খালেদাকে বিদেশ পাঠানোর দাবিতে বিএনপির সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুশিয়ার করে বলেছেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আপনাদের বিদায় করা হবে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। তার অর্ধেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। পতন শুরু হয়ে গেছে।’
দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে পিকআপে অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের বসার জন্য সড়কে কার্পেট বিছানো হয়। সমাবেশে অংশ নিতে বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-ছোট মিছিল সহকারে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়ক পূর্ণ হয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে। ফলে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পল্টন, ফকিরাপুল, নাইটিংগেল ও কাকরাইল এলাকায় তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বিএনপির কর্মসূচিকে সামনে রেখে সকাল থেকেই সমাবেশের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশসহ সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা কার্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেন। তবে কোনো ধরণে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই সমাবেশ শেষ হয়।
সমাবেশ শুরু হয় দুপুর দেড়টায়, শেষ হয় সাড়ে ৪টায়। সমাবেশের শুরুতে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহবায়ক শাহ নেসারুল হক দলের চেয়ারপারসনের আশু সুস্থতা কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ শ্লোগানে শ্লোগানে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল মুখর করে রাখে। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরা থেকে ফকিরাপুল সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের তিল পরিমান ঠাঁই ছিলো না। রাস্তায় বসে তারা নেতাদের বক্তব্য শুনেন। সমাবেশে ৪টি ছোট ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিশাল আকৃতির ছবি সম্বলিত ব্যানারে লেখা ছিলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবিলম্বে উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে সমাবেশ।
সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্রকে পুররুদ্ধারের জন্য, দেশনেত্রীকে মুক্তির জন্য তরুণ-যুবকদের জেগে উঠতে হবে। তরুণ ও যুবকদের ছাড়া এদেশে কোনো আন্দোলন হয়নি। অবশ্যই এ সরকারকে সরাতে হবে। একটি নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে এ সরকারকে বাধ্য করা হবে।’
আগামী দু-একদিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারকে বিভিন্ন দেশ থেকে চাপ দিয়েছে। সরকার মিথ্যা কথা বলছে। আপনারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন। আপনারা বলছেন আইনের কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো যায়। খালেদা জিয়ার কিছু হলে আপনাদের (সরকার) কোনো দিনও মাফ করবে না দেশের জনগণ।’
তিনি বলেন, ‘আজকের সমাবেশে লাখো জনতার ঢল নেমেছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সমাবেশে জনতার ঢল দেখেই বোঝা যাচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না হলে এদেশের জনগণ চুপ করে বসে থাকবেনা। এই উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকার, ভোট ডাকাতির সরকার কে উৎখাত করবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনৈতিক ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সামনে বলেছেন আমরা খালেদা জিয়ার কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছি। কেন বলেছেন কূটনীতিকদের? কারণ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা ইতিমধ্যে এ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ঢাকার মতো সারা দেশের সাংগঠনিক বিভাগগুলোতেও সমাবেশ করেছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সেই সমাববেশে খবর- খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে একমাত্র বাধা সরকার: খন্দকার মোশাররফ
চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি ও বিদেশে পাঠানোর দাবিতে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর বাকলিয়া কে বি কনভেনশন সেন্টারে সমাবেশ হয়। তাতে সভাপতিত্ব করে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মঙ্গলবার চট্টগ্রামে দলীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, দেশের মানুষ চায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হোক। তবে আজ বেগম খালেদা জিয়াকে যে আইনে সাময়িকভাবে সাজা থেকে স্থগিত রাখা হয়েছে, সেই আইনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে সরকার অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু তার বিদেশ যেতে এখন একমাত্র বাধা সরকার। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস. এম ফজলুল হক, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
খুলনা ব্যুরো থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে বিএনপির সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, সমাবেশ সফল হলেও এখনও দাবি আদায় হয়নি। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামতে হবে। ঢাকার আনাচে-কানাচের মানুষ আজ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া একা কোন ব্যক্তি নয়, তিনি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। খালেদা জিয়া মানে গণতন্ত্র, সততার প্রতিক, আপোষহীন নেত্রী। জানমালের নিরাপত্তার প্রতীক। গতকাল মমঙ্গলবার বিকালে খুলনা নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী হাসান রুমী, আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, খুলনা জেলা সভাপতি অ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা, নগর সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনি প্রমুখ।
সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সেখানে সামবেশে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আইন ও সংবিধানের দোহাই দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠাতে সরকার টালবাহানা করছে। নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে বেলা আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দুপুর থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে হাজির হন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর মালোপাড়া এলাকায় রাজশাহী মহানগর বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এখনো সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়নি। তবে সে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আল্লাহ্ না করুক দেশনেত্রীর যদি কিছু হয়, তখন আপনাদের করার কিছু থাকবে না।
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারা দেশের ন্যায় ফরিদপুরেও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ রিংকুর সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন ফারুক, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইবনে ইউসুফ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহাবুবুল হাসান ভূইয়া পিংকু, ফরিদপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের জুলফিকার হোসেন জুয়েল, সাবেক যুবদল নেতা আবজাল হোসেন খান পলাশ, বিএনপি নেতা এবি সিদ্দিকী মিতুলসহ বিভাগীয় ও জেলা বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুশিয়ার করে বলেছেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আপনাদের বিদায় করা হবে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। তার অর্ধেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। পতন শুরু হয়ে গেছে।’
দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে পিকআপে অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের বসার জন্য সড়কে কার্পেট বিছানো হয়। সমাবেশে অংশ নিতে বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-ছোট মিছিল সহকারে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়ক পূর্ণ হয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে। ফলে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পল্টন, ফকিরাপুল, নাইটিংগেল ও কাকরাইল এলাকায় তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বিএনপির কর্মসূচিকে সামনে রেখে সকাল থেকেই সমাবেশের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশসহ সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা কার্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেন। তবে কোনো ধরণে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই সমাবেশ শেষ হয়।
সমাবেশ শুরু হয় দুপুর দেড়টায়, শেষ হয় সাড়ে ৪টায়। সমাবেশের শুরুতে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহবায়ক শাহ নেসারুল হক দলের চেয়ারপারসনের আশু সুস্থতা কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ শ্লোগানে শ্লোগানে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল মুখর করে রাখে। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরা থেকে ফকিরাপুল সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের তিল পরিমান ঠাঁই ছিলো না। রাস্তায় বসে তারা নেতাদের বক্তব্য শুনেন। সমাবেশে ৪টি ছোট ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিশাল আকৃতির ছবি সম্বলিত ব্যানারে লেখা ছিলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবিলম্বে উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে সমাবেশ।
সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্রকে পুররুদ্ধারের জন্য, দেশনেত্রীকে মুক্তির জন্য তরুণ-যুবকদের জেগে উঠতে হবে। তরুণ ও যুবকদের ছাড়া এদেশে কোনো আন্দোলন হয়নি। অবশ্যই এ সরকারকে সরাতে হবে। একটি নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে এ সরকারকে বাধ্য করা হবে।’
আগামী দু-একদিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারকে বিভিন্ন দেশ থেকে চাপ দিয়েছে। সরকার মিথ্যা কথা বলছে। আপনারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন। আপনারা বলছেন আইনের কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো যায়। খালেদা জিয়ার কিছু হলে আপনাদের (সরকার) কোনো দিনও মাফ করবে না দেশের জনগণ।’
তিনি বলেন, ‘আজকের সমাবেশে লাখো জনতার ঢল নেমেছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সমাবেশে জনতার ঢল দেখেই বোঝা যাচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না হলে এদেশের জনগণ চুপ করে বসে থাকবেনা। এই উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকার, ভোট ডাকাতির সরকার কে উৎখাত করবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনৈতিক ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সামনে বলেছেন আমরা খালেদা জিয়ার কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছি। কেন বলেছেন কূটনীতিকদের? কারণ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা ইতিমধ্যে এ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ঢাকার মতো সারা দেশের সাংগঠনিক বিভাগগুলোতেও সমাবেশ করেছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সেই সমাববেশে খবর- খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে একমাত্র বাধা সরকার: খন্দকার মোশাররফ
চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি ও বিদেশে পাঠানোর দাবিতে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর বাকলিয়া কে বি কনভেনশন সেন্টারে সমাবেশ হয়। তাতে সভাপতিত্ব করে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মঙ্গলবার চট্টগ্রামে দলীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, দেশের মানুষ চায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হোক। তবে আজ বেগম খালেদা জিয়াকে যে আইনে সাময়িকভাবে সাজা থেকে স্থগিত রাখা হয়েছে, সেই আইনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে সরকার অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু তার বিদেশ যেতে এখন একমাত্র বাধা সরকার। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস. এম ফজলুল হক, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
খুলনা ব্যুরো থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে বিএনপির সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, সমাবেশ সফল হলেও এখনও দাবি আদায় হয়নি। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামতে হবে। ঢাকার আনাচে-কানাচের মানুষ আজ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া একা কোন ব্যক্তি নয়, তিনি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। খালেদা জিয়া মানে গণতন্ত্র, সততার প্রতিক, আপোষহীন নেত্রী। জানমালের নিরাপত্তার প্রতীক। গতকাল মমঙ্গলবার বিকালে খুলনা নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী হাসান রুমী, আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, খুলনা জেলা সভাপতি অ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা, নগর সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনি প্রমুখ।
সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সেখানে সামবেশে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আইন ও সংবিধানের দোহাই দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠাতে সরকার টালবাহানা করছে। নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে বেলা আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দুপুর থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে হাজির হন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর মালোপাড়া এলাকায় রাজশাহী মহানগর বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এখনো সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়নি। তবে সে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আল্লাহ্ না করুক দেশনেত্রীর যদি কিছু হয়, তখন আপনাদের করার কিছু থাকবে না।
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারা দেশের ন্যায় ফরিদপুরেও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ রিংকুর সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন ফারুক, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইবনে ইউসুফ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহাবুবুল হাসান ভূইয়া পিংকু, ফরিদপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের জুলফিকার হোসেন জুয়েল, সাবেক যুবদল নেতা আবজাল হোসেন খান পলাশ, বিএনপি নেতা এবি সিদ্দিকী মিতুলসহ বিভাগীয় ও জেলা বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।