কেটে রাখা রাস্তা মেরামতে অনীহা!
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
রাজধানীতে রাস্তা কেটে উন্নয়নকাজ করার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা মেরামত করে না সংশ্লিষ্টরা। অনেক সড়কের প্রায় অর্ধেক কেটে কাজের পর তা বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলে রাখা হয়েছে। পিচের কার্পেটিং বা কংক্রিটের ঢালাই না দেওয়ার ফলে কাটা ওই অংশ দিয়ে চলাচল করতে পারে না যানবাহন। ফলে অনেক ব্যস্ত সড়কে যানবাহন চলে এক লেনে। দেখা দেয় ধীরগতি। এসব সড়কে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। আবার ফুটপাত আধুনিকায়ন কাজে একটি অংশে টাইলস বসানোর পর আরেকটি অংশে মাটি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। নালা নির্মাণের পর ম্যানহোলের ঢাকনা বসানো হয়নি এমন চিত্রও কোনো কোনো সড়কে দেখা গেছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রাস্তায় কাজ করার সময় নিয়ম মেনে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয় না। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, কর্র্তৃপক্ষ একটু দায়িত্বশীল হলেই এসব ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে পারেন তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর পান্থপথ মোড় থেকে গ্রিনরোড, নীলক্ষেত থেকে আজিমপুর চৌরাস্তা হয়ে পলাশী মোড়, শাহবাগ ও বিজয়সরণি এলাকার রাস্তাগুলোতে ড্রেন ও পাইপ বসানোর কাজ করা হয়েছে। এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কেটে রাখা রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও রাস্তা খুঁড়ে মাটির স্তূপ রাখা হয়েছে রাস্তায়ই। শাহবাগ মোড়ে দেখা যায় রাস্তা কেটে পাইপ বসানোর পর সেখানে বালি ফেলে রাখা হলেও গর্তটি ভরাট হয়নি। ফলে এখানে যানবাহন এসে এক লেনে পার হতে হয়। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. ওয়াসিফ আহমেদ শাহবাগ দিয়ে পার হওয়ার সময় গতকাল দুপুরে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধানম-ির বাসা থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে যাওয়ার পথে শাহবাগ এসেই ভোগান্তি হয়। এখানে রাস্তা কেটে উন্নয়নকাজ শেষ করার পর তা মেরামত করা হয়নি। বালি ফেলে যেটুকু ভরাট করা হয়েছে, সেখানে গাড়ির চাকা পড়লে আর ওঠানো যায় না। এর ফলে শাহবাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহনের চাপ বাড়লেই জটলা লেগে যায়। অথচ কর্র্তৃপক্ষ যদি একটু নজর দেয় তাহলেই এ জায়গাটুকু মেরামত করে দিতে পারে। আমরাও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতাম।’
নীলক্ষেত মোড় থেকে আজিমপুর চৌরাস্তা হয়ে পলাশী মোড় পর্যন্ত চলছে ফুটপাত উন্নয়ন ও ড্রেন নির্মাণের কাজ। সেখানে গিয়েও দেখা যায় নানা অব্যবস্থাপনা। এ সড়কে ফুটপাতের ইট উঠিয়ে নতুন করে সেখানে টাইলস বসানোর কাজ করা হয়েছে। কিন্তু আজিমপুর চৌরাস্তার অংশে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাত খুঁড়ে রাখা মাটির স্তূপ সড়কে এসে পড়েছে। সেখানে পথচারী হেঁটে যাওয়ার সময় পড়েন সমস্যায়। আবার ফুটপাতের যে অংশে নালা নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানেও নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে রাখা হয়েছে ইট-বালু আর সুরকি। আজিমপুর চৌরাস্তা থেকে পলাশী মোড়ের দিকে আসতে ইডেন কলেজের গেটের সামনে রাস্তায় নির্মাণশ্রমিকরা রড বাঁধার কাজ করছেন। সেখানে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী বা বলয় দেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নীলক্ষেত মোড়ে ড্রেন নির্মাণ শেষ হয়েছে আরও বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু সেখানে পেট্রলপাম্পসংলগ্ন একটি বড় গর্ত রয়েছে। গর্তের একপাশ দিয়ে ড্রেনের ঢালাইয়ের রড বের হয়ে আছে। রাতের বেলায় এখানে থাকা বিদ্যুতের লাইটও খুব একটা জ¦লে না। ফলে এ গর্তে পড়ে যেকোনো সময় পথচারীর মারাত্মক আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৩) মো. মফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নীলক্ষেত থেকে আজিমপুর হয়ে পলাশী মোড় ও আজিমপুর চৌরাস্তা থেকে এতিমখানা সড়ক পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাস্টারস বিল্ডার্সের নামে এ কাজটি পেয়েছেন শিব্বির আহমেদ।’
