সিরাজগঞ্জে ইউপি নির্বাচন
মাদকাসক্ত ছেলেকে ‘হত্যা’ প্রচারে মা-বাবা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
মাদকাসক্ত ছেলেকে ‘হত্যার’ পর তার লাশ সেপটিক ট্যাংকে রেখে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা। দুদিন পর সেই ঘটনা প্রকাশ করে বাবা দাবি করেছিলেন, ছেলে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। ‘ঝামেলা’ এড়াতে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন তারা। খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার পুলিশ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা গ্রাম থেকে আব্দুল করিম নামের ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। আটক করেছে বাবা আলহাজ আলী ও মা আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী প্রার্থী করুনা খাতুনকে। ঘটনাটি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা, সে প্রশ্ন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।
স্থানীয়রা জানান, করুনা খাতুন নরিনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভোট। কয়েক দিন ধরে নির্বাচনী প্রচারেই ব্যস্ত ছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু তাদের এক মাদকাসক্ত ছেলেকে নিয়ে ছিলেন বিড়ম্বনায়। ওই ছেলে নেশার টাকা জোগাড় করতে মাঝেমধ্যেই চড়াও হতো বাড়ির লোকজনের ওপর। তবে মঙ্গলবার রাতের পর থেকে তাকে দুই দিন দেখেননি তারা। এর মধ্যেই শুক্রবার তার লাশ উদ্ধারের পর তারা শুনতে পান করিম ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।
এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দম্পতি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের মেজ ছেলে করিম দীর্ঘদিন ধরে ‘নেশায় আসক্ত’। মঙ্গলবার রাতে খাওয়ার পর নিজের ঘরে ঘুমাতে গিয়েছিল। পরদিন ভোরে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে ছোট ছেলের ঘর থেকে উঁকি দিয়ে করিমের মৃতদেহ ‘ঝুলতে দেখেন’ তারা। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে লাশ নামিয়ে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে মাটিচাপা দেন।
ছেলের লাশ গোপন করার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাবা আলহাজ আলী জানান, দুই বছর আগে তাদের এক পুত্রবধূ চিরকুট লিখে রেখে আত্মহত্যা করেছিলেন, সে সময় তাদের অনেক ‘ভোগান্তি ও অর্থনাশ’ হয়েছিল। তাই এবার ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তবে মনের কষ্ট সইতে না পেরে শেষে বিষয়টি প্রকাশ করে দেন।
তিনি বলেন, ‘এবার ছেলের আত্মহত্যার বিষয়টি জানাজানি হলে আবার আইনি ঝামেলা হবে, তাতে আমাদের বর্তমান বসতভিটাও থাকবে না, তাই আমরা বুকে কষ্ট চাপা রেখে ছেলের আত্মহত্যার বিষয়টি গোপন করতেই মৃতদেহ ট্যাংকিতে মাটিচাপা দিয়েছিলাম।’
আর বিষয়টি যেন কেউ বুঝতে না পারে, সে জন্যই স্বাভাবিকভাবে স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন আলহাজ আলী।
তিনি বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি সহ্য করা তাদের জন্য ‘কঠিন হয়ে পড়েছিল’। তাই শুক্রবার সকালে স্থানীয় গাড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের কাছে তারা ঘটনা প্রকাশ করেন। এরপর চেয়ারম্যান পুলিশকে খবর দেন।
তবে থানায় আলাপকালে করিমের মা দেশ রূপান্তরকে বলেন, করিম মাদকাসক্ত ছিল। নেশার টাকা জোগাতে প্রায়ই বাড়ির জিনিসপত্র চুরি করে বিক্রি করত। এ ছাড়া অন্য বাড়িতেও চুরির অভ্যাস ছিল। ঘটনার কয়েক দিন আগে করিম একটি চুরির ঘটনা ঘটায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার বাবা মঙ্গলবার রাতে ছেলেকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেন। এরপর লাশ গুম করতে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়ে তার ওপর দুটি বালুর বস্তা দিয়ে চাপা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। লোকে যাতে না বুঝতে পারে, সে জন্য পরদিন সকালে তারা ভোটের ক্যানভাসে বের হন।
নরিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, ‘বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি। পুলিশও ঘটনাস্থলে এসেছে। টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের বাবা-মাকেও পুলিশ আটক করেছে।’
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি (অপারেশন) আব্দুল মজিদ বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
তবে এলাকাবাসীর বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, করিমকে তার মা-বাবাই হত্যার পর লাশ টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়ে এখন মামলা থেকে বাঁচতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার মিথ্যা অপপ্রচার করছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
