবৈধ। অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করছেন ৮ কর্মচারী। তারা প্রত্যেক মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে অভিযুক্তদের দাবি, অবৈধ সংযোগ দেওয়ার সুযোগ তাদের নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব নিয়ন্ত্রণ করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও প্রত্যেক মাসে বিল নেওয়ার কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী কামাল হোসেন, মোজাম্মেল হোসেন রাজ, মান্নান, আবুল খায়ের, আব্দুস ছাত্তার, মতুর্জা আলী, রাব্বু ও হাবিব। তারা সংযোগ দেওয়ার সময় এককালীন অর্থ নেন। পরে প্রত্যেক মাসে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল আদায় করেন। পাহাড়তলী পাঞ্জাবি লেন, মাস্টার লেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের নিচের ঝুপড়ি, মাস্টার লেনের দোকান, পাহাড়তলী হাসপাতাল কলোনি ও টাইগারপাস মাজার কলোনির ওয়াটার ওয়াক্সের ঝুপড়ির বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করেন হাবিব। সেগুনবাগান ৩৩ নং সাব-স্টেশনের সামনে সেমিপাকা বাড়ি করে অবৈধ সংযোগ দেন মিস্ত্রি মতুর্জা। পরে তিনি বাড়িটি বিক্রি করে দেন। তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে ভাই মোস্তফা আরএনবি ট্রেনিং সেন্টার ও পার্টির ট্যাংকের পাশে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়তলী বাজার, লোকো কলোনি, স্টেশন কলোনি, শহীদ লেনসহ কয়েকটি কলোনি নিয়ন্ত্রণ করেন সাত্তার, কামাল ও মান্নান। বিজিএমইএ ভবনের রেল কোয়ার্টারের নিচের প্রায় ৫০০ ঝুপড়িঘরের বিল তোলেন মোজাম্মেল হোসেন রাজ। এক্সিএন কলোনির অবৈধ সংযোগের টাকা নেন রাব্বু। এলসিডব্লিউম্যান হাবিবুর রহমান টাইগারপাস, ওয়াটার ওয়ার্কস ও আমবাগান কলোনির ঝুপড়িঘরে সংযোগ দিয়ে বিল নিচ্ছেন। কালীবাড়ি বস্তিতে প্রায় ১০০ অবৈধ সংযোগ দেন সাত্তার ও আবুল খায়ের। এখান থেকে নিয়মিত বিল তোলেন সবুজ। একইভাবে সাত্তার ও খায়ের মাস্টার লেনের একটি রিকশা গ্যারেজ থেকে মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা আদায় করেন। পুলিশ লাইনের পেছনে স্ক্যাপ ডিপোর পাশে মাস্টার লেনে বাহারের ঘরেও অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু এসব কর্মচারীর আয়ের ভাগ পান টাইগারপাস সাব-স্টেশনের ইনচার্জ ও পাহাড়তলী বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র উপ-প্রকৌশলী (এসএসএই) বিটু চাকমা। তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিটু চাকমা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অবৈধ সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নই। এখানকার কারা এসব করে তাও জানি না। যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে তারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যবহার করেন। এজন্য আমরা অভিযান চালিয়েও লাইন বিচ্ছিন্ন করতে পারি না। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলে এসব সংযোগ বন্ধ করা সম্ভব হবে।’ অভিযুক্ত রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের মিস্ত্রি মতুর্জা আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি কারও ঘরে অবৈধ সংযোগ দেই না। যারা দেন তাদের ধরেন। সেগুনবাগানে আমার কোনো বাড়ি নেই। এলাকার পোলাপান এসব করে, তারাই টাকা তোলে। আমি সরকারের হুকুমের গোলাম। কেউ আমার নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করলে তার দায় আমার নয়।’
এসব বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বিদ্যুৎ প্রকৌশলী (ডিইই) সাকের আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রেলওয়ের স্থাপনায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আমার দেখার বিষয় নয়। আমার বিভাগের অধীনে রেলওয়ের বাসাবাড়ি, অফিস, মার্শাল ইয়ার্ড, পাম্প ও স্টেশনে বিদ্যুৎ
বিভাগ থেকে মোট ৫ হাজার ৮৮৩টি বৈধ সংযোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব বৈধ লাইন থেকে অবৈধভাবে বিভিন্ন সময় সংযোগ দেওয়া হয়। এসবের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। গত অক্টোবর থেকে ৩ মাসে ১ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি।’
শেয়ার করুন
