স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছে সেনাবাহিনী
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গতকাল বুধবার থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। আমাদের ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে আরও জানা গেছে, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত ও বাজার নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী কাজ করছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নগরজুড়ে অভিযানে নেমেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল সকাল থেকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডজুড়ে জেলা প্রশাসনের ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর টিম টহল শুরু করে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করাসহ নানা নির্দেশনামূলক মাইকিং করতে দেখা যায়। এদিন খুলশী এলাকায় বিদেশি নাগরিকসহ ৫ জনকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে এবং একটি কোরিয়ান রেস্টুরেন্টকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে সকাল থেকে খুলশী, জিইসি, ওয়াসা, নাসিরাবাদ, আকবর শাহ ও পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকায় টহল দেন সেনা সদস্যরা। তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাদের বাসায় লাল পতাকা ও স্টিকার লাগিয়ে দেন। প্রবাসীরা যথাযথভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন কি না তা তদারকি করেন। হ্যান্ডমাইকে সেনা সদস্যরা জটলা তৈরি না করার অনুরোধ করেন এবং অযথা কোনো লোকজনকে বাইরে ঘোরাঘুরি না করারও অনুরোধ জানান।
কক্সবাজারের ৫টি উপজেলায় গতকাল সকাল থেকে একযোগে কাজ শুরু করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় প্রশাসনকে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করছেন তারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও কাজ করছেন তারা। টহলের পাশাপাশি মাইকিং করেন সেনা সদস্যরা। জনসমাগম হয় এমন দোকান, হোটেল, শপিং মল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া লোকজনকে ঘরের বাহিরে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানান, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে বাসায় থাকতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
খুলনায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীর ৬ প্লাটুন সদস্য। গতকাল বিকাল থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মহানগরীসহ জেলার সড়ক ও অলিগলিতে টহল শুরু করেন তারা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টিতে মহানগরীর ময়লাপোতা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, ডিসি অফিস, ডাকবাংলো মোড়, নিরালা, গল্লামারী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হ্যান্ডমাইকে মাইকিং করতে দেখা যায়। খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, প্রয়োজনে আরও সেনা সদস্য মাঠে নামানো হবে।
নৌবাহিনীর ১৭৫ জন সদস্য গতকাল বিকেলে বরগুনা সদর উপজেলাসহ ৪টি উপজেলায় টহল শুরু করেন। বাকি দুটি উপজেলায় আগামীকালের মধ্যে তারা অভিযান শুরু করবেন। টহলের সময় নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সচেতনতার পাশাপাশি ঘরে থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করা হয়। নৌবাহিনীর কমান্ডার নুর উজ জামান বলেন, দেশের উপকূলীয় মানুষের নিরাপত্তা ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আমরা বরগুনায় টহল অভিযান শুরু করেছি।
বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২৩৬ জন। করোনা সন্দেহে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৯৭ জনের।
কুষ্টিয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, ৫ জনের অধিক সমাগম না করাসহ সরকারি ১০ নির্দেশনা উপেক্ষা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়ে গতকাল সকাল থেকে কুষ্টিয়া শহরে টহল দেয় সেনাবাহিনী। জেলায় কুষ্টিয়া সদর, দৌলতপুর ও খোকসা উপজেলায় তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করে পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ২০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লে, কর্নেল আছাদুজ্জামান তাপস।
মাগুরায় গতকাল সকাল থেকে সব রকম শপিং মল, মার্কেট বন্ধ ও চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট যেমন খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, কাঁচা বাজার, মুদিখানার দোকান বাদে সব রকম দোকান বন্ধ করার ঘোষণা এসেছে আগে থেকেই। সেনাবাহিনীর গাড়িবহর মাগুরা শহরে টহল দিয়ে সরকারি ঘোষণা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট দোকান, মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়। শহরের প্রায় সব দোকান বন্ধ ছিল। মাগুরায় বিদেশ ফেরত ২৭০ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জনগণকে সচেতন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সেনা সদস্যরা। গতকাল বিকেলে মির্জাপুর বাজারে মাইকিং করে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ক্যাপ্টেন রাশেদ, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেন, মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সায়েদুর রহমান প্রমুখ।
বাগেরহাটের মোংলায় করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছে নৌবাহিনী। গতকাল দুপুরে নৌবাহিনীর ‘মোংলা কন্টিনজেন্ট’ মোংলা বন্দর এলাকা, পৌর শহর ও শহরতলিতে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। নৌবাহিনীর মোংলা কন্টিনজেন্ট কমান্ডার লে. কমান্ডার সালাউদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এখানে নিয়োজিত হয়েছি। পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন অর্থাৎ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব।
বিমান বাহিনীর সমন্বয় ও মনিটরিং সেল : করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সহায়তা করছে। এরই অংশ হিসেবে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রত্যেকটি ঘাঁটিতে ইতিমধ্যে ‘করোনা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল’ স্থাপন করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্র্তৃক ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও জরুরি বিমান পরিবহন এবং মেডিকেল ইভাকোয়েশন সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়া, চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে যারা যে কোনো প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল টিমের সঙ্গে সমন্বিতভাবে সেবা প্রদান করবে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে, সংক্রমণ রোধে বিমান বাহিনী প্রোভোস্ট পেশার বিমানসেনারা ঢাকার হাজি ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধান করছেন। মাঠ পর্যায়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও, বিমান বাহিনী তাদের নিজস্ব এলাকায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, বিমান বাহিনী সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসা বহরগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তদুপরি, বিমান বাহিনী কর্র্তৃপক্ষ তাদের সদস্যদের সতর্কতা অবলম্বন, তাদের করণীয় ও বর্জনীয়সহ সব দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে বাংলাদেশ সরকার কর্র্তৃক প্রকাশিত নীতিমালা