শেয়ার করুন
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

মাদকাসক্ত ছেলেকে ‘হত্যার’ পর তার লাশ সেপটিক ট্যাংকে রেখে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা। দুদিন পর সেই ঘটনা প্রকাশ করে বাবা দাবি করেছিলেন, ছেলে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। ‘ঝামেলা’ এড়াতে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন তারা। খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার পুলিশ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা গ্রাম থেকে আব্দুল করিম নামের ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। আটক করেছে বাবা আলহাজ আলী ও মা আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী প্রার্থী করুনা খাতুনকে। ঘটনাটি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা, সে প্রশ্ন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।
স্থানীয়রা জানান, করুনা খাতুন নরিনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভোট। কয়েক দিন ধরে নির্বাচনী প্রচারেই ব্যস্ত ছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু তাদের এক মাদকাসক্ত ছেলেকে নিয়ে ছিলেন বিড়ম্বনায়। ওই ছেলে নেশার টাকা জোগাড় করতে মাঝেমধ্যেই চড়াও হতো বাড়ির লোকজনের ওপর। তবে মঙ্গলবার রাতের পর থেকে তাকে দুই দিন দেখেননি তারা। এর মধ্যেই শুক্রবার তার লাশ উদ্ধারের পর তারা শুনতে পান করিম ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।
এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দম্পতি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের মেজ ছেলে করিম দীর্ঘদিন ধরে ‘নেশায় আসক্ত’। মঙ্গলবার রাতে খাওয়ার পর নিজের ঘরে ঘুমাতে গিয়েছিল। পরদিন ভোরে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে ছোট ছেলের ঘর থেকে উঁকি দিয়ে করিমের মৃতদেহ ‘ঝুলতে দেখেন’ তারা। পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে লাশ নামিয়ে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে মাটিচাপা দেন।
ছেলের লাশ গোপন করার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাবা আলহাজ আলী জানান, দুই বছর আগে তাদের এক পুত্রবধূ চিরকুট লিখে রেখে আত্মহত্যা করেছিলেন, সে সময় তাদের অনেক ‘ভোগান্তি ও অর্থনাশ’ হয়েছিল। তাই এবার ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তবে মনের কষ্ট সইতে না পেরে শেষে বিষয়টি প্রকাশ করে দেন।
তিনি বলেন, ‘এবার ছেলের আত্মহত্যার বিষয়টি জানাজানি হলে আবার আইনি ঝামেলা হবে, তাতে আমাদের বর্তমান বসতভিটাও থাকবে না, তাই আমরা বুকে কষ্ট চাপা রেখে ছেলের আত্মহত্যার বিষয়টি গোপন করতেই মৃতদেহ ট্যাংকিতে মাটিচাপা দিয়েছিলাম।’
আর বিষয়টি যেন কেউ বুঝতে না পারে, সে জন্যই স্বাভাবিকভাবে স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন আলহাজ আলী।
তিনি বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি সহ্য করা তাদের জন্য ‘কঠিন হয়ে পড়েছিল’। তাই শুক্রবার সকালে স্থানীয় গাড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের কাছে তারা ঘটনা প্রকাশ করেন। এরপর চেয়ারম্যান পুলিশকে খবর দেন।
তবে থানায় আলাপকালে করিমের মা দেশ রূপান্তরকে বলেন, করিম মাদকাসক্ত ছিল। নেশার টাকা জোগাতে প্রায়ই বাড়ির জিনিসপত্র চুরি করে বিক্রি করত। এ ছাড়া অন্য বাড়িতেও চুরির অভ্যাস ছিল। ঘটনার কয়েক দিন আগে করিম একটি চুরির ঘটনা ঘটায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার বাবা মঙ্গলবার রাতে ছেলেকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেন। এরপর লাশ গুম করতে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়ে তার ওপর দুটি বালুর বস্তা দিয়ে চাপা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। লোকে যাতে না বুঝতে পারে, সে জন্য পরদিন সকালে তারা ভোটের ক্যানভাসে বের হন।
নরিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, ‘বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি। পুলিশও ঘটনাস্থলে এসেছে। টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের বাবা-মাকেও পুলিশ আটক করেছে।’
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি (অপারেশন) আব্দুল মজিদ বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
তবে এলাকাবাসীর বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, করিমকে তার মা-বাবাই হত্যার পর লাশ টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়ে এখন মামলা থেকে বাঁচতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার মিথ্যা অপপ্রচার করছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।