তোয়াক্কা নেই অবৈধ ভাটাগুলোর
রূপান্তর ডেস্ক | ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
বর্তমানে বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ঢাকার অবস্থান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর রায়ুদূষণ রোধে একগুচ্ছ নির্দেশনার পাশাপাশি ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এলাকার অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে গত ১৩ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্ট পরিবেশ ও বায়ুদূষণ রোধে এসব এলাকার অবৈধ ভাটাগুলো ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তর উল্লিখিত এলাকার অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধে অভিযান শুরু করে। অনুমোদন না থাকায় অনেক ইটভাটা ভেঙে দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে অনেকের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ তোয়াক্কা না করে ভেঙে দেওয়া অংশ মেরামত করে পুনরায় ভাটার কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, যেসব ইটভাটা জরিমানা করে ভেঙে দেওয়া হয় পরবর্তী সময়ে সেগুলো খোলা পাওয়া গেলে ফের জরিমানা এমনকি জেলও দেওয়া হবে।
সাভারে অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি অবৈধ ইটভাটা : আদালতের নির্দেশের পরও সাভারের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও নদীর কাছে স্থাপিত অবৈধ ইটভাটাগুলোয় নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। গত ডিসেম্বরে নামাগেন্ডা, আমিনবাজার, ভাকুর্তা ও আশুলিয়ার তুরাগ এলাকায় অনুমোদন না থাকায় পৃথক অভিযানে ১৭টি ইটভাটাকে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ভাটাগুলোর আংশিক ভেঙে দিয়ে সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু ওইসব ভাটার মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে ভাঙা অংশ মেরামত করে ফের ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাভারে ২০১৮ সালে অনুমোদন নেওয়া ইটভাটা ছিল ৩৯টি ও অননুমোদিত ১১৫টি। আর আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলে ২০১৯ সালে ৭০টি ইটভাটার মধ্যে ৬৯টির লাইসেন্স ছিল না।
সম্প্রতি সাভার পৌর এলাকার নামাগেন্ডা মহল্লার তিশা ব্রিকসে গিয়ে দেখা যায় গত ৫ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভেঙে দেওয়া অংশটুকু মেরামত করে পুনরায় ভাটার কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটা ব্যবস্থাপক মো. হান্নান বলেন, ‘অভিযানের সময় আমাদের পরিবেশের অনুমোদন না থাকায় ভাটাটি
আংশিক ভেঙে দিয়ে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরবর্তী সময়ে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে পুনরায় নতুন করে ইট পোড়ানোর কাজ করছি।’ তবে অনুমোদন ছাড়া কীভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছেÑ তা জানতে চাইলে তিনি মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
একই এলাকায় একটু সামনে এগোলে চোখে পড়ে কর্ণফুলী সুপার ব্রিকস নামে আরও একটি ইটভাটা। সাভারের ব্যবসায়ী হাজী মো. অলি আহমেদ খানের মালিকানাধীন এ ভাটাটিও ৫ ডিসেম্বরের অভিযানে আংশিক ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে তার আরও একটি অবৈধ ভাটা থাকলেও সেখানে অভিযান চালায়নি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটার ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান বলেন, ‘মালিকপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরা পেটের তাগিদে এখানে কাজ করছি।’
একই পরিস্থিতি দেখা যায়, এমএমএস ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকস, চাঁনমিয়া ব্রিকসসহ কয়েকটি ইটভাটায়। তবে এখনো অনেক অবৈধ ভাটায় অভিযান হয়নি। আর অভিযানের সময় অসাধু একটি চক্র পরিবেশ অধিদপ্তরের নামে বেশ কিছু ভাটা থেকে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে ভেঙে ফেলা ভাটায় কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইং) রুবিনা ফেরদৌসী বলেন, যেসব ইটভাটা ভাঙা ও জরিমানা করা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে সেগুলো চালু পাওয়া গেলে সর্বনি¤œ ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও জেল দেওয়া হবে। টাকা নিয়ে অবৈধ ভাটার কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ইটভাটার মালিক সমিতি ও একশ্রেণির দালাল চক্র পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম করে টাকা উঠিয়ে থাকে বলে আমরাও জানতে পেরেছি। তবে আমরা কোনো টাকাপয়সা নেইনি, নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সব অবৈধ ভাটা পর্যায়ক্রমে ভেঙে দেব।
গাজীপুরে ২২৬টি ইটভাটা বন্ধ : উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গাজীপুর নগরীসহ আশপাশের এলাকার অবৈধ ইটভাটাগুলো ভেঙেছে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মধ্যে অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ১৭৪টি। এর সবই সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর সদর উপজেলাসহ ৫টি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে আরও ৫২টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এগুলোর কোনোটির পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছিল না।
গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, এই জেলায় ৩৬২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে রয়েছে ১৭৪টি। এর বাইরে রয়েছে ১৮৮টি। পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত গত ২ ডিসেম্বর থেকে অবৈধ ইটভাটাবিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু করে, যা অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। অভিযানে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ২২৬টি ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে কিছু ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশন এলাকার অবৈধ ১৭৪টি ভাটার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জে অভিযানে বন্ধ ভাটা পরে সচল : জেলায় মোট ভাটা রয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে সিরাজদিখান উপজেলায় রয়েছে ৬৯টি, গজারিয়ায় ৫টি, শ্রীনগরে ২টি ও লৌহজংয়ে ২টি। হাইকোর্টের নির্দেশের পর গত ডিসেম্বরে সিরাজদিখানের ৯টি ভাটায় অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে গত ৯ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে ওই উপজেলার লতব্দী, মোল্লাকান্দি ও উত্তর গুয়াখালী এলাকার মায়ের দোয়া ব্রিক, মামা-ভাগিনা ব্রিক, আকাশ ব্রিক, মোল্লা ব্রিক, খোশাল মাদবর ব্রিক ও প্রাইম ব্রিককে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ২৩ ডিসেম্বর একই উপজেলার মেসার্স নীলা ব্রিক, মেসার্স আল্লাহ এন্টারপ্রাইজ ও পপুলার এন্টারপ্রাইজ নামে আরও ৩টি ভাটায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে এসব ভাটার সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে এরপরও অনেক অবৈধ ভাটা সচল হয়েছে।
মানিকগঞ্জে অবৈধ ভাটা চলছেই : গত ১৪ ডিসেম্বর জেলার ২৭টি অবৈধ ভাটার মধ্যে ১৩টি গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আধালত। তবে এর কয়েক দিনের মধ্যেই এসব ভাটা ফের ইট পোড়ানো শুরু করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খালেদ হাসান বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অবৈধ ভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। মানিকগঞ্জে ১৪৯টি ইটভাটার মধ্যে ২৭টি অবৈধ। এরই মধ্যে ১৩টির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। আর কয়েকটি ভাটার মালিকরা আদালতে আপিল করাতে উচ্ছেদ করতে পারিনি। তবে উচ্ছেদকৃত ভাটাগুলো ফের সচল করার খবর আমিও শুনেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জে অবৈধ ৩টি ভাটাকে জরিমানা : নারায়ণগঞ্জে অবৈধ তিনটি ভাটাকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে ২টি ভাটা ভেঙে দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা এনফোর্সমেন্ট বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাকছুদুল ইসলামের নেতৃত্বে গত বুধবার উপজেলার দাসেরগাঁও ও লক্ষ্মণখোলায় এ অভিযান চালানো হয়। র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার বাহিনী ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযানে সহায়তা করে। অর্থদণ্ডপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ দাসেরগাঁও এলাকার মা-বাবা ব্রিক ফিল্ড, একই এলাকার ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড ও লক্ষ্মণখোলা এলাকার হোম ব্রিকস।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন দেশ রূপান্তরের সাভার, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

