মিলছে না ওএমএসের চাল
আরিফুর রহমান তুহিন | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
করোনা-সংকটে বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চালের দাম। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এক কেজি মোটা চাল কিনতেও ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা। কিন্তু এই সংকটকালেও মিলছে না খাদ্য অধিদপ্তরের খোলাবাজারের চাল (ওএমএস)। ভোক্তাদের অনেকে বলছেন, এমন দুর্দিনেও যদি চাল না পাওয়া যায় তাহলে ওএমএসের দরকার কী? আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওএমএসের জন্য চাল বরাদ্দ রয়েছে। চাল বিক্রি হচ্ছে না অজুহাত দিয়ে ডিলাররা চাল নিচ্ছেন না। এদিকে বাজারে চাল-ডালসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম আগের মতো আছে। কমেছে সবজি, ডিম ও পেঁয়াজের দাম। গতকাল দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা আগে দিন ছিল ৭০-৭৫ টাকা। ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০ টাকা। রাজধানীর তেজগাঁও বস্তির বাসিন্দা ঝালমুড়ি বিক্রেতা হোসেন আলী। গতকাল তিনি বলেন, করোনার কারণে বেচাবিক্রি বন্ধ। আয় নেই। এ অবস্থার মধ্যে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। আগে ওএমএসের ট্রাক থেকে চাল কিনতাম। এখন সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। দুই বেলা ভাত খাওয়া কষ্টকর হয়ে গেছে।
ওএমএসের চাল মিলছে না কেন জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে যেসব ট্রাকে চাল বিক্রি হতো সেগুলোতে পুলিশের হয়রানিসহ বিভিন্ন সমস্যা ছিল। এ জন্য ১০৭টি দোকানের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রির কার্যক্রম চলে আসছে। এ ছাড়া ১৩টি ট্রাকসেল আছে। তবে বিক্রেতাদের অভিযোগ, তাদের চাল কেউ কিনছে না, তাই তারা বিক্রি করছে না। আর এত দিন ওএমএসের চালের দাম ও বাজারে মোটা চালের দাম প্রায় সমান ছিল। হঠাৎ দু-তিন দিন আগে দাম বেড়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে ওরা রিকভারি করতে পারেনি। আর আমাকেও কেউ জানায়নি। তবে এখন আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে সব ডিলার যাতে চাল বিক্রি করে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বাড়তি দামে চাল বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে দাম খুব একটা বেশি ছিল না। বিশেষ করে মিনিকেট ও মোটা চালের। কিন্তু লোকজন দুই দিনে ব্যাপক চাল কিনে শেষ করে ফেলে। এখন সরকার কি দাম নিয়ন্ত্রণ করবে, নাকি বাজারে চাল সরবরাহ করবে? আমরা ব্যবসায়ী ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনা করে আগে চালের সরবরাহ বাড়াই। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও র্যাব দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আশা করছি, দ্রুতই দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’ ‘যারা বস্তায় বস্তায় চাল কিনেছিল তারাই আবার সব রেখে বাড়িতে চলে গেছেন’ বলে যোগ করেন তিনি।
নির্দেশনা থাকার পরেও কেন চাল বিক্রি হচ্ছে না এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘সরকার লোক সমাগম করতে নিষেধ করেছে। এখন ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হলে মানুষের জটলা সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নির্দেশনা চেয়ে গত সপ্তাহের শেষের দিকে সরকারকে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি আগামীকাল (আজ বুধবার) একটা নির্দেশনা পাব।’
এদিকে করোনাভাইরাসে উদ্বিগ্ন রাজধানীর মানুষের বড় একটি অংশ গ্রামে চলে গেছে। আর যারা রাজধানীতে রয়েছে, তারাও খুব একটা বের হচ্ছে না। এর প্রভাব দেখা গেছে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। এর প্রভাবে কমেছে পেঁয়াজ, ডিম, মাছ, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। তবে ডাল, আলু, ভোজ্যতেল, রসুনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তুলনামূলক দামে কম থাকায় সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পণ্য কিনতে গতকাল ভিড় দেখা গেছে।
এদিকে লেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, তাই কয়েক দিন ধরে এর বিক্রি বেড়েছে। গতকাল প্রতি হালি লেবু ৪৫-৫০ টাকা ও ডজন বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকায়। এ ছাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিমের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৪০, শালগম ৩০, মুলা ২৫-৩০, টমেটো ২৫-৩৫, উচ্ছে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি ফুলকপি ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২৫-৩০ টাকা, লাউ ৩০-৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া লাউশাকের আঁটি ২৫, লালশাক ও পালংশাকের আঁটি ১০ ও কুমড়াশাকের আঁটি ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে ছোট রুই, কাতল ও মৃগেল ২০০-২২০ টাকা, বড় রুই, কাতল ও মৃগেল ২৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৬০, পাঙাশ ১৩০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০-১৩৫, লেয়ার মুরগি ২০০-২২০, পাকিস্তানি সোনালি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ ও খাসির মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
