নির্দেশনা ভেঙে বাড়ির পথে ঢল
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকা ছেড়ে দলে দলে গ্রামের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে অসংখ্য মানুষ। যদিও এ সময়ে সবাইকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। নৌ, রেল ও আকাশপথ বন্ধ থাকায় গতকাল বুধবারও সড়কপথে ঈদের ছুটির মতো ভিড় দেখা গেছে। বাস, ট্রাক, পিকঅ্যাপ ভ্যান ভাড়া করেও গন্তব্যে যাত্রা করেছে অনেকে। এতে দেশের বেশিরভাগ মহাসড়কে তীব্র যানজটের খবর পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর আগের দিন গতকাল রাজধানীর দূরপাল্লার বাস টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। ফলে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া ঘোষণা প্রতিপালন করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা আক্রান্ত কেউ ঢাকা থেকে ফেরার পর সেটি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা স্বীকার করেছেন খোদ যাত্রীরাই। তারা আরও বলছেন, নানা কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা ঢাকা তাদের জন্য নিরাপদ নয়!
সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কাউন্টারে উত্তরাঞ্চলগামী মানুষ গিজগিজ করছে। বাড়ি ফেরার জন্য একজন লাফিয়ে পড়ছে আরেকজনের ওপর। টিকিট কাউন্টারগুলোতে নেই তিল ধারণের ঠাঁই। কাউকেই টিকিট দিতে পারছেন না কাউন্টার মাস্টাররা। কারণ সব সিট বুকড হয়ে গেছে আগেই। এতে যে বাস আসছে সেই বাসেই তাৎক্ষণিক দরকষাকষি করে উঠে পড়ছেন যাত্রীরা। অনেককে বাসের ছাদেও উঠে দেখা গেছে। বাস না পেয়ে অনেকে ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্যে যাত্রা করেন। একই চিত্র ছিল রাজধানীর অন্য দুই বড় বাস টার্মিনাল মহাখালী ও সায়েদাবাদেও।
রাজধানীর একটি সুপারশপে কাজ করেন রিয়াজুল ইসলাম রমজান। থাকেন মিরপুর-১-এর প্রথম কলোনিতে। করোনাভাইরাসের কারণে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি থাকায় ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি। রমজান বলেন, ‘বাসে-লঞ্চে করে বাড়ি যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু রাজধানীতে মেস বাড়িতে থাকি। তাই এখানে একটা আতঙ্কে দিন কাটছে। অফিস বন্ধ, বাড়ি থেকেও বারবার ফোন করছেন স্বজনরা। তাই ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পথে রওনা হয়েছি।’
এক সপ্তাহ আগে মাগুরা থেকে গাজীপুরের টঙ্গীতে মেয়ের বাড়িতে আসেন মুস্তাক হোসেন। তার ভাষ্য, ‘করোনার কথা শুনছি। মেয়ে বলছিল থেকে যেতে। কিন্তু বাড়িতেও লোকজন রয়েছে। তারা বেশ চিন্তিত। তাই বাড়ির পথে রওনা দিয়েছি।’
গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণাকে পুঁজি করে বাসে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ঘরে ফেরা অনেকেই। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গাবতলী বাস টার্মিনালের দ্রুতি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আমাদের যাবতীয় সুরক্ষা ও সরকার দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ ঠিকই যাতায়াত করছে। জটলা পাকিয়ে চলাফেরাও করছে।’
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার রুবেল আহমেদ বলেন, ‘যাত্রীরা আসলে ঈদের আমেজে বাড়ি যাচ্ছেন। তারা বুঝতেই পারছেন না এটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বেশিরভাগ যাত্রী আগেই চলে গেছেন। আজকেও একটু যাত্রীদের চাপ আছে।’
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে বাস পারাপার বন্ধ ঘোষণা হলেই আমরা এখান থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেব। আমরাও তো জানি এভাবে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু যাত্রী তো কমছে না। সবাই বাড়ি যেতে চাইছে।’
যাত্রী চাপকে কেন্দ্র করে মহাসড়কগুলোতে যানজট ছিল চোখে পড়ার মতো। মঙ্গলবার রাত থেকে উত্তরাঞ্চলগামী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সারা দিন এ যানজট ছিল। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীদের তিন থেকে চার ঘণ্টা অতিরিক্ত লেগে যায়। একই চিত্র ছিল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী ঢাকা-মাওয়া এবং ঢাকা-মানিকগঞ্জ মহাসড়কে। এ দুই মহাসড়কে দুটি ফেরিঘাটের অবস্থান হওয়ায় সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। একই সঙ্গে মাওয়া-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ফেরিতে যাত্রী পারাপারের ভিড় ছিল স্মরণ করার মতো। কারণ গতকাল থেকে ঘাটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন মুন্সীগঞ্জ ও মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি)
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকা ছেড়ে দলে দলে গ্রামের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে অসংখ্য মানুষ। যদিও এ সময়ে সবাইকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। নৌ, রেল ও আকাশপথ বন্ধ থাকায় গতকাল বুধবারও সড়কপথে ঈদের ছুটির মতো ভিড় দেখা গেছে। বাস, ট্রাক, পিকঅ্যাপ ভ্যান ভাড়া করেও গন্তব্যে যাত্রা করেছে অনেকে। এতে দেশের বেশিরভাগ মহাসড়কে তীব্র যানজটের খবর পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর আগের দিন গতকাল রাজধানীর দূরপাল্লার বাস টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। ফলে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া ঘোষণা প্রতিপালন করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা আক্রান্ত কেউ ঢাকা থেকে ফেরার পর সেটি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা স্বীকার করেছেন খোদ যাত্রীরাই। তারা আরও বলছেন, নানা কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা ঢাকা তাদের জন্য নিরাপদ নয়!
সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কাউন্টারে উত্তরাঞ্চলগামী মানুষ গিজগিজ করছে। বাড়ি ফেরার জন্য একজন লাফিয়ে পড়ছে আরেকজনের ওপর। টিকিট কাউন্টারগুলোতে নেই তিল ধারণের ঠাঁই। কাউকেই টিকিট দিতে পারছেন না কাউন্টার মাস্টাররা। কারণ সব সিট বুকড হয়ে গেছে আগেই। এতে যে বাস আসছে সেই বাসেই তাৎক্ষণিক দরকষাকষি করে উঠে পড়ছেন যাত্রীরা। অনেককে বাসের ছাদেও উঠে দেখা গেছে। বাস না পেয়ে অনেকে ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্যে যাত্রা করেন। একই চিত্র ছিল রাজধানীর অন্য দুই বড় বাস টার্মিনাল মহাখালী ও সায়েদাবাদেও।
রাজধানীর একটি সুপারশপে কাজ করেন রিয়াজুল ইসলাম রমজান। থাকেন মিরপুর-১-এর প্রথম কলোনিতে। করোনাভাইরাসের কারণে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি থাকায় ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি। রমজান বলেন, ‘বাসে-লঞ্চে করে বাড়ি যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু রাজধানীতে মেস বাড়িতে থাকি। তাই এখানে একটা আতঙ্কে দিন কাটছে। অফিস বন্ধ, বাড়ি থেকেও বারবার ফোন করছেন স্বজনরা। তাই ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পথে রওনা হয়েছি।’
এক সপ্তাহ আগে মাগুরা থেকে গাজীপুরের টঙ্গীতে মেয়ের বাড়িতে আসেন মুস্তাক হোসেন। তার ভাষ্য, ‘করোনার কথা শুনছি। মেয়ে বলছিল থেকে যেতে। কিন্তু বাড়িতেও লোকজন রয়েছে। তারা বেশ চিন্তিত। তাই বাড়ির পথে রওনা দিয়েছি।’
গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণাকে পুঁজি করে বাসে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ঘরে ফেরা অনেকেই। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গাবতলী বাস টার্মিনালের দ্রুতি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আমাদের যাবতীয় সুরক্ষা ও সরকার দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ ঠিকই যাতায়াত করছে। জটলা পাকিয়ে চলাফেরাও করছে।’
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার রুবেল আহমেদ বলেন, ‘যাত্রীরা আসলে ঈদের আমেজে বাড়ি যাচ্ছেন। তারা বুঝতেই পারছেন না এটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বেশিরভাগ যাত্রী আগেই চলে গেছেন। আজকেও একটু যাত্রীদের চাপ আছে।’
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে বাস পারাপার বন্ধ ঘোষণা হলেই আমরা এখান থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেব। আমরাও তো জানি এভাবে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু যাত্রী তো কমছে না। সবাই বাড়ি যেতে চাইছে।’
যাত্রী চাপকে কেন্দ্র করে মহাসড়কগুলোতে যানজট ছিল চোখে পড়ার মতো। মঙ্গলবার রাত থেকে উত্তরাঞ্চলগামী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সারা দিন এ যানজট ছিল। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীদের তিন থেকে চার ঘণ্টা অতিরিক্ত লেগে যায়। একই চিত্র ছিল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী ঢাকা-মাওয়া এবং ঢাকা-মানিকগঞ্জ মহাসড়কে। এ দুই মহাসড়কে দুটি ফেরিঘাটের অবস্থান হওয়ায় সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। একই সঙ্গে মাওয়া-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ফেরিতে যাত্রী পারাপারের ভিড় ছিল স্মরণ করার মতো। কারণ গতকাল থেকে ঘাটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন মুন্সীগঞ্জ ও মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি)