দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়রের বাসায় ভিড়, একা জাহাঙ্গীর আলম
গাজীপুর প্রতিনিধি | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
গাজীপুরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারিয়ে এবং মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে একেবারেই একা হয়ে গেছেন জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল শুক্রবার সারা দিন তিনি তার বাসভবনে সময় কাটিয়েছেন। এ সময় তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কাউন্সিলর ও দলীয় কয়েকজন শুভাকাক্সক্ষী উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির ভিড় চলে গেছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বাসভবনে। সেখানে দিনভর নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা এসে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কিরণও তাদের শুভেচ্ছার জবাব দিচ্ছেন হাসিমুখে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মধ্যে গাজীপুর সিটির যে বেহাল দশা রয়েছে সেটি দলীয় নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করব। রাস্তা প্রশস্তকরণে যারা জমি দিয়েছেন অথচ ক্ষতিপূরণ পাননি তাদের বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার কথাও বলেন তিনি।
কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ সিটি করপোরেশনের আগের মেয়াদেও আড়াই বছরের মতো ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৫ সালে বিএনপির মেয়র এমএ মান্নান ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তখনো দায়িত্বভার এসে পড়ে কিরণের হাতে। এবারও নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কার হলে তাকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আর কিরণকে এক নম্বরে রেখে প্যানেল মেয়র গঠনের সিদ্ধান্ত আসে, তখন কিরণ ঢাকার সচিবালয়ে। তিনি এলাকায় ফেরার আগে আগে তার নিজ এলাকা টঙ্গীতে শুরু হয়ে যায় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ। টঙ্গীতে বাসভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচেগেয়ে, আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন কিরণের সমর্থকরা। পুরো বিপরীত চিত্র জাহাঙ্গীর আলমের ছয়দানা এলাকার বাড়িতে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যে বাড়িতে মানুষের ভিড় থাকত, সেই বাড়ি দেখা গেছে ফাঁকা। গাজীপুরে বলাবলি হচ্ছে, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির ভিড় এখন কিরণের বাড়িতে লেগে আছে।
নগরীর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হোসেন বলেন, ‘টঙ্গী পৌরসভা থেকে অদ্যাবধি টানা পাঁচবার কাউন্সিলর হওয়ার গৌরব রয়েছে আসাদুর রহমান কিরণের। ২০১৩ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অবর্তমানে ২৭ মাস ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি নগরীর রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাকে দায়িত্ব দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকাজ আরও ত্বরান্বিত হবে।’
দ্বিতীয়বার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেয়ে কিরণ বলেন, ‘২৭ বছর ধরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করছি। গত মেয়াদে ২৭ মাস ১৩ দিন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি জানি কীভাবে দল ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হয়।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কারের পর তিনি রাজনীতিতে ও জনতার কাতার থেকে কার্যত একঘরে হয়ে আছেন। তার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী, পঞ্চগড় ও মাদারীপুর আদালতে মামলা হলেও গতকাল পর্যন্ত গাজীপুরে কোনো মামলা হয়নি।
শেয়ার করুন
গাজীপুর প্রতিনিধি | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

গাজীপুরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারিয়ে এবং মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে একেবারেই একা হয়ে গেছেন জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল শুক্রবার সারা দিন তিনি তার বাসভবনে সময় কাটিয়েছেন। এ সময় তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কাউন্সিলর ও দলীয় কয়েকজন শুভাকাক্সক্ষী উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির ভিড় চলে গেছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বাসভবনে। সেখানে দিনভর নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা এসে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কিরণও তাদের শুভেচ্ছার জবাব দিচ্ছেন হাসিমুখে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মধ্যে গাজীপুর সিটির যে বেহাল দশা রয়েছে সেটি দলীয় নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করব। রাস্তা প্রশস্তকরণে যারা জমি দিয়েছেন অথচ ক্ষতিপূরণ পাননি তাদের বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার কথাও বলেন তিনি।
কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ সিটি করপোরেশনের আগের মেয়াদেও আড়াই বছরের মতো ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৫ সালে বিএনপির মেয়র এমএ মান্নান ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তখনো দায়িত্বভার এসে পড়ে কিরণের হাতে। এবারও নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কার হলে তাকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আর কিরণকে এক নম্বরে রেখে প্যানেল মেয়র গঠনের সিদ্ধান্ত আসে, তখন কিরণ ঢাকার সচিবালয়ে। তিনি এলাকায় ফেরার আগে আগে তার নিজ এলাকা টঙ্গীতে শুরু হয়ে যায় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ। টঙ্গীতে বাসভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচেগেয়ে, আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন কিরণের সমর্থকরা। পুরো বিপরীত চিত্র জাহাঙ্গীর আলমের ছয়দানা এলাকার বাড়িতে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যে বাড়িতে মানুষের ভিড় থাকত, সেই বাড়ি দেখা গেছে ফাঁকা। গাজীপুরে বলাবলি হচ্ছে, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির ভিড় এখন কিরণের বাড়িতে লেগে আছে।
নগরীর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হোসেন বলেন, ‘টঙ্গী পৌরসভা থেকে অদ্যাবধি টানা পাঁচবার কাউন্সিলর হওয়ার গৌরব রয়েছে আসাদুর রহমান কিরণের। ২০১৩ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অবর্তমানে ২৭ মাস ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি নগরীর রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাকে দায়িত্ব দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকাজ আরও ত্বরান্বিত হবে।’
দ্বিতীয়বার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেয়ে কিরণ বলেন, ‘২৭ বছর ধরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করছি। গত মেয়াদে ২৭ মাস ১৩ দিন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি জানি কীভাবে দল ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হয়।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কারের পর তিনি রাজনীতিতে ও জনতার কাতার থেকে কার্যত একঘরে হয়ে আছেন। তার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী, পঞ্চগড় ও মাদারীপুর আদালতে মামলা হলেও গতকাল পর্যন্ত গাজীপুরে কোনো মামলা হয়নি।