পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি আজ
রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে এ চুক্তি সই হয়। সরকারের পক্ষে তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা চুক্তিতে সই করেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে টেকসই ও বেগবান করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এ চুক্তির শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। শান্তি চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এ প্রত্যাশা করি।’
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’ তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক।’
শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে পাহাড়ে অবসান ঘটে শান্তি বাহিনীর দীর্ঘ দুই দশকের সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলনকারীরা। শান্তি চুক্তির ফলে প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দেয় এবং সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। তবে বছর না যেতেই চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আবির্ভাব ঘটে। এরপর শুরু হয় পাহাড়ে দুই আঞ্চলিক সংগঠনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পরে জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফ ভেঙে একাধিক সংগঠন হয়েছে। বর্তমানে চার সংগঠন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত। সবশেষ গত মঙ্গলবার রাঙ্গামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নে জনসংহতি সমিতির কর্মী আবিষ্কার চাকমাকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ ২৪ বছরেও শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় জেএসএস সরকারকে দোষারোপ করে।
রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, পাহাড়ে যতদিন অবৈধ অস্ত্র থাকবে, ততদিন এ অঞ্চলে চাঁদাবাজি, অপহরণ বন্ধ হবে না। বর্তমান সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন বেগবান হয়েছে। কিন্তু সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হলে শান্তির সুবাতাস মানুষ পুরোপুরি পাবে না বলে মনে করেন তিনি।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। এরপর বেলা ১১টায় মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা হবে।
এ ছাড়া দিবসটি উদযাপনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ দুই দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় ভ্রাম্যমাণ সংগীত কর্মসূচির উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। আজ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, গরিব-দুস্থদের মধ্যে কম্বল, মাস্ক ও খাবার বিতরণ, আলোচনা সভা, ফানুস ওড়ানো ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
শেয়ার করুন
রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে এ চুক্তি সই হয়। সরকারের পক্ষে তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা চুক্তিতে সই করেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে টেকসই ও বেগবান করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এ চুক্তির শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। শান্তি চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এ প্রত্যাশা করি।’
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’ তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক।’
শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে পাহাড়ে অবসান ঘটে শান্তি বাহিনীর দীর্ঘ দুই দশকের সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলনকারীরা। শান্তি চুক্তির ফলে প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দেয় এবং সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। তবে বছর না যেতেই চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আবির্ভাব ঘটে। এরপর শুরু হয় পাহাড়ে দুই আঞ্চলিক সংগঠনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পরে জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফ ভেঙে একাধিক সংগঠন হয়েছে। বর্তমানে চার সংগঠন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত। সবশেষ গত মঙ্গলবার রাঙ্গামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নে জনসংহতি সমিতির কর্মী আবিষ্কার চাকমাকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ ২৪ বছরেও শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় জেএসএস সরকারকে দোষারোপ করে।
রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, পাহাড়ে যতদিন অবৈধ অস্ত্র থাকবে, ততদিন এ অঞ্চলে চাঁদাবাজি, অপহরণ বন্ধ হবে না। বর্তমান সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন বেগবান হয়েছে। কিন্তু সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হলে শান্তির সুবাতাস মানুষ পুরোপুরি পাবে না বলে মনে করেন তিনি।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। এরপর বেলা ১১টায় মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা হবে।
এ ছাড়া দিবসটি উদযাপনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ দুই দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় ভ্রাম্যমাণ সংগীত কর্মসূচির উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। আজ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, গরিব-দুস্থদের মধ্যে কম্বল, মাস্ক ও খাবার বিতরণ, আলোচনা সভা, ফানুস ওড়ানো ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।