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম | ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কলোনি ও বাজার। এখানকার ঝুপড়িঘর ও দোকানের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ অবৈধ। অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করছেন ৮ কর্মচারী। তারা প্রত্যেক মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে অভিযুক্তদের দাবি, অবৈধ সংযোগ দেওয়ার সুযোগ তাদের নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব নিয়ন্ত্রণ করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও প্রত্যেক মাসে বিল নেওয়ার কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী কামাল হোসেন, মোজাম্মেল হোসেন রাজ, মান্নান, আবুল খায়ের, আব্দুস ছাত্তার, মতুর্জা আলী, রাব্বু ও হাবিব। তারা সংযোগ দেওয়ার সময় এককালীন অর্থ নেন। পরে প্রত্যেক মাসে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল আদায় করেন। পাহাড়তলী পাঞ্জাবি লেন, মাস্টার লেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের নিচের ঝুপড়ি, মাস্টার লেনের দোকান, পাহাড়তলী হাসপাতাল কলোনি ও টাইগারপাস মাজার কলোনির ওয়াটার ওয়াক্সের ঝুপড়ির বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করেন হাবিব। সেগুনবাগান ৩৩ নং সাব-স্টেশনের সামনে সেমিপাকা বাড়ি করে অবৈধ সংযোগ দেন মিস্ত্রি মতুর্জা। পরে তিনি বাড়িটি বিক্রি করে দেন। তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে ভাই মোস্তফা আরএনবি ট্রেনিং সেন্টার ও পার্টির ট্যাংকের পাশে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়তলী বাজার, লোকো কলোনি, স্টেশন কলোনি, শহীদ লেনসহ কয়েকটি কলোনি নিয়ন্ত্রণ করেন সাত্তার, কামাল ও মান্নান। বিজিএমইএ ভবনের রেল কোয়ার্টারের নিচের প্রায় ৫০০ ঝুপড়িঘরের বিল তোলেন মোজাম্মেল হোসেন রাজ। এক্সিএন কলোনির অবৈধ সংযোগের টাকা নেন রাব্বু। এলসিডব্লিউম্যান হাবিবুর রহমান টাইগারপাস, ওয়াটার ওয়ার্কস ও আমবাগান কলোনির ঝুপড়িঘরে সংযোগ দিয়ে বিল নিচ্ছেন। কালীবাড়ি বস্তিতে প্রায় ১০০ অবৈধ সংযোগ দেন সাত্তার ও আবুল খায়ের। এখান থেকে নিয়মিত বিল তোলেন সবুজ। একইভাবে সাত্তার ও খায়ের মাস্টার লেনের একটি রিকশা গ্যারেজ থেকে মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা আদায় করেন। পুলিশ লাইনের পেছনে স্ক্যাপ ডিপোর পাশে মাস্টার লেনে বাহারের ঘরেও অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু এসব কর্মচারীর আয়ের ভাগ পান টাইগারপাস সাব-স্টেশনের ইনচার্জ ও পাহাড়তলী বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র উপ-প্রকৌশলী (এসএসএই) বিটু চাকমা। তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিটু চাকমা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অবৈধ সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নই। এখানকার কারা এসব করে তাও জানি না। যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে তারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যবহার করেন। এজন্য আমরা অভিযান চালিয়েও লাইন বিচ্ছিন্ন করতে পারি না। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলে এসব সংযোগ বন্ধ করা সম্ভব হবে।’ অভিযুক্ত রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের মিস্ত্রি মতুর্জা আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি কারও ঘরে অবৈধ সংযোগ দেই না। যারা দেন তাদের ধরেন। সেগুনবাগানে আমার কোনো বাড়ি নেই। এলাকার পোলাপান এসব করে, তারাই টাকা তোলে। আমি সরকারের হুকুমের গোলাম। কেউ আমার নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করলে তার দায় আমার নয়।’
এসব বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বিদ্যুৎ প্রকৌশলী (ডিইই) সাকের আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রেলওয়ের স্থাপনায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আমার দেখার বিষয় নয়। আমার বিভাগের অধীনে রেলওয়ের বাসাবাড়ি, অফিস, মার্শাল ইয়ার্ড, পাম্প ও স্টেশনে বিদ্যুৎ
বিভাগ থেকে মোট ৫ হাজার ৮৮৩টি বৈধ সংযোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব বৈধ লাইন থেকে অবৈধভাবে বিভিন্ন সময় সংযোগ দেওয়া হয়। এসবের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। গত অক্টোবর থেকে ৩ মাসে ১ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি।’