সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ
নিবন্ধন ও করারোপের সুপারিশ
নয়ন চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসা-যাওয়ায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিবেশগত সংকটে বিপন্ন হওয়ার পথে। এ পরিস্থিতিতে দ্বীপটির সুরক্ষায় পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে করারোপ ও দৈনিক পর্যটক ভ্রমণের সংখ্যা বেঁধে দেওয়াসহ বিভিন্ন সুপারিশ সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব সুপারিশের অনুমোদন হলেই তা দ্রুত কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে। তবে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এসব বিধিনিষেধ পর্যটন শিল্পের জন্য সুখকর হবে না।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতিদিন ৭-৮টি জাহাজ চলাচল করে। আর এসব জাহাজে করে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে থাকে। এক্ষেত্রে দৈনিক কতসংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পর্যটকদের নানা ধরনের বেপরোয়া কর্মকা-ের ফলে বর্তমানে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না এই প্রবাল দ্বীপে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এই দ্বীপটি তার স্বকীয়তা হারাবে। এ পরিস্থিতিতে গত ২ জানুয়ারি এক গণবিজ্ঞপ্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। যদিও এসব বিধিনিষেধ পালনে তেমন সচেতন নয় কেউই। আর ট্যুর অপারেটররা এই বিধিনিষেধে ক্ষুব্ধ।
সেন্টমার্টিনকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন’ এলাকা ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে সেন্টমার্টিন ধ্বংস হচ্ছে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৪ ধারার ক্ষমতাবলে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপাতত কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে অধিদপ্তর। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে : দ্বীপের সৈকতে কোনো ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চালানো যাবে না, দ্বীপে ও নাফ নদীতে প্লাস্টিক বা কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা যাবে না, সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরা, রাতে আলো জ্বালানো এবং ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে ছবি তোলা যাবে না, ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে স্পিডবোট বা অন্যান্য জলযানে যাতায়াত কিংবা নোঙর করা যাবে না এবং প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক কাছিম সংগ্রহ ও কেনাবেচা করা যাবে না। কিন্তু এসব বিধিনিষেধ পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কেউই মানছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) ও ইকোসিস্টেমভিত্তিক সেন্টমার্টিন দ্বীপের উন্নয়ন, পরিচালনা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন সকল কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক ধাপে দ্বীপের সুরক্ষায় এখন সচেতনতা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সেখানে কোস্টগার্ড, পুলিশ এবং পরিবেশের কর্মকর্তারা যৌথভাবে বিধিনিষেধের বিষয়গুলোকে প্রথমে পর্যটকদের মেনে চলাতে কাজ করছে। কিন্তু মানুষজন পরিবেশ রক্ষার জন্য মোটেও আন্তরিক নয়।’
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর আরোপিত বিধিনিষেধ পর্যটন শিল্পের জন্য সুখকর হবে না বলে মনে করছে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন। তাদের তথ্যমতে বর্তমানে সাতটি জাহাজ টেকনাফ থেকে এবং একটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন চলাচল করে। এমনিতেই পর্যটক সংখ্যা কমে গেছে দাবি করে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তোফায়েল আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১২০০-১৩০০ এর বেশি পর্যটক হয় না। বিধিনিষেধ বিষয়ে আমাদের আংশিক সমর্থন থাকলেও অধিকাংশ বিধিনিষেধ পর্যটন শিল্পের জন্য সুখকর নয়। সেন্টমার্টিন গিয়ে হোটেলে গানবাজনা এবং বারবিকিউয়ের বিষয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করা দরকার। এখানকার ৭ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেন্টমার্টিন পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। আমরা ব্যবসা করি চার মাস। বাকি আট মাস সরকার দ্বীপ বন্ধ করার ঘোষণা দিক। কিন্তু এসব না করে বিধিনিষেধে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধিনিষেধগুলো মানতে চায় না পর্যটকরা। প্রত্যেক বছর অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিন্তু এসব পালন করানো কঠিন। আগের চেয়ে জাহাজ বেড়েছে। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয় তুললেই পর্যটন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অনেকে। কিন্তু যে সংখ্যক মানুষ যাচ্ছে সেন্টমার্টিনে, তাতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।’
তবে পর্যটক ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যর্থ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত তিন বছর থেকেই পর্যটক নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও মৌসুম আসার আগে প্রতিবছর পর্যটকবাহী নতুন নতুন জাহাজের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। হোটেল ও জাহাজ মালিকদের কাছে ‘ম্যানেজ’ হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অস্তিত্ব বিপন্ন। সেখানের কোরাল রিফ নেই। পর্যটক ও বাসিন্দাদের পয়ঃবর্জ্য, ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক বর্জ্য সরাসরি গিয়ে পড়ছে ইকোসিস্টেমে। যাতে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। ছেঁড়াদ্বীপে ২০০-২৫০ স্পিডবোট চলে, সেখানে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। এখন সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন মৌসুম। উপকূলে কাছিমগুলো ডিম পাড়ে। অথচ সেখানে জাহাজগুলো উপকূলে আসার ফলে প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কাছিম মারা যাচ্ছে। একটি জাহাজে হাজার হাজার লোক নেওয়া হচ্ছে, অথচ বলা হয় কয়েকশ। প্রতিদিন ৮-১০ হাজারের বেশি পর্যটক যাচ্ছে।’ সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে কয়েক বছরের জন্য হলেও পর্যটক আসা-যাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মত দেন মোয়াজ্জেম হোসেন।
পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে গেলে সব ভুলে যায় উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবেশের জন্য দ্বীপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পর্যটকরা সেখানে গিয়ে পরিবেশ নোংরা করছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে এসব বুঝতে চায় না। অথচ এটা ধ্বংস করলে তাদেরও ক্ষতি। সরকারি উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত এলে পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিষয়গুলো আমাদের অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপারিশ করেছে। সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চূড়ান্ত হলেই আমরা কার্যকর করব।’
‘পেমেন্ট ফর ইকো সার্ভিসেস’-এর আওতায় সরকার রাজস্ব পাবে জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অ্যাপসের মাধ্যমেই রেজিস্ট্রেশন করে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। একটা নিদিষ্ট সংখ্যার বাইরে গেলে আমাদের নিয়ন্ত্রণও কাজ করে না। তাই পর্যটক সংখ্যা কমিয়ে আনলে এটি একটি সিস্টেমে আসবে।’
শেয়ার করুন
নয়ন চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসা-যাওয়ায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিবেশগত সংকটে বিপন্ন হওয়ার পথে। এ পরিস্থিতিতে দ্বীপটির সুরক্ষায় পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে করারোপ ও দৈনিক পর্যটক ভ্রমণের সংখ্যা বেঁধে দেওয়াসহ বিভিন্ন সুপারিশ সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব সুপারিশের অনুমোদন হলেই তা দ্রুত কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে। তবে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এসব বিধিনিষেধ পর্যটন শিল্পের জন্য সুখকর হবে না।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতিদিন ৭-৮টি জাহাজ চলাচল করে। আর এসব জাহাজে করে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে থাকে। এক্ষেত্রে দৈনিক কতসংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পর্যটকদের নানা ধরনের বেপরোয়া কর্মকা-ের ফলে বর্তমানে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না এই প্রবাল দ্বীপে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এই দ্বীপটি তার স্বকীয়তা হারাবে। এ পরিস্থিতিতে গত ২ জানুয়ারি এক গণবিজ্ঞপ্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। যদিও এসব বিধিনিষেধ পালনে তেমন সচেতন নয় কেউই। আর ট্যুর অপারেটররা এই বিধিনিষেধে ক্ষুব্ধ।
সেন্টমার্টিনকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন’ এলাকা ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে সেন্টমার্টিন ধ্বংস হচ্ছে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৪ ধারার ক্ষমতাবলে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপাতত কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে অধিদপ্তর। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে : দ্বীপের সৈকতে কোনো ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চালানো যাবে না, দ্বীপে ও নাফ নদীতে প্লাস্টিক বা কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা যাবে না, সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরা, রাতে আলো জ্বালানো এবং ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে ছবি তোলা যাবে না, ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে স্পিডবোট বা অন্যান্য জলযানে যাতায়াত কিংবা নোঙর করা যাবে না এবং প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক কাছিম সংগ্রহ ও কেনাবেচা করা যাবে না। কিন্তু এসব বিধিনিষেধ পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কেউই মানছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) ও ইকোসিস্টেমভিত্তিক সেন্টমার্টিন দ্বীপের উন্নয়ন, পরিচালনা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন সকল কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক ধাপে দ্বীপের সুরক্ষায় এখন সচেতনতা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সেখানে কোস্টগার্ড, পুলিশ এবং পরিবেশের কর্মকর্তারা যৌথভাবে বিধিনিষেধের বিষয়গুলোকে প্রথমে পর্যটকদের মেনে চলাতে কাজ করছে। কিন্তু মানুষজন পরিবেশ রক্ষার জন্য মোটেও আন্তরিক নয়।’
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর আরোপিত বিধিনিষেধ পর্যটন শিল্পের জন্য সুখকর হবে না বলে মনে করছে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন। তাদের তথ্যমতে বর্তমানে সাতটি জাহাজ টেকনাফ থেকে এবং একটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন চলাচল করে। এমনিতেই পর্যটক সংখ্যা কমে গেছে দাবি করে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তোফায়েল আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১২০০-১৩০০ এর বেশি পর্যটক হয় না। বিধিনিষেধ বিষয়ে আমাদের আংশিক সমর্থন থাকলেও অধিকাংশ বিধিনিষেধ পর্যটন শিল্পের জন্য সুখকর নয়। সেন্টমার্টিন গিয়ে হোটেলে গানবাজনা এবং বারবিকিউয়ের বিষয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করা দরকার। এখানকার ৭ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেন্টমার্টিন পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। আমরা ব্যবসা করি চার মাস। বাকি আট মাস সরকার দ্বীপ বন্ধ করার ঘোষণা দিক। কিন্তু এসব না করে বিধিনিষেধে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধিনিষেধগুলো মানতে চায় না পর্যটকরা। প্রত্যেক বছর অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিন্তু এসব পালন করানো কঠিন। আগের চেয়ে জাহাজ বেড়েছে। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয় তুললেই পর্যটন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অনেকে। কিন্তু যে সংখ্যক মানুষ যাচ্ছে সেন্টমার্টিনে, তাতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।’
তবে পর্যটক ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যর্থ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত তিন বছর থেকেই পর্যটক নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও মৌসুম আসার আগে প্রতিবছর পর্যটকবাহী নতুন নতুন জাহাজের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। হোটেল ও জাহাজ মালিকদের কাছে ‘ম্যানেজ’ হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অস্তিত্ব বিপন্ন। সেখানের কোরাল রিফ নেই। পর্যটক ও বাসিন্দাদের পয়ঃবর্জ্য, ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক বর্জ্য সরাসরি গিয়ে পড়ছে ইকোসিস্টেমে। যাতে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। ছেঁড়াদ্বীপে ২০০-২৫০ স্পিডবোট চলে, সেখানে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। এখন সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন মৌসুম। উপকূলে কাছিমগুলো ডিম পাড়ে। অথচ সেখানে জাহাজগুলো উপকূলে আসার ফলে প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কাছিম মারা যাচ্ছে। একটি জাহাজে হাজার হাজার লোক নেওয়া হচ্ছে, অথচ বলা হয় কয়েকশ। প্রতিদিন ৮-১০ হাজারের বেশি পর্যটক যাচ্ছে।’ সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে কয়েক বছরের জন্য হলেও পর্যটক আসা-যাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মত দেন মোয়াজ্জেম হোসেন।
পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে গেলে সব ভুলে যায় উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবেশের জন্য দ্বীপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পর্যটকরা সেখানে গিয়ে পরিবেশ নোংরা করছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে এসব বুঝতে চায় না। অথচ এটা ধ্বংস করলে তাদেরও ক্ষতি। সরকারি উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত এলে পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিষয়গুলো আমাদের অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপারিশ করেছে। সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চূড়ান্ত হলেই আমরা কার্যকর করব।’
‘পেমেন্ট ফর ইকো সার্ভিসেস’-এর আওতায় সরকার রাজস্ব পাবে জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অ্যাপসের মাধ্যমেই রেজিস্ট্রেশন করে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। একটা নিদিষ্ট সংখ্যার বাইরে গেলে আমাদের নিয়ন্ত্রণও কাজ করে না। তাই পর্যটক সংখ্যা কমিয়ে আনলে এটি একটি সিস্টেমে আসবে।’