শেয়ার করুন
আরিফুর রহমান তুহিন | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

করোনা-সংকটে বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চালের দাম। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এক কেজি মোটা চাল কিনতেও ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা। কিন্তু এই সংকটকালেও মিলছে না খাদ্য অধিদপ্তরের খোলাবাজারের চাল (ওএমএস)। ভোক্তাদের অনেকে বলছেন, এমন দুর্দিনেও যদি চাল না পাওয়া যায় তাহলে ওএমএসের দরকার কী? আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওএমএসের জন্য চাল বরাদ্দ রয়েছে। চাল বিক্রি হচ্ছে না অজুহাত দিয়ে ডিলাররা চাল নিচ্ছেন না। এদিকে বাজারে চাল-ডালসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম আগের মতো আছে। কমেছে সবজি, ডিম ও পেঁয়াজের দাম। গতকাল দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা আগে দিন ছিল ৭০-৭৫ টাকা। ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০ টাকা। রাজধানীর তেজগাঁও বস্তির বাসিন্দা ঝালমুড়ি বিক্রেতা হোসেন আলী। গতকাল তিনি বলেন, করোনার কারণে বেচাবিক্রি বন্ধ। আয় নেই। এ অবস্থার মধ্যে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। আগে ওএমএসের ট্রাক থেকে চাল কিনতাম। এখন সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। দুই বেলা ভাত খাওয়া কষ্টকর হয়ে গেছে।
ওএমএসের চাল মিলছে না কেন জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে যেসব ট্রাকে চাল বিক্রি হতো সেগুলোতে পুলিশের হয়রানিসহ বিভিন্ন সমস্যা ছিল। এ জন্য ১০৭টি দোকানের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রির কার্যক্রম চলে আসছে। এ ছাড়া ১৩টি ট্রাকসেল আছে। তবে বিক্রেতাদের অভিযোগ, তাদের চাল কেউ কিনছে না, তাই তারা বিক্রি করছে না। আর এত দিন ওএমএসের চালের দাম ও বাজারে মোটা চালের দাম প্রায় সমান ছিল। হঠাৎ দু-তিন দিন আগে দাম বেড়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে ওরা রিকভারি করতে পারেনি। আর আমাকেও কেউ জানায়নি। তবে এখন আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে সব ডিলার যাতে চাল বিক্রি করে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বাড়তি দামে চাল বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে দাম খুব একটা বেশি ছিল না। বিশেষ করে মিনিকেট ও মোটা চালের। কিন্তু লোকজন দুই দিনে ব্যাপক চাল কিনে শেষ করে ফেলে। এখন সরকার কি দাম নিয়ন্ত্রণ করবে, নাকি বাজারে চাল সরবরাহ করবে? আমরা ব্যবসায়ী ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনা করে আগে চালের সরবরাহ বাড়াই। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও র্যাব দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আশা করছি, দ্রুতই দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’ ‘যারা বস্তায় বস্তায় চাল কিনেছিল তারাই আবার সব রেখে বাড়িতে চলে গেছেন’ বলে যোগ করেন তিনি।
নির্দেশনা থাকার পরেও কেন চাল বিক্রি হচ্ছে না এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘সরকার লোক সমাগম করতে নিষেধ করেছে। এখন ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হলে মানুষের জটলা সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নির্দেশনা চেয়ে গত সপ্তাহের শেষের দিকে সরকারকে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি আগামীকাল (আজ বুধবার) একটা নির্দেশনা পাব।’
এদিকে করোনাভাইরাসে উদ্বিগ্ন রাজধানীর মানুষের বড় একটি অংশ গ্রামে চলে গেছে। আর যারা রাজধানীতে রয়েছে, তারাও খুব একটা বের হচ্ছে না। এর প্রভাব দেখা গেছে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। এর প্রভাবে কমেছে পেঁয়াজ, ডিম, মাছ, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। তবে ডাল, আলু, ভোজ্যতেল, রসুনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তুলনামূলক দামে কম থাকায় সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পণ্য কিনতে গতকাল ভিড় দেখা গেছে।
এদিকে লেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, তাই কয়েক দিন ধরে এর বিক্রি বেড়েছে। গতকাল প্রতি হালি লেবু ৪৫-৫০ টাকা ও ডজন বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকায়। এ ছাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিমের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৪০, শালগম ৩০, মুলা ২৫-৩০, টমেটো ২৫-৩৫, উচ্ছে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি ফুলকপি ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২৫-৩০ টাকা, লাউ ৩০-৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া লাউশাকের আঁটি ২৫, লালশাক ও পালংশাকের আঁটি ১০ ও কুমড়াশাকের আঁটি ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে ছোট রুই, কাতল ও মৃগেল ২০০-২২০ টাকা, বড় রুই, কাতল ও মৃগেল ২৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৬০, পাঙাশ ১৩০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০-১৩৫, লেয়ার মুরগি ২০০-২২০, পাকিস্তানি সোনালি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ ও খাসির মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।