চলমান ওই কাজে কিছুটা বিশৃঙ্খলা আছে উল্লেখ করে ডিএসসিসির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারকে লিখিতভাবে সতর্ক করেছি। আশা করছি দ্রুত কাজ শেষ করতে পারব।’
নগরীর হাসপাতালপাড়া হিসেবে পরিচিত গ্রিনরোড। এ সড়কটি কয়েক মাস আগে কেটে সেখানে পাইপ বসিয়েছে ওয়াসা। ওয়াসার কাজ শেষ হওয়ার পর তা নিয়ম অনুযায়ী মেরামত করে দেওয়ার কথা রয়েছে সিটি করপোরেশনের। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা করা হয়নি। ফলে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা গ্রিনরোডের কেটে রাখা অংশে এসে যান চলাচল ধীর হয়ে পড়ে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ রাস্তায় যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। গ্রিনরোডের একটি ভবনে নিজের ক্লিনিকে নিয়মিত রোগী দেখেন অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রিনরোড ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে রূপায়ণ টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তায় পাইপ বসানোর কাজ হয়েছে কয়েক মাস আগে। এরপর কেটে রাখা রাস্তা আর মেরামত করা হয়নি। ফলে রাস্তার অর্ধেক অংশ ব্যবহার হয় না। এক লেনে যানবাহন চলে। আবার প্রাইভেট কারের চাকা যদি রাস্তার কাটা অংশে পড়ে তবে তা ওঠানোও কষ্টকর হয়ে যায়। এ রাস্তাটুকু মেরামত করে দিলে যানজট কমে আসবে।’
শেয়ার করুন
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

রাজধানীতে রাস্তা কেটে উন্নয়নকাজ করার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা মেরামত করে না সংশ্লিষ্টরা। অনেক সড়কের প্রায় অর্ধেক কেটে কাজের পর তা বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলে রাখা হয়েছে। পিচের কার্পেটিং বা কংক্রিটের ঢালাই না দেওয়ার ফলে কাটা ওই অংশ দিয়ে চলাচল করতে পারে না যানবাহন। ফলে অনেক ব্যস্ত সড়কে যানবাহন চলে এক লেনে। দেখা দেয় ধীরগতি। এসব সড়কে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। আবার ফুটপাত আধুনিকায়ন কাজে একটি অংশে টাইলস বসানোর পর আরেকটি অংশে মাটি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। নালা নির্মাণের পর ম্যানহোলের ঢাকনা বসানো হয়নি এমন চিত্রও কোনো কোনো সড়কে দেখা গেছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রাস্তায় কাজ করার সময় নিয়ম মেনে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয় না। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, কর্র্তৃপক্ষ একটু দায়িত্বশীল হলেই এসব ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে পারেন তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর পান্থপথ মোড় থেকে গ্রিনরোড, নীলক্ষেত থেকে আজিমপুর চৌরাস্তা হয়ে পলাশী মোড়, শাহবাগ ও বিজয়সরণি এলাকার রাস্তাগুলোতে ড্রেন ও পাইপ বসানোর কাজ করা হয়েছে। এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কেটে রাখা রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও রাস্তা খুঁড়ে মাটির স্তূপ রাখা হয়েছে রাস্তায়ই। শাহবাগ মোড়ে দেখা যায় রাস্তা কেটে পাইপ বসানোর পর সেখানে বালি ফেলে রাখা হলেও গর্তটি ভরাট হয়নি। ফলে এখানে যানবাহন এসে এক লেনে পার হতে হয়। