ইলিশ রপ্তানির ধাক্কা খুচরা বাজারে
রিয়াজ হোসেন | ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ভরা মৌসুমে সরবরাহ ঘাটতি থাকলেও এখন শেষ সময়ে এসে রুপালি ইলিশে ভরপুর আড়তগুলো। পূর্ণিমার ‘জো’তে সাগরে ও নদীতে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীরা। তবে ভারতে রপ্তানির কারণে দেশের বাজারে ইলিশের সরবরাহ তুলনামূলক কম। ফলে হঠাৎ করেই দাম চড়েছে ইলিশের।
মাছ ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। আগামী তিন সপ্তাহে ভারতে মোট ২০৮০ মেট্রিক টন বা ২০ লাখ ৮০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হবে। আর সাধারণত বড় আকৃতির ইলিশ রপ্তানি হয়। যে কারণে বড় বড় ইলিশ চলে যাচ্ছে ভারতে। তাই খুচরা বাজারে হঠাৎই দাম বেড়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকৃতির ইলিশের সরবরাহ কম। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই মাঝারি অথবা জাটকা। পাইকারিতে এক কেজি ওজনের নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। খুচরা বাজারে তা বিকোচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকার ওপরে। এছাড়া জাটকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে মাছ কিনতে আসা ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা সুলতান আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন চারদিন আগেও এক কেজির ইলিশ (সমুদ্রের) কিনেছি ৯০০ টাকায়। আজ ১২০০ টাকার বেশি দাম চাইছে। মাঝারি সাইজের ইলিশের কেজি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এত দাম দিয়ে তো আর ইলিশ খাওয়া সম্ভব না। তাই পাবদা মাছ নিয়ে যাচ্ছি।’
কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন বলেন, ‘নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও বাজারে সরবরাহ কম। বেশিরভাগ ইলিশ এখন ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। বড় ইলিশ আড়তে নেই বললেই চলে। যা পাওয়া যায় তা মাঝারি সাইজের অথবা জাটকা। তাই মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ঢাকার পাইকারি বাজারই নয়, দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের বাজার (ল্যান্ডিং স্টেশন) চাঁদপুর ও ভোলার বড় স্টেশনের মাছঘাটেও ইলিশের দাম তুলনামূলক বেশি।
মৌসুমের শেষ দিকে ইলিশের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ ঘাটে। স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় কম ধরা পড়লেও দক্ষিণাঞ্চলের প্রচুর ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে চাঁদপুরে। তবে মাছের দাম না কমায় হতাশ ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে চাহিদা বাড়ায় দামও কিছুটা চড়া।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চাঁদপুরের মাছঘাটে দিনে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে। এর মধ্যে স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মণ। স্থানীয় ব্যবসায়ী বিপ্লব খান বলেন, ‘বর্তমানে পদ্মা-মেঘনা নদীর ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি ওজনের বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।’
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবে বরাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের জেলেদের জালে মাছ উঠছে ভালো। এর ফলে চাঁদপুর মাছঘাটেও সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে ইলিশের। তবে ভারতে রপ্তানির ঘোষণার পর থেকে বড় ইলিশের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এই মৌসুমে ইলিশের দাম আর না কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান এই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।
এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর সদর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে অনলাইনে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে। যার ফলে ইলিশের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া ভারতে রপ্তানির প্রভাবে ইলিশের দাম কিছুটা বেশি। তবে আমরা আশা করছি সামনে ইলিশের সরবরাহ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং দামও ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।’
একই অবস্থা ভোলাতেও। মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়লেও দাম বেড়েছে। ভোলা জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ জানান, ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেলেও শেষ সময়ে প্রচুর পরিমাণ মাছ জালে ধরা পড়ছে। তবে ভারতে রপ্তানির কারণে ইলিশের দাম দেড়গুণ বেড়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকৃতির ইলিশ কেজিপ্রতি ৮০০-৯০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামেও ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম নাগালের বাইরে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার জেলেদের জালে কাক্সিক্ষত পরিমাণ রুপালি ইলিশ ধরা পড়েনি। যা ধরা পড়ছে তা মাছবাহী বোট থেকে আড়তে ওঠার আগেই বিকিকিনি হয়ে যায়। নগরীর ইকবাল রোডের পুরনো ফিশারিঘাটে আড়তদারের সহযোগী মো. সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে ধরনের আশা করা হয়েছিল সে পরিমাণ মাছ ধরা পড়েনি। বর্তমানে ৫শ-৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২-২৩ হাজার টাকায়। আর ৯শ গ্রাম থেকে ১৪শ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪২ হাজার টাকায়।’