অনুসরণ করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গতকাল বুধবার থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। আমাদের ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে আরও জানা গেছে, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত ও বাজার নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী কাজ করছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নগরজুড়ে অভিযানে নেমেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল সকাল থেকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডজুড়ে জেলা প্রশাসনের ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর টিম টহল শুরু করে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করাসহ নানা নির্দেশনামূলক মাইকিং করতে দেখা যায়। এদিন খুলশী এলাকায় বিদেশি নাগরিকসহ ৫ জনকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে এবং একটি কোরিয়ান রেস্টুরেন্টকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে সকাল থেকে খুলশী, জিইসি, ওয়াসা, নাসিরাবাদ, আকবর শাহ ও পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকায় টহল দেন সেনা সদস্যরা। তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাদের বাসায় লাল পতাকা ও স্টিকার লাগিয়ে দেন। প্রবাসীরা যথাযথভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন কি না তা তদারকি করেন। হ্যান্ডমাইকে সেনা সদস্যরা জটলা তৈরি না করার অনুরোধ করেন এবং অযথা কোনো লোকজনকে বাইরে ঘোরাঘুরি না করারও অনুরোধ জানান।
কক্সবাজারের ৫টি উপজেলায় গতকাল সকাল থেকে একযোগে কাজ শুরু করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় প্রশাসনকে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করছেন তারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও কাজ করছেন তারা। টহলের পাশাপাশি মাইকিং করেন সেনা সদস্যরা। জনসমাগম হয় এমন দোকান, হোটেল, শপিং মল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া লোকজনকে ঘরের বাহিরে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানান, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে বাসায় থাকতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
খুলনায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীর ৬ প্লাটুন সদস্য। গতকাল বিকাল থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মহানগরীসহ জেলার সড়ক ও অলিগলিতে টহল শুরু করেন তারা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টিতে মহানগরীর ময়লাপোতা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, ডিসি অফিস, ডাকবাংলো মোড়, নিরালা, গল্লামারী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হ্যান্ডমাইকে মাইকিং করতে দেখা যায়। খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, প্রয়োজনে আরও সেনা সদস্য মাঠে নামানো হবে।
নৌবাহিনীর ১৭৫ জন সদস্য গতকাল বিকেলে বরগুনা সদর উপজেলাসহ ৪টি উপজেলায় টহল শুরু করেন। বাকি দুটি উপজেলায় আগামীকালের মধ্যে তারা অভিযান শুরু করবেন। টহলের সময় নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সচেতনতার পাশাপাশি ঘরে থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করা হয়। নৌবাহিনীর কমান্ডার নুর উজ জামান বলেন, দেশের উপকূলীয় মানুষের নিরাপত্তা ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আমরা বরগুনায় টহল অভিযান শুরু করেছি।
বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২৩৬ জন। করোনা সন্দেহে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৯৭ জনের।
কুষ্টিয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, ৫ জনের অধিক সমাগম না করাসহ সরকারি ১০ নির্দেশনা উপেক্ষা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়ে গতকাল সকাল থেকে কুষ্টিয়া শহরে টহল দেয় সেনাবাহিনী। জেলায় কুষ্টিয়া সদর, দৌলতপুর ও খোকসা উপজেলায় তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করে পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ২০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লে, কর্নেল আছাদুজ্জামান তাপস।
মাগুরায় গতকাল সকাল থেকে সব রকম শপিং মল, মার্কেট বন্ধ ও চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট যেমন খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, কাঁচা বাজার, মুদিখানার দোকান বাদে সব রকম দোকান বন্ধ করার ঘোষণা এসেছে আগে থেকেই। সেনাবাহিনীর গাড়িবহর মাগুরা শহরে টহল দিয়ে সরকারি ঘোষণা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট দোকান, মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়। শহরের প্রায় সব দোকান বন্ধ ছিল। মাগুরায় বিদেশ ফেরত ২৭০ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জনগণকে সচেতন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সেনা সদস্যরা। গতকাল বিকেলে মির্জাপুর বাজারে মাইকিং করে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ক্যাপ্টেন রাশেদ, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেন, মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সায়েদুর রহমান প্রমুখ।
বাগেরহাটের মোংলায় করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছে নৌবাহিনী। গতকাল দুপুরে নৌবাহিনীর ‘মোংলা কন্টিনজেন্ট’ মোংলা বন্দর এলাকা, পৌর শহর ও শহরতলিতে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। নৌবাহিনীর মোংলা কন্টিনজেন্ট কমান্ডার লে. কমান্ডার সালাউদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এখানে নিয়োজিত হয়েছি। পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন অর্থাৎ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব।
বিমান বাহিনীর সমন্বয় ও মনিটরিং সেল : করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সহায়তা করছে। এরই অংশ হিসেবে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রত্যেকটি ঘাঁটিতে ইতিমধ্যে ‘করোনা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল’ স্থাপন করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্র্তৃক ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও জরুরি বিমান পরিবহন এবং মেডিকেল ইভাকোয়েশন সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়া, চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে যারা যে কোনো প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল টিমের সঙ্গে সমন্বিতভাবে সেবা প্রদান করবে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে, সংক্রমণ রোধে বিমান বাহিনী প্রোভোস্ট পেশার বিমানসেনারা ঢাকার হাজি ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধান করছেন। মাঠ পর্যায়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও, বিমান বাহিনী তাদের নিজস্ব এলাকায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, বিমান বাহিনী সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসা বহরগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তদুপরি, বিমান বাহিনী কর্র্তৃপক্ষ তাদের সদস্যদের সতর্কতা অবলম্বন, তাদের করণীয় ও বর্জনীয়সহ সব দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে বাংলাদেশ সরকার কর্র্তৃক প্রকাশিত নীতিমালা অনুসরণ করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।