চলতি বছরে ২১ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী শনাক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
দেশে গত এক বছরে নতুন করে আরও ৭২৯ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। নতুন ও পুরনো রোগী মিলিয়ে এ বছর ৭২ নারী গর্ভবতী হয়েছেন। চিকিৎসার মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৫৩ শিশুর জন্ম দিয়েছেন। এদের ৪৩ শিশু এইচআইভি নেগেটিভ এসেছে। বাংলাদেশ জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। এ জরিপ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চলে।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে গত এক বছরে নতুন করে আরও ৭২৯ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০৫ জন। এর আগের বছর ২০২০ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ৬৫৮ জন এবং মৃত্যু হয় ১৪১ জনের। নতুন রোগীর মধ্যে দেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন ১৮৮ জন। এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১২৪ জনে। গত এক বছরে আক্রান্ত নতুন রোগীর মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠী ২৬ শতাংশ বা ১৮৬ জন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ২৬ শতাংশ বা ১৮৮ জন, বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য ২০ শতাংশ বা ১৪৪ জন, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৮ শতাংশ বা ৬১ জন, নারী যৌনকর্মী ২ শতাংশ বা ১৭ জন, সমকামী ৯ শতাংশ বা ৬৭ জন, পুরুষ যৌনকর্মী ৭ শতাংশ বা ৫৩ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ২ শতাংশ বা ১৩ জন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে এইডস দিবসের আলোচনা সভায় এই জরিপে ফল উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও টিবি-লেপ্রোসী ও এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. খুরশীদ আলম।
দেশে ইউনিসেফের সহায়তায় মায়ের থেকে শিশুর এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিররোধ কার্যক্রম ১৩টি সরকারি হাসপাতালে চালু আছে। পিএমটিসিটি কার্যক্রমের আওতায় গত ১ বছরে এইচআইভি টেস্ট হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৯ জনের। ১ বছরে ২১ জন গর্ভবতী নারী এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে ১ বছরে ৭২ জন পিএমটিসিটি সেবা নিচ্ছেন। এআরটি নিচ্ছেন ৭২ জন গর্ভবতী নারী।
জরিপের তথ্য উল্লেখ করে খুরশীদ আলম বলেন, যেসব গর্ভবতী মা এআরটি নিচ্ছেন তারা ইতিমধ্যে ৫৩ জন শিশু জন্ম দিয়েছেন। এই ৫৩ জনের মধ্যে ৪৩ শিশু এইচআইভি নেগেটিভ। বাকি শিশুদের পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। এইচআইভি পজিটিভ গর্ভবতী মা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এআরটি গ্রহণ শুরু করলে তিনি এইচআইভি নেগেটিভ শিশুর জন্ম দিতে পারেন।
ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশের নিচে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সংক্রমণ কিছুটা বেশি। দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার। তবে ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এইচআইভি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৬১ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৫৮৮ জন। দেশে গত ১ বছরে এইচআইভি টেস্ট হয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৩১২ জনের। এ ছাড়া ব্লাড স্ক্রিনিং করা হয়েছে আরও ৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ জনের।
খুরশীদ আলম বলেন, গত ১ বছরে আক্রান্ত ৭২৯ জনের মধ্যে চিকিৎসাসেবার (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) আওতায় এসেছেন ৬৪২ জন। এইচআইভি টেস্টিং এবং চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ড্রাগ) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা (এআরভি) পাচ্ছেন। এ ছাড়া দেশব্যাপী ২৮টি সরকারি হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করা হচ্ছে। এসব এইচআইভি টেস্টিং সেন্টারে যেকোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করাতে পারেন।
তিনি বলেন, দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত ১৪ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ৬৩ শতাংশ তাদের এইচআইভি স্ট্যাটাস জানেন। যারা তাদের এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানেন তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসাসেবার (এআরটি) আওতায় আছেন। যারা চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) নিচ্ছেন তাদের ৯৩ শতাংশের নিয়ন্ত্রণে আছে।
বিশ্ব এইডস দিবস পালিত : ‘সমতার বাংলাদেশ, এইডস ও অতিমারী হবে শেষ’ এই সেøাগানে সারা দেশে গতকাল বুধবার বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএস) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকার অন্যান্য রোগের ন্যায় এইডসের পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে দিচ্ছে। দেশের ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগীরা বিনামূল্যে সরকারি এই চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। করোনার এই সংকটকালেও সরকার এইডস রোগীদের পরীক্ষা কার্যক্রম ও চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছে। নিকট ভবিষ্যতেই এইচআইভি টেস্টিং কার্যক্রম দেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে সম্প্রসারণ করা হবে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

দেশে গত এক বছরে নতুন করে আরও ৭২৯ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। নতুন ও পুরনো রোগী মিলিয়ে এ বছর ৭২ নারী গর্ভবতী হয়েছেন। চিকিৎসার মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৫৩ শিশুর জন্ম দিয়েছেন। এদের ৪৩ শিশু এইচআইভি নেগেটিভ এসেছে। বাংলাদেশ জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। এ জরিপ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চলে।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে গত এক বছরে নতুন করে আরও ৭২৯ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০৫ জন। এর আগের বছর ২০২০ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ৬৫৮ জন এবং মৃত্যু হয় ১৪১ জনের। নতুন রোগীর মধ্যে দেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন ১৮৮ জন। এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১২৪ জনে। গত এক বছরে আক্রান্ত নতুন রোগীর মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠী ২৬ শতাংশ বা ১৮৬ জন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ২৬ শতাংশ বা ১৮৮ জন, বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য ২০ শতাংশ বা ১৪৪ জন, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৮ শতাংশ বা ৬১ জন, নারী যৌনকর্মী ২ শতাংশ বা ১৭ জন, সমকামী ৯ শতাংশ বা ৬৭ জন, পুরুষ যৌনকর্মী ৭ শতাংশ বা ৫৩ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ২ শতাংশ বা ১৩ জন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে এইডস দিবসের আলোচনা সভায় এই জরিপে ফল উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও টিবি-লেপ্রোসী ও এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. খুরশীদ আলম।
দেশে ইউনিসেফের সহায়তায় মায়ের থেকে শিশুর এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিররোধ কার্যক্রম ১৩টি সরকারি হাসপাতালে চালু আছে। পিএমটিসিটি কার্যক্রমের আওতায় গত ১ বছরে এইচআইভি টেস্ট হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৯ জনের। ১ বছরে ২১ জন গর্ভবতী নারী এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে ১ বছরে ৭২ জন পিএমটিসিটি সেবা নিচ্ছেন। এআরটি নিচ্ছেন ৭২ জন গর্ভবতী নারী।
জরিপের তথ্য উল্লেখ করে খুরশীদ আলম বলেন, যেসব গর্ভবতী মা এআরটি নিচ্ছেন তারা ইতিমধ্যে ৫৩ জন শিশু জন্ম দিয়েছেন। এই ৫৩ জনের মধ্যে ৪৩ শিশু এইচআইভি নেগেটিভ। বাকি শিশুদের পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। এইচআইভি পজিটিভ গর্ভবতী মা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এআরটি গ্রহণ শুরু করলে তিনি এইচআইভি নেগেটিভ শিশুর জন্ম দিতে পারেন।
ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশের নিচে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সংক্রমণ কিছুটা বেশি। দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার। তবে ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এইচআইভি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৬১ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৫৮৮ জন। দেশে গত ১ বছরে এইচআইভি টেস্ট হয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৩১২ জনের। এ ছাড়া ব্লাড স্ক্রিনিং করা হয়েছে আরও ৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ জনের।
খুরশীদ আলম বলেন, গত ১ বছরে আক্রান্ত ৭২৯ জনের মধ্যে চিকিৎসাসেবার (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) আওতায় এসেছেন ৬৪২ জন। এইচআইভি টেস্টিং এবং চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ড্রাগ) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা (এআরভি) পাচ্ছেন। এ ছাড়া দেশব্যাপী ২৮টি সরকারি হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করা হচ্ছে। এসব এইচআইভি টেস্টিং সেন্টারে যেকোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করাতে পারেন।
তিনি বলেন, দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত ১৪ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ৬৩ শতাংশ তাদের এইচআইভি স্ট্যাটাস জানেন। যারা তাদের এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানেন তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসাসেবার (এআরটি) আওতায় আছেন। যারা চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) নিচ্ছেন তাদের ৯৩ শতাংশের নিয়ন্ত্রণে আছে।
বিশ্ব এইডস দিবস পালিত : ‘সমতার বাংলাদেশ, এইডস ও অতিমারী হবে শেষ’ এই সেøাগানে সারা দেশে গতকাল বুধবার বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএস) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকার অন্যান্য রোগের ন্যায় এইডসের পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে দিচ্ছে। দেশের ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগীরা বিনামূল্যে সরকারি এই চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। করোনার এই সংকটকালেও সরকার এইডস রোগীদের পরীক্ষা কার্যক্রম ও চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছে। নিকট ভবিষ্যতেই এইচআইভি টেস্টিং কার্যক্রম দেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে সম্প্রসারণ করা হবে।