এ প্রসঙ্গে নগরীর মাছের বৃহত্তম পাইকারি বাজার নতুন ফিশারিঘাটের আড়তদার ও সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ইলিশের এই ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ১০-১২ কোটি টাকার বেশি ইলিশ বেচাকেনা হতো। কিন্তু এবার লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকই পূরণ হয়নি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে জেলেরা মাছ ধরার ট্রলার ও বোট নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে পারেনি। আগে যেখানে দিনে ১০-১২ টন ইলিশ বিক্রি হতো, এবার তা কমে ৩-৪ টন বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় গত বছরের চেয়ে এবার ৫০ শতাংশ ইলিশ আহরণ কম হয়েছে। তাই মাছের দামও বেশি।’
বেনাপোল দিয়ে ২৩ মে.টন ইলিশ রপ্তানি : দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গতকাল বিকেলে ২৩ মেট্রিক টন বাংলাদেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ভারতে। ৫টি ট্রাকে মাছের ওই চালান বেনাপোল বন্দরে পৌঁছায়। কাস্টমস ও বেনাপোল মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মাছের নমুনা পরীক্ষা শেষে রপ্তানির অনুমতি দেন। গতকাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাউদার্ন ফুড লি. খুলনা ১৩ মেট্রিক টন এবং ইউনিয়ন ভেন্টার লি., ঢাকা ১০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে। ভারতের কলকাতার জেকে ইন্টারন্যাশনাল ও সিদ্ধেশ^রী এন্টারপ্রাইজ ছিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। রপ্তানি করা ইলিশের প্রতিটির গড় ওজন ১ কেজি থেকে দেড় কেজি। যার রপ্তানি মূল্য এক কেজি পর্যন্ত প্রতি কেজি ৬ মার্কিন ডলার এবং এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের রপ্তানিমূল্য প্রতি কেজি ১০ মার্কিন ডলার।
বেনাপোল মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. ইশতাদুল হক জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে গতকাল বিকেল থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে অনুমতিপ্রাপ্ত ২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করতে হবে।
বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার নুসরাত জাহান বলেন, ‘ইলিশ রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি।
শেয়ার করুন
রিয়াজ হোসেন | ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০

ভরা মৌসুমে সরবরাহ ঘাটতি থাকলেও এখন শেষ সময়ে এসে রুপালি ইলিশে ভরপুর আড়তগুলো। পূর্ণিমার ‘জো’তে সাগরে ও নদীতে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীরা। তবে ভারতে রপ্তানির কারণে দেশের বাজারে ইলিশের সরবরাহ তুলনামূলক কম। ফলে হঠাৎ করেই দাম চড়েছে ইলিশের।
মাছ ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। আগামী তিন সপ্তাহে ভারতে মোট ২০৮০ মেট্রিক টন বা ২০ লাখ ৮০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হবে। আর সাধারণত বড় আকৃতির ইলিশ রপ্তানি হয়। যে কারণে বড় বড় ইলিশ চলে যাচ্ছে ভারতে। তাই খুচরা বাজারে হঠাৎই দাম বেড়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকৃতির ইলিশের সরবরাহ কম। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই মাঝারি অথবা জাটকা। পাইকারিতে এক কেজি ওজনের নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। খুচরা বাজারে তা বিকোচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকার ওপরে। এছাড়া জাটকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে মাছ কিনতে আসা ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা সুলতান আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন চারদিন আগেও এক কেজির ইলিশ (সমুদ্রের) কিনেছি ৯০০ টাকায়। আজ ১২০০ টাকার বেশি দাম চাইছে। মাঝারি সাইজের ইলিশের কেজি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এত দাম দিয়ে তো আর ইলিশ খাওয়া সম্ভব না। তাই পাবদা মাছ নিয়ে যাচ্ছি।’
কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন বলেন, ‘নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও বাজারে সরবরাহ কম। বেশিরভাগ ইলিশ এখন ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। বড় ইলিশ আড়তে নেই বললেই চলে। যা পাওয়া যায় তা মাঝারি সাইজের অথবা জাটকা। তাই মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ঢাকার পাইকারি বাজারই নয়, দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের বাজার (ল্যান্ডিং স্টেশন) চাঁদপুর ও ভোলার বড় স্টেশনের মাছঘাটেও ইলিশের দাম তুলনামূলক বেশি।