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. ওয়াসিফ আহমেদ শাহবাগ দিয়ে পার হওয়ার সময় গতকাল দুপুরে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধানম-ির বাসা থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে যাওয়ার পথে শাহবাগ এসেই ভোগান্তি হয়। এখানে রাস্তা কেটে উন্নয়নকাজ শেষ করার পর তা মেরামত করা হয়নি। বালি ফেলে যেটুকু ভরাট করা হয়েছে, সেখানে গাড়ির চাকা পড়লে আর ওঠানো যায় না। এর ফলে শাহবাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহনের চাপ বাড়লেই জটলা লেগে যায়। অথচ কর্র্তৃপক্ষ যদি একটু নজর দেয় তাহলেই এ জায়গাটুকু মেরামত করে দিতে পারে। আমরাও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতাম।’
নীলক্ষেত মোড় থেকে আজিমপুর চৌরাস্তা হয়ে পলাশী মোড় পর্যন্ত চলছে ফুটপাত উন্নয়ন ও ড্রেন নির্মাণের কাজ। সেখানে গিয়েও দেখা যায় নানা অব্যবস্থাপনা। এ সড়কে ফুটপাতের ইট উঠিয়ে নতুন করে সেখানে টাইলস বসানোর কাজ করা হয়েছে। কিন্তু আজিমপুর চৌরাস্তার অংশে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাত খুঁড়ে রাখা মাটির স্তূপ সড়কে এসে পড়েছে। সেখানে পথচারী হেঁটে যাওয়ার সময় পড়েন সমস্যায়। আবার ফুটপাতের যে অংশে নালা নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানেও নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে রাখা হয়েছে ইট-বালু আর সুরকি। আজিমপুর চৌরাস্তা থেকে পলাশী মোড়ের দিকে আসতে ইডেন কলেজের গেটের সামনে রাস্তায় নির্মাণশ্রমিকরা রড বাঁধার কাজ করছেন। সেখানে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী বা বলয় দেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নীলক্ষেত মোড়ে ড্রেন নির্মাণ শেষ হয়েছে আরও বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু সেখানে পেট্রলপাম্পসংলগ্ন একটি বড় গর্ত রয়েছে। গর্তের একপাশ দিয়ে ড্রেনের ঢালাইয়ের রড বের হয়ে আছে। রাতের বেলায় এখানে থাকা বিদ্যুতের লাইটও খুব একটা জ¦লে না। ফলে এ গর্তে পড়ে যেকোনো সময় পথচারীর মারাত্মক আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৩) মো. মফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নীলক্ষেত থেকে আজিমপুর হয়ে পলাশী মোড় ও আজিমপুর চৌরাস্তা থেকে এতিমখানা সড়ক পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাস্টারস বিল্ডার্সের নামে এ কাজটি পেয়েছেন শিব্বির আহমেদ।’
চলমান ওই কাজে কিছুটা বিশৃঙ্খলা আছে উল্লেখ করে ডিএসসিসির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারকে লিখিতভাবে সতর্ক করেছি। আশা করছি দ্রুত কাজ শেষ করতে পারব।’
নগরীর হাসপাতালপাড়া হিসেবে পরিচিত গ্রিনরোড। এ সড়কটি কয়েক মাস আগে কেটে সেখানে পাইপ বসিয়েছে ওয়াসা। ওয়াসার কাজ শেষ হওয়ার পর তা নিয়ম অনুযায়ী মেরামত করে দেওয়ার কথা রয়েছে সিটি করপোরেশনের। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা করা হয়নি। ফলে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা গ্রিনরোডের কেটে রাখা অংশে এসে যান চলাচল ধীর হয়ে পড়ে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ রাস্তায় যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। গ্রিনরোডের একটি ভবনে নিজের ক্লিনিকে নিয়মিত রোগী দেখেন অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রিনরোড ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে রূপায়ণ টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তায় পাইপ বসানোর কাজ হয়েছে কয়েক মাস আগে। এরপর কেটে রাখা রাস্তা আর মেরামত করা হয়নি। ফলে রাস্তার অর্ধেক অংশ ব্যবহার হয় না। এক লেনে যানবাহন চলে। আবার প্রাইভেট কারের চাকা যদি রাস্তার কাটা অংশে পড়ে তবে তা ওঠানোও কষ্টকর হয়ে যায়। এ রাস্তাটুকু মেরামত করে দিলে যানজট কমে আসবে।’