কর্মীদের জন্য হচ্ছে আধুনিক আবাসন
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
দেশে উপজেলা পরিষদে কর্মরতদের জন্য প্রায় ৪০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল সরকারি আবাসন বা কোয়ার্টার। সময়ের পরিক্রমায় এসব স্থাপনা এখন জরাজীর্ণ বা বসবাসের অনুপযোগী। আবার পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। এ নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়েই দীর্ঘ সময় পার হয়েছে। এবার সরকার উপজেলা পরিষদে আধুনিক বাসস্থানের ওপর জোর দিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নতুন করে ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণ করার মাধ্যমে আবাসন সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের জন্য একটি চারতলা ভবনে দুটি ইউনিটে আটটি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। আর কর্মচারীদের জন্য হচ্ছে আধুনিক ডরমেটরি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (উপজেলা-২) মোহাম্মদ সামছুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। এরই অংশ হিসেবে আমরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে নকশা প্রণয়ন ও প্রাক্কলন তৈরি করার জন্য চিঠি দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের উপজেলা পরিষদগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য উন্নত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ২৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সামছুল হক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, সরকারের প্রশাসনিক ও উন্নয়নসংক্রান্ত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে ১৯৮২ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়। সেই সময় সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলা পর্যায়ে কিছু বাসভবন নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৪০ বছরের ব্যবধানে সেই আবাসিক ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে এবং বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাসভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, উপজেলা পর্যায়ে আবাসন সমস্যা সমাধানে কর্মকর্তাদের জন্য একটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন যেখানে দুটি ইউনিট করে আটটি ফ্ল্যাট এবং কর্মচারীদের জন্য একটি চারতলা ডরমেটরি ভবন নির্মাণের জন্য ডিজাইন ও প্রাক্কলন তৈরি করার অনুরোধ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. সাইফুল ইসলাম খান বীরু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা দেশেই আমাদের উপজেলা পরিষদের আবাসিক স্থাপনাগুলোর নাজুক অবস্থা। পলেস্তারা খসে পড়ছে; আবার কোথাও বসবাসের উপযোগিতা না থাকায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন খুব প্রয়োজন। সরকার আবাসন সমস্যা সমাধানে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এর সাধুবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনেরও নাজুক অবস্থা। অনেকগুলো ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সরকারের উচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের উপজেলা পরিষদগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা আবাসন সংকট আছে। এখন যেখানে বসবাস করেন তা প্রায় অর্ধশত বছর আগের স্থাপনা। আবার যে পরিমাণ চাহিদা আছে বাস্তবে তাও নেই। আবার নতুন করে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে আবাসন খুব প্রয়োজন। কিন্তু এ কাজটি করতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। উপজেলা পরিষদে “ল্যান্ড ব্যাংক” বের করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কাজ করতে গেলে জমির সংকট তৈরি না হয়। যে পরিমাণ জমির চাহিদা ভবিষ্যতে তৈরি হবে তা এখনই চিন্তায় রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি বানানো হচ্ছে; এসব কিছুর উপকারভোগী কারা হবেন, সেটির সঠিকভাবে নীতিমালা তৈরি করতে হবে।’
শেয়ার করুন
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

দেশে উপজেলা পরিষদে কর্মরতদের জন্য প্রায় ৪০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল সরকারি আবাসন বা কোয়ার্টার। সময়ের পরিক্রমায় এসব স্থাপনা এখন জরাজীর্ণ বা বসবাসের অনুপযোগী। আবার পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। এ নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়েই দীর্ঘ সময় পার হয়েছে। এবার সরকার উপজেলা পরিষদে আধুনিক বাসস্থানের ওপর জোর দিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নতুন করে ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণ করার মাধ্যমে আবাসন সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের জন্য একটি চারতলা ভবনে দুটি ইউনিটে আটটি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। আর কর্মচারীদের জন্য হচ্ছে আধুনিক ডরমেটরি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (উপজেলা-২) মোহাম্মদ সামছুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। এরই অংশ হিসেবে আমরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে নকশা প্রণয়ন ও প্রাক্কলন তৈরি করার জন্য চিঠি দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের উপজেলা পরিষদগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য উন্নত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ২৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সামছুল হক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, সরকারের প্রশাসনিক ও উন্নয়নসংক্রান্ত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে ১৯৮২ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়। সেই সময় সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলা পর্যায়ে কিছু বাসভবন নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৪০ বছরের ব্যবধানে সেই আবাসিক ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে এবং বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাসভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, উপজেলা পর্যায়ে আবাসন সমস্যা সমাধানে কর্মকর্তাদের জন্য একটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন যেখানে দুটি ইউনিট করে আটটি ফ্ল্যাট এবং কর্মচারীদের জন্য একটি চারতলা ডরমেটরি ভবন নির্মাণের জন্য ডিজাইন ও প্রাক্কলন তৈরি করার অনুরোধ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. সাইফুল ইসলাম খান বীরু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা দেশেই আমাদের উপজেলা পরিষদের আবাসিক স্থাপনাগুলোর নাজুক অবস্থা। পলেস্তারা খসে পড়ছে; আবার কোথাও বসবাসের উপযোগিতা না থাকায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন খুব প্রয়োজন। সরকার আবাসন সমস্যা সমাধানে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এর সাধুবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনেরও নাজুক অবস্থা। অনেকগুলো ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সরকারের উচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের উপজেলা পরিষদগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা আবাসন সংকট আছে। এখন যেখানে বসবাস করেন তা প্রায় অর্ধশত বছর আগের স্থাপনা। আবার যে পরিমাণ চাহিদা আছে বাস্তবে তাও নেই। আবার নতুন করে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে আবাসন খুব প্রয়োজন। কিন্তু এ কাজটি করতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। উপজেলা পরিষদে “ল্যান্ড ব্যাংক” বের করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কাজ করতে গেলে জমির সংকট তৈরি না হয়। যে পরিমাণ জমির চাহিদা ভবিষ্যতে তৈরি হবে তা এখনই চিন্তায় রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি বানানো হচ্ছে; এসব কিছুর উপকারভোগী কারা হবেন, সেটির সঠিকভাবে নীতিমালা তৈরি করতে হবে।’