দেশের বিভিন্ন স্থান ‘লকডাউন’
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাদারীপুর সদর, শিবচর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলায় গতকাল বুধবার সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। একই সঙ্গে আশপাশের জেলা ও উপজেলার সঙ্গে বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। শিবচরের চারটি এলাকা গতকাল ষষ্ঠ দিনের মতো অবরুদ্ধ রয়েছে। এছাড়া রাজৈরের পাইকপাড়া ইউনিয়নে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং সব দোকান ও যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন চেয়ারম্যান মো. শাহাদাৎ হোসেন। এদিকে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান ছাড়া জেলার সব ধরনের দোকানপাট, গণপরিবহন, জনসমাবেশস্থল গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বন্ধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে জামালপুর জেলা প্রশাসন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন স্থান কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে গতকাল বুধবার রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ফেনীকে লকডাউন করার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি তিন উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জ্বর-কাশি আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুর পর মানিকগঞ্জে আলমগীর হোসেন (৪৮) নামে ব্যক্তিকে দাফন করার পর বাইলজুরি গ্রামকে লকডাউন ঘোষণা করেছে ঘিওর উপজেলা প্রশাসন।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ সময় কোনোভাবেই একাধিক ব্যক্তির সমাগম মেনে নেওয়া হবে না। আইন অমান্যকারীদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরতা প্রয়োগ করবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে আমরা স্টেজ-২-এ আছি। যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখি তবে আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্বের ফলে খারাপ সংবাদ বয়ে আনতে পারে।
তিনি আরও জানান, লকডাউন অবস্থায় শুধু ওষুধের দোকান খোলা রাখা যাবে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ব্যাংকিং লেনদেন চলবে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা রাখা যাবে।
বান্দরবানের তিন উপজেলা লকডাউন : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বান্দরবানের তিন উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পাশর্^বর্তী জেলা কক্সবাজারে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ায় লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জেলা কমিটির আহ্বায়ক শামীম হোসেন জানান, ‘এই তিনটি উপজেলা কক্সবাজারের পাশর্^বর্তী হওয়ায় এগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তিন উপজেলার লোকজনের বাইরে যাওয়া এবং বাইরে থেকে সেখানে ঢোকা লকডাউন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি জানান, ‘নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে। তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে লকডাউন করা হলো।’
বান্দরবানে এখন পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে ৯ জন এবং নিজেদের বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন ৪১ জন। এদের মধ্যে বিদেশফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে যাওয়া লোকজন রয়েছেন।
মানিকগঞ্জের একটি গ্রাম লকডাউন : জ্বর-কাশি আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুর পর মানিকগঞ্জে আলমগীর হোসেন (৪৮) নামে ব্যক্তিকে দাফন করার পর বাইলজুরি গ্রামটি লকডাউন ঘোষণা করেছে ঘিওর উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে ৬টি বাড়ির ২৬ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের ভাই আবদুল মালেক বলেন, ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ক্যাশিয়ারের চাকরি করতেন আলমগীর হোসেন (৪৮)। সপ্তাহখানেক আগে তিনি জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হলে হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ঢাকার বাসাতেই ছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকে গোপনীয়তার মধ্যে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাইলজুরি গ্রামে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
খবর পেয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার বুধবার দুপুরে করোনা সতর্কতায় বাইলজুরি গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে মৃত ব্যক্তির বাড়িসহ আশপাশের ৬টি বাড়ির সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাদারীপুর সদর, শিবচর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলায় গতকাল বুধবার সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। একই সঙ্গে আশপাশের জেলা ও উপজেলার সঙ্গে বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। শিবচরের চারটি এলাকা গতকাল ষষ্ঠ দিনের মতো অবরুদ্ধ রয়েছে। এছাড়া রাজৈরের পাইকপাড়া ইউনিয়নে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং সব দোকান ও যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন চেয়ারম্যান মো. শাহাদাৎ হোসেন। এদিকে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান ছাড়া জেলার সব ধরনের দোকানপাট, গণপরিবহন, জনসমাবেশস্থল গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বন্ধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে জামালপুর জেলা প্রশাসন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন স্থান কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে গতকাল বুধবার রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ফেনীকে লকডাউন করার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি তিন উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জ্বর-কাশি আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুর পর মানিকগঞ্জে আলমগীর হোসেন (৪৮) নামে ব্যক্তিকে দাফন করার পর বাইলজুরি গ্রামকে লকডাউন ঘোষণা করেছে ঘিওর উপজেলা প্রশাসন।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ সময় কোনোভাবেই একাধিক ব্যক্তির সমাগম মেনে নেওয়া হবে না। আইন অমান্যকারীদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরতা প্রয়োগ করবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে আমরা স্টেজ-২-এ আছি। যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখি তবে আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্বের ফলে খারাপ সংবাদ বয়ে আনতে পারে।
তিনি আরও জানান, লকডাউন অবস্থায় শুধু ওষুধের দোকান খোলা রাখা যাবে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ব্যাংকিং লেনদেন চলবে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা রাখা যাবে।
বান্দরবানের তিন উপজেলা লকডাউন : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বান্দরবানের তিন উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পাশর্^বর্তী জেলা কক্সবাজারে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ায় লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জেলা কমিটির আহ্বায়ক শামীম হোসেন জানান, ‘এই তিনটি উপজেলা কক্সবাজারের পাশর্^বর্তী হওয়ায় এগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তিন উপজেলার লোকজনের বাইরে যাওয়া এবং বাইরে থেকে সেখানে ঢোকা লকডাউন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি জানান, ‘নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে। তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে লকডাউন করা হলো।’
বান্দরবানে এখন পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে ৯ জন এবং নিজেদের বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন ৪১ জন। এদের মধ্যে বিদেশফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে যাওয়া লোকজন রয়েছেন।
মানিকগঞ্জের একটি গ্রাম লকডাউন : জ্বর-কাশি আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুর পর মানিকগঞ্জে আলমগীর হোসেন (৪৮) নামে ব্যক্তিকে দাফন করার পর বাইলজুরি গ্রামটি লকডাউন ঘোষণা করেছে ঘিওর উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে ৬টি বাড়ির ২৬ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের ভাই আবদুল মালেক বলেন, ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ক্যাশিয়ারের চাকরি করতেন আলমগীর হোসেন (৪৮)। সপ্তাহখানেক আগে তিনি জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হলে হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ঢাকার বাসাতেই ছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকে গোপনীয়তার মধ্যে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাইলজুরি গ্রামে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
খবর পেয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার বুধবার দুপুরে করোনা সতর্কতায় বাইলজুরি গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে মৃত ব্যক্তির বাড়িসহ আশপাশের ৬টি বাড়ির সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।