মৌসুমের শেষ দিকে ইলিশের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ ঘাটে। স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় কম ধরা পড়লেও দক্ষিণাঞ্চলের প্রচুর ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে চাঁদপুরে। তবে মাছের দাম না কমায় হতাশ ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে চাহিদা বাড়ায় দামও কিছুটা চড়া।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চাঁদপুরের মাছঘাটে দিনে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে। এর মধ্যে স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মণ। স্থানীয় ব্যবসায়ী বিপ্লব খান বলেন, ‘বর্তমানে পদ্মা-মেঘনা নদীর ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি ওজনের বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।’
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবে বরাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের জেলেদের জালে মাছ উঠছে ভালো। এর ফলে চাঁদপুর মাছঘাটেও সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে ইলিশের। তবে ভারতে রপ্তানির ঘোষণার পর থেকে বড় ইলিশের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এই মৌসুমে ইলিশের দাম আর না কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান এই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।
এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর সদর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে অনলাইনে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে। যার ফলে ইলিশের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া ভারতে রপ্তানির প্রভাবে ইলিশের দাম কিছুটা বেশি। তবে আমরা আশা করছি সামনে ইলিশের সরবরাহ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং দামও ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।’
একই অবস্থা ভোলাতেও। মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়লেও দাম বেড়েছে। ভোলা জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ জানান, ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেলেও শেষ সময়ে প্রচুর পরিমাণ মাছ জালে ধরা পড়ছে। তবে ভারতে রপ্তানির কারণে ইলিশের দাম দেড়গুণ বেড়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকৃতির ইলিশ কেজিপ্রতি ৮০০-৯০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামেও ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম নাগালের বাইরে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার জেলেদের জালে কাক্সিক্ষত পরিমাণ রুপালি ইলিশ ধরা পড়েনি। যা ধরা পড়ছে তা মাছবাহী বোট থেকে আড়তে ওঠার আগেই বিকিকিনি হয়ে যায়। নগরীর ইকবাল রোডের পুরনো ফিশারিঘাটে আড়তদারের সহযোগী মো. সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে ধরনের আশা করা হয়েছিল সে পরিমাণ মাছ ধরা পড়েনি। বর্তমানে ৫শ-৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২-২৩ হাজার টাকায়। আর ৯শ গ্রাম থেকে ১৪শ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪২ হাজার টাকায়।’
এ প্রসঙ্গে নগরীর মাছের বৃহত্তম পাইকারি বাজার নতুন ফিশারিঘাটের আড়তদার ও সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ইলিশের এই ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ১০-১২ কোটি টাকার বেশি ইলিশ বেচাকেনা হতো। কিন্তু এবার লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকই পূরণ হয়নি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে জেলেরা মাছ ধরার ট্রলার ও বোট নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে পারেনি। আগে যেখানে দিনে ১০-১২ টন ইলিশ বিক্রি হতো, এবার তা কমে ৩-৪ টন বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় গত বছরের চেয়ে এবার ৫০ শতাংশ ইলিশ আহরণ কম হয়েছে। তাই মাছের দামও বেশি।’
বেনাপোল দিয়ে ২৩ মে.টন ইলিশ রপ্তানি : দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গতকাল বিকেলে ২৩ মেট্রিক টন বাংলাদেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ভারতে। ৫টি ট্রাকে মাছের ওই চালান বেনাপোল বন্দরে পৌঁছায়। কাস্টমস ও বেনাপোল মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মাছের নমুনা পরীক্ষা শেষে রপ্তানির অনুমতি দেন। গতকাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাউদার্ন ফুড লি. খুলনা ১৩ মেট্রিক টন এবং ইউনিয়ন ভেন্টার লি., ঢাকা ১০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে। ভারতের কলকাতার জেকে ইন্টারন্যাশনাল ও সিদ্ধেশ^রী এন্টারপ্রাইজ ছিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। রপ্তানি করা ইলিশের প্রতিটির গড় ওজন ১ কেজি থেকে দেড় কেজি। যার রপ্তানি মূল্য এক কেজি পর্যন্ত প্রতি কেজি ৬ মার্কিন ডলার এবং এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের রপ্তানিমূল্য প্রতি কেজি ১০ মার্কিন ডলার।
বেনাপোল মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. ইশতাদুল হক জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে গতকাল বিকেল থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে অনুমতিপ্রাপ্ত ২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করতে হবে।
বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার নুসরাত জাহান বলেন, ‘ইলিশ রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি।