দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় মেজর (অব.) হাফিজ
রেজাউল করিম লাবলু | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
শোকজের জবাব দিলেও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি । গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে এ কথা জানিয়ে হাফিজ বলেন, ‘দল কী সিদ্ধান্ত নেবে তা জানার অপেক্ষায় রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর দলের পক্ষ থেকে শোকজ করে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল তাতে দায়িত্ব পালনে অপারগতা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর ১৯ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিয়েছি। এরপর দলের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাইনি। দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাব নাকি চালাব না তা জানা দরকার।’
দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘মেজর (অব.) হাফিজের শোকজের জবাব লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
হাফিজের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত কী তা জানতে চাইলে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’
গত ১৯ ডিসেম্বর শোকজের জবাবে হাফিজ লেখেন, আমাদের দল বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিগত চার বছর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা হয়নি। বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগই পাইনি। আজ নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করতে চাই- (ক) ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই দলের জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা হোক। (খ) দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে কাউন্সিল সভার রিপোর্ট পেশ করা হোক। ভবিষ্যতে সব নির্বাচনে দল থেকে একজনকে প্রার্থী এবং একজনকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এতে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কমে যাবে। (গ) দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলো কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হোক। (ঘ) দলের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তাহলেই সৎ, নির্লোভ, মহান নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের আত্মা শান্তি পাবে।
শোকজের জবাবে হাফিজ আরও লেখেন, তার কাছে মনে হয়েছে দলের একটি অংশ চায় না বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধারা থাকুক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থি নেতারা দলের জন্য সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। এর চৌদ্দ বছর পর শোকজের জবাবে আবারও দলের জন্য চারদফা প্রস্তাব করেছেন। এ জন্য তার বিষয়ে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি।’
তিনি বলেন, ‘শোকজের লিখিত জবাবের শেষে তিনি দলের জাতীয় কাউন্সিলের আহ্বানসহ চার দফা সুপারিশ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন তারা এ বিষয়টি আবারও সন্দেহের চোখে দেখছেন। যারা ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা করেছেন, তার সুপারিশকে অনেকে সেভাবে দেখছেন। তবে তার মতো একজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে যেভাবে শোকজ করা হয়েছে তা ভালোভাবে নেননি জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাই এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত নাও নেওয়া হতে পারে। বিষয়টি এখানেই শেষ হতে পারে।’
এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর রবিবার শোকজের জবাবে বিএনপির অপর ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে দলের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে শোকজের জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে দলে কাজ করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। দলের নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হন, এমন কোনো কাজ না করতে বলা হয়।
কী লেখা হয়েছে চিঠিতে জানতে চাইলে শওকত মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিঠির শুরুতে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি দলের প্রতি আনুগত্য থাকার বিষয়ে তাকে অবহিত করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে দলের কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।’
গত ১৪ ডিসেম্বর মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অব.) ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিস (শোকজ) দেয় বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ওই শোকজে স্বাক্ষর করেন। দলের নাম ব্যবহার করে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে জন্য শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ দিনের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত জবাব জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। পরে বিএনপির দুই নেতাই শোকজের জবাব দেন।
শেয়ার করুন
রেজাউল করিম লাবলু | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

শোকজের জবাব দিলেও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি । গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে এ কথা জানিয়ে হাফিজ বলেন, ‘দল কী সিদ্ধান্ত নেবে তা জানার অপেক্ষায় রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর দলের পক্ষ থেকে শোকজ করে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল তাতে দায়িত্ব পালনে অপারগতা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর ১৯ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিয়েছি। এরপর দলের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাইনি। দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাব নাকি চালাব না তা জানা দরকার।’
দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘মেজর (অব.) হাফিজের শোকজের জবাব লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
হাফিজের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত কী তা জানতে চাইলে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’
গত ১৯ ডিসেম্বর শোকজের জবাবে হাফিজ লেখেন, আমাদের দল বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিগত চার বছর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা হয়নি। বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগই পাইনি। আজ নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করতে চাই- (ক) ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই দলের জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা হোক। (খ) দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে কাউন্সিল সভার রিপোর্ট পেশ করা হোক। ভবিষ্যতে সব নির্বাচনে দল থেকে একজনকে প্রার্থী এবং একজনকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এতে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কমে যাবে। (গ) দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলো কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হোক। (ঘ) দলের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তাহলেই সৎ, নির্লোভ, মহান নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের আত্মা শান্তি পাবে।
শোকজের জবাবে হাফিজ আরও লেখেন, তার কাছে মনে হয়েছে দলের একটি অংশ চায় না বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধারা থাকুক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থি নেতারা দলের জন্য সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। এর চৌদ্দ বছর পর শোকজের জবাবে আবারও দলের জন্য চারদফা প্রস্তাব করেছেন। এ জন্য তার বিষয়ে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি।’
তিনি বলেন, ‘শোকজের লিখিত জবাবের শেষে তিনি দলের জাতীয় কাউন্সিলের আহ্বানসহ চার দফা সুপারিশ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন তারা এ বিষয়টি আবারও সন্দেহের চোখে দেখছেন। যারা ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা করেছেন, তার সুপারিশকে অনেকে সেভাবে দেখছেন। তবে তার মতো একজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে যেভাবে শোকজ করা হয়েছে তা ভালোভাবে নেননি জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাই এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত নাও নেওয়া হতে পারে। বিষয়টি এখানেই শেষ হতে পারে।’
এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর রবিবার শোকজের জবাবে বিএনপির অপর ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে দলের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে শোকজের জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে দলে কাজ করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। দলের নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হন, এমন কোনো কাজ না করতে বলা হয়।
কী লেখা হয়েছে চিঠিতে জানতে চাইলে শওকত মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিঠির শুরুতে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি দলের প্রতি আনুগত্য থাকার বিষয়ে তাকে অবহিত করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে দলের কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।’
গত ১৪ ডিসেম্বর মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অব.) ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিস (শোকজ) দেয় বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ওই শোকজে স্বাক্ষর করেন। দলের নাম ব্যবহার করে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে জন্য শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ দিনের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত জবাব জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। পরে বিএনপির দুই নেতাই শোকজের জবাব দেন।