মধ্যপাড়ায় পাথর উৎপাদন ও বিক্রিতে নতুন রেকর্ড
সোহেল সানী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি | ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০
বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেও পাথর উৎপাদন ও বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পরও চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ৯ মাসে খনিতে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়েছে। আগের মজুদসহ এ সময়ে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাথর বিক্রি হয়েছে; যা থেকে রাজস্ব এসেছে প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা। এর আগে কখনো ৯ মাসে এত বেশি পরিমাণ পাথর বিক্রি হয়নি। ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো লাভজনক অবস্থান ধরে রাখতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। খনির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পাচ্ছেন প্রফিট বোনাসও।
খনির কর্মকর্তারা জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১৩ আগস্ট থেকে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি থেকে আবারও পাথর উত্তোলন শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (জিটিসি)।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খনি থেকে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয় ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৩ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন; যার মূল্য ১৬৩ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। একই অর্থবছরে খনিটি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ৩৩ কোটি ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি নিট মুনাফা অর্জন হয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এটিই প্রথমবারের মতো খনির লাভ। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনার মধ্যে সাড়ে চার মাস বন্ধ থাকা সত্ত্বেও পাথর উত্তোলিত হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৯ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। আগের মজুদসহ এ সময়ে বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৯০৬ দশমিক ৫২ মেট্রিক টন পাথর; যার মূল্য ২০৭ কোটি ৮১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এই অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে জমা হয় ২২ কোটি ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। নিট মুনাফা অর্জিত হয়েছে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে আরও বেশি মুনাফা হবে বলে আশা করছে খনি কর্র্তৃপক্ষ। কারণ গত অর্থবছরগুলোর তুলনায় চলতি অর্থবছরে পাথর বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ২০০৭ সালের ২৫ মে। প্রথম দিকে খনি থেকে দৈনিক ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে ৫০০ টনে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উৎপাদন শুরুর পর থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত এর লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় শতকোটি টাকার ওপরে। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের বিপরীতে ১৭১ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলারে চুক্তি করে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। বর্তমানে খনিতে তিন শিফটে পাথর উত্তোলন করছেন ৭০০ শ্রমিক। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি মিলে রয়েছেন ২০০ কর্মকর্তা। প্রতিদিন তিন শিফটে পাথর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। অবশ্য কখনো কখনো লক্ষ্যমাত্রার বেশি পাথর উত্তোলন হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে জিটিসি খনির দায়িত্ব নেওয়ার ৩ মাসের মধ্যে ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু করে এবং উত্তোলনে রেকর্ড গড়ে। আগে যেখানে দৈনিক ৫০০ টনের মতো পাথর উত্তোলন হতো; সেখানে দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যায়। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপণনও বৃদ্ধি পায়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে খনিতে পাথর উত্তোলন হয় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৭৬ দশমিক ২০ মেট্রিক টন। বিক্রি হয় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪৯৭ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন; যার মূল্য ৭৪ কোটি ৪৯ লাখ ১১ হাজার টাকা। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাথর উত্তোলন হয় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৯ মেট্রিক টন, আর আগের মজুদসহ বিক্রি হয় ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন। যার বিক্রয় মূল্য ১০৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উত্তোলনে বিঘিœত হয়। এ অর্থবছরে পাথর উত্তোলন হয় ৫৬ হাজার ৫১৮ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন। আগের মজুদসহ বিক্রি হয় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন, যার মূল্য ২১ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মেরামত করে আবারও উত্তোলনের রেকর্ড তৈরি হয়। এ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৩ দশমিক ২২ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয় ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন; যার মূল্য ১৪৭ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রতি বছর ৬ হাজার কোটি টাকার (প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টন) পাথরের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টন সরবরাহ হয় মধ্যপাড়া খনি থেকে। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা গেলে মধ্যপাড়া খনির লাভের ধারা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ শ্রমিককে ছুটি দিয়ে স্বল্প পরিসরে উৎপাদন চালু রেখেছে। ফলে বেকার বসে আছেন দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপাড়া বিশ্বের একমাত্র ভূগর্ভস্থ খনি, যার লাভজনক পরিচালনা, উৎপাদন ও উন্নয়নের অভিজ্ঞতা জিটিসির রয়েছে। পাথর উৎপাদন ও খনি উন্নয়নের পাশাপাশি খনির সম্মুখে ‘জিটিসি চ্যারিটি হোম’ স্থাপন করে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত খনি শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং এলাকার আর্থসামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চ্যারিটি হোমে অভিজ্ঞ এমবিবিএস চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন খনি এলাকার ৪০-৫০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ সেবা দিচ্ছে। প্রতি মাসে খনিশ্রমিকদের সন্তানদের মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি, নন-এমপিওভুক্ত মধ্যপাড়া মহাবিদ্যালয়কে মাসিক আর্থিক সহায়তা এবং এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৈশি^ক মহামারী করোনার মধ্যে দেশের অন্যান্য খনি প্রকল্পগুলো জনবল অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। পক্ষান্তরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খনির উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। উত্তোলন হয়েছে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন টন পাথর। এ হিসাবে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি পাথর উৎপাদন হয়েছে। এখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানায় করোনায় কোনো সমস্যা হয়নি। খনি থেকে প্রতিদিন পাথর উত্তোলন হচ্ছে ৫ হাজার মেট্রিক টন। তিন বছর থেকে খনিটি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে।’ লাভের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শেয়ার করুন
সোহেল সানী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি | ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০

বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেও পাথর উৎপাদন ও বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পরও চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ৯ মাসে খনিতে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়েছে। আগের মজুদসহ এ সময়ে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাথর বিক্রি হয়েছে; যা থেকে রাজস্ব এসেছে প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা। এর আগে কখনো ৯ মাসে এত বেশি পরিমাণ পাথর বিক্রি হয়নি। ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো লাভজনক অবস্থান ধরে রাখতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। খনির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পাচ্ছেন প্রফিট বোনাসও।
খনির কর্মকর্তারা জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১৩ আগস্ট থেকে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি থেকে আবারও পাথর উত্তোলন শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (জিটিসি)।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খনি থেকে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয় ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৩ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন; যার মূল্য ১৬৩ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। একই অর্থবছরে খনিটি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ৩৩ কোটি ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি নিট মুনাফা অর্জন হয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এটিই প্রথমবারের মতো খনির লাভ। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনার মধ্যে সাড়ে চার মাস বন্ধ থাকা সত্ত্বেও পাথর উত্তোলিত হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৯ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। আগের মজুদসহ এ সময়ে বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৯০৬ দশমিক ৫২ মেট্রিক টন পাথর; যার মূল্য ২০৭ কোটি ৮১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এই অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে জমা হয় ২২ কোটি ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। নিট মুনাফা অর্জিত হয়েছে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে আরও বেশি মুনাফা হবে বলে আশা করছে খনি কর্র্তৃপক্ষ। কারণ গত অর্থবছরগুলোর তুলনায় চলতি অর্থবছরে পাথর বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ২০০৭ সালের ২৫ মে। প্রথম দিকে খনি থেকে দৈনিক ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে ৫০০ টনে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উৎপাদন শুরুর পর থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত এর লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় শতকোটি টাকার ওপরে। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের বিপরীতে ১৭১ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলারে চুক্তি করে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। বর্তমানে খনিতে তিন শিফটে পাথর উত্তোলন করছেন ৭০০ শ্রমিক। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি মিলে রয়েছেন ২০০ কর্মকর্তা। প্রতিদিন তিন শিফটে পাথর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। অবশ্য কখনো কখনো লক্ষ্যমাত্রার বেশি পাথর উত্তোলন হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে জিটিসি খনির দায়িত্ব নেওয়ার ৩ মাসের মধ্যে ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু করে এবং উত্তোলনে রেকর্ড গড়ে। আগে যেখানে দৈনিক ৫০০ টনের মতো পাথর উত্তোলন হতো; সেখানে দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যায়। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপণনও বৃদ্ধি পায়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে খনিতে পাথর উত্তোলন হয় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৭৬ দশমিক ২০ মেট্রিক টন। বিক্রি হয় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪৯৭ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন; যার মূল্য ৭৪ কোটি ৪৯ লাখ ১১ হাজার টাকা। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাথর উত্তোলন হয় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৯ মেট্রিক টন, আর আগের মজুদসহ বিক্রি হয় ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন। যার বিক্রয় মূল্য ১০৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উত্তোলনে বিঘিœত হয়। এ অর্থবছরে পাথর উত্তোলন হয় ৫৬ হাজার ৫১৮ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন। আগের মজুদসহ বিক্রি হয় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন, যার মূল্য ২১ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মেরামত করে আবারও উত্তোলনের রেকর্ড তৈরি হয়। এ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৩ দশমিক ২২ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয় ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন; যার মূল্য ১৪৭ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রতি বছর ৬ হাজার কোটি টাকার (প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টন) পাথরের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টন সরবরাহ হয় মধ্যপাড়া খনি থেকে। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা গেলে মধ্যপাড়া খনির লাভের ধারা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ শ্রমিককে ছুটি দিয়ে স্বল্প পরিসরে উৎপাদন চালু রেখেছে। ফলে বেকার বসে আছেন দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপাড়া বিশ্বের একমাত্র ভূগর্ভস্থ খনি, যার লাভজনক পরিচালনা, উৎপাদন ও উন্নয়নের অভিজ্ঞতা জিটিসির রয়েছে। পাথর উৎপাদন ও খনি উন্নয়নের পাশাপাশি খনির সম্মুখে ‘জিটিসি চ্যারিটি হোম’ স্থাপন করে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত খনি শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং এলাকার আর্থসামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চ্যারিটি হোমে অভিজ্ঞ এমবিবিএস চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন খনি এলাকার ৪০-৫০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ সেবা দিচ্ছে। প্রতি মাসে খনিশ্রমিকদের সন্তানদের মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি, নন-এমপিওভুক্ত মধ্যপাড়া মহাবিদ্যালয়কে মাসিক আর্থিক সহায়তা এবং এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৈশি^ক মহামারী করোনার মধ্যে দেশের অন্যান্য খনি প্রকল্পগুলো জনবল অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। পক্ষান্তরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খনির উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। উত্তোলন হয়েছে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন টন পাথর। এ হিসাবে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি পাথর উৎপাদন হয়েছে। এখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানায় করোনায় কোনো সমস্যা হয়নি। খনি থেকে প্রতিদিন পাথর উত্তোলন হচ্ছে ৫ হাজার মেট্রিক টন। তিন বছর থেকে খনিটি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে।’ লাভের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।