কুয়েটে হল প্রাধ্যক্ষের মৃত্যু
তদন্তে অপারগতা প্রকাশ কমিটির সদস্যদের!
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ছাত্রলীগ নেতাদের ‘নির্যাতনে’ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এক শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের কমিটির দুই সদস্যই তদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এর পরপরই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন।
গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যু হয়। এর আগে ওই হলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে পদ দেওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের একাংশের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে নানা ধরনের জেরা করে। পরে দুপুরে বাসায় খাবার খেতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এরপরই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন,‘ছাত্রলীগের নির্যাতনেই’ ড. সেলিমের মৃত্যু হয়েছে। যার প্রতিবাদে তারা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বেশ কয়েকজন শিক্ষকও।
পরে এই ঘটনায় কুয়েট প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম। আর সদস্য হিসেবে ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার। কিন্তু গতকাল কমিটির প্রধান ড. মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে এবং ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে তদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটির দুজন সদস্য অপারগতা জানিয়েছেন। নতুন করে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি সিন্ডিকেটের সভা ডাকা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ সিন্ডিকেটের মিটিং হবে। সেখান থেকে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুতে কুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আজ প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন। সভা শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। এর আগে বুধবার থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি কুয়েটের লালন শাহ হলে ছাত্র আবাসিক হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে। ওই প্যানেলের সদস্যরা হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিল তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি ক্যাডার গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীকালে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ও অসুস্থ হয়ে যান। পরবর্তীকালে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসের নিকটস্থ বাসায় যাওয়ার পর ২টা ৩০ মিনিটে তার স্ত্রী লক্ষ করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

ছাত্রলীগ নেতাদের ‘নির্যাতনে’ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এক শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের কমিটির দুই সদস্যই তদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এর পরপরই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন।
গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যু হয়। এর আগে ওই হলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে পদ দেওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের একাংশের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে নানা ধরনের জেরা করে। পরে দুপুরে বাসায় খাবার খেতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এরপরই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন,‘ছাত্রলীগের নির্যাতনেই’ ড. সেলিমের মৃত্যু হয়েছে। যার প্রতিবাদে তারা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বেশ কয়েকজন শিক্ষকও।
পরে এই ঘটনায় কুয়েট প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম। আর সদস্য হিসেবে ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার। কিন্তু গতকাল কমিটির প্রধান ড. মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে এবং ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে তদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটির দুজন সদস্য অপারগতা জানিয়েছেন। নতুন করে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি সিন্ডিকেটের সভা ডাকা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ সিন্ডিকেটের মিটিং হবে। সেখান থেকে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুতে কুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আজ প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন। সভা শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। এর আগে বুধবার থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি কুয়েটের লালন শাহ হলে ছাত্র আবাসিক হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে। ওই প্যানেলের সদস্যরা হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিল তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি ক্যাডার গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীকালে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ও অসুস্থ হয়ে যান। পরবর্তীকালে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসের নিকটস্থ বাসায় যাওয়ার পর ২টা ৩০ মিনিটে তার স্ত্রী লক্ষ করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।