নরসিংদীতে শিশু ধর্ষণ
ধামাচাপা দিতে নোটারিতে ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ দেখিয়ে বিয়ে
নরসিংদী প্রতিনিধি | ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
নরসিংদীতে ধর্ষণের পর মীমাংসার নামে নির্যাতিত শিশু ও অভিযুক্ত কিশোরকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে ওই দুজনের বিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে আইনি সহায়তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার মা।
শিশুটির মায়ের ভাষ্য, গত শুক্রবার রাতে তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে এক কিশোর। এ ঘটনায় তারা মামলা করার উদ্যোগ নিলে মীমাংসার কথা বলে তাদের থামিয়ে দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া। পরে কৌশলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ওই কিশোরের বিয়ের ঘোষণা দেন তিনি।
ধর্ষণের শিকার ওই শিশু উপজেলার জিনারদি ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সে। অভিযুক্ত মনিরুজ্জামান ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। আর ওই কিশোর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের আবদুল বাছেদের ছেলে।
জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ির পাশে একটি ওরস শরিফের অনুষ্ঠানে যায় ওই শিশু। অনুষ্ঠানের ফাঁকে সে একটি দোকানে গেলে সেখানে থাকা ওই কিশোর আরও দুজনের সহায়তায় শিশুটিকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর সারা রাত খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন শনিবার সকালে অভিযুক্ত কিশোরের বাড়ি থেকে শিশুটিকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তখন ভুক্তভোগী শিশুটি তার স্বজনদের জানায় অভিযুক্ত ওই কিশোর তাকে আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় শিশুটির স্বজনরা মামলা করার উদ্যোগ নিলে মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে আরও দুজন ঘটনাটির মীমাংসার উদ্যোগ নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ওই কিশোরের সঙ্গে শিশুটির বিবাহের ঘোষণা দেন নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মোমেন। সেখানে ভুক্তভোগী শিশু ও অভিযুক্ত কিশোর দুজনের প্রকৃত বয়সই গোপন করা হয়েছে। তাছাড়া রবিবার বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হলেও নোটারিতে তা ধর্ষণের আগের দিন বৃহস্পতিবার দেখানো হয়েছে।
শিশুটির মা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী একজন রিকশাচালক। আমরা গরিব ও অসহায়। ওই কিশোরের পরিবার বিত্তশালী। তাই পয়সার জোরে মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের সম্পূর্ণ অমতে উকিলের মাধ্যমে নোটারি পাবলিক করেছে। আমার মেয়ের বয়স প্রকৃতপক্ষে ১২ বছর। কিন্তু নোটারিতে তার বয়স গোপন করে প্রাপ্ত বয়স ১৮ দেখানো হয়েছে। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এদিকে নিজের বিরুদ্ধে আনীত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ঘটনাটি শুনেছি তখন চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। পাশাপাশি তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলেছি। নোটারি পাবলিক হয়েছে কি না আমি কিছুই জানি না। আমি সবসময় নোটারি পাবলিকের বিরুদ্ধাচরণ করি। কারণ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে অনেক তথ্য গোপন করা হয়।’
নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার আতাউর রহমান বলেন, ‘বয়সের প্রমাণপত্র না থাকলে নোটারি পাবলিক বিবাহের ঘোষণা দিতে পারে না। যদি দিয়ে থাকে তাহলে তা আইনসিদ্ধ হয়নি।’
পলাশ থানার ওসি শেখ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনায় ছাত্রীটির মা একটি অভিযোগ করেছেন। আমরা মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাতে অভিযুক্তের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি। ছেলেটি পলাতক রয়েছে।’
শেয়ার করুন
নরসিংদী প্রতিনিধি | ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

নরসিংদীতে ধর্ষণের পর মীমাংসার নামে নির্যাতিত শিশু ও অভিযুক্ত কিশোরকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে ওই দুজনের বিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে আইনি সহায়তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার মা।
শিশুটির মায়ের ভাষ্য, গত শুক্রবার রাতে তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে এক কিশোর। এ ঘটনায় তারা মামলা করার উদ্যোগ নিলে মীমাংসার কথা বলে তাদের থামিয়ে দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া। পরে কৌশলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ওই কিশোরের বিয়ের ঘোষণা দেন তিনি।
ধর্ষণের শিকার ওই শিশু উপজেলার জিনারদি ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সে। অভিযুক্ত মনিরুজ্জামান ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। আর ওই কিশোর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের আবদুল বাছেদের ছেলে।
জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ির পাশে একটি ওরস শরিফের অনুষ্ঠানে যায় ওই শিশু। অনুষ্ঠানের ফাঁকে সে একটি দোকানে গেলে সেখানে থাকা ওই কিশোর আরও দুজনের সহায়তায় শিশুটিকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর সারা রাত খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন শনিবার সকালে অভিযুক্ত কিশোরের বাড়ি থেকে শিশুটিকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তখন ভুক্তভোগী শিশুটি তার স্বজনদের জানায় অভিযুক্ত ওই কিশোর তাকে আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় শিশুটির স্বজনরা মামলা করার উদ্যোগ নিলে মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে আরও দুজন ঘটনাটির মীমাংসার উদ্যোগ নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ওই কিশোরের সঙ্গে শিশুটির বিবাহের ঘোষণা দেন নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মোমেন। সেখানে ভুক্তভোগী শিশু ও অভিযুক্ত কিশোর দুজনের প্রকৃত বয়সই গোপন করা হয়েছে। তাছাড়া রবিবার বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হলেও নোটারিতে তা ধর্ষণের আগের দিন বৃহস্পতিবার দেখানো হয়েছে।
শিশুটির মা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী একজন রিকশাচালক। আমরা গরিব ও অসহায়। ওই কিশোরের পরিবার বিত্তশালী। তাই পয়সার জোরে মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের সম্পূর্ণ অমতে উকিলের মাধ্যমে নোটারি পাবলিক করেছে। আমার মেয়ের বয়স প্রকৃতপক্ষে ১২ বছর। কিন্তু নোটারিতে তার বয়স গোপন করে প্রাপ্ত বয়স ১৮ দেখানো হয়েছে। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এদিকে নিজের বিরুদ্ধে আনীত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ঘটনাটি শুনেছি তখন চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। পাশাপাশি তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলেছি। নোটারি পাবলিক হয়েছে কি না আমি কিছুই জানি না। আমি সবসময় নোটারি পাবলিকের বিরুদ্ধাচরণ করি। কারণ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে অনেক তথ্য গোপন করা হয়।’
নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার আতাউর রহমান বলেন, ‘বয়সের প্রমাণপত্র না থাকলে নোটারি পাবলিক বিবাহের ঘোষণা দিতে পারে না। যদি দিয়ে থাকে তাহলে তা আইনসিদ্ধ হয়নি।’
পলাশ থানার ওসি শেখ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনায় ছাত্রীটির মা একটি অভিযোগ করেছেন। আমরা মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাতে অভিযুক্তের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি। ছেলেটি পলাতক রয়েছে।’