করোনাঝুঁকিতে ঢাকার ৮ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
ঢাকায় বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহে কাজ করে প্রায় ৮ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এ কাজ করতে গিয়ে সারা বছরই তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। এবার যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি। দেশে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষায় এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন। ফলে বিশাল আয়তনের এই শহরের বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা এ বিশাল কর্মীদের সংস্পর্শে করোনাভাইরাস আরও বেশি ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে আমাদের প্রায় ৫ হাজারের বেশি লোক নিয়োজিত রয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে তাদের সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো পোশাক দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করা হবে। তবে সব সময় তাদের একটি অ্যাপ্রোন দেওয়া হয়ে থাকে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসি এলাকায় নিয়মিত প্রায় ৩ হাজার লোক পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত। বাসাবাড়ি ছাড়াও এ কর্মীরা মিনি ওয়েস্ট ট্রান্সফারস্টেশন থেকে ময়লা ট্রাকে ওঠানামার কাজ করে থাকে। তাদের জন্য নেই কোনো সুরক্ষা পোশাক। ফলে ঝুঁকি নিয়ে তারা দিনরাত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করছে। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম ঘটে এমন স্থানে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোথাও যেন ময়লা-আবর্জনা জমে না থাকে সেজন্য নিয়মিত তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এখনো বিশেষ কোনো সুরক্ষা পোশাক দেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি।’
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসিতে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। তারা ডিএসসিসির সব ওয়ার্ডে ভাগ হয়ে কাজ করছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত রাস্তাঘাট পরিষ্কারের পাশাপাশি বাসাবাড়ি থেকেও ময়লা সংগ্রহের কাজ করে থাকে। এছাড়া আরও বেশ কিছু পরিচ্ছন্নতাকর্মী দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করছে। ঢাকার এ অংশে কাজ করা কর্মীদের এখনো পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সুরক্ষা পোশাক দেওয়া হয়নি।
গতকাল সকালে আজিমপুর এলাকায় ময়লা বহন করা ভ্যানচালক মুসলেম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবারের তিনজন এ কাজ (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) করে থাকি। এখনো পর্যন্ত কোনো পোশাক পাইনি। শুধু ডিএসসিসি থেকে অনেক আগে দেওয়া একটি হাতকাটা জ্যাকেট রয়েছে। যেখানে ডিএসসিসির নাম রয়েছে। তিনি বলেন, শুনেছি করোনাভাইরাস হলে মানুষ আর বেঁচে থাকে না। এখন আমরা তো দৈনিক কাজ করে টাকা নিয়ে সংসার চালাই। পোশাক না দিলেও তো কাজে আসতে হবে। তা না হলে সংসার চলবে না।
ডিএসসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা ময়লা সংগ্রহের কাজ করছে তাদের জন্য সুরক্ষা ড্রেস দরকার। তা না হলে তাদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই সাময়িকভাবে হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষা ড্রেস দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যে সুরক্ষা ড্রেসও দিতে পারব।’
শেয়ার করুন
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

ঢাকায় বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহে কাজ করে প্রায় ৮ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এ কাজ করতে গিয়ে সারা বছরই তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। এবার যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি। দেশে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষায় এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন। ফলে বিশাল আয়তনের এই শহরের বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা এ বিশাল কর্মীদের সংস্পর্শে করোনাভাইরাস আরও বেশি ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে আমাদের প্রায় ৫ হাজারের বেশি লোক নিয়োজিত রয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে তাদের সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো পোশাক দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করা হবে। তবে সব সময় তাদের একটি অ্যাপ্রোন দেওয়া হয়ে থাকে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসি এলাকায় নিয়মিত প্রায় ৩ হাজার লোক পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত। বাসাবাড়ি ছাড়াও এ কর্মীরা মিনি ওয়েস্ট ট্রান্সফারস্টেশন থেকে ময়লা ট্রাকে ওঠানামার কাজ করে থাকে। তাদের জন্য নেই কোনো সুরক্ষা পোশাক। ফলে ঝুঁকি নিয়ে তারা দিনরাত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করছে। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম ঘটে এমন স্থানে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোথাও যেন ময়লা-আবর্জনা জমে না থাকে সেজন্য নিয়মিত তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এখনো বিশেষ কোনো সুরক্ষা পোশাক দেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি।’
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসিতে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। তারা ডিএসসিসির সব ওয়ার্ডে ভাগ হয়ে কাজ করছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত রাস্তাঘাট পরিষ্কারের পাশাপাশি বাসাবাড়ি থেকেও ময়লা সংগ্রহের কাজ করে থাকে। এছাড়া আরও বেশ কিছু পরিচ্ছন্নতাকর্মী দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করছে। ঢাকার এ অংশে কাজ করা কর্মীদের এখনো পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সুরক্ষা পোশাক দেওয়া হয়নি।
গতকাল সকালে আজিমপুর এলাকায় ময়লা বহন করা ভ্যানচালক মুসলেম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবারের তিনজন এ কাজ (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) করে থাকি। এখনো পর্যন্ত কোনো পোশাক পাইনি। শুধু ডিএসসিসি থেকে অনেক আগে দেওয়া একটি হাতকাটা জ্যাকেট রয়েছে। যেখানে ডিএসসিসির নাম রয়েছে। তিনি বলেন, শুনেছি করোনাভাইরাস হলে মানুষ আর বেঁচে থাকে না। এখন আমরা তো দৈনিক কাজ করে টাকা নিয়ে সংসার চালাই। পোশাক না দিলেও তো কাজে আসতে হবে। তা না হলে সংসার চলবে না।
ডিএসসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা ময়লা সংগ্রহের কাজ করছে তাদের জন্য সুরক্ষা ড্রেস দরকার। তা না হলে তাদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই সাময়িকভাবে হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষা ড্রেস দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যে সুরক্ষা ড্রেসও দিতে পারব।’