বর্তমানে বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ঢাকার অবস্থান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর রায়ুদূষণ রোধে একগুচ্ছ নির্দেশনার পাশাপাশি ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এলাকার অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে গত ১৩ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্ট পরিবেশ ও বায়ুদূষণ রোধে এসব এলাকার অবৈধ ভাটাগুলো ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তর উল্লিখিত এলাকার অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধে অভিযান শুরু করে। অনুমোদন না থাকায় অনেক ইটভাটা ভেঙে দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে অনেকের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ তোয়াক্কা না করে ভেঙে দেওয়া অংশ মেরামত করে পুনরায় ভাটার কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, যেসব ইটভাটা জরিমানা করে ভেঙে দেওয়া হয় পরবর্তী সময়ে সেগুলো খোলা পাওয়া গেলে ফের জরিমানা এমনকি জেলও দেওয়া হবে।
সাভারে অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি অবৈধ ইটভাটা : আদালতের নির্দেশের পরও সাভারের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও নদীর কাছে স্থাপিত অবৈধ ইটভাটাগুলোয় নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। গত ডিসেম্বরে নামাগেন্ডা, আমিনবাজার, ভাকুর্তা ও আশুলিয়ার তুরাগ এলাকায় অনুমোদন না থাকায় পৃথক অভিযানে ১৭টি ইটভাটাকে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ভাটাগুলোর আংশিক ভেঙে দিয়ে সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু ওইসব ভাটার মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে ভাঙা অংশ মেরামত করে ফের ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাভারে ২০১৮ সালে অনুমোদন নেওয়া ইটভাটা ছিল ৩৯টি ও অননুমোদিত ১১৫টি। আর আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলে ২০১৯ সালে ৭০টি ইটভাটার মধ্যে ৬৯টির লাইসেন্স ছিল না।
সম্প্রতি সাভার পৌর এলাকার নামাগেন্ডা মহল্লার তিশা ব্রিকসে গিয়ে দেখা যায় গত ৫ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভেঙে দেওয়া অংশটুকু মেরামত করে পুনরায় ভাটার কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটা ব্যবস্থাপক মো. হান্নান বলেন, ‘অভিযানের সময় আমাদের পরিবেশের অনুমোদন না থাকায় ভাটাটি
আংশিক ভেঙে দিয়ে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরবর্তী সময়ে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে পুনরায় নতুন করে ইট পোড়ানোর কাজ করছি।’ তবে অনুমোদন ছাড়া কীভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছেÑ তা জানতে চাইলে তিনি মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
একই এলাকায় একটু সামনে এগোলে চোখে পড়ে কর্ণফুলী সুপার ব্রিকস নামে আরও একটি ইটভাটা। সাভারের ব্যবসায়ী হাজী মো. অলি আহমেদ খানের মালিকানাধীন এ ভাটাটিও ৫ ডিসেম্বরের অভিযানে আংশিক ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে তার আরও একটি অবৈধ ভাটা থাকলেও সেখানে অভিযান চালায়নি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটার ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান বলেন, ‘মালিকপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরা পেটের তাগিদে এখানে কাজ করছি।’
একই পরিস্থিতি দেখা যায়, এমএমএস ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকস, চাঁনমিয়া ব্রিকসসহ কয়েকটি ইটভাটায়। তবে এখনো অনেক অবৈধ ভাটায় অভিযান হয়নি। আর অভিযানের সময় অসাধু একটি চক্র পরিবেশ অধিদপ্তরের নামে বেশ কিছু ভাটা থেকে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে ভেঙে ফেলা ভাটায় কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইং) রুবিনা ফেরদৌসী বলেন, যেসব ইটভাটা ভাঙা ও জরিমানা করা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে সেগুলো চালু পাওয়া গেলে সর্বনি¤œ ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও জেল দেওয়া হবে। টাকা নিয়ে অবৈধ ভাটার কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ইটভাটার মালিক সমিতি ও একশ্রেণির দালাল চক্র পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম করে টাকা উঠিয়ে থাকে বলে আমরাও জানতে পেরেছি। তবে আমরা কোনো টাকাপয়সা নেইনি, নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সব অবৈধ ভাটা পর্যায়ক্রমে ভেঙে দেব।
গাজীপুরে ২২৬টি ইটভাটা বন্ধ : উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গাজীপুর নগরীসহ আশপাশের এলাকার অবৈধ ইটভাটাগুলো ভেঙেছে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মধ্যে অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ১৭৪টি। এর সবই সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর সদর উপজেলাসহ ৫টি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে আরও ৫২টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এগুলোর কোনোটির পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছিল না।
গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, এই জেলায় ৩৬২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে রয়েছে ১৭৪টি। এর বাইরে রয়েছে ১৮৮টি। পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত গত ২ ডিসেম্বর থেকে অবৈধ ইটভাটাবিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু করে, যা অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। অভিযানে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ২২৬টি ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে কিছু ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশন এলাকার অবৈধ ১৭৪টি ভাটার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জে অভিযানে বন্ধ ভাটা পরে সচল : জেলায় মোট ভাটা রয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে সিরাজদিখান উপজেলায় রয়েছে ৬৯টি, গজারিয়ায় ৫টি, শ্রীনগরে ২টি ও লৌহজংয়ে ২টি। হাইকোর্টের নির্দেশের পর গত ডিসেম্বরে সিরাজদিখানের ৯টি ভাটায় অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে গত ৯ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে ওই উপজেলার লতব্দী, মোল্লাকান্দি ও উত্তর গুয়াখালী এলাকার মায়ের দোয়া ব্রিক, মামা-ভাগিনা ব্রিক, আকাশ ব্রিক, মোল্লা ব্রিক, খোশাল মাদবর ব্রিক ও প্রাইম ব্রিককে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ২৩ ডিসেম্বর একই উপজেলার মেসার্স নীলা ব্রিক, মেসার্স আল্লাহ এন্টারপ্রাইজ ও পপুলার এন্টারপ্রাইজ নামে আরও ৩টি ভাটায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে এসব ভাটার সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে এরপরও অনেক অবৈধ ভাটা সচল হয়েছে।
মানিকগঞ্জে অবৈধ ভাটা চলছেই : গত ১৪ ডিসেম্বর জেলার ২৭টি অবৈধ ভাটার মধ্যে ১৩টি গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আধালত। তবে এর কয়েক দিনের মধ্যেই এসব ভাটা ফের ইট পোড়ানো শুরু করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খালেদ হাসান বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অবৈধ ভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। মানিকগঞ্জে ১৪৯টি ইটভাটার মধ্যে ২৭টি অবৈধ। এরই মধ্যে ১৩টির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। আর কয়েকটি ভাটার মালিকরা আদালতে আপিল করাতে উচ্ছেদ করতে পারিনি। তবে উচ্ছেদকৃত ভাটাগুলো ফের সচল করার খবর আমিও শুনেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জে অবৈধ ৩টি ভাটাকে জরিমানা : নারায়ণগঞ্জে অবৈধ তিনটি ভাটাকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে ২টি ভাটা ভেঙে দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা এনফোর্সমেন্ট বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাকছুদুল ইসলামের নেতৃত্বে গত বুধবার উপজেলার দাসেরগাঁও ও লক্ষ্মণখোলায় এ অভিযান চালানো হয়। র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার বাহিনী ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযানে সহায়তা করে। অর্থদণ্ডপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ দাসেরগাঁও এলাকার মা-বাবা ব্রিক ফিল্ড, একই এলাকার ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড ও লক্ষ্মণখোলা এলাকার হোম ব্রিকস।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন দেশ রূপান্তরের সাভার, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি