চিকিৎসার আওতায় এসেছে এইডস রোগীর ৭৬ শতাংশ
পাঠান সোহাগ ও নজরুল ইসলাম খোকন | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
দেশে বর্তমানে আনুমানিক ১৪ হাজার এইডস রোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই শনাক্ত রোগীর ৭৬ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় এসেছে। চিকিৎসার আওতায় আসা এসব রোগীর মধ্যে ৮৮ শতাংশের রোগটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাংলাদেশে জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে এইচআইভি/এইডস রোগের সংখ্যা কমে এসেছে। ২০১৬ সালে ৫৭৮ জন রোগী শনাক্তের পর ২০১৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৮৬৫ জনে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে তা আরও বেড়ে ৮৬৯ জন হয় এবং ২০১৯ সালে ৯১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। কিন্তু গত বছর মার্চের শুরুতে দেশে করোনা মহামারী প্রতিরোধে লকডাউনসহ বিধিনিষেধের ফলে শনাক্ত প্রচেষ্টায় ছেদ পড়ে। ফলে আগের বছরের চেয়ে ২০২০ সালে নতুন শনাক্ত কমে ৬৫৮ জনে নেমে আসে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিশে^ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৭৭ লাখ। গত বছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং ১৫ লাখ মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) চিকিৎসা পেয়েছে।
আজ বিশ^ এইডস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমতার বাংলাদেশ এইডস ও অতিমারী হবে শেষ’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে আজ রাজধানীতে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চলতি বছরের এইডস পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। পাশাপাশি আইসিডিডিআর.বি, ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বেসরকারি সংস্থাগুলো সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বাংলাদেশে জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ৬০ হাজার ৪২৮ জন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৮৭ জনের কো-মরবিডিটি ছিল। সাধারণ মানুষ ছিল ৩২ হাজার ৮০০ জন। এ ছাড়া ৮১ হাজার ২৯৯ জন গর্ভবতী মাসহ মোট ৫ লাখ ২ হাজার ১৬৫ জনকে এইচআইভি/ এইডস পরীক্ষা ও রক্তদানের সময় ৮ লাখ ৩০ হাজার জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শনাক্ত এইডস রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৩২। এর মধ্যে চিকিৎসার আওতায় এসেছে ৫ হাজার ৮১ জন। মারা গেছে ১ হাজার ৩৮৩ জন। গত বছর নতুন রোগী ধরা পড়েছে ৬৫৮ এবং ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এইআইভি পজেটিভ পাওয়া গেছে ১২৪ জন।
জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোলের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম মিঞা বলেন, মোট জগোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশের নিচে, যা স্বস্তির বিষয়। পাশর্^বর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমারে এই রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংক্রমণের হার কমানো। করোনার সময়ে রোগী শনাক্তে পরীক্ষা কিছুটা কম হলেও তেমন প্রভাব পড়েনি। সে সময় রোগীদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ৬৪ জেলায় স্ক্রিনিং সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। এ জন্য বিভিন্ন এনজিও নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ নানাভাবে কাজ হচ্ছে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনাকালে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে এইচআইভি। ফলে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ভাইরাসটি আক্রান্তদের চিকিৎসায় অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ওষুধ ব্যবহার হয়। কিন্তু এই ওষুধ এখন তেমন কাজ করছে না। ফলে গত এক বছরে নতুন করে বিশে^ ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে বিকল্প চিকিৎসা খুঁজে বের করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এদিকে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে রোগটি নির্মূল করার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে দেশে এইচআইভি শনাক্ত কমলে নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ছেদ পড়ছে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনাকালে বিশ^ব্যাপী এইচআইভি বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এসে নতুন রোগী কমে গেছে। মূলত করোনার সময় বিধিনিষেধ থাকায় এইচআইভি নিয়ে প্রতিবেদন ঠিকমতো হয়নি। এতে শনাক্ত কম দেখাচ্ছে। কারণ হিসেবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, প্রথমত, সেবাদাতাদের কাছে সময়মতো রোগী আসেনি। আবার তারাও যেতে পারেনি। আরেকটি হলো করোনায় কর্মহীন ও গৃহবন্দির পরিবেশে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে মানুষের মধ্যে সেক্সুয়াল অ্যাকটিভিটি বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপদ ও সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক যৌন-সম্পর্ক কমেছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের এইচআইভি/এইডস প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালে করোনা দেখা দেওয়ার পর এপ্রিল-মে মাসে লকডাউন দেওয়া হয়। ওই সময় এইচআইভি পরীক্ষার পরিমাণ খুব কম ছিল। সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার পর ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা স্থিবির হয়ে পড়ে। যৌনকর্মীদের খদ্দের কমে যায়। মাদক দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে এবং দাম বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লকডাউন নিশ্চিত করতে সতর্ক থাকায় এইচআইভি শনাক্তে ড্রপ ইন সেন্টার (ডিআইসি) কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে রোগটির সেবাসমূহ, যেমন এইডস পরীক্ষা, মেথাডন ও এন্ট্রিরেট্রাভাইরাল (এআরভি) প্রদান, ভাইরাসটি প্রতিরোধমূলক একক ও দলীয় শিক্ষা, যৌনরোগ থেকে শুরু করে অন্যান্য চিকিৎসা প্রদান বাধাগ্রস্ত হয়।
আক্রান্তের ঝুঁকিতে হিলি বন্দর এলাকা : ভারত থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আসা ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীদের (হেলপার) রক্ত ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত থেকে গড়ে দিনে ১৮০ থেকে ২০০ পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে চালক ও সহকারীরা হিলিতে আসছেন। পণ্য খালাসের দীর্ঘ সময় অবস্থানের কারণে তাদের অনেকেই নানাভাবে নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করছেন। এসব ব্যক্তি থেকে হিলি স্থলবন্দর ও আশপাশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতীয় ট্রাকচালক অনিল কুমার জানান, প্রাকৃতিক চাহিদার কারণেই তাদের যৌনকর্মীসহ অন্যদের সঙ্গে মিশতে হচ্ছে। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশে কোথাও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় নিজেও বুঝতে পারেন না কারও মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছেন কিনা?
রিনা নামের এক যৌনকর্মী জানান, বাড়তি অর্থের জন্য তাদের প্রধান খদ্দের ভারতের ট্রাকচালক ও হেলপাররা। অন্যান্য এলাকা থেকেও অনেকে আসেন। তাদের বেশিরভাগই মিলনে সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করতে আগ্রহী নন। এজন্য নিজেরাও এইডস আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
হিলিতে লাইট হাউজের দুটি ইউনিট এইচআইভি প্রতিরোধে কাজ করছে। একটি আউটলেটের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্দরে এসে ভারতীয়দের কখনো এক মাসও থাকতে হয়। রাতে তারা বিভিন্ন উপায়ে যৌনকর্মী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন। প্রতিবেশী ভারতে এইচআইভি আক্রান্তের হার বেশি হওয়ায় তাদের মাধ্যমে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর ও আশপাশের সীমান্ত এইডসের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা। হিলিতে অন্তত ১৫ এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বাকিদের চিকিৎসা চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাইট হাউজ নামে এনজিওর সঙ্গে এইডস প্রতিরোধে কাজ করছি। প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪৫০ জনকে পরীক্ষার আওতায় আনছি। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় এ কার্যক্রম আবার শুরু করা হবে।’
শেয়ার করুন
পাঠান সোহাগ ও নজরুল ইসলাম খোকন | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

দেশে বর্তমানে আনুমানিক ১৪ হাজার এইডস রোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই শনাক্ত রোগীর ৭৬ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় এসেছে। চিকিৎসার আওতায় আসা এসব রোগীর মধ্যে ৮৮ শতাংশের রোগটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাংলাদেশে জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে এইচআইভি/এইডস রোগের সংখ্যা কমে এসেছে। ২০১৬ সালে ৫৭৮ জন রোগী শনাক্তের পর ২০১৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৮৬৫ জনে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে তা আরও বেড়ে ৮৬৯ জন হয় এবং ২০১৯ সালে ৯১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। কিন্তু গত বছর মার্চের শুরুতে দেশে করোনা মহামারী প্রতিরোধে লকডাউনসহ বিধিনিষেধের ফলে শনাক্ত প্রচেষ্টায় ছেদ পড়ে। ফলে আগের বছরের চেয়ে ২০২০ সালে নতুন শনাক্ত কমে ৬৫৮ জনে নেমে আসে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিশে^ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৭৭ লাখ। গত বছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং ১৫ লাখ মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) চিকিৎসা পেয়েছে।
আজ বিশ^ এইডস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমতার বাংলাদেশ এইডস ও অতিমারী হবে শেষ’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে আজ রাজধানীতে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চলতি বছরের এইডস পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। পাশাপাশি আইসিডিডিআর.বি, ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বেসরকারি সংস্থাগুলো সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বাংলাদেশে জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ৬০ হাজার ৪২৮ জন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৮৭ জনের কো-মরবিডিটি ছিল। সাধারণ মানুষ ছিল ৩২ হাজার ৮০০ জন। এ ছাড়া ৮১ হাজার ২৯৯ জন গর্ভবতী মাসহ মোট ৫ লাখ ২ হাজার ১৬৫ জনকে এইচআইভি/ এইডস পরীক্ষা ও রক্তদানের সময় ৮ লাখ ৩০ হাজার জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শনাক্ত এইডস রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৩২। এর মধ্যে চিকিৎসার আওতায় এসেছে ৫ হাজার ৮১ জন। মারা গেছে ১ হাজার ৩৮৩ জন। গত বছর নতুন রোগী ধরা পড়েছে ৬৫৮ এবং ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এইআইভি পজেটিভ পাওয়া গেছে ১২৪ জন।
জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোলের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম মিঞা বলেন, মোট জগোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশের নিচে, যা স্বস্তির বিষয়। পাশর্^বর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমারে এই রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংক্রমণের হার কমানো। করোনার সময়ে রোগী শনাক্তে পরীক্ষা কিছুটা কম হলেও তেমন প্রভাব পড়েনি। সে সময় রোগীদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ৬৪ জেলায় স্ক্রিনিং সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। এ জন্য বিভিন্ন এনজিও নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ নানাভাবে কাজ হচ্ছে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনাকালে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে এইচআইভি। ফলে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ভাইরাসটি আক্রান্তদের চিকিৎসায় অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ওষুধ ব্যবহার হয়। কিন্তু এই ওষুধ এখন তেমন কাজ করছে না। ফলে গত এক বছরে নতুন করে বিশে^ ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে বিকল্প চিকিৎসা খুঁজে বের করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এদিকে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে রোগটি নির্মূল করার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে দেশে এইচআইভি শনাক্ত কমলে নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ছেদ পড়ছে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনাকালে বিশ^ব্যাপী এইচআইভি বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এসে নতুন রোগী কমে গেছে। মূলত করোনার সময় বিধিনিষেধ থাকায় এইচআইভি নিয়ে প্রতিবেদন ঠিকমতো হয়নি। এতে শনাক্ত কম দেখাচ্ছে। কারণ হিসেবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, প্রথমত, সেবাদাতাদের কাছে সময়মতো রোগী আসেনি। আবার তারাও যেতে পারেনি। আরেকটি হলো করোনায় কর্মহীন ও গৃহবন্দির পরিবেশে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে মানুষের মধ্যে সেক্সুয়াল অ্যাকটিভিটি বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপদ ও সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক যৌন-সম্পর্ক কমেছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের এইচআইভি/এইডস প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালে করোনা দেখা দেওয়ার পর এপ্রিল-মে মাসে লকডাউন দেওয়া হয়। ওই সময় এইচআইভি পরীক্ষার পরিমাণ খুব কম ছিল। সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার পর ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা স্থিবির হয়ে পড়ে। যৌনকর্মীদের খদ্দের কমে যায়। মাদক দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে এবং দাম বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লকডাউন নিশ্চিত করতে সতর্ক থাকায় এইচআইভি শনাক্তে ড্রপ ইন সেন্টার (ডিআইসি) কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে রোগটির সেবাসমূহ, যেমন এইডস পরীক্ষা, মেথাডন ও এন্ট্রিরেট্রাভাইরাল (এআরভি) প্রদান, ভাইরাসটি প্রতিরোধমূলক একক ও দলীয় শিক্ষা, যৌনরোগ থেকে শুরু করে অন্যান্য চিকিৎসা প্রদান বাধাগ্রস্ত হয়।
আক্রান্তের ঝুঁকিতে হিলি বন্দর এলাকা : ভারত থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আসা ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীদের (হেলপার) রক্ত ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত থেকে গড়ে দিনে ১৮০ থেকে ২০০ পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে চালক ও সহকারীরা হিলিতে আসছেন। পণ্য খালাসের দীর্ঘ সময় অবস্থানের কারণে তাদের অনেকেই নানাভাবে নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করছেন। এসব ব্যক্তি থেকে হিলি স্থলবন্দর ও আশপাশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতীয় ট্রাকচালক অনিল কুমার জানান, প্রাকৃতিক চাহিদার কারণেই তাদের যৌনকর্মীসহ অন্যদের সঙ্গে মিশতে হচ্ছে। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশে কোথাও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় নিজেও বুঝতে পারেন না কারও মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছেন কিনা?
রিনা নামের এক যৌনকর্মী জানান, বাড়তি অর্থের জন্য তাদের প্রধান খদ্দের ভারতের ট্রাকচালক ও হেলপাররা। অন্যান্য এলাকা থেকেও অনেকে আসেন। তাদের বেশিরভাগই মিলনে সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করতে আগ্রহী নন। এজন্য নিজেরাও এইডস আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
হিলিতে লাইট হাউজের দুটি ইউনিট এইচআইভি প্রতিরোধে কাজ করছে। একটি আউটলেটের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্দরে এসে ভারতীয়দের কখনো এক মাসও থাকতে হয়। রাতে তারা বিভিন্ন উপায়ে যৌনকর্মী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন। প্রতিবেশী ভারতে এইচআইভি আক্রান্তের হার বেশি হওয়ায় তাদের মাধ্যমে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর ও আশপাশের সীমান্ত এইডসের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা। হিলিতে অন্তত ১৫ এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বাকিদের চিকিৎসা চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাইট হাউজ নামে এনজিওর সঙ্গে এইডস প্রতিরোধে কাজ করছি। প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪৫০ জনকে পরীক্ষার আওতায় আনছি। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় এ কার্যক্রম আবার শুরু